যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো মানুষকে হাসানো।
আর যদি সেই মানুষগুলো সিরিয়াস হয় - তাইলে হাসানোর চিন্তা পরিত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মনে পড়ে ছোট বেলায় দেখতাম বাংলা সিনেমায় টেলি সামাদ নামের এক অভিনেতা কি কসরতই না করতো হাসাতে। তাতে হাসি না এসে বরঞ্চ রাগ উঠে যেত। মনে হতো একজন পূর্নবয়স্ক মানুষ কেন এ ধরনের কাজ করবে।
কিন্তু ভানু বন্দোপাধ্যায়ের সাড়ে চুয়অত্তর দেখার পর কৌতুক অভিনয় সম্পর্কে ধারনাই বদলে গেছে। আসলে হাসিটা যে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক তা ভানুর কৌতুক না শুনলে বুঝা যেত না। পরে জানলাম - প্রানী জগতের মধ্যে হাসে কেবল মানুষই - কারন মানুষ বুদ্ধিমান প্রানী। আর তার মধ্যেও বুদ্ধির হের ফের দেখা যায়।
এখন পশ্চিমে বাস করার সুবাদে কমেডি বিষয়টা যে কতউচু মানের শিল্প তা বুঝতে পারছি।
কেনান ওব্রায়ন, বিল মেহার বা ডেভিড লেটারম্যানদের শো দেখে মাঝে মধ্যে ভাবি - এই লেভেলের সেন্স অব হিউমার কি আমাদের মধ্যে কখনও আসবে?
(২)
কি বলতে কি বলা শুরু করলাম! যাই হোক বলছিলাম টিভির কমেডি শো গুলোর কথা। কানাডা বা আমেরিকান টিভি চ্যানেলগুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় শো গুলোর মধ্যে কমেডি শো গুলো অন্যতম। কিন্তু গত একবছর যাবত বাংলাদেশের টিভি দেখে মনে হলো বাংলাদেশের টিভি গুলো কেন কমেডি শো করে না? তারপরও বাংলাদেশের টিভি দেখে বেশ আমোদ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে খবর দেখে বেশ মজা লাগে। কারনটা কি? খবরতো তো সিরিয়াস বিষয় - আমোদ আসে কোথার থেকে?
অবশেষে আবিষ্কার করলাম - খবরের একটা পার্ট আছে - যেখানে সরকারের তথ্য বিষয়ক প্রধান ( তথ্য মন্ত্রী বা তথ্য উপদেষ্টা) আসলে সকল কমেডির আধার।
একটু অতীত দেখলে দেখবো - এরশাদের তথ্য মন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ (৭১ এ পাকি আর্মিদের মুর্গী সাপ্লাইকারী) মালিকের আদেশে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে বেশ আমোদ তৈরী করেছিলেন।
পরে আরেক তথ্য মন্ত্রী - নাজমুল হুদা বেশ ভাল কমেডি তৈরী করেছেন।
বিগত ইয়াজউদ্দিন সরকারের আমলে বেশ কিছু কমেডিয়ান দেখেছি। তার মধ্যে একজন ছিলেন বিচারপতি ফজলুল হক। যখন তাকে প্রশ্ন করা হলো বিচার বিভাগ পৃথকীকরন সম্পর্কে - উনি বেশ ভাবগম্ভীর ভাবে আইনী কথা বলে আমাদের জানালেন - উনার দড়ির দৈর্ঘ্য অনেক কম।
সুতরাং বিচার বিভাগ পৃথক করা উনার এক্তিয়ারে নেই। ভাল কথা।
কিন্তু ১/১১ এর বিরাট আওযাজ প্রদানকারী ফকরুদ্দীন সরকারের তথ্য এবং আইন উপদেষ্টা প্রথ দিনই জানালেন - উনাদের জন্যে ফর্জ হল বিচার বিভাগ পৃথক করা। বুঝলাম উনার দড়ির দৈর্ঘ্য অনেক বেশী - তাই এক্তিয়ার অনেক।
সমস্যা হলো - দড়ির দৈর্ঘ্যতো অসীম হতে পারে না।
সেটা প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। বিশেষ করে টিভিতে আমোদ প্রদান করার জন্যে যাকে নির্বাচিত করা হয় - তার জন্যে স্বাধীনতা সীমিত থাকবে।
এখন বলছেন এবং উনার হাটখোলার দালান থেকে প্রচারিত মালিকানা ফেরত পাওয়া কাগজটিতে লিখছেন যে- উনার দড়িতে টান পড়ছে। যুদ্ধাপরাধী বিচার বিষয়টি ছোয়ার মতো দড়ির দৈর্ঘ্য উনার জন্যে বরাদ্ধ করা হয়নি। অথবা মালিক দড়ির অন্যপ্রান্ত থেকে টেনে ধরছে - যাতে যুদ্ধাপরাধী বিষয়টি উনার এক্তিয়ার মধ্যে না আসে।
এই দড়ির দৈর্ঘ্যর সীমাবদ্ধতা নাকি মালিকের অনীহা - কোনটা এই ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল - বুঝার ক্ষমতা আমাদের মতো আমজনতার নেই। তবে সাধারন জ্ঞান থেকে বুঝি - মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া দেশের উচ্চ ক্ষমতায় বসে যদি লাখ শহীদের হত্যা আর মা বোনের সম্ভ্রমহানী বিষয়টাকে কার্যতালিকার সর্বোচ্চ স্থানে বসাতে অনীহা আসে - তাহলে সেখানে একটা সমস্যা আছে।
আগের সরকারগুলো বিচার করেনি, বা বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে, বা বিচার বন্ধ করা হয়েছে বলে এই সরকার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে না - সেটা কোন যুক্তি হতে পারে না।
যেখানে আগের সরকারের ব্যর্থতাগুলোকেই বেঞ্চ মার্ক ধরে এই সরকার নিজেদের সাফল্য মাপছেন - সেখানে আগের সরকার বা সরকারগুলোর একটা বড় ব্যর্থতাকে ধারন করে সময় পার করার মাধ্যমে কার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছেন আমাদের "জাতীয় কমেডিয়ান" মইনুল হোসেন। সেটা যে দেশের সংবিধানের প্রতি নয় তা সহজেই বোধগম্য।
প্রশ্ন হলোঃ -
১) আগের সরকারগুলোর সময় যুদ্ধাপরাধী দালালগুরো কি এতো উদ্ধত হওয়ার সাহস পেয়েছিল?
২) অন্য কোন সরকারের সময়ে কি - ঘাতক আল-বদর বাহিনী প্রাদেশিক প্রধান সত্য অস্বীকার করে স্ধাধীনতার ইতিহাস অস্বীকার করার সাহস দেখিয়েছে?
৩) এর আগে কি কোন মুখোশধারী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকারী আমলা নিজের মুখোশ খুলে মুক্তিযদ্ধকে গৃহ যুদ্ধ বলার সাহস পেয়েছে?
৪) এর আগে কি কখনও মীরপুরের জল্লাদ কাদের মোল্লা মতো দালাল মুক্তিযুদ্ধাদের নারী লোভী বলে অপমান করার সাহস পেয়েছে?
এই সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদেই ৭১ এর পরাজিত শক্তি গর্ত থেকে তাদের আসল রূপ নিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। এদের দমন করা, শাস্তি দেওয়া এই সরকারেই দায়িত্ব। সেটা সংবিধানের বাধ্যবাধকতা থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ন - তেমনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লক্ষ মানুষের প্রতি যথাযথ সন্মান প্রদর্শনের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।