আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূমধ্যসাগরে যদি কয়েকজন বাংগালীর লাশ ভেসে যায়,তাহলে কীবা এমন আসে যায়

One of the things I keep learning is that the secret of being happy is doing things for other people.

২৪ জন অফুরন্ত প্রানের অধিকারী যুবক। যারা স্বপ্নের ডানায় ভর করেছিলো। যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশ থেকে কাতার অভিমুখে। গন্তব্য স্পেন,তারপর জীবনকে বদলে দেয়া। হায়রে স্বপ্ন,হায়রে জীবন।

জীবনের নিষ্ঠুর চড়াই উতরাইয়ের পর কাতার,লিবিয়া হয়ে অবশেষে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে পৌঁছা। ২০ দিন মালিতে থাকার পর,এবার দুর্গম মরুর বুক চিরে মালির বর্ডার দোহাঞ্জা। তারপর ৫ দিন পর মৌরিতানিয়ায় খোলা আকাশের নীচে বাড়ে শুধু হাহাকার। সাহারা মরুভুমির ধূ ধূ বালুকা প্রান্তর। যারা স্বপ্নের ফানুস উড়িয়েছিলো , তাদের কেউ আজ পাশে নেই।

মরুর দিন প্রচন্ড গরম,আর রাতে শীত চাবুকের মতো শরীরে বিঁধে যায়। নেই আহার, নেই কোনো পানি। দিন আসে, রাত যায়, তৃষনায় বুকের ছাতি ফেটে যায়। রবিউল,মোসাদ্দককে বলে-ভাই, তুমি প্রশাব করো, আমি পান করি। আর মোসাদ্দেক বলে- প্রশাবই যখন পান করবা, তাইলে নিজের টা নিজেই করি।

হিরন ব্যাপারির ছেলে ফরহাদ মাস্টার বলে-মাগো,বাপের জমিন বেচা সাত লক্ষ টাকায় মরুভুমির এই বিছানা কিনেছি। ৩দিন পর আলজেরিয়ার পুলিশের হাতে ধরা। তারপর,আবারো দালাল। মনে শান্তি ,হয়তোবা স্বপ্নের সোনার হরিন আর বেশী দূরে নেই। ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসের ২৫ তারিখে হিমেলের বাবার সাথে টেলিফোন কথা হয় হিমেলের।

কে জানতো এটাই তাদের শেষ কথা। আলজেরিয়াতে সাতদিন থাকার পর এবার শুরু হলো ৯ মিটার রাবারের বোটে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেন সীমান্তে পৌঁছা। দালালরা বলেছিলো -বড়জোর পাঁচ ঘন্টা চালানোর পর তারা স্পেনে পৌঁছে যাবে। ষোল ঘন্টা চালানোর পর ও কোন কিনার নাই। একসময় বোট নষ্ট হয়ে যায়।

চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। সব খাবার,পানি শেষ। এবার শুরু হলো হাহাকার। কেউ সমুদ্রের পানি পান করে। তারপর শুরু হলো রক্ত বমি।

প্রথম,২য়, ৩য় দিন পার হয়ে যায়। নিস্প্রান বোট পানির উপর দুলতে থাকে। মোসাদ্দেক রক্ত বমি করতে করতে মারা যায়। ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে থাকে হিমেল। একসময় কাঁদতে কাঁদতে হিমেলও মৃত্যুকে আলিঙ্ঘন করে।

ক্ষুধার যন্ত্রনায় অনেকে নীজের কাপড়,জ্যাকেট,ফোম খাওয়া শুরু করে। কেউ,কেউ মানুসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে যায়। তারপর নিজের শরীর নিজে কামড়াতে শুরু করে। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মোট দশজন মারা যায়।

মারা গিয়ে তারা বেঁচে গেলো । আর যারা জীবিত রইলো,তাদের মৃত্যুর সাথে বসবাস। আপন ভাইয়ের,স্বজনের লাশের গন্ধ, কারো মাংস খসে খসে পড়ছে। লাশের গলিত পানি জমতে থাকে। ক্ষুধার যন্ত্রনায় এবার অনেকে মানুসের রক্ত,তারপর কলিজা খাওয়ার প্লান করে।

হায়রে স্বপ্নের জীবন। এভাবে সাতদিন পর হঠাত একদিন আকাশে হেলিকপ্টার দেখা যায়। প্রতিদিন সূর্য্যাস্ত ,সূর্য্যোদয়ের মতো এটি একটি স্বাভাবিক ঘঠনা। তাই জানতে পারলামনা, এ মানুস পাচারের সাথে জড়িত চক্রের কোনো শাস্তি হলো কিনা। হাজারো খবরের ভীড়ে ইহা নিতান্তই স্বাভাবিক সয়ে যাওয়া একটি খবর।

শুধু জানলাম, ভূমধ্য সাগরে দশজন বাংগালীর লাস ভেসে গেছে। আর তারা কিছু মাছের আহার হয়েছে। ১৬ কোটি মানুশের মাঝে যদি কিছু মানুশ এভাবে স্বপ্ন স্পর্শ করতে গিয়ে মারা যায়,তাহলে কী এমন আসে যায়।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।