আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধ কি এবং কারা যুদ্ধাপরাধী!

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

একটা পোস্ট দেখলাম, যুদ্ধাপরাধ কি, কারা যুদ্ধাপরাধী? দেখে বেশ আমোদ পেলাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন প্রথম বানান করতে শিখে তখন ওরা সব কিছুই বানান করে পড়ে এবং বেশ আনন্দ পায়। ঠিক তেমন অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের জামাতিদের। এর প্রভাব দেখি ব্লগেও। গত তিন শতক ধরে একবার এর কাঁধে একবার ওর বুটের নীচে বা কারো শাড়ির আঁচোলের নীচে বেশ নিরাপদেই ছিল ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা।

এখন এরা সঠিক করতে পারছেনা কোন দিকে যাবে - কার কোল নিরাপদ। তা ছাড়া গত তিন দশকের বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করে একটা বাজার যাচাই করার জন্যে "দেশে যুদ্ধাপরাধী নেই", "মুক্তিযুদ্ধ না গৃহযুদ্ধ হয়েছে" বা "মুক্তিযুদ্ধে গেছে সুন্দরী নারীর লোভে" বলে একটা বিতর্ক তৈরী করে একটু ভাব দেখার চেষ্টা করে যখন দেখে ভাব খারাপ। এখন সবাই গর্তে ঢুকে গেছে। কিন্তু সমর্থকরা সবাই গর্তে না গিয়ে কেউ কেউ পরিস্থিতির মোড় ঘুড়ানোর জন্যে বলছে - আসুন আমরা অন্য বিষয়ে আলোচনা করি। তবে একদল বেশ বিজ্ঞের মতো আমাদের যুদ্ধাপরাধীর নিয়ে নবলদ্ধ জ্ঞানসহ যোগে লেখালেখি করে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা চেষ্টা চালাচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধীর সরলীকৃত সংজ্ঞা শুনে আমরা বেশ প্রীত হলাম। নতুন জ্ঞান বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্যে বেশ পিঠ চাপড়ানিও পেলেন। কিন্তু আমি একটা কমেন্ট করার পর ধন্যবাদসহ কমেন্ট মুছে দিয়েছেন। কারন উনি তা "বরদাশ্ত" করতে পারেন নি। এবার আসুন আমরা দেখি - উপরে সংজ্ঞায় যাদের কথা বলা হয়েছে তা আসলে কি? জেনেভা কনভেনশান হলো যুদ্ধকালীন বিবাদমান পক্ষের জন্যে সাধারন কিছু নিয়মকানুন।

সেই নিয়মের অধীনে ৯০ হাজার পাকিস্থানী সৈন্যসহ জেনারেল নিয়াজী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্নসমর্পন করার পর তাদের যথাযথ নিরাপত্তাসহ বিহারীদের নিরাপত্তা দেয় ভারতীয় বাহিনী। সেই সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজাকাররা ভারতীয় বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তা চেয়েছে এবং পেয়েছেও। সেটা জেনেভা কনভেনশানের পুরোপুরি অনসরন করেই করা হয়েছে। তাহলে কি লোকজনের মাথা নষ্ট হয়ে গেল? এরা কেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়? নব জ্ঞান লব্দ ব্লগারের সংজ্ঞাকে সঠিক এবং নিয়ামক ধরি - তা হলে যে কোন যুদ্ধই ঠিক আছে এবং যুদ্ধের সময় মানুষ মারা ছাড়া বিশেষ কিছু কাজ করা যাবে না। সেটাই কিন্তু ব্লগার মহোদয় আমাদের বলতে চেয়েছেন? সেটাই হলো উনার মুল লক্ষ্য।

১৯৭১ সালে যারা বাঙ্গালীদের মেরেছে, যারা দেশের ভিতরে ত্রাস করেছে, যারা গনহত্যা করেছে, এরা সবাই ঠিক কাজই করেছে, তা হলে যুদ্ধাপরাধী বলতে কিছুই নেই। যা পক্ষান্তরে রাজাকার মুজাহিদের বক্তব্যকে সমর্থন করাই হয়। আসলে - উনি যি বক্তব্যটা দিয়েছে তা হলো যুদ্ধাপরাধীর প্রকৃত সংজ্ঞার একটা ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। প্রকৃত সংজ্ঞাটা বিরাট। উনি সরল সংজ্ঞা থেকে যে অংশ টা বাদ দিয়েছেন - তা হলোঃ However the court only has jurisdiction over these crimes where they are "part of a plan or policy or as part of a large-scale commission of such crimes" আর আইন হলো এমন - যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করা হয়।

তেমনি জেনেভা কনভেনশান কোন আইন না। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী আইন প্রনীত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর সবাই উপলদ্বি করে যে - যুদ্ধই একটা অপরাধ। তাই ১৮৫৭ সালের হেগ চার্টারকে আরো আধুনিকায়ন করে প্রনীত হয় লন্ডন চার্টার তারই আলোকে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক নুরেনবার্গ ট্রাইবুনাল। তারপর বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদানের জন্যে নিজস্ব আইন তৈরী করে।

তারপর পরিবর্তিত আইনে চলছে বসনিয়া গনহত্যা, রুয়ান্ডা গনহত্যাসহ আরো অনেক গুলো যুদ্ধাপরাধের বিচার। বিস্তারিত দেখুন এখানে বর্তমানে বিচারের জন্যে গৃহিত যুদ্ধাপরাধী ( স্লাভাধোন মিলোসোভিচ, চালর্স টেইলর বা রুয়ান্ডার শাসকদের) অপরাধ নির্ধারনে এখন যে তিনটা বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে - তা হলো ১) যুদ্ধাপরাধ। ২) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ৩) শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ। একটা বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে - বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে।

সেই দিন থেকে যে সকল বিদেশী সৈন্য এবং তাদের দেশী সহযোগীরা দেশে যুদ্ধ, হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষন এবং ত্রাশ সৃষ্টি করেছে -সবাই লন্ডন চার্টার অনুসারে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে গন্য হবে। তা ছাড়াও, একটা শান্তিপূর্ন জনগোস্ঠীর উপর সামরিক অভিযানের (উদাহরন - অপারেশন সার্চ লাইট) পুরোটাই যুদ্ধাপরাধ হিসাবে গন্য হবে। সেই সময়ে সক্রিয় বেসামরিক লোকজনের উপর আক্রমন, হুমকী, ত্রাস সৃষ্টি করে শান্তি নষ্ট করে তারাও (রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস) যুদ্ধাপোরাধী হিসাবে গন্য হবে। সার্বিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর কোন একটা বিচারও জেনেভা কনভেনশানের অধীনে হয়নি - কারন সেখানে যুদ্ধাপরাধীর কোন প্রকৃত আইন নেই - তার তাই জেনেভা কনভেনশান দিয়ে যুদ্ধাপরাধীর সংজ্ঞা দেওয়াটা অনেকটা বানান করে বই পড়ার চেষ্টা মাত্র। (পরবর্তী পর্ব - বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীর সংজ্ঞা এবং বিচারের জন্যে আইন)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.