আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাদার দেশে কালোর স্বপ্ন

মার্টিন লুথার কিং। তার সম্পর্কে নতুন করে আর বলার নেই। সাদার দুনিয়ায় যে কয়জন কালোর দাপট আজও অগ্রগণ্য তাদের মধ্যে তার অবস্থান সবার শীর্ষে। মার্টিন লুথার জন্মেছিলেন ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি, আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টা শহরে। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিল মাইকেল লুথার কিং, পরবর্তীকালে তার কিশোর বয়সে এই নাম পাল্টে তিনি নিজেই নাম নির্বাচন করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

যে ছেলে কৈশোরেই নিজের জন্মকালীন নাম পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমতো নাম নির্বাচন করতে পারে, সেই ছেলে যে কোনো এলেবেলে ধরনের ছেলে ছিল না, তা তার কিশোর বয়স থেকেই বোঝা গিয়েছিল। কালো চামড়ার ছিল (তখন বলা হতো নিগ্রো) বলে কালোদের জন্য নির্দিষ্ট স্কুলে তাকে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এই ছেলে এতই মেধাবী ছিল যে, তাকে ক্লাস নাইন ও ক্লাস টুয়েলভ পড়তেই হয়নি, দুবার অটোপ্রমোশন পেয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই সে স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে ফেলে। তারপর ধারাবাহিকভাবেই ব্যাচেলর ডিগ্রি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার বাবা-দাদা 'নিগ্রো' হিসেবে অনেক বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারপরও তার বাবা মনে করতেন একমাত্র ভোটের মাধ্যমেই আফ্রিকান-আমেরিকানরা তাদের প্রতি যত বৈষম্যের অভিযোগের জবাব দিতে পারে।

মার্টিন নিজেও এই বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তার যে সবচেয়ে কাছের বাল্যবন্ধু, সে ছিল সাদা, দুজনের বন্ধুত্ব ছিল খুবই গভীর, অথচ তাদের পড়ালেখা করতে হয়েছে 'সাদাদের স্কুল' ও 'কালোদের স্কুলে' যার যার গায়ের চামড়ার রং অনুযায়ী। এই বৈষম্য মার্টিনের মনের গভীরে রেখাপাত করে। তার পরবর্তী জীবনের লক্ষ্য নির্ধারিত হতে থাকে এসব বৈষম্যের অবসান ঘটানো। এই লক্ষ্যে তিনি তার নানা সাংগঠনিক কাজ, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত রাখেন। সিভিল রাইটস নিয়ে তখন থেকেই তিনি সচেতন হতে থাকেন।

আর এই সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পায় তার পিতার ক্লাসফ্রেন্ড, সিভিল রাইটস লিডার 'হাওয়ার্ড থারম্যানের' সানি্নধ্যে এসে। হাওয়ার্ড থারম্যানের সাহচর্যে এসেই জানতে পারেন আরেক কিংবদন্তি অহিংস আন্দোলনের উদ্ভাবক, গরিবের বন্ধু 'মহাত্দা গান্ধী' সম্পর্কে। প্রথম জীবনে হাওয়ার্ড থরম্যান ও পরবর্তী কর্মময় জীবনে মহাত্দা গান্ধীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তার মতো করে তিনি কালোদের প্রতি সমস্ত শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। ১৯৬৩ সালে ড. কিং যুক্তরাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। কিং তার অনুসারীদের নিয়ে দুমাসব্যাপী আন্দোলন চালিয়ে যান।

আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল, আলাবামাতে কালোদেরও সাদাদের সমান অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে হবে। কালোদের সর্বত্র প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। এমনি এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে আলাবামার পুলিশ সেই সমবেত জনতার ওপর দমনমূলক নিপীড়ন চালায়, পুলিশ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জলকামান, টিয়ার গ্যাস, কুকুর লেলিয়ে দেওয়াসহ সব ধরনের অত্যাচার করে সেই শান্তিকামী কালো জনতার ওপর। এতে শিশুরাও রেহাই

পায়নি। এ সময় মার্টিন লুথার কিংসহ আরও অনেককেই গ্রেফতার করা হয়।

সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬৪ সালের ২৮ আগস্ট দাসপ্রথা বিলুপ্তির ১০০ বছরপূর্তিতে অগণিত মানুষের সমাগম হয় ওয়াশিংটন ডিসির লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে। সাদা-কালো সব বর্ণের

মানুষ এসেছিল সে দিন ওই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে। কারণ এই সমাবেশ ছিল কালোদের স্বাধীনতা বা মুক্তি এবং চাকরির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত। ওই সমাবেশে আমেরিকার দক্ষিণী রাজ্যের দুঃখী কালো মানুষদের হয়ে বক্তৃতা করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং। ড. মার্টিন লুথার কিং ওই দিন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ, পৃথিবী শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা করেন, যা কিনা 'আই হ্যাভ এ ড্রিম' নামে খ্যাত।

সেই ড্রিম বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য নেতারাও। ওই বক্তৃতায় তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এক শোষণমুক্ত সমাজের। এই মানুষটি মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পান ১৯৬৪ সালে। প্রাইজমানি ৫৬ হাজার ডলারের সবই দান

করে দেন নাগরিক অধিকার আন্দোলন সংস্থাগুলোকে। এতকিছুর পরেও এক আততায়ীর গুলিতেই ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।