আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্ট্যাটাসগল্পঃ বৃষ্টি, টিনের চালে ফুঁটা এবং অন্যান্য

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আজ তার বিয়ে। তার ঘুম থেকে শুরু করে টয়লেট পেপারের ব্র্যান্ড পর্যন্ত যখন পত্রিকার প্রথম পাতায় আসার মত বিষয়, তখন তার বিয়ে নিয়ে যে সারা বিশ্ব তোলপাড় করবে এতে আর আশ্চর্য কি? সে জানে তার বিয়ের সংবাদে অসংখ্য তরুণীর বুক ভেঙ্গে গেছে, অসংখ্য তরুণী তার গোপনে বিয়ে করা স্ত্রীর মর্যাদা পেতে দুধের বাচ্চার ডিএনএ টেস্টিং করাতে প্রস্তুত হয়ে গেছে। তার বিয়ে হচ্ছে মহা সমারোহে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাসাদে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। সবচেয়ে আরামদায়ক আর লোভনীয় কক্ষে তাদের বাসর।

সে জানে, তাদের বাসরঘরে গোপন ক্যামেরা সেট করতে মিলিয়ন ডলারের অফার পেয়েছে তাদের হাজার বিশ্বস্ত কর্মচারীর একে বা অনেকে। বিয়ে পড়ানো শেষ। বিয়ে পড়িয়েছেন তার ধর্মে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। পারিশ্রমিক পেয়েছেন মিলিয়ন ডলার। তার বাসর ঘর একশ সাতচল্লিশ বারের মত চেক করা হল।

না, কোন গোপন ক্যামেরা নেই। কোন বাগ নেই। নেই কোন লুকায়িত বিস্ফোরক। বিষাক্ত গ্যাস ঢোকার মত ওপেনিংও নেই কোন। বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে সে আস্তে করে বাবাকে বলল, "বাবা, আমার ইচ্ছাটা কি পূরণ করা যায় না?" তার বাবা, যিনি কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি, বললেন, "হ্যাঁ বাবা, আমি সব ব্যবস্থা করেছি।

তোমার বাসরের ইন্টেরিওর ডিজাইন করেছেন পৃথিবীর সেরা আর্কিটেক্ট। বৃষ্টির চমৎকার সাউন্ড রেকর্ড করেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কম্পোজার। কৃত্রিম বিদ্যুচ্চমকের ব্যবস্থা করেছেন পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানী। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার দায়িত্বে ছিলেন পৃথিবীর সেরা এয়ার কন্ডিশনিং এক্সপার্ট। বৃষ্টির ফোঁটা টিনের চালে পড়ার সব রকম অনুভূতিই তুমি পাবে।

এমনকি তোমার পানির ফোঁটা বালতিতে পড়ার মধ্যযুগীয় প্রস্তাবনাও গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করেছি আমি। আমি আশীর্বাদ করছি, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাসর যেন তোমারই হয়। " তার মন খারাপ হয়ে গেল। সে বলল, "বাবা, আমি সত্যিকারের টিনের চালের নিচে বৃষ্টিস্নাত অন্ধকার রাতে বাসর চেয়েছিলাম। সত্যিই চেয়েছিলাম টিনের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি টপটপ করে পড়ুক কমদামী কোন রংচটা বালতির ভিতর।

সত্যিকার অর্থেই এগুলো চেয়েছিলাম আমি, শুধু কৃত্রিম কিছু অনুভূতি তো আমি চাই নি। তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ, তুমি কি আমার জন্য এটুকুও করতে পারো না?" বাবা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, "বাবা, তুমি তো জানোই আমাদের প্রত্যেকটি কথা, প্রত্যেকটি পদক্ষেপ রেকর্ড করা হয়। একশ বিশ্বস্ত নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আমরা চলাফেরা করতে পারি না। তুমি জানো, আমার শত্রুপক্ষের জন্য তোমার জীবন অতি মূল্যবান। আমি কোনমতেই তোমায় অরক্ষিতভাবে গ্রামের একটি টিনের চালের ঘরে তোমায় যেতে দিতে পারি না।

তোমার মধ্যযুগীয় সুখের চেয়ে তোমার জীবন অনেক বেশি মূল্যবান। আমি দুঃখিত। " বাসর। টিনের উপর বৃষ্টির শব্দ। টিনের ফুঁটো দিয়ে পানির ফোঁটা বালতির উপর টপ টপ করে পড়ার কৃত্রিম শব্দ।

বজ্রপাত। অন্ধকার। সামনে রহস্যমণ্ডিত নারী। মানবী। স্ত্রী।

যার বুকে আলোড়ন, অজানা ভবিষ্যতের অচেনা সুখের শিহরণ। সে কাঁদছে। অঝোর ধারায় কাঁদছে সে। *** রিকশাওয়ালা রহিম শেখের খুব মন খারাপ। আজ তার বাসর।

অথচ টিনের ফুঁটা মেরামত করার কোন পয়সা তার নেই। তার উপর যোগ হয়েছে বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টি। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছে রহিম শেখ।

কিন্তু সেটা তার মনঃকষ্টের কারণ নয়। তার সামনে ঘোমটা দিয়ে মুখ নিচু করে বসে আছে আসমা খাতুন। তার সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী। ঠাণ্ডায় জমে কুঁকড়ে রয়েছে মেয়েটা। অথচ একটা টুঁ শব্দও করছে না সে।

রহিম শেখের খুব ইচ্ছা করছে বউকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু ভিতর থেকে কে যেন তাকে বাঁধা দিচ্ছে। বাসর রাতেই নাকি বউকে টাইট দিতে হয়, সবাই তাকে এই বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছে। অথচ রহিম শেখের ইচ্ছা করছে প্রবল নিখাদ ভালোবাসায় আসমাকে বর্তমান পৃথিবী হতে বিস্মৃত করতে। মেয়েটা কাঁপছে।

ইস, কি কষ্টই না হচ্ছে মেয়েটার। আহারে, খোদা এমন পাষাণ কেন? অন্তত বাসরের রাতটা কি তিনি বৃষ্টিটা বন্ধ রাখতে পারতেন না? টিনের ফুঁটা দিয়ে টপটপ করে পানি বালতির উপর পড়ছে। রহিম শেখ কাঁদছে। তার জীবনে এত দুঃখ কেন? মেয়েটা এত ভাল কেন? আহারে, মেয়েটা ঠাণ্ডায় কি কষ্টই না পাচ্ছে। আচ্ছা, ওকে জড়িয়ে ধরলে কি ও কিছু মনে করবে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.