আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাসঙ্কটে বোতল মামা-৩



আগামীকাল সকালেই এলিয়েন হানা দেবে। মামা বেশ আয়েশ করে মুড়ি চিবুচ্ছেন। মুখে কিছু না বললেও পায়েল বুঝতে পারলো মামা তার মাথা শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে করেই হোক একটা উপায় বের করতেই হবে। পায়েল এখন সত্যি সত্যিই ভয় পাচ্ছে।

এলিয়েনের কণ্ঠ শোনার পরই তার সন্দেহ কেটে গেছে। রাতে খাওয়ার সময় মামা কেবল একটা কথাই বলেছেন, তা হচ্ছে 'চা দাও'। পায়েলের মা ফ্লাস্কভর্তি চা বানিয়ে দিয়েছেন। ফ্লাস্কের সাইজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মামা সারারাত জাগতে যাচ্ছেন। পায়েল পড়েছে মুশকিলে।

মামা থাকবেন ছোট্ট একটা গেস্টরুমে। পায়েলের রুম থেকে যন্ত্রপাতি যা যা ছিল সব সেখানে নিয়ে গেছেন। পায়েলেরও ইচ্ছে রাত জেগে মামার কাজ দেখে। বিজ্ঞানীদেরওতো অ্যাসিসট্যান্ট লাগে। কিন্তু মা দেখলে রক্ষে নাই।

মামার রুমে চুরি করেই যেতে হবে। যে করেই হোক। গেস্ট রুমটাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে দুদিন আগেও মাকড়সা আর ইঁদুরের বসত ছিল। বোতল মামা রুমটাকে রীতিমতো নাসার হেডকোয়ার্টার বানিয়ে ছেড়েছেন। অবশ্য সন্ধা থেকেই একনাগাড়ে খেটেছেন তিনি।

পায়েলের প্রশ্নের জবাবও ঠিকমতো দিতে পারেননি। পায়েলও টুকটাক সাহায্য করেছিল। রুমে একটাই জানালা। জানালার ওপাশটা গাছপালায় ছেয়ে আছে। বর্ষাকাল এখনও পুরোপুরি আসেনি।

তাই জানালা খোলা রাখতে সমস্যা নেই। তা না হলে গাছ বেয়ে ঘরে সাপও ঢুকতে পারে। যাই হোক এখন সেই জানালা দিয়ে বাইরে দুটো বড় বড় অ্যান্টেনা ঝুলছে। পায়েলদেরই পুরনো টিভির অ্যান্টেনা। সেগুলোর সঙ্গে আবার অনেক তার পেঁচানো।

তারের এক মাথা এসে লেগেছে পুরনো টিভিটাতে। টিভির পাশেই মাঝারি সাইজের দুটো কালো বাক্স। মামার ভাষায় সেগুলো হচ্ছে সিগনাল প্রসেসর। পায়েল তা বুঝতে চাওয়ার সাহস পেল না। দেয়ালজুড়ে অনেকগুলো তার ঝুলছে।

কোনোটা আবার সরাসরি ঢুকেছে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সঙ্গে। বোতল মামা পায়েলকে এনিয়ে পাঁচবার সতর্ক করে বলেছেন, 'খবরদার কোনো তারের সঙ্গে যেন হাত না লাগে। ' পায়েলও বাধ্য ছাত্রীর মতো মাথা ঝাঁকিয়েছে। রাত এগারটা। অন্যদিন হলে পায়েল মিনিটে পাঁচটা করে হাই তুলতো।

কিন্তু আজকের দিনটা আলাদা। ঘুমতো দূরে থাক, তার আলসেমী করতেও ইচ্ছে করছে না। চাইলে এখুনি একশ মিটার দৌড় দিতে পারবে। তবে এখনো সে কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। মামা এক মনে কাজ করেই যাচ্ছেন।

তেপান্তরটা মাঝে মাঝে শোঁ শোঁ শব্দ করছে, আর টিভিতে একগাদা হিজিবিজি সংখ্যা ভেসে আসছে। জানালার ওপাশে রাখা অ্যান্টেনাগুলোতে ণিকের জন্য বিদ্যুতের ঝলকানিও দেখেছে পায়েল। মামা কোনো কথা না বললেও পায়েলের বিরক্তি লাগছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে সে বসে থেকেই রাত পার করে দিতে পারবে। রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট।

বোতল মামা পায়েলের দিকে চোখ কুঁচকে তাকালেন। 'কিরে ঘুমাসনি?'। পায়েল মামার দিকে বিরক্ত চোখে তাকালো। মামা কি এতোক্ষণ তাকে দেখতেই পায়নি! হতে পারে। বিজ্ঞানীদের অতো খেয়াল থাকলে চলে না।

পায়েল মাথা নাড়লো। যার অর্থ তার খুব একটা ঘুম পায়নি। 'তোমার সমস্যা না হলে আমি এখানে বসে তোমার কাজ দেখতে চাই'। বোতল মামা হুঁ জাতীয় একটা শব্দ করলেন। যার কোনো অর্থ হয় না।

পায়েল আবার বললো, 'মামা একটা কথা। ' Ñ হুঁ বল। Ñ এলিয়েনরা সবার আগে কাকে মারবে? Ñ জানি না, আমার ওপর ওদের রাগ বেশিতো। আমাকেই হয়তো ধরবে। ক্যাঁক করে।

পায়েল হেসে ফেলল। মামার ইয়ার্কি শুনেই মনে হলো, এলিয়েন নিয়ে মামা মোটেও ভীত নন। বরং কেমন যেন অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে আছেন। পায়েলের ভীষণ ইচ্ছে হলো মামার সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু সে তো বিজ্ঞানের অতোসব বোঝে না।

ইশ্ মামার মতো সেও যদি ফটাফট সব কিছু বানিয়ে ফেলতে পারতো! 'শোন'। মামার গলা শুনে পায়েল নড়েচড়ে বসে। মামা বোধহয় এবার কিছু বোঝাবে তাকে। তবে কথা বললেও কিবোর্ডে মামার আঙ্গুল ঠিকই চলছে। 'শোন, এলিয়েনগুলোর শরীরের ৯৯.৯৯ ভাগ হচ্ছে পানি।

আমাদের পৃথিবীর পানির মতোই। খুব বেশি তাপ দিয়েও কাজ হবে না। বাষ্প হবে ঠিকই, তবে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনকে একসঙ্গে রাখার মতো ক্ষমতা তাদের আছে। আর... জানিসতো হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে পানি হয়?' পায়েল ওপর নিচ মাথা নাড়লো। এটা সে অনেক আগেই শিখেছে।

'যাই হোক, আমি ঠিক করেছি, এলিয়েন পৃথিবীর কক্ষপথে আসা মাত্রই হাই-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ ছুড়ে এলিয়েনকে টুকরো টুকরো করে ফেলবো। ' 'কিন্তু মামা, টুকরো টুকরো করে কী লাভ, ওরা তো ফোঁটা ফোঁটা এলিয়েন হয়ে যাবে'। মামা বললেন, 'ঠিক ধরেছিস, সেটাও ভেবে রেখেছি। তার আগে বল টিভির তরঙ্গ সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে?' পায়েল যথারীতি এদিক ওদিক মাথা নাড়লো। 'শোন, টিভির তরঙ্গ একদিকে যায় না।

সবদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে যায়, এ জন্য সবাই এক সময়ে একই অনুষ্ঠান দেখি। আর শব্দ-ছবিও এক সঙ্গে ছড়িয়ে যায়। তাই আলোর গতি বেশি হলেও আমরা টিভিতে শব্দ ও ছবি একসঙ্গে দেখি। এলিয়েনের দিকেও আমি সেরকম ওয়েভ ছড়িয়ে দেবো। ' পায়েল বুঝলো, ওয়েভ মানে হলো টিভি স্টেশন থেকে অদৃশ্য যে শক্তিটা তাদের অ্যান্টেনায় ধরা পড়ে।

বাংলায় যাকে তরঙ্গ বলে। মামা তাকে আগেও এ নিয়ে বুঝিয়েছিল। কিন্তু বেশি কিছু মনে রাখতে পারেনি। আর যতোটুকু মনে পড়ে তা হচ্ছে হাই-ফ্রিকোয়েন্সি মানে শক্তিশালী তরঙ্গ। সেটা দিয়ে অনেক অসাধ্য কাজও করা সম্ভব।

মামা উঠে গিয়ে কাপে চা ঢাললেন। পায়েলের দিকেও একটা কাপ বাড়িয়ে দিলেন। প্রথম চুমুক দিয়েই বললেন, 'হুঁম, আমি যে ওয়েভটা পাঠাবো, সেটা অনেক পাওয়ারফুল। তবে এলিয়েনের কাছে যদি তারচেয়েও বড় কিছু থেকে থাকে তবে...' মামা দ্বিতীয় চুমুক দিলেন। পায়েল বললো, আমার মনে হয় থাকবে না।

মামা মাথা নাড়িয়ে বললেন, 'বলা যায় না। ওরা আমার টেলিস্কোপে উল্টাপাল্টা সিগনাল দিচ্ছে। কিছুই জানতে দিচ্ছে না। ' বোতল মামার চেহারা আবারো ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে আসছে। পায়েল বললো, 'আমার মনে হয় ওরা তোমাকে অযথা ভয় দেখাচ্ছে।

ভয় পেয়ে যেন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকো সে জন্য উল্টাপাল্টা সিগনাল দিচ্ছে। ' বোতল মামা বোধহয় পায়েলের কথায় কিছুটা ভরসা পেলেন। তার মুখে কিঞ্চিত হাসির প্রলেপ ফুটে উঠেছে। কিবোর্ডে টাইপের গতিও বেড়েছে অনেক। পায়েলের চোখ এখন টিভি পর্দায়।

তাতে মাঝে মাঝে বিশাল সাইজের কিছু গোলক দেখা যাচ্ছে। পানির মতো টলমল করছে। এমন সময় মামা বললেন, পানির হাইড্রোজেনে থাকে পজেটিভ আর অক্সিজেনে থাকে নেগেটিভ চার্জ। এ দুটোর কারণে পানির অণু তৈরি হয়। এই চার্জের কারণেই পানির সঙ্গে পানি দ্রুত মিশে যায়।

ওয়েভ পাঠিয়ে যদি একবার ওদের চার্জটা উল্টে দেয়া যায় তাহলেই কাজ সারা। পানি একেবারে সত্যি সত্যিই টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। ' পায়েল পুরোটা না বুঝলেও কিছুটা বুঝেছে। বলল, মামা তারমানে হাইড্রোজেন অক্সিজেন আলাদা করে দেবে তুমি! মামা হেসে বললেন, ইয়া ইয়া। আই ক্যান ডু দ্যাট।

পায়েলের ইচ্ছে হলো ইয়াহু বলে একটা লাফ দেয়। কিন্তু রাত প্রায় ১টা বাজতে চললো। এ সময় জেগে থাকাটাই একটা বিশাল অপরাধ। চিতকারতো অসম্ভব! 'মামা! এলিয়েনগুলোর সঙ্গে একটু কথা বল না। দেখি যুদ্ধের আগে ওদের সাহস কতোটুকু থাকে'।

মামা টিভি পর্দায় তাকিয়ে আছেন। পানির গোলকগুলো ছুটে আসছে। সুপারকম্পিউটার তেপান্তর থেকে শোঁ শোঁ শব্দ আসছে। মামা হাসি হাসি মুখে এলিয়েন দেখছেন আর মাঝে মাঝে কিবোর্ডে আঙ্গুল বুলোচ্ছেন। বিড়বিড় করে বললেন, 'বাছাধন আসো আসো, সকালে দেখা হবে।

তোমাদের মোরব্বা না বানালে আমার নাম...' বাকিটা শেষ করলো পায়েল, 'বোতল মামা থেকে শিশি মামা হয়ে যাবে। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।