আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমাজ, রাজনীতি ও পরিবর্তনের অনুশীলন : একটি আলাপচারিতা-৩



সমাজ, রাজনীতি ও পরিবর্তনের অনুশীলন একটি আলাপচারিতা-৩ আফজাল : এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই সেটা হচ্ছে বাংলার ভাব আন্দোলন, আমাদের এখানে কৃষি ব্যবস্থাটাই এরকম ছিল যে সংস্কৃতির সাথে বা মানুষর চৈতন্যের সাথে সরাসরি কৃষি ব্যবস্থা বা উৎপাদন ব্যবস্থা ৎবষধঃবফ ..... ব্যবস্থাটা এমন ছিল যে জমির মালিকানার ধারণা বল প্রয়োগ করে উৎখাত না করে চৈতন্য দিয়ে তা মোকাবেলা করার মতো একটা ব্যাপার। তো ভূমি সংস্কারে এরকম কোনো ব্যবস্থার কথা আপনারা বলেন কি-না ? রাহী : মালিকানার বোধ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন রকম। যেমন ধরেন কোনে কোনো অঞ্চল এখনও আছে, যেখানে মানুষ মনে করে যে ‘আমি, ঐ গাছটা আর ঐ গরুটাÑআমরা তিনজন’। তার মানে নিজের ব্যক্তি পরিচয়টা আমাদের আধুনিক যে বুর্জোয়া সমাজ আছে, যেখানে ব্যক্তির পরিচয়টা মুখ্য, আমরা যদি মানুষগুলোকে চেতনার একেকটা ‘একক’ হিসাবে ধরি, তাহলে আমিও একজন এবং অন্যগুলো কিন্তু ব্যক্তি না, গাছপালাগুলো, প্রজাপতি, ঐ কেঁচোটা, এরা কিন্তু ব্যক্তি না। কিন্তু অনেক জনগোষ্ঠী আছে যারা গাছাপালা, পশুপাখি এদেরকে নিজের অংশ হিসেবে দেখে, নিজের মতোই দেখে।

এটা স্থান-কাল-পাত্র ভেদেই হয় এবং এটা পরিবর্তনশীল। আরেকটা, যেটা আপনি বলেছেন, সেটা হচ্ছে এখানকার ভাবটা কী ছিল, সংস্কৃতিটা কী ছিল। এটা অবশ্যই সঠিক যে একটা অঞ্চলের আবহাওয়ার সঙ্গে জনগণের ভাবমণ্ডলের সম্পর্ক থাকে। যেমন, এইখানকার অনেক জায়গায় জমি প্রতি বছরই ভাঙত। নদী একদিকে ভাঙত আর একদিকে গড়তো, ফলে জমির মালিকানা থাইকা খুব বেশি লাভ নাই।

কিংবা এখানে ধরেন যে খোলা মাঠে গরু চরাচ্ছে। কার জমি কে জানে। কিন্তু গরু তো ঘাস খাচ্ছে। গরু কি সম্পদ না? অর্থনীতির ভাষায় গরু এবং ঘাস দুটোই তো সম্পদ। ফলে ঝবৎারপব পযধৎমব নেয়ার কথা (হা... হা...) যে, আমার জমিতে তোমার গরু ঘাস খাচ্ছে তো সার্ভিস চার্জ দাও।

মানে নানান ভাবে সম্পত্তির একটা সামাজিক মালিকানার চর্চা ছিল। অবশ্যই ছিল। বিবর্তন নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি নানান কারণে এই জিনিসগুলো নাই বর্তমানে। আইন করে কোনো কিছু চাপায়া দেওয়া সম্ভব না জনগণের উপর।

সেটা ফিরে আসতে বাধ্য। সেটা বুমেরাং হবে। আমরা মনে করি যে এর জন্য সামাজিক একটা প্রস্তুতি দরকার। সামাজিক বলতে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং কাঠামোগত প্রস্তুতি দরকার। আমরা আইন করে বা একদিনে দখল করে ফেলব, এই প্রক্রিয়ার ঘোর বিরোধী।

আফজাল : এইখানে আমি এরিক উলফ্রে একটা কাজের কথা উল্লেখ করতে চাই, উনি ল্যাটিন আমেরিকা, ব্রাজিল এই সমস্ত অঞ্চলের নিু শ্রেণীর কৃষকদের উপর কাজ করে দেখান ব্যক্তিকে সমষ্টি থেকে আলাদা করার জন্য মূলতঃ রহফরারফঁধষ ঢ়বৎংড়হ যখনই তৈরী করা যায় তখন শোষণের প্রক্রিয়াটা সহজতর হয় বা পুুঁজিতন্ত্রের বিকাশের পথ সহজ হয়। তো আমাদের এখানে যখনই শিল্প সভ্যতার আগ্রাসনটা হলো, তখনই আমরা এই জায়গা থেকে বা এখানকার যে বিকাশের কথা বা যে ধরনের সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেন বা যে ধরনের কৃষি ব্যবস্থার কথা বললেন, যে ভাবের কথা বললেন, তখন থেকেই কি আমরা ঐ জায়গাটা থকে বিচ্যুত হয়ে গেলাম, অথবা এই মনোগঠন তৈরির জন্য কি পশ্চিমই দায়ী বা এই পুুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাই দায়ী ? রাহী : বিশেষ করে বিবর্তনবাদী এবং প্রগতিবাদী চিন্তাবিদরা বা সমাজ বিজ্ঞানীরা বা ঐতিহাসিকরা এটা মনে করে...। এক হচ্ছে পুঁজিবাদ সেই ব্যক্তিগুলো তৈরি করে এবং এর দুই রকম দিক তারা দেখেন, একদিক ইতিবাচক, তারা দেখেন যে পুঁজিবাদ, (তাদের পদ্ধতি/বিশ্লেষণ অনুসারে) সামন্ত সংস্কৃতির যে খারাপ দিকগুলো সেটা থেকে মানুষকে মুক্ত করে। ফলে এটার একটা ইতিবাচক দিক তারা দেখেন। যে কারণে তারা মনে করেন, মোটাদাগে যে ভাগটা আছেÑদাস, সামন্ত, বুর্জোয়াÑএই ভাগগুলো, পুঁজিবাদের বিকাশের এই পর্যায়গুলো, তারা মনে করেন যে একটা থেকে আরেকটায় উন্নতি হচ্ছে বা বিকাশ হচ্ছে।

কিন্তু আসলে ঘটনার দু'টো দিকই আছে। আমি এই প্রশ্নে এইভাবে তর্কটা করতে আসলে ইচ্ছুক না। খুব গোড়ার কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন ধরেন ‘নিজ’ এবং ‘অপরের’ সম্পর্কটা কি আসলে? পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ব্যক্তির যে বিকাশ ঘটাচ্ছে এবং যে ব্যক্তিটাকে আমরা দেখি, তার রাজনৈতিক ও দার্শনিক পরিচয় কি? আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যক্তি/সমষ্টির চেতনার একটা রূপে প্রকাশিত। ব্যক্তি ও সমষ্টি ভাবের একটা রূপের প্রকাশ হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা।

শুধু উল্টাটাই না। একটার ওপর আরেকটা না। একে অন্যের পর্দা বা ইন্টারফেস হিসেবেও কাজ করে। ...যেই কারণে আমরা মোটাদাগে অর্থনীতির যে সমস্ত বর্গ ব্যবহার করতেছি বা ধারণা ব্যবহার করতেছি, সেটা কাজ চালানো পর্যন্ত যতটুকু লাগে এই পর্যন্ত আমরা যেতে রাজি, এর বেশি না। আমরা ন্যুনতম ঐক্যমতের ভিত্তিতে আসলে পরিবর্তনকামীদের সঙ্গে কাজ করি।

বাদবাকিটা আমাদের নিজেদের অনুসন্ধান, নিজেদের অনুশীলন, প্রস্তাবনা। যেমন, যারা প্রচলিত একটা ধারায় বামপন্থী রাজনীতি করে তারা কিন্তু বলে ‘মতা দখল করবে’ তারপরে ওমুক ওমুক করবে। কিন্তু আমরা মনে করি যে সেটা সঠিক কোনো রাস্তা না আসলে। আর মতা দখল করা মানে কি? মতা দখল করা মানে যদি সেনাবাহিনী আমার, পুলিশ আমার, টেলিভিশন আমারÑএইটা বুঝায়, এই দিয়ে যে আসলে টেকে না, সেটাও তো প্রমাণ হইছে। তাইলে মতার অর্থ কি? মতার প্রক্রিয়াটা কি? এখানে ‘ঐবমবসড়হু’র প্রশ্ন আছে।

‘আদর্শিক’ যে প্রক্রিয়া আছে, তার ব্যাপারে বোঝাপড়া, লড়াইয়ে যুক্ত থাকার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান ঠিক করার ব্যাপার আছে। ..... বিতর্কের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সমাজের সামনে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এটা সত্য, যা আছে তা আমরা মানতে পারতেছি না, ফলে তাকে ভাঙতে যা যা লাগে সবই করব। যেমন, প্রগতির যে ধারণায় বলা হয় ‘বাহ! মানুষ তো কত আগায়া গেল,’ কোথায় গেল মানুষ? কই গেল ? কই যায়? প্রগতির সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শকেও প্রশ্ন করা, চ্যালেঞ্জ করা জরুরী। কারণ ওইটা দিয়া সে আগ্রাসন করে।

এমন একটা পর্যালোচনামূলক প্রক্রিয়া আমাদের দরকার যে প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমরা ঐ জায়গাটায় যেতে পারি। উপলব্ধি করতে করতে যেতে পারি। নিজের ভাবটাকে চিনতে চিনতে যেতে পারি। জিনিসটাকে উপলব্ধি করতে করতে চলাটাকে আমাদের কাছে মনে হয় কাজের পদ্ধতি। এইটা হইল বিজ্ঞান।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। রাজীবুল : আপনাদের মতো সংগঠনগুলো যারা ‘উন্নয়নে’র বিপে কাজ করে, আমাদের রাষ্ট্র বাইরের যে চাপের ভিতর কাজ করে তাকেও প্রশ্ন করে। তো সেই অবস্থানে আপনাদের আকার এখন ছোট পরিসরে, কিন্তু সেইটা যদি বিস্তৃতি লাভ করে সেেেত্র রাষ্ট্রের প নিবেন, না রাষ্ট্রের বিপে যাবেন? রাষ্ট্রীয় শক্তির সাথে তখন আপনাদের অবস্থানটা কি হবে? রাহী : আমাদের এই অঞ্চলে, যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কথা বলি উদাহরণ হিসাবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র উন্নয়ন ধারণায় কুপোকাত একটা রাষ্ট্র। প্রতিদিন আপনি দেখবেন যে এখানকার দাপটওয়ালা দল, গোষ্ঠী, সবাই উন্নয়ন বলে বলে মহাপাগল হয়ে গেছে। মানে পুরো রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের যে অধিপতি শ্রেণী তারা আসলে উন্নয়ন ধারণায় আক্রান্ত, বলা যায় যে তারা আসলে পরাজিত, আতœসমর্পন করে বসে আছে, নাহয় তারা আসলে এটাকে বুঝতেই সম না।

ডড়ৎষফ ইধহশ আজকে যদি বলে তোমার উন্নয়ন আসলে ঊপড়ষড়মরপধষ অমৎরপঁষঃঁৎব, তারা বলবে যে হ্যাঁ তাই তো তাই তো। আবার যদি বলে দুর, কি বাজে কাজ করো, তুমি তো মানুষ না খাওয়ায়া মারবা, তুমি ইয়া করো, এই যে এৎববহ জবাড়ষঁঃরড়হ করো, ও বলবে যে হ্যাঁ তাই তো তাই তো। ...এই সবইতো চলছে উন্নয়নের নামে। প্রতিষ্ঠিত যে উন্নয়ন ধারণা, এর সাথে আসলে পুুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং ধ্যান-ধারণা যুক্ত। প্রশ্নকারীর সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে, এইটা একটা হুমকি এই ব্যবস্থার জন্য।

ফলে এইটাকে তারা পযধষষবহমব হিসাবে নিবে। এইটা অবশ্যই একটা মতার প্রশ্ন। সমাজ ও মতা কাঠামোর পরিবর্তনের প্রশ্ন। আমরা পরিবর্তনের পক্ষে। জুলাই ১৪, ২০০৪ ।

‘ভিন্নচোখ’। ....সংখ্যা থেকে। সংিেপত ও সম্পাদিত। আফজাল : এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই সেটা হচ্ছে বাংলার ভাব আন্দোলন, আমাদের এখানে কৃষি ব্যবস্থাটাই এরকম ছিল যে সংস্কৃতির সাথে বা মানুষর চৈতন্যের সাথে সরাসরি কৃষি ব্যবস্থা বা উৎপাদন ব্যবস্থা ৎবষধঃবফ ..... ব্যবস্থাটা এমন ছিল যে জমির মালিকানার ধারণা বল প্রয়োগ করে উৎখাত না করে চৈতন্য দিয়ে তা মোকাবেলা করার মতো একটা ব্যাপার। তো ভূমি সংস্কারে এরকম কোনো ব্যবস্থার কথা আপনারা বলেন কি-না ? রাহী : মালিকানার বোধ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন রকম।

যেমন ধরেন কোনে কোনো অঞ্চল এখনও আছে, যেখানে মানুষ মনে করে যে ‘আমি, ঐ গাছটা আর ঐ গরুটাÑআমরা তিনজন’। তার মানে নিজের ব্যক্তি পরিচয়টা আমাদের আধুনিক যে বুর্জোয়া সমাজ আছে, যেখানে ব্যক্তির পরিচয়টা মুখ্য, আমরা যদি মানুষগুলোকে চেতনার একেকটা ‘একক’ হিসাবে ধরি, তাহলে আমিও একজন এবং অন্যগুলো কিন্তু ব্যক্তি না, গাছপালাগুলো, প্রজাপতি, ঐ কেঁচোটা, এরা কিন্তু ব্যক্তি না। কিন্তু অনেক জনগোষ্ঠী আছে যারা গাছাপালা, পশুপাখি এদেরকে নিজের অংশ হিসেবে দেখে, নিজের মতোই দেখে। এটা স্থান-কাল-পাত্র ভেদেই হয় এবং এটা পরিবর্তনশীল। আরেকটা, যেটা আপনি বলেছেন, সেটা হচ্ছে এখানকার ভাবটা কী ছিল, সংস্কৃতিটা কী ছিল।

এটা অবশ্যই সঠিক যে একটা অঞ্চলের আবহাওয়ার সঙ্গে জনগণের ভাবমণ্ডলের সম্পর্ক থাকে। যেমন, এইখানকার অনেক জায়গায় জমি প্রতি বছরই ভাঙত। নদী একদিকে ভাঙত আর একদিকে গড়তো, ফলে জমির মালিকানা থাইকা খুব বেশি লাভ নাই। কিংবা এখানে ধরেন যে খোলা মাঠে গরু চরাচ্ছে। কার জমি কে জানে।

কিন্তু গরু তো ঘাস খাচ্ছে। গরু কি সম্পদ না? অর্থনীতির ভাষায় গরু এবং ঘাস দুটোই তো সম্পদ। ফলে ঝবৎারপব পযধৎমব নেয়ার কথা (হা... হা...) যে, আমার জমিতে তোমার গরু ঘাস খাচ্ছে তো সার্ভিস চার্জ দাও। মানে নানান ভাবে সম্পত্তির একটা সামাজিক মালিকানার চর্চা ছিল। অবশ্যই ছিল।

বিবর্তন নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি নানান কারণে এই জিনিসগুলো নাই বর্তমানে। আইন করে কোনো কিছু চাপায়া দেওয়া সম্ভব না জনগণের উপর। সেটা ফিরে আসতে বাধ্য। সেটা বুমেরাং হবে।

আমরা মনে করি যে এর জন্য সামাজিক একটা প্রস্তুতি দরকার। সামাজিক বলতে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং কাঠামোগত প্রস্তুতি দরকার। আমরা আইন করে বা একদিনে দখল করে ফেলব, এই প্রক্রিয়ার ঘোর বিরোধী। আফজাল : এইখানে আমি এরিক উলফ্রে একটা কাজের কথা উল্লেখ করতে চাই, উনি ল্যাটিন আমেরিকা, ব্রাজিল এই সমস্ত অঞ্চলের নিু শ্রেণীর কৃষকদের উপর কাজ করে দেখান ব্যক্তিকে সমষ্টি থেকে আলাদা করার জন্য মূলতঃ রহফরারফঁধষ ঢ়বৎংড়হ যখনই তৈরী করা যায় তখন শোষণের প্রক্রিয়াটা সহজতর হয় বা পুুঁজিতন্ত্রের বিকাশের পথ সহজ হয়। তো আমাদের এখানে যখনই শিল্প সভ্যতার আগ্রাসনটা হলো, তখনই আমরা এই জায়গা থেকে বা এখানকার যে বিকাশের কথা বা যে ধরনের সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেন বা যে ধরনের কৃষি ব্যবস্থার কথা বললেন, যে ভাবের কথা বললেন, তখন থেকেই কি আমরা ঐ জায়গাটা থকে বিচ্যুত হয়ে গেলাম, অথবা এই মনোগঠন তৈরির জন্য কি পশ্চিমই দায়ী বা এই পুুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাই দায়ী ? রাহী : বিশেষ করে বিবর্তনবাদী এবং প্রগতিবাদী চিন্তাবিদরা বা সমাজ বিজ্ঞানীরা বা ঐতিহাসিকরা এটা মনে করে...।

এক হচ্ছে পুঁজিবাদ সেই ব্যক্তিগুলো তৈরি করে এবং এর দুই রকম দিক তারা দেখেন, একদিক ইতিবাচক, তারা দেখেন যে পুঁজিবাদ, (তাদের পদ্ধতি/বিশ্লেষণ অনুসারে) সামন্ত সংস্কৃতির যে খারাপ দিকগুলো সেটা থেকে মানুষকে মুক্ত করে। ফলে এটার একটা ইতিবাচক দিক তারা দেখেন। যে কারণে তারা মনে করেন, মোটাদাগে যে ভাগটা আছেÑদাস, সামন্ত, বুর্জোয়াÑএই ভাগগুলো, পুঁজিবাদের বিকাশের এই পর্যায়গুলো, তারা মনে করেন যে একটা থেকে আরেকটায় উন্নতি হচ্ছে বা বিকাশ হচ্ছে। কিন্তু আসলে ঘটনার দু'টো দিকই আছে। আমি এই প্রশ্নে এইভাবে তর্কটা করতে আসলে ইচ্ছুক না।

খুব গোড়ার কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন ধরেন ‘নিজ’ এবং ‘অপরের’ সম্পর্কটা কি আসলে? পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ব্যক্তির যে বিকাশ ঘটাচ্ছে এবং যে ব্যক্তিটাকে আমরা দেখি, তার রাজনৈতিক ও দার্শনিক পরিচয় কি? আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যক্তি/সমষ্টির চেতনার একটা রূপে প্রকাশিত। ব্যক্তি ও সমষ্টি ভাবের একটা রূপের প্রকাশ হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা। শুধু উল্টাটাই না। একটার ওপর আরেকটা না।

একে অন্যের পর্দা বা ইন্টারফেস হিসেবেও কাজ করে। ...যেই কারণে আমরা মোটাদাগে অর্থনীতির যে সমস্ত বর্গ ব্যবহার করতেছি বা ধারণা ব্যবহার করতেছি, সেটা কাজ চালানো পর্যন্ত যতটুকু লাগে এই পর্যন্ত আমরা যেতে রাজি, এর বেশি না। আমরা ন্যুনতম ঐক্যমতের ভিত্তিতে আসলে পরিবর্তনকামীদের সঙ্গে কাজ করি। বাদবাকিটা আমাদের নিজেদের অনুসন্ধান, নিজেদের অনুশীলন, প্রস্তাবনা। যেমন, যারা প্রচলিত একটা ধারায় বামপন্থী রাজনীতি করে তারা কিন্তু বলে ‘মতা দখল করবে’ তারপরে ওমুক ওমুক করবে।

কিন্তু আমরা মনে করি যে সেটা সঠিক কোনো রাস্তা না আসলে। আর মতা দখল করা মানে কি? মতা দখল করা মানে যদি সেনাবাহিনী আমার, পুলিশ আমার, টেলিভিশন আমারÑএইটা বুঝায়, এই দিয়ে যে আসলে টেকে না, সেটাও তো প্রমাণ হইছে। তাইলে মতার অর্থ কি? মতার প্রক্রিয়াটা কি? এখানে ‘ঐবমবসড়হু’র প্রশ্ন আছে। ‘আদর্শিক’ যে প্রক্রিয়া আছে, তার ব্যাপারে বোঝাপড়া, লড়াইয়ে যুক্ত থাকার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান ঠিক করার ব্যাপার আছে। ..... বিতর্কের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সমাজের সামনে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।

এটা সত্য, যা আছে তা আমরা মানতে পারতেছি না, ফলে তাকে ভাঙতে যা যা লাগে সবই করব। যেমন, প্রগতির যে ধারণায় বলা হয় ‘বাহ! মানুষ তো কত আগায়া গেল,’ কোথায় গেল মানুষ? কই গেল ? কই যায়? প্রগতির সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শকেও প্রশ্ন করা, চ্যালেঞ্জ করা জরুরী। কারণ ওইটা দিয়া সে আগ্রাসন করে। এমন একটা পর্যালোচনামূলক প্রক্রিয়া আমাদের দরকার যে প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমরা ঐ জায়গাটায় যেতে পারি। উপলব্ধি করতে করতে যেতে পারি।

নিজের ভাবটাকে চিনতে চিনতে যেতে পারি। জিনিসটাকে উপলব্ধি করতে করতে চলাটাকে আমাদের কাছে মনে হয় কাজের পদ্ধতি। এইটা হইল বিজ্ঞান। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। রাজীবুল : আপনাদের মতো সংগঠনগুলো যারা ‘উন্নয়নে’র বিপে কাজ করে, আমাদের রাষ্ট্র বাইরের যে চাপের ভিতর কাজ করে তাকেও প্রশ্ন করে।

তো সেই অবস্থানে আপনাদের আকার এখন ছোট পরিসরে, কিন্তু সেইটা যদি বিস্তৃতি লাভ করে সেেেত্র রাষ্ট্রের প নিবেন, না রাষ্ট্রের বিপে যাবেন? রাষ্ট্রীয় শক্তির সাথে তখন আপনাদের অবস্থানটা কি হবে? রাহী : আমাদের এই অঞ্চলে, যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কথা বলি উদাহরণ হিসাবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র উন্নয়ন ধারণায় কুপোকাত একটা রাষ্ট্র। প্রতিদিন আপনি দেখবেন যে এখানকার দাপটওয়ালা দল, গোষ্ঠী, সবাই উন্নয়ন বলে বলে মহাপাগল হয়ে গেছে। মানে পুরো রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের যে অধিপতি শ্রেণী তারা আসলে উন্নয়ন ধারণায় আক্রান্ত, বলা যায় যে তারা আসলে পরাজিত, আতœসমর্পন করে বসে আছে, নাহয় তারা আসলে এটাকে বুঝতেই সম না। বিশ্বব্যাংক আজকে যদি বলে তোমার উন্নয়ন আসলে ঊপড়ষড়মরপধষ অমৎরপঁষঃঁৎব, তারা বলবে যে হ্যাঁ তাই তো তাই তো। আবার যদি বলে দুর, কি বাজে কাজ করো, তুমি তো মানুষ না খাওয়ায়া মারবা, তুমি ইয়া করো, এই যে এৎববহ জবাড়ষঁঃরড়হ করো, ও বলবে যে হ্যাঁ তাই তো তাই তো।

...এই সবইতো চলছে উন্নয়নের নামে। প্রতিষ্ঠিত যে উন্নয়ন ধারণা, এর সাথে আসলে পুুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং ধ্যান-ধারণা যুক্ত। প্রশ্নকারীর সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে, এইটা একটা হুমকি এই ব্যবস্থার জন্য। ফলে এইটাকে তারা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.