আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটিএম-ক্রেডিট কার্ড এখন ছিনতাইকারীদের টার্গেট!

ছিনতাইকারীদের টার্গেট এবার এটিএম কিংবা ক্রেডিট কার্ড। আপদকালীন মুহূর্ত সামাল দেওয়ার জন্য সঙ্গে রাখা এসব এটিএম কার্ড থেকে ছিনতাইকারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে জমাকৃত শেষ সম্বলটুকু। আবার মাঝেমধ্যে কেবল টাকা নয়, ছিনতাইকারীদের হাতে হারাতে হচ্ছে জীবনও। অভিযোগ রয়েছে এসব ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে থানা পুলিশের কিছু দুর্নীতিবাজ সদস্যের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এসব কারণে উল্টো হয়রানির ভয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়ারও আগ্রহ দেখান না।

অনুসন্ধান ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৮টি গ্রুপ এ ধরনের কাজে সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় র্যাব-পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাদের হাতে রয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সব ধরনের সরঞ্জাম। আবার মাঝেমধ্যে তারা মাইক্রোবাসে কিংবা প্রাইভেটকারে করে যাত্রী পরিবহনের কৌশল নেয়। সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে এটিএম কিংবা ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নেয়।

পরে ওই চক্রের কোনো একজন ব্যাংকের বুথে গিয়ে উঠিয়ে নেয় সারা জীবনের জমানো সম্বলটুকু। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে ওই ভুক্তভোগীকে খুন করতে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করে না দুর্বৃত্তরা। মাঝেমধ্যে এসব চক্রের সদস্যরা র্যাব-পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলেও অল্প কয়েক দিনের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আগের কাজে লিপ্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৯ মার্চ মধ্য রাতে পুলিশ প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ মিরাজের লাশ খিলক্ষেত এলাকা থেকে উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডের রাতেই খুনিরা আহমেদ মিরাজের প্রাইম ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে গিয়ে উত্তরা জসীমউদ্দীন এলাকার একটি বুথ থেকে টাকা উঠানোর চেষ্টা করেছিল।

তবে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে টাকা উঠাতে সক্ষম হয়নি। ১৩ মে পাঁচ তারকা রেডিসন হোটেলের কর্মচারী আলেয়া ফেরদৌসীকে (৩৫) অপহরণের পর তার ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম কার্ড থেকে দুই দফায় ৩০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে নির্মমভাবে খুন করে। পরে র্যাব-১ এর একটি দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আলেয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত জহিরুল ইসলাম ও সাজু আকন্দ নামের দুই দুর্বৃত্ত। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় আলেয়ার এটিএম কার্ড।

৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভারের সামনে মিরপুরগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন নির্বাহী ফারুক আহমেদ ফরহাদ। একপর্যায়ে একটি মাইক্রোবাসে তিনি উঠেন। কিছুদূর যেতেই মাইক্রোবাসের অপর যাত্রীদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পেতে থাকে। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে ফরহাদের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে পিন জেনে নেয়। একটি বুথের সামনে একজন নেমে অ্যাকাউন্টে থাকা ৪০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়।

পরে তাকে পুনরায় কুড়িল ফ্লাইওভারে নিয়ে ফেলে চলে যায়। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ জানান, তার এলাকায় অন্তত তিনটি গ্রুপ কাজ করছে। তাদের ধরতে অনেকগুলো টিম মাঠে কাজ করছে। জানা গেছে, রাজধানী দাপিয়ে বেড়ানো আটটি বিশেষ ছিনতাইকারী গ্রুপের প্রতিটিতে রয়েছে ১৫-২০ জন সদস্য। এদের প্রায় বেশির ভাগই বেতনভুক্ত।

মাস শেষে বেতন হিসেবে একেক সদস্য পায় ১২-২০ হাজার টাকা। তবে বিশেষ সাফল্যের জন্য থাকে মোটা অঙ্গের বখশিশ। ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ডের পাশাপাশি চক্রের সদস্যরা দামি ব্র্যান্ডের গাড়িও ছিনতাই করে। তবে ঝামেলা কম হওয়ায় পছন্দ এটিএম কিংবা ক্রেডিট কার্ড। এ জন্য তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কিছুদিন ফলো করে।

এদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কিছু কিছু গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বুথগুলোর গোপন ক্যামেরাগুলো বন্ধ করে দেয়। আবার মাঝেমাঝে ছদ্মবেশে তারা এটিএম বুথে টাকা উঠাতে যায়। যাতে করে ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে গোয়েন্দারা তাদের শনাক্ত করতে না পারেন। রাজধানীর বিভিন্ন বাস স্টপেজ, রেলওয়ে স্টেশনে বিচরণ করে চক্রের সদস্যরা। তারা নিরীহ যাত্রীদের জিম্মি করে।

সর্বশেষ রবিবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে যশোর থেকে আসা নূর মোহাম্মদ বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে নূর মোহাম্মদ এটিএম কার্ড যশোরে ফেলে আসায় দুর্বৃত্তরা সফল হতে পারেনি। তবে এসএ পরিবহনে করে টাকা আনতে গিয়ে চক্রের চার সদস্য গ্রেফতার হয়। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আলম জানান, এটিএম কার্ড ছিনতাই সংক্রান্ত অভিযোগ আসছে। এদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, এটিএম জালিয়াতিতে বিভিন্ন সময় এটিএম শাখায় কর্মরত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে বেশ কয়েকটি এটিএম কার্ড ছিনতাইকারী গ্রুপ রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করলেও জামিনে বেরিয়ে আসছে। মে মাসে মিরপুর থেকে গ্রেফতারকৃত ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা দুই মাসের মাথায় জামিনে বেরিয়ে এসেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।