আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাইকেল্যাঞ্জেলো অ্যান্টনিওনি : সেকিউলার শিল্পী, আধুনিক ডিরেক্টর

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

প্রথমে ইঙ্গমার বার্গম্যান (১৪ জুলাই ১৯১৮-৩০ জুলাই ২০০৭) তারপর মাইকেল্যাঞ্জেলো অ্যান্টনিওনি (২৯ সেপ্টেম্বর ১৯১২-৩০ জুলাই ২০০৭)। পরপর দুজন খ্যাতনামা ডিরেক্টরের মৃত্যু সংবাদ বেশ হতচকিত করার মতো খবরই বটে। পত্রিকাগুলো বার্গম্যানের মৃত্যু খবর দিয়ে, তার উদ্দেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রকাশ করে যখন সবে অন্যদিকে মনোযোগ দিয়েছে তখনই এলো ইটালির বিখ্যাত পরিচালক মাইকেল্যাঞ্জেলো অ্যান্টনিওনির মৃত্যু সংবাদ। ব্যাপারটা স্রেফ কো-ইন্সিডেন্টাল।

মৃত্যু তো আর পরিকল্পনা করে আসে না। কিন্তু দুজনের মৃত্যু দিবসের এ ঐক্য থেকে দর্শক, পাঠক ও লেখকরা এ দুজনের ঐক্য সূত্র খুজতে থাকেন। একই শিরোনামে দুজনের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অনেকে। যে সোমবার এ দুই বিখ্যাত ডিরেক্টরের মৃত্যু হলো সে দিনটিকে অভিহিত করা হয়েছে ব্লু মান ডে বা নীল সোমবার নামে। বার্গম্যানের বয়স হয়েছিল ৮৯ আর অ্যান্টনিওনির ৯৪।

নিউ ইয়র্ক টাইমসে এ ও স্কট লিখেছেন, এ দুজনের মিলটা শুধু তারা বড় পরিচালক এটা নয়। তারা দুজনে হলেন ফিল্ম মেকার কেমন হতে পারেন তার এক যমজ আইডিয়া। আপসহীন ও মহান এ দুই শিল্পী। স্টিফেন হোল্ডেন লিখেছেন, বার্গম্যানের পর অ্যান্টনিওনির মৃত্যু সংবাদে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তাদের দুজনের মৃত্যু হাই মডার্নিস্ট ফিল্ম মেকিংয়ের ইতিহাসে একটা দীর্ঘ পর্দা টেনে দিল।

যে ডিরেক্টররা ফিল্মকে শৈল্পিক উচ্চতার শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাদের গুণে লেখক-শিল্পীদের কাতারে স্থান হয়েছিল ডিরেক্টরদের তাদের প্রায় সবাই চলে গেলেন। ১৯৬০-এর দশকের আধুনিকদের মধ্যে, আধুনিক, অগ্রসর ইওরোপিয়ান ডিরেক্টরদের মধ্যে জীবিত থাকলেন শুধু একজনই, জাঁ লুক গাদার। বার্গম্যান ছিলেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান। অন্যদিকে অ্যান্টনিওনি ইটালিয়ান। তারা দুজনই নৈতিকতাবাদী কিন্তু বার্গম্যান ছিলেন স্বভাবের দিক থেকে কঠোর ও অনাড়ম্বর।

আর অ্যান্টনিওনি ছিলেন সৌন্দর্যের প্রতি অনুরক্ত। তারা দুজনই ইওরোপিয়ান সভ্যতার উত্থান ও পতন নিয়ে বিশেষভাবে সচেতন ছিলেন। তবে তুলনামূলকভাবে অ্যান্টনিওনি শহুরে বিষয়ের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন। অ্যান্টনিওনি মেট্র সংস্কৃতি, সাম্প্রতিক ফ্যাশন, স্টাইল ও গ্ল্যামারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ফলে তার অনেক মুভিই খুব বর্ণাঢ্য ও জমজমাট।

নতুন পৃথিবীর সমস্যা তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক নিয়ে তিনি বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছেন। বার্গম্যানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিগুলোকে তার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের অনুরণন ভালোভাবে উল্লিখিত হয়েছে। তিনি বিশেষ কিছু মানবিক বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন : ঈশ্বর, বিশ্বাস, কামনা, সন্দেহ, হারিয়ে যাওয়া, মৃত্যু এবং সর্বোপরি ভালোবাসা ও ভঙ্গুরতা তার বিষয়। তিনি বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করেছেন ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

ফলে বার্গম্যানের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি এসেছে ঈশ্বর ও ধর্মের প্রসঙ্গ। এখানে অ্যান্টনিওনির সঙ্গে বার্গম্যানের বৈপরীত্য। সব ইটালিয়ান ডিরেক্টরের মধ্যে অ্যান্টনিওনিই প্রশ্নাতীতভাবে সেকিউলার। তার কাজগুলো পোস্ট-রিলিজিয়াস। ফলে ধর্মের প্রতি ভীষণভাবে অনুরক্ত ব্যক্তিরাও এগুলোর প্রতি আগ্রহ বোধ করবেন।

ধর্ম থেকে বের হওয়ার এ রাস্তা অ্যান্টনিওনির জন্য ছিল সহজ কিন্তু সঙ্গত পারিপার্শ্বিক কারণে এটা ছিল বার্গম্যানের জন্য রীতিমতো একটা সংগ্রাম। অন্য এক আলোচক এদের দুজনকে অভিহিত করেছেন সেলুলয়েডের সেইন্ট হিসেবে। তার মতে, হলিউডের কলরোলের বাইরে দীর্ঘদিন ধরে এ দুই ডিরেক্টর চলচ্চিত্র অঙ্গনকে সচেতন করে চলেছেন। মাইকেল্যাঞ্জেলো অ্যান্টনিওনির জন্ম ইটালির ফেরারায়। ৩০ জুলাই রোমে নিজের বাড়িতে মৃত্যু হয় তার।

এরপর জন্মস্থান ফেরারাতে সমাহিত করা হয় তাকে। বোলংনা ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৩৫ থেকে তিনি একটি স্থানীয় পত্রিকায় ফিল্ম জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৪০ সালে মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট দলের সমর্থক একটি ফিল্ম ম্যাগাজিনে কাজ নেন। কিছুদিন পর সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়।

তিনি সিনেমাটোগ্রাফি শেখার স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে প্রথম ফিচার ফিল্ম তৈরি করেন। ১৯৬০ সালে রিলিজ হওয়া লা’আভেনচুরা বা দি অ্যাডভেঞ্চার তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়। ক্যান ফিল্ম ফেস্টিভালে এটি দেখানো হয়। ১৯৯৫ সালে তিনি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য অস্কার পান।

তিনি কয়েকটি ইংরেজি ভাষায় মুভিও নির্মাণ করেছেন। ব্লো আপ, জেব্রিস্কি পয়েন্ট, প্যাসেঞ্জার ইংরেজি ভাষার তার আলোচিত মুভি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।