আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীলংকার ভবিষ্যত কোন পথে

আমি কাক নই, আমি মানুষ...

শ্রীলংকার বিদ্রোহী তামিল টাইগাররা নতুন কৌশল ও পন্থা অবলম্বনে সিদ্ধহস্ত। তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল আত্মঘাতি বোমা হামলা কতটা ভয়ংকর হতে পারে। এরা প্রতিষ্ঠা করে একটি নৌ-বিভাগ। অস্ত্রে সজ্জিত নৌযানগুলোকে তারা নাম দেয় ‘সি টাইগার’। ইতিমধ্যে তারা বিমান বাহিনী গড়ে তুলেছে।

বিশ্বের একমাত্র গেরিলা সংগঠন যাদের বিমান আক্রমের সামথ্য রয়েছে। গভীর অরণ্যকে তারা বিমানপোত হিসেবে ব্যবহার করছে। স¤প্রতি রাজধানী কলম্বোর উত্তরে একটি বিমান বহরে হামলা চালিয়ে তাদের সামথ্যের স্বাক্ষর রেখেছে। বোমা হামলায় তিন বিমান সেনা নিহত ও আহত হয়েছে অনেকে। পশেই অবস্থিত বেসামরিক আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

এয়ারবেইস থেকেও একযোগে গর্জে উঠে মেশিনগান। ততক্ষনে বিদ্রোহী বিমান চম্পট দেয়। পরে টাইগারদের পক্ষ থেকে আক্রমনকারি বিমানের ছবি প্রচার করা হয়। পাইলটদের পরনে ছিল টাইগারের চিহ্ণখচিত ধুসর নীল ইউনিফর্ম। বিমান বাহিনীর রাডার প্রতিরক্ষাকে ফাকি দিয়ে কিভাবে টাইগাররা হামরা চালালো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শ্রীলংকা রাডার প্রতিরক্ষা সংগ্রহ করেছে ভারত থেকে। ৭০ এর দশকে টাইগাররা বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগ্রাম শুরু করে। তামিল অধ্যূষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলবাসিদের দাবি সংখ্যাগরিষ্ট সিংহলী নিয়ন্ত্রিত সরকার তাদের প্রতি বৈষম্য করছে। ভিলুপিল্লাই প্রভাকরনের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। ইতোমধ্যে নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশ সরকার এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালায়।

একপর্যায়ে তারা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসে। কিন্তু টাইগারদের পাশকাটিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে তারা আলোচনার টেবিল থেকে সরে পড়ে। বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলনে শ্রীলংকায় এযাবত ৬৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বাস্তুহারা হয়েছে দশ লক্ষের অধিক। সরকারকে গড়ে জাতীয় উৎপাদনের ৫ শতাংশ এ খাতে ব্যায় করতে হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় বিষয় দেশটির সম্ভাবনাময় উত্থানকে ধুলিষাৎ করে দিয়েছে বিদ্রোহী তৎপরতা। দেশটির পর্যটন শিল্প একসময় বিশ্বজোড়া ছিল। সহিংস তৎপরতার ফলে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিদ্রোহী আর সরকারী সৈন্যদের হামলা পাল্টা হামলার মাঝে পড়ে সাধারন জনগনের অবস্থা করুন। গত বছরের এপ্রিলের একটি ঘটনা।

তামিল মাস চিথিরাই। পুর্ব ত্রিনকোমালির সামপুর গ্রামের টেম্পলকে কেন্দ্র করে উৎসব জমে উঠেছিল। এলাকাটি তামিল নিয়ন্ত্রিত এবং তাদের জন্য কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ত্রিনকোমালি পোতাশ্রয় এবং নেভাল বেইস টাইগারদের গোলার আওতার মধ্যে। ২৫ এপ্রিল প্রার্থনা এবং উৎসব আয়োজন শেষ করে দেবতার উদ্দেশ্যে শোভাযাত্রা শুর করার অপেক্ষায়।

এর আগেই সরকারের এক বড় কর্মকর্তার ওপর তামিল হামলার খবর শুনেছিলাম। বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপের তীব্র নীনাদ। অবশ্য এ ধরনের বিকট আওয়াজের সঙ্গে আমরা আগে থেকেই পরিচিত। একই সঙ্গে পাশ্ববর্তী সেনাক্যাম্প থেকে গোলার গর্জন শুরু হলো। ঘরবাড়ী গীর্জা এবং স্কুলঘর সব একাকার হয়ে গেল।

পরিবারের সদস্যরা পাশ্ববর্তী একটি ঘনবনে আশ্রয় নিলাম। ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য কেউ ফিরে গেলামনা। অনেকে মারা গেল। আমার বাড়ি আগুনে পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেল। বোমা হামলা অব্যাহত থাকায় আমার পাশের গ্রামে গেলাম।

সেখানকার লোকেরাও গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। উদ্বাস্তুদের একটি বহর ছুটে চলল। আমরা একটি স্কুল ঘরে উঠলাম। যায়গা না হওয়ায় অনেকে খোলা ময়দানে পড়ে থাকল। কয়েকটি সাহায্য সংস্থা এগিয়ে এলো।

তবে সেটাও আমাদের শেষ গন্তব্য ছিলনা। মাইলের পর মাইল পাড়ি জমালাম। প্রায় বিশ হাজার উদ্বাস্তুদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি হলো। এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। জীবন ধারনরে জন্য ন্যুনতম খাদ্যদ্রব্য জুটলেও আমাদের ভবিষ্যৎ আর বাচ্চাদের পড়াশোনার কোন গতি দেখছিনা।

সামনে শুধু হাতাশা। দণিএশিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ি দেশ শ্রীলংকা। প্রাকৃতি এবং খনিজ সম্পদে ভরপুর দেশটি। আয়তন এবং জনসংখ্যার অনুপাত সামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্রিটিশরা ছেড়ে যাওয়ার পর উপমহাদেশের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতির দেশ ছিল এটি।

কিন্তু হটাৎ করে তমিঠরা কেন যেন ক্ষেপে উঠলো। স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভাকরনের নেতৃত্বে ঝাপিয়ে পড়ল। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় তামিলদের মাঝে স্বাধীনতার দাবি বা টাইগারদের আন্দোলনের প্রতি সবার সমর্থন রয়েছে কিনা এ ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রভাকরনের দল জোরপূর্বক তামিলদের তার বাহিনীতে অর্ন্তভ’ক্ত করছে। এই বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকে এলাকা ছেড়েছে।

তবে একটি বিষয় স্পষ্ট কোন দেশের ইন্ধন না থাকলে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠির এতটা শক্তিশালি হয়ে ওঠা কখনো সম্ভব নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.