আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রযু্ক্তি কথন। প্রাইভেসীর স্যাক্রিফাইস জীবনের পরতে পরতে

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

১. এখন থেকে ২০ বছর আগে বসে ২০১০ সাল টাইপের সময়টাকে কল্পনা করা হতো সায়েন্স ফিকশন টাইপ জামানা। সাই সাই করে উড়ন্ত গাড়ি, আকাশ ফুড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, রোবোট সব ঘরের কাজ করে দেবে টাইপ সময়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভয়াবহ গতিতে এগিয়েছে গত কুড়ি কি ত্রিশ বছরে, যে সময়টায় মানুষের অনেক অর্জন বিগত পুরো মানবসভ্যতার ইতিহাসের বিপরীতে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতোই। এই ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়টায় বসে আমরা সেই একসময়ে সায়েন্সফিকশন গল্পে পড়া ম্যাজিকাল সময় ২০১০, বা ২০২০ সাল থেকে খুব দূরে নেই। এই ২০০৭ সালে যখন দেখি কেউ কেউ মোবাইল ব্যবহার করে না, তখন এক ধরনের ঈর্ষাই হয়।

ভালা লাগার ঈর্ষা। মনে হয়, আহারে আমিও যদি এই মরার মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিতে পারতাম। ২. মোবাইলের মতো প্রাইভেসীতে হস্তক্ষেপ আর কোন আধুনিক প্রযুক্তির ফল আমাদের করে বলে আমার মনে হয় না। অফিসে বসে আছো, কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা; অথবা ক্লান্তিকর দিন শেষে বাড়ি ফিরে একটু বিছানায় গা এলিয়ে না শেষ করা প্রিয় বইটা তুলে নিলাম - ওমনি মোবাইল বেজে উঠছে। আরে বাপ, আমার তো কথা বলতে নাও ইচ্ছা করতে পারে এখন! কিন্তু ক্যামনে অপর পক্ষরে সেইটা বুঝাই।

উইকএন্ড, ঠিক করেছি দিন কাটাবো নিজের মতো, অলস দিন কাটবে পুরো স্বাধীনতায়। নো হাংকি পাংকি। হঠাৎ জুনিয়ার নিংসঙ্গ প্রবাসী কেউ ফোন করে বসলো, 'চলেন সাদিক ভাই ঘুইরা আসি লিটিল ইন্ডিয়া থেইকা, ভালো লাগতাছে না। ' লে ঠেলা। সব সময় বলাও যায় না: 'ইচ্ছা করছে না, তুমি একলা যাও।

' অথবা ব্ন্ধুরা ঠিক করলো ঘুরতে যাবে, নয়তো খাবে, নয়তো সিনেমা দেখবে। ফোন করে আয় আয় ডাকা ডাকি। ইচ্ছার বিরুদ্ধতা হজম করে ফালতু সিনেমা গিলো। অথবা আরো ভয়ংকর হলো উইকএন্ডে বা অফিস সময়ের বাইরে মোবাইলে বসের ফোন, নতুন কাজ ধরিয়ে দেওয়া। মেজাজটা তখন গরম হয় মোবাইলটার উপরে।

৩. "নিজের মতো থাকতে চাই টাইপ গোবেচারী মানুষদের" বিপদে ফলার পিছনে মোবাইলের এত ভূমিকা থাকা সত্বে এ মাল ফেলে দেওয়া সম্ভব না। দুপুরে, রাতে ঠিকঠাক খেয়ে নিয়েছি কি না সেটা জানতে বাবা এসএমএস করবে। দ্রুত এসএমএস রিপ্লাই না করলে টেনশন শুরু! তিন চারদিন পরেপরে প্রিয় সন্তানের কন্ঠ শুনে আস্বস্ত হতে ফোন করবে মা। মুঠোফোনে গলা শুনে দূরদেশে বসে তারা স্বস্তিপান ছেলে ভালো আছে। আর যদি এর উপরে থাকে একখান প্রেমিকা, পুরা সাড়ে বাইশ।

প্রাইভেসীর এসপার ওসপার। সময় অসময়ে ফোন এসএমএসে জীবন কেরোসিন। তারপরেও সব ছাপিয়ে দ্রুত যোগাযোগ আর নিজেকে এ্যাভেইলেবেল করতেও মোবাইলটার ভূমিকটা অস্বীকারই বা করি কিভাবে। তাই ফেলে দিতে গিয়েও দিতে পারি না এমওয়ান এর এই মোবাইল কানেকশনটা। প্রতি মাসে ফিক্স লাইন চার্জ ছাড়িয়ে কতগুলা টাকা যে দিলাম, বাংলাদেশী টাকায় হিসাবে গেলে মেজাজটাই খিচরে যাবে, তাই সেই গণিত ভূলেও কষি না।

৪. গুগল ইন্টারনেটের মেগাগুরু, সেই থেকে শুরু ... এখন হার্ডডিস্কের ভিতরেও পৌছে যাচ্ছে এই গুগুল। গুগলডেস্কটপ এরকম একটা ফিচার যা কম্পিউটারের আনাচে কানাচে সার্চ করছে, সেভ করে রাখছে। ইন্টারেনেটে সারাদিন সংযুক্ত থাকা একটা মেশিন তখন স্বভাবতই প্রাইভেসী সংকটে পড়ে। সম্প্রতি ওয়েব হিস্টোরি ফিচার দিয়ে গুগল আরেকধাপ মাতব্বরি চালাবে আমাদের ওয়েব এ্যাক্টিভিটি মনিটর সম্পর্কে। অনেক ওয়েবসাইটে বসানো কুকিজ, স্পাইওয়ার তো ঝাকে ঝাকে।

তবে যা বুঝি যে এই প্রাইভেসী হরন সম্পর্কে বেশি চিন্তা বা দূশ্চিন্তা করে লাভ নাই। প্রযুক্তির সর্বগ্রাসীতায় প্রাইভেসীর স্যাক্রিফাইস - হইতেই থাকবো, হইতেই থাকবো। প্রযুক্তির সুবিধার নামে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে এই প্রাইভেসী স্যাক্রিফাইসের ট্রেন্ড আমরাই ঢালাও জড়িয়ে নিচ্ছি জীবনে। আমরাই জেনেশুনে বিষপান করেই চলেছি এই "হতে পারে সায়েন্সফিকশনের জামানায়"। অনুপ্রেরণা: মাহবুব মোর্শেদের ব্লগে ক্লেবেনেটের গুগল নিয়ে করা কার্টুনটা


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।