আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বের পেট চিরে দুঃস্বপ্নের প্রাচীর



দ্রুত গতির কম্পিউটার, থ্রিজি মোবাইল আর অপটিক্যাল ফাইবারের ইন্টারনেট পেয়ে ভেবেছেন গোটা দুনিয়াটা হাতের মুঠোয় চলে এলো? ডাহা ভুল! বিশ্বটা মুড়ি মুড়কি নয়, যে তালুতে রেখে নেড়েচেড়ে দেখলেন, ইচ্ছে হলো আর ঢুঁ মেরে এলেন যেখানে খুশি। এ যাত্রা আর সে স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। প্রতিবেশিদের ঘর এখন কাঁটাতার আর কনক্রিটের বেড়ায় সুরতি। ঢুঁ মেরেছেন কি মরেছেন। মুখে ‘মুক্ত বিশ্ব’ বলে ফেনা তুলছেন সবাই।

আসলে এটা হচ্ছে তত্ত্বীয় মুক্ত-বিশ্ব, প্র্যাকটিক্যাল নয়। একে অন্যের দেখাদেখি রাষ্ট্রের সীমানা সীলগালা করতে উঠেপড়ে লেগেছে সবাই। ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব... এ তালিকা যেন প্রাচীরের মতোই দীর্ঘ। প্রায় প্রত্যেকেই তাদের সীমান্তে হাইভোল্টেজের কাঁটাতার কিংবা কনক্রিটের দেয়াল বানাচ্ছে। কেউ বা দেওয়ালের গোড়ায় বসিয়ে দিচ্ছে মাইন।

কেউ যেন অবৈধ উপায়ে ভেতরে আসতে না পারে সেই জন্য এ ব্যবস্থা। বিশ্বটাকে এভাবে দেওয়াল তুলে ভাগাভাগি করার নজির অন্য কোনো সভ্যতা কিংবা যুগে ঘটেনি। তবে এ সভ্য যুগে এসে হঠাৎ করে সভ্যতার মতিভ্রম হলো নাকি! তা না হলে পৃথিবীর ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে এ কি অসভ্যতা! পশ্চিম তীরের সঙ্গে ইসরায়েলের এখন সত্যিকার অর্থেই মুখ দেখাদেখি বন্ধ। রীতিমতো কংক্রিটের এক গ্রেটওয়াল বানিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। আত্মঘাতি বোমা হামলার ভয়ে দেশটি এক অর্থে নয়া এক আশ্চর্যেরই সূচনা করেছে।

অবশ্য আমাদের ভায়েরাই বা কম কীসের! এই সার্কের কথাই ধরুন। আলাদা সংসার হলেও শ্লোগান উঠেছে সার্কের দেশ সব ভাই ভাই। কিছুদিন হলো শোনা যাচ্ছে ট্রেনে চড়েই নাকি সিঙ্গাপুর যাওয়া যাবে। ইচ্ছে হলে ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসা যাবে হিমালয়, তাজমহল। অথচ মুক্ত সার্কের মিটিং সেরে ভারত-পাকিস্তানের কর্তারা কোমর বেঁধে লেগেছেন সীমানায় বেড়ার খুঁটি পুঁততে।

পাহাড়বেষ্টিত আফগান সীমান্তে পাকিস্তান কাঁটাতারের পাশাপাশি ল্যান্ড মাইনও বসাচ্ছে। উড়ে এসে পড়েছ কি মরেছ। ভারতও ১৯৮০ সালে তৈরি করা পাক-সীমান্তের প্রাচীরটা বড় করে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ‘অবৈধ’গুলোকে ফেরাতে বাংলাদেশ সীমান্তেও কংক্রিটের প্রাচীর বানাবে ভারত। মালয়শিয়া সীমান্তে প্রাচীর তুলছে থাইল্যান্ড।

মেক্সিকো সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেন ও ইরাক সীমান্তে কোটি ডলার ব্যয় করে কংক্রিটের দেয়াল তুলছে সৌদি আরব। পাক-সীমান্তে বেড়া দিচ্ছে ইরান। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ৪৮০ কিলোমিটারের কাঁটাতার দিয়ে নিজেদের আলাদা করে নিয়েছে বতসোয়ানা। অবশ্য সবাইকে ছাড়িয়েছে ইরাক।

কোনো দেশের সঙ্গে নয়, নিজ দেশের দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করতে দেশের ভেতরই উঠছে কাঁটাতারের প্রাচীর। যার প্রতিটি খুঁটি মানবসভ্যতার জন্য একটি করে কলঙ্ক হয়েই থাকবে। প্রবাদ আছে, বেড়া যতো মজবুত হবে, প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্কও নাকি ততো ভাল হবে। কিন্তু দেশগুলোর এই প্রাচীর নির্মাণ কি সুসম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়? নাকি অতর্কিত হামলার আতঙ্ক ও নিজেদের দুর্বলতাই বোঝায়? অবৈধ অভিবাসী রোধে কার্যকর আইনের অভাব না হয় মানা যায়, কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে এভাবে দেয়াল তোলাটা হাস্যকর বটে। তাহলে ঠিক কী উদ্দেশ্যে হচ্ছে এসব? হতে পারে স্নায়ু যুদ্ধের মতো এ দেয়াল এক রকম স্নায়ুবিক অপমাণ।

প্রতিবেশীকে বুঝিয়ে দেওয়া, ‘ব্যবসা কর আর যাই কর, তোমাকে বাপু ভেতরে আসতে দিচ্ছি না। ’ চীনের মহাপ্রাচীর যখন বানানো হয়, তখন জেট বিমান ও পেণাস্ত্র ছিল না। শত্রুর প্রতিরোধের জন্য তা যথার্থই কার্যকর ছিল। তবে এখন সেই প্রাচীর স্রেফ এক দর্শনীয় স্থান, সাতের মধ্যে এক আশ্চর্য। আর এখনকার দেয়ালগুলো আশ্চর্যের জন্ম দেয়, প্রশ্নেরও।

একই সঙ্গে লজ্জিতও করে। আরে মশায়, উপর থেকে কোনো এলিয়েন যদি এ দেয়াল দেখে ফেলে, কী ভাববে বলুন!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.