আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপঠে জিহাদের প্রয়োজনীয়তা

চোখের আলো যেখানে কালো মনের আলো সেখানে আলোকিত...তাই আলোকিত মানুষ দেখার আশায় এই খানে আগমন....

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) আবির্ভাবকালে আলআরাবীয়ার প্রত্যেক ব্যক্তি নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র বহন করতো। অর্থাৎ তখন অস্ত্র রাখা ও অস্ত্র বহন করা বৈধ ছিলো। ইসলামী ব্যক্তি গঠন ও গণ-ভিত্তি রচনার প্রয়াস চালাতে গিয়ে মাক্কায় অবস্থান কালের তেরোটি বছর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর সাথীরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। মুশরিকদের হামলায় হারিছ ইবনু আবী হালাহ (রা), ইয়াসির (রা), সুমাইয়া (রা) ও আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াসির (রা) শাহাদাত বরণ করেন। অনেকেই হন আহত।

কিন্তু বৈধ অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর সাথীরা এই যুল্মের প্রতিকারের জন্য অস্ত্র ব্যবহার কিংবা জিহাদ/বিপ্লব করেননি। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ ছিলো ‘‘কুফ্ফু আইদিয়াকুম’’ (তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখ) অর্থাৎ অস্ত্র ব্যবহার করো না। এই নির্দেশ এসেছিলো ওহী গায়রে মাতলূ-র মাধ্যমে। পরবর্তী কালে সূরা আন্ নিসার ৭৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন এই বিষয়টি উল্লেখ করেন। ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ) বলেন, ‘‘ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবীর (সা) প্রতি কেবল ইসলামী দা‘ওয়াত পৌঁছানোর আদেশ ছিলো, জিহাদের (যুদ্ধের) অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তিনি যখন মাদীনায় হিজরাত করলেন এবং সেখানে ইসলামের দুশমনেরা তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলো তখন আল্লাহ তা‘আলা মহানবী (সা) ও সাহাবীদেরকে জিহাদের (যুদ্ধের) অনুমতি দান করেন। ’’ -- আস্ সিয়াসাতুশ্ শারইয়াহ, ইমাম ইবনু তাইমিয়া, পৃষ্ঠা-২০৩ ইবনুল কাইয়েম (রহ) বলেন, ‘‘এইভাবে প্রায় তের বছরকাল পর্যন্ত তিনি তাবলীগের মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহ-ভীতি সৃষ্টির প্রয়াস পান। এই সময় তিনি কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি এবং কাউকে জিয্ইয়া দিতেও বলেননি। বরং ঐ সময় হাত গুটিয়ে রাখা, ধৈর্য ধারণ করা এবং সহনশীলতার পথ অবলম্বন করার জন্যই তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর তিনি হিজরাতের নির্দেশ লাভ করেন।

হিজরাতের পর সশস্ত্র সংগ্রামের অনুমতি দেওয়া হয়। তারপর যারা রাসূলের (সা) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ (যুদ্ধ) করার এবং যারা নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে তাদের ওপর হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ অবতীর্ণ হয়। পরবর্তীকালে আল্লাহর দীন পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ’’ -- যাদুল মা‘আদ, হাফিয ইবনুল কাইয়েম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৭১ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ও সরকার গঠনের সংগ্রাম একটির পর একটি স্তর অতিক্রম করে সামনে এগিয়েছে। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন আলকুরআনের সূরা আলফাতহ এ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) পরিচালিত সংগ্রামের স্বাভাবিক বর্ধনের একটি চমৎকার উপমা পেশ করেছেন।

আল্লাহ বলেন,‘‘এ এমন এক কৃষি যা অংকুর বের করলো, অতপর শক্তি সঞ্চয় করলো, অতপর মোটা-তাজা হলো এবং অবশেষে নিজ কান্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো। ’’ এই আয়াতাংশে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচালিত আন্দোলনের ক্রমবিকাশ ও প্রতিষ্ঠা লাভের চারটি স্তরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা : ১. ‘অংকুর বের করা’র অর্থ হচ্ছে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সূচনাকরণ। ২. ‘শক্তি সঞ্চয় করা’র অর্থ হচ্ছে আহবানে সাড়া দানকারী ব্যক্তিদেরকে সংঘবদ্ধ ও সংশোধিত করে সাংগঠনিক শক্তি অর্জন। ৩. ‘মোটা-তাজা হওয়া’র অর্থ হচ্ছে কর্ম-এলাকার সর্বত্র প্রভাব সৃষ্টি ও গণ-মানুষের সমর্থন লাভ।

আর গণ-মানুষের সমর্থন লাভেরই আরেক নাম গণ-ভিত্তি অর্জন। ৪. ‘কান্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া’র অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন -- ইসলামের বিধি-বিধান কার্যকর। প্রকৃতপক্ষে, এটাই হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবের স্বাভাবিক পদ্ধতি। নবুওয়াতের ত্রয়োদশ সনে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে হিজরাতের অনুমতি লাভ করেন ও হিজরাত করেন। মাদীনা একটি রাষ্ট্রের রূপ লাভ করে।

আর নব-গঠিত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)। মাদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নাযিল হয় সূরা আলহাজের ২৫ থেকে ৭৮ নাম্বার আয়াত। আর এই অংশটির একাংশে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীদেরকে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন। ‘‘লড়াইয়ের অনুমতি দেওয়া হলো তাদেরকে যাদের প্রতি যুল্ম করা হয়েছে, আর আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, যাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে শুধু এই জন্য যে, তারা বলেছিলো : আল্লাহ আমাদের রব। ’’ সূরা আলহাজের ৩৯ ও ৪০ নাম্বার আয়াতে অস্ত্র ব্যবহারের ‘অনুমতি’ দেওয়া হয়েছে।

আর সূরা আলবাকারাহর ১৯০ নাম্বার আয়াতে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র ব্যবহারের ‘নির্দেশ’। ‘‘আর তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে লড়াই কর যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করো না। যারা বাড়াবাড়ি করে আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন না। ’’ উপরের বর্ননার মধ্যে থেকে এইটাই বলতে পারি যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি লাভ করেছিলেন তার মানে সসস্ত্র জিহাদের। “আর তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করো না ৷ কারণ যারা বাড়াবাড়ি করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না ৷”--সূরা আলবাকারা, আয়াত-১৯০ উপরের আয়াতের তাফসীরের বর্ননায় এসেছে -- আল্লাহর কাজে যারা তোমাদের পথরোধ করে দাঁড়ায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান অনুযায়ী তোমরা জীবন ব্যবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করতে চাও বলে যারা তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তোমাদের সংশোধন ও সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য জুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে ও শক্তি প্রয়োগ করছে, তাদের সাথে যুদ্ধ করো৷ এর আগে মুসলমানরা যতদিন দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ছিল, তাদেরকে কেবলমাত্র ইসলাম প্রচারে হুকুম দেয়া হয়েছিল এবং বিপক্ষের জুলুম-নির্যাতেনর সবর করার তাকীদ করা হচ্ছিল৷ এখন মদীনায় তাদের একটি ছোট্ট স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর এই প্রথমবার তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যারাই এই সংস্কারমূলক দাওয়াতের পথে সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে অস্ত্র দিয়েই তাদের অস্ত্রের জবাব দাও৷ এরপরই অনুষ্ঠিত হয় বদরের যুদ্ধ৷ তারপর একের পর এক যুদ্ধ অনু্ষ্ঠিত হতেই থাকে...।

বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপঠে আমি মনে করি আমাদের এখন কাজ হচ্ছে ৩ ও ৪, অথচ যারা এখনই জিহাদ জিহাদ..বিপ্লবে কথা কিংবা বোমা মেরে মানুষ মারা..হত্যা করার কথা বলতেছেন তারা সঠিক পথে নেই..আল্লাহ সবাইকে হেদায়ত ও ইসলাম বুঝে মানার তওফিক দিন। মুমিনদের জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হচ্ছেন ‘উসওয়াতুন হাসানা’ (সর্বোত্তম উদাহরণ)। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি ‘উসওয়াতুন হাসানা’। ইসলামী বিপ্লব সাধন তথা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিচালনার ক্ষেত্রেও তিনিই ‘উসওয়াতুন হাসানা’। আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন এই ‘উসওয়াতুন হাসানা’র অনুসরণকেই তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার শর্ত বানিয়েছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.