আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার জন্মদিনে মঞ্জু থাকবে না!

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

১. মঞ্জুর সাথে আমার পরিচয় ইন্টারভিউ বোর্ডে। কাকতালীয়ভাবে সে অফিসে জয়েন করে তাকেই পেয়ে গেলাম ইন্ডাকশনে। সে জয়েন করেছে একদিন আগে। মাস ঘুরতে আরো ঘনিষ্ট হলো সম্পর্ক। কারণ একই দিনে দুজনের বার্থডে।

তবে আমারটা আসল আর মঞ্জুর টা সার্টিফিকেটের। বয়সে এক বছরের বড়। কখন যে সন্বোধন আপনি, তুমি ঘুরে তুই এ ঠেকেছে মনে নেই। আমাদের আলোচনার অন্যতম বিষয় হচ্ছে মদ ও নারী। আমি রোমান্টিক আর মঞ্জু জৈবিক।

বিভিন্ন কালারের মাংশের প্রতি তার ঝোক। অফিসের কোন মেয়ে কলিগ তার বিশ্লেষণ থেকে বাদ পড়েনি। কারও পাছা, কারও বুক, কারো চরিত্র নিয়ে তার গবেষণা চলে অহরাত্রি। ২. ক'দিনের মধ্যে জানা গেল সে ব্রথেলগামী। এবং তার কন্টাক্ট একজন বিশেষ দালালের সাথে যে তাকে বিভিন্ন গেস্ট হাউসে নিমন্ত্রণ করে।

একবার কর্মে একহাজার থেকে পনেরশটাকা। একদিন পাড়মাতাল দু'জনে এসব নিয়ে আলাপ করছিলাম। বিয়ে করতে বললাম, রোগ-শোকের কোন ঠিকানা নাই। বেঘোরে প্রাণটা হারাতে পারে - এইসব বলছিলাম। এমন সময় দালালের ফোন।

গন্তব্য এরিস্ট্রোকেট। আমাকে খুব করে অনুরোধ করলো, কি মনে করে আমিও চললাম তার সাথে। একটা রুমে নিয়ে বসালো দালাল, তারপরে ফুসুর-ফাসুর কিছু কথা বলে সে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে দরজায় নক। ভেতরে একজন অদ্ভুত সুন্দর রমনী প্রবেশ করলো।

সুন্দর করে শাড়ী পড়া, চেহারায় অভিজাত্যে ছাপ। মঞ্জু তার হাত ধরে একটা সোফায় বসায়। মহিলা দুজনকে দেখে প্রশ্নমাখা দৃষ্টিতে তাকায়। মঞ্জু বলে, অসুবিধা নাই, ডাবল পেমেন্ট। এতক্ষণে মাথার পোকা বের হয়ে যায়।

বলি, না না মঞ্জু, তুই থাক, আমি বাসায় যাই। মাতাল মঞ্জু বক্রোক্তি করে, বলে, অসুবিধা নাই, তুই আগে সার! আমার মাথায় তখন ভয় ঢুকেছে, নেশা কেটে নিজের মধ্যে কুকড়েমুকড়ে আছি। মঞ্জুকে কথা না বাড়াতে দিয়ে সোজা সিড়ি বেয়ে নেমে পড়ি। ৩. এমপ্লয়ার পরিবর্তন করলাম বছরের মাথায়। মঞ্জুর সাথে অনেকদিন যোগাযোগ নাই।

কেবল জন্মদিনের দিনই তার কথা মনে পড়ে। সে আমাকে উইশ করে, আমি তাকে, হোক না নকল জন্মদিন। এ পর্যন্তই যোগাযোগ। ইতোমধ্যে সে বিয়ে করেছে। সে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিল কিন্তু আমি তখন অফিসের ট্যুরে বগুড়া থাকাতে আর যাওয়া হয়নি।

মঞ্জু মাঝে মাঝে মেইল করে। সম্পর্ক এতটুকুই। সে এখনও ব্রথেলে যায় কিনা জানি না। তবে আমার শংকা যে অমূলক ছিল না টের পেলাম কিছুদিনের মধ্যে। টিভিতে এইডস দিবসের অনুষ্ঠানে কয়েকজন এইচআইভি পজেটিভবাহী মানুষের সাক্ষাতকার নিয়েছে।

চেহারা ব্লার করে দেখাচ্ছিল। এছাড়া দর্শক দেখতে পারছিল তার শরীরের অন্যান্য অংশ। হাত, পা। একজন রোগীর বক্তব্য শোনার সময় খেয়াল করলাম তার হাতে পরিচিত একটা ব্রেসলেট। ক্যাকটাসের মত।

এটা মঞ্জুর হাতে থাকতো। এক জন্মদিনে আমিই তাকে দিয়েছিলাম। আমার সন্দেহ দানা বাঁধে তার ব্রথেল গমনের বর্ণনা শুনে। সাথে সাথে ফোনবুক ঘাটা শুরু করলাম, কিন্তু অনেক দিন যোগাযোগ না থাকায় নম্বরটা হারিয়ে গেছে। শেষে চারপাঁচটা ফোন, এর-তার মাধ্যমে তার ফোন নম্বর পেলাম।

৪. মঞ্জুকে ফোন করতেই সে ফোন কেটে দিল। আমি আবারও করলাম। সে এবার ফোন বন্ধ করে রেখেছে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম, টিভিতে দেখা লোকটি মঞ্জুই হবে। ৫. পরের দিন আমি তাকে মেইল করলাম।

সে জানাল সন্ধ্যায় সে দেখা করতে পারে। আমি তাকে অফিসে আসতে বললাম। আমি অস্থির হয়ে সারাদিন কাটালাম। অফিসে শেষেও তার জন্য অপেক্ষা করছি। একসময় তার স্টারলেটটা এল।

সাথে একজন রমনী। পরিচয় করিয়ে দিল স্ত্রী হিসাবে। আমি হৈহৈ করে উঠলাম, ব্যাটা, তোর মিস্টি কই? মঞ্জু হেসে আমাকে পেছনে উঠতে বললো। আমি দেখলাম সুস্থ্য একটা যুগল। মঞ্জু বললো, লিমাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে তারপরে আমরা কোথাও যাই, কি বলো? আমার কোন অসুবিধা নাই।

৬. লিমাকে দেখে আমি মুগ্ধ। চমৎকার একটা মেয়ে। প্রানবন্ত। সংসদের রাস্তায় গাড়ী পার্ক করে মঞ্জু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আমি মঞ্জুর ঘাড়ে হাত রেখে বললাম, কি হয়েছে! মঞ্জু ডান হাতের ব্রেসলেটটা বাম হাত দিয়ে কয়েকবার ঘুরিয়ে বললো, বুঝতে পেরেছি এটা দেখে তুই বুঝতে পেরেছিস! আমি বললাম, কিভাবে? মঞ্জু হঠাৎ করে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে।

মাথায় হাত বুলিয়ে আমি স্বান্ত্বনা দেই। একসময় সে স্থির হয়। বলে, আমার স্ত্রী এখনও জানে না। গত এক বছর যাবৎ বাচ্চার জন্য ঝামেলা করছে, কিন্তু আমি রাজী হচ্ছি না। আমার সন্দেহ হয় ওর স্ত্রীর হয়েছে কিনা! সে বলে, আমি ওকে নিয়মিত চেক করাচ্ছি, এখন পর্যন্ত সেফ আছে।

কনডম ইউজ করি। তাছাড়া এখন যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলি! জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু টিভিতে কেন? মঞ্জু জানালো, একটা এনজিওর তত্বাবধানে সে আছে, তারাই অনুষ্ঠানটা করেছিল বলে যেতে হয়েছে। ৭. এরপর মঞ্জুর সাথে দেখা বছর খানেক পরে। এখন তার স্ত্রী, বাবা-মা সবাই জানে। এনজিওটি রক্ত পরিসঞ্চালনের সময় এইচআইভি ইনজেক্টের কথা বলে সামাজিক মর্যাদাটা রেখেছে।

উপরন্তু যেখানে কাজ করে সে সংস্থাটি এইডস পজেটিভদের ডাইভারসিটি কোঠায় বিশেষ সুবিধা দেয় বিধায় মঞ্জুর কোন অসুবিধা হচ্ছে না। মাঝখানে আফ্রিকা ঘুরে এসেছে, এইডস প্রোগ্রামের একজন পরিদর্শক হিসাবে। মঞ্জুর স্ত্রীর সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। তারা ভাবছে টেস্ট টিউব বা এডপ্টিং এর মাধ্যমে সন্তান নিবে কিনা। সম্ভাবনা যাচাই চলছে।

৮. মঞ্জুর সাথে গতকাল অনেকদিন পরে দেখা হলো। ইতিমধ্যে তিনবছর হয়ে গেছে। শুকিয়ে বেশ কাঠ কাঠ লাগলো। বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধের আন্দোলনে মঞ্জু এখন একটা সংগ্রামী নাম। নিজে ড্রাইভ করে না।

অফিস থেকে ড্রাইভারসহ একটা গাড়ী দিয়েছে। আমার মাঝখানে আরো একবার অফিস বদল হয়েছে। কিন্তু মঞ্জু আমাকে ভুলতে দেয়নি। গতকাল চমকে দিয়ে অনেকক্ষন সাথে নিয়ে ঘুরেছে। ফেরার সময় কেবল বললো, এবার ২১ শে অক্টোবর তোর একা একাই জন্মদিন পালন করতে হবে!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.