আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ-৯~*~চেরাপুঞ্জি হতে সুরমার শীতলতায়

কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com

আগের পর্ব পড়ুন । পাইকপাড়া গাঁয়ের শেয়ালেরাঃ কোমরে লাল রঙা চাদর জড়িয়ে, জড়িয়ে নয় বলতে হবে পরে বাঁশীতে সুর তোলা আর ছাড়া গলায় এক লম্বাচুলো যুবককে গান ধরতে দেখেছি কয়েকদিনের মাথাতেই। সাথীদের জিজ্ঞেস করায় বললো যে, সে মোকামের পাগল, সারাদিন বনবাদাড়ে ঘুরেফিরে খেয়ে না খেয়ে মোকামের আশপাশে পড়ে ঘুমায় আর গান গাইতে থাকে। ঝড়-বৃষ্টিতেও তাকে দেখা গেছে ভারতের টিলায়। টিলার সবুজ ঘাসগুলোতে বৃষ্টির পর রোদের ঝলকানি আজো মনে মনে আমার দু'চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।

এত সুন্দর সূর্যডোবা প্রকৃতি অথচ তিন তিনটে ভয় ওখানেই বাসা বেঁধে বসে আছে। কবর, মাযার, শ্মসান, তেতুল গাছ, তুলা গাছ, জোড়া তালগাছ আর তিন রাস্তার মোড়; এ জায়গাগুলোকে সে-ই ঘুম পাড়ানী জুুজুবুড়ির গল্পে বলা ভয়ের মতই মনে মনে ভর করে আছে। তাই 'বাবা'(?)র (নাম মনে পড়ছে না) মাযারকে ভয়ই পেতাম, তাছাড়া বাঁশের বেতা দিয়ে এমনভাবে বানিয়েছে যে, একটা মানুষ কোনমতে শুয়ে শুয়ে প্রবেশ করে ঠিক কবর বরাবর জায়গাটিতেই শুয়ে থাকতে পারবে; দেখতেই অন্যরকম লাগতো। দ্বিতীয় ভয়টি ছিল পাগল যুবকটি, কে জানে যদি সামনে পড়ে যাই আর ছোট্ট ঠ্যাং ধরে ছুঁড়ে মারে খরস্রোতা গাঙের পানিতে। তৃতীয় ভয়টি ছিল সেই হুক্কাহুয়ার দল, মোকামের দক্ষিন-পশ্চিমের টিলার বাগান ঘেঁষেই এ দু'গাঁয়ের কবরস্থান।

অনেক শিশু আর মুর্দাকে দুনিয়ায় পাহারা না দিতে হলেও মরণের পর পাহারা বসাতে হয় কবরস্থানে কেননা, এলাকার পাহাড়ী শেয়ালেরা কিভাবে যেন লাশের গন্ধ পেয়ে যায় আর রাত গভীরে এসে তাদের স্রষ্টা প্রদত্ত শাবল চালিয়ে খুঁড়ে নিয়ে মহাভোজের আয়োজন করে থাকে। পরদিন শোকার্ত পরিজনদের জন্য সে দৃশ্য হয় আরো হৃদয় বিদারক! প্রচলিত গল্পে অনেক শুনেছি যে, শিশুদের কলিজাটা না কি আগে খায় ওরা, কখনো কখনো শুধু কলিজাসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গ খেয়েই বাকী দেহ রেখে চলে যায় ওরা। পৃথিবীকে বুঝার বয়সের সাথে সাথে কখনো কখনো পত্রিকার পাতাও দেখেছি চারপেয়ে নয়; দু'পেয়ে শেয়ালেরা মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভাগ বসাচ্ছে, হাত-পা এক জায়গায়, মাথা অন্য জায়গায়, বাকী দেহ অন্য কোথাও। এরাও শেয়াল, শুধু অবয়ব আর ভাষাগত পার্থক্যের কারণে আমরা কাছে থেকে না জানলে চিনতে পারি না কেবল। (চলবে) ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।