আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপন্যাসের(?) খসড়া-৩

ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ

ফারাহদের বাসা কলেজ রোডের শেষ মাথায়। রেললাইনের ঠিক পশ্চিম পাশে। গাছপালায় ঘেরা বাড়িটি দোতলা বিল্ডিং এর । গেটে কড়া নাড়তেই খুলে দিলেন যে মহিলা উনার পরিচয় পেলাম পরে। কাকে চাচ্ছেন ? মুজিদ মাহমুদ সাহেব কে।

কোত্থেকে এসেছেন ? বাগমারা থেকে। আপনার নাম ? আকাশ আহমেদ। ও, মাহমুদের কাছে আপনার নাম অনেক শুনেছি। আপনি খুব ভাল কবিতা লেখেন। আসুন মামু, ভেতরে আসুন।

আলাপ পরিচয়ে বুঝলাম উনি মাহমুদ সাহেবের স্ত্রী। ভেতরে গিয়ে সোফায় বসলাম। পাশের রুম থেকে ভেসে আসছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতচর্চার সুর। মাঝে মাঝে পুরুষ কন্ঠ এবং ঠিক পরেই নারী কন্ঠের চর্চার সুর শুনলাম মগ্ন মনে। কোনো ওস্তাদ হয়তো তালিম দিচ্ছেন সারাহ-ফারাহকে।

আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কখন আসবেন কবি মুজিব মাহমুদ সাহেব। কী মামু, কী খবর ? আমার আত্মমগ্নতার ধ্যান ভাঙে। চোখ বুঁজে চিন্তা করছিলাম আর শুনলাম সঙ্গীতের রাগ। মুজিব মাহমুদ এলেন।

পাশে বসলেন। তারপর কেমন আছেন ? ভালো, মামু। কেমন চলছে কাব্যচর্চা। এই, মোটামুটি। মামুর বেটা, আপনি তো খুব খাসা কবিতা লেখেন।

আরে যা বলেন। যখন যা মনে আসে লেখি। তবে মামু আজকে কিন্তু আমার লেখালেখি নিয়ে কোনো আলোচনা করবো না। আপনার খবর বলেন। এই চলছে, এক রকম।

আমি জানি কবি মুজিব মাহমুদের এক রকম মানে ব্যবসার ভালো অবস্থা। তার উপর শখের বসে কবি। তবে ঘরে তাঁর দু'বোনের সঙ্গীত চর্চা আমাকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে ফারাহর কন্ঠ স্বরে যেন মধু ঝরে। মনে মনে ভাবি, এই বুঝি প্রেমে পড়ার নমুনা।

যাকে ভালো লাগে তার সব ভালো মনে হয়। প্রেমে পড়লে প্রেমিকার কোনো খুঁত চোখে পড়ে না কারও। একটু পরে ঘরে ঢোকে সারাহ-ফারাহ। ওস্তাদজীকে বিদায় দিতে পিছু পিছু গেষ্ট রুমে ঢোকে তারা। কবি মুজিব মাহমুদ ওস্তাদজীকে এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত যান।

সারাহ-ফারাহ দাঁড়িয়ে থাকে রুমে। আমাকে বসা দেখে চেনার চেষ্টা করে তারা। আমি তাদের দু'বোনের ডাগর-কালো নয়ন দেখি। বিশেষ করে ফারাহর। কীভাবে যে আলাপ শুরু করবো বুঝে উঠতে পারিনা।

এরই মধ্যে এসে পড়ে আমার মামু-বন্ধু কবি মুজিব মাহমুদ। কী মামুর সাথে কথা হয়েছে তোদের ? চিনতে পারিসনি ? ঐ যে একুশে ফেব্রুয়ারীর রাতে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ও সেই কবি মামু ? একযোগে বলে ওঠে সারাহ-ফারাহ দুই বোন। আমি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ি। যা তোর ভাবীকে চা-নাস্তা করতে বল।

আজ মামুর সাথে আড্ডা হবে। আর তোরাও রেডি হয়ে যা। আমার কবি মামুকে গান শোনাতে হবে। কথাগুলো শেষ করে কবি মুজিব মাহমুদ আমার দিকে ফেরে। তারপর, গান লেখার কথা বলেছিলেন।

শুরু করেছেন ? না করিনি! তবে তাড়াতাড়িই হয়তো লিখা শুরু হয়ে যাবে। বেশ ভালো হবে। আমাকে কিছু গান দিয়েন তো মামু। আচ্ছা দেবো! কবি মুজিব মাহমুদ স্ত্রী অর্থাৎ মামী ঘরে প্রবেশ করলেন ট্রে হাতে। সামনে চা-নাস্তা রাখলেন।

আমার মাথায় চুল দেখে বলে উঠলেন-মামুর মাথা দেখি একেবারে ষ্টেডিয়াম! বুঝলাম মামী আমার খুব রসিক। অল্প বয়সে টাক পড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও ফুটবল মাঠ হয়ে যায়নি। এসবই উচ্চশিক্ষার ফসল। তার উপর আবার কাব্যচর্চা। কবি মুজিব মেহেদী এবার সারাহ-ফারাহকে ডাকলেন।

ভেতর থেকে ছুটে এলো দু'বোন। মামু বললেন-যা হারমোনিয়াম, তবলা নিয়ে আয়। সারাহ-ফারাহ দু'বোন একজন হারমোনিয়াম, একজন তবলা-ডুগি হাতে ঘরে ঢুকলো । আবার শুরু হলো গানের আসরের আয়োজন। এরপর কে কার আগে গাইবে সেজন্য আরেকবার শুরু হলো দরকষাকষি।

আমি ফারাহর চাঁদমুখের দিকে চুপিচুপি তাকাই। আর বুঝতে চেষ্টা করি ওর মনের ভেতরের অবস্থা। বাইরের বাতাস ঝড় বইয়ে দিতে যাচ্ছে ভেতরের বাড়িতে- ফারাহ কি বোঝে তা ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।