আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জগ্নাছড়ার পাহাড়ে পূর্ণিমা ( শেষ )



...পুরো গ্রামটা আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি। জুম চাষ আর শিকার গ্রামবাসীদের আয়ের প্রধান উৎস। মাচার ওপর বিশাল বিশাল বাঁেশর টং ঘর। ঘরে পৌঁছাতে হয় একটা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে। সন্ধ্যার পর এইসব সিঁড়ি আবার সরিয়ে ফেলা হয়।

বুনো জন্তু যাতে হুট করে ঘরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য এই ব্যবস্থা। আমরা ভাত খাই ওই গ্রামের এক বৃদ্ধ জুম চাষীর ঘরে। অচেনা মানুষগুলোর অতিথি পরায়নতা দেখে সত্যিই অবাক না হয়ে পারা যায় না। ...আমরা সিদ্ধান্ত নেই, রাতটা সেখানেই কাটানোর। ... সেখানে পরিচয় হয় আরেক শিকারী বৃদ্ধর সঙ্গে।

এখন আর তার নাম মনে নেই। বিরাট এক গাদা বন্দুক দিয়ে সারা জীবন অনেক ধরনের শিকার করেছেন তিনি। সন্ধ্যায় এক বোতল মদ নিয়ে তার মাচাং ঘরের ইজরে বসি। পাহাড় তখন ভেসে যাচ্ছে টাটকা দুধের ফেনার মতো ফিনফিনে পূর্নিমার আলোয়। ... বৃদ্ধ শিকারী চুরুট টানতে টানতে ভাঙা বাংলায় বলেন তার শিকার জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা।

আমি আর বুদ্ধ তার পায়ের কাছে বসে বালক--বিস্ময়ে শুনতে থাকি রূপকথার মতো সেই সব কথন। ছোট্ট মদের বোতল ফুরিয়ে যায় দ্রুত। ...ওই রাতে চরম এক উপলব্ধি নিয়ে ঘুমাতে যাই। অনেক দিন ধরে পাহাড়ে, বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে নিউজ করা সুবাদে দেখেছি অনেক দালাল, সুবিধাবাদী গোষ্ঠির দৌরাত্ব। আমি যাদের বলি জুম্ম (পাহাড়ি) ব্যাপারী।

আমার মনে হতো, আমি নিজেও কী তাই? মাথার ভেতর ঘুন পোকার মতো কুটকুট করতে থাকা দীর্ঘদিনের এই গুরুতর প্রশ্নটির সমাধান হয় ওই রাতে। না, আমি আসলে তা নই। পাহাড় আমাকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে, খ্যাতি দিয়েছে, সন্মান দিয়েছে -- এটি আদিবাসীদের নিয়ে কোনো তথ্য বাণিজ্য করার কারণে নয়; এটি আসলে তথ্য সেবা দিয়ে আদিবাসী পাহাড়ি জীবন কথার নির্মম গুঢ় সত্য প্রকাশ্যে তুলে ধরার জন্যই। এর নেপথ্যে যে আত্নত্যাগ ও শ্রদ্ধাবোধ আছে, সেটিও নিছক ফেলনা নয়। আর এর বিনিময়েই এই সব প্রাপ্তি।

...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।