আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, বতূল, বিনতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সাল্লাম উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাত

মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন ও সংগ্রামী কন্ঠস্বর সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, বতূল, বিনতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বরকত পূর্ণ জীবনী মুবারকের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে- উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাত। তিনি হচ্ছেন গোটা উম্মাহর জন্য আদর্শ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শানে ইরশাদ মুবারক করেছেন- لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة অর্থ: “রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ” আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহান শান সম্পর্কে বলেছেন, حضرت فاطمة عليها السلام بضعة منى অর্থ: “হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার দেহ মুবারক উনার অংশ মুবারক। ” কাজেই যিনি গোটা উম্মাহর সমস্ত মহিলাদের মহান আদর্শ; উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতের সুনিপুণ বর্ণনা আদর্শ গ্রহণকারীগণ কিভাবে দিতে পারেন? শুধু রহমত, বরকত, কল্যাণ, সাকীনা, নৈকট্য-সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় সে সম্পর্কে যৎসামান্য আলোচনা মাত্র।

** আলোচনা শুরু করার আগে উপলব্ধিকে শানিত করার জন্য, বুঝার সুবিধার্থে একটি কথা বলে রাখা জরুরী মনে করছি। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, “একজন খলীফা উনার এক মুহূর্তের আমল একজন সাধারণ মানুষের সত্তর বছরের আমল অপেক্ষা উত্তম বা ফযীলতপূর্ণ। সেক্ষেত্রে যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ (জান্নাতের সকল মহিলাদের সাইয়্যিদা) সকল খলীফাগণের আদর্শ উনার আমল তথা ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতের মর্যাদা-ফযীলত কত বেশি বা উত্তম তা ফিকিরের বিষয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, فكر ساعة خير من عبادة ستين سنة অর্থ: “কিছুক্ষণ ফিকির করা ষাট বছর ইবাদত-বন্দেগী হতে উত্তম। ” সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা প্রতিটি বিষয়েই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো।

উম্মুল মু’মিনীন, হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেছেন, ماريت احدا كان اشبه سمتا و هديا ودالا وفى رواية حديثا و كلاما برسول الله صلى الله عليه و سلم من سيدة نساء اهل الجنة حضرت فاطمة الزهراء عليها السلام অর্থ: “সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আচার-আচরণ, চাল-চলন, চরিত্র মহিমা, আলাপ-আলোচনা, কথা-বার্তায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যেরূপ সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো; অনুরূপ আর কাউকে দেখিনি। ” (তিরমিযী শরীফ) ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতের ক্ষেত্রেও তিনি উনার পরিপূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। তাছাড়া তিনি সেক্ষেত্রে যে আদর্শ স্থাপন করেছেন তা যদি কেহ অনুসরণ-অনুকরণ করেন তাহলে তিনি অতীব সহজেই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম-পরম সন্তুষ্টি, রেযামন্দি, মা’রিফাত, মুহববত হাছিল করতে পারবেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সদা-সর্বদা অর্থাৎ দায়িমীভাবে যিকির-ফিকিরে লিপ্ত ছিলেন। যিকির-ফিকির ছাড়া উনার এক মুহূর্ত অতিবাহিত হতো না।

সুবহানাল্লাহ! রাত্রি জাগরণ- সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার আম্মাজান, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ উনাকে দেখতাম। তিনি সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ কান্নাকাটি করে দোয়া করতেন। কিন্তু তিনি নিজের জন্য কখনো দোয়া করতেন না। বরং নানাজান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার উম্মতের নাজাতের জন্য, কল্যাণের জন্য সবসময় দোয়া করতেন।

সুবহানাল্লাহ! তিনি সবসময় উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার এক কোণায় সারা রাতব্যাপী নামায-কালাম, যিকির-ফিকিরে নিমগ্ন থাকতেন। এভাবে ফযর হয়ে যেতো। কোনো কোনো সময় তিনি নামাযের সিজদার মধ্যে থাকতেন। এভাবে রাত কেটে ফজর হয়ে যেতো। তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ ফরিয়াদ করতেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি যদি রাতকে আরো একটু বাড়িয়ে দিতেন তাহলে আমি আরো কিছুক্ষণ আপনার পবিত্র দরবারে সিজদা অবস্থায় থাকতে পারতাম।

(মাদারিজুন নুবুওয়াত-২/৫৪৩, সাফিনায়ে নূহ- ১৭১) বিশিষ্ট মহিলা ছাহাবী হযরত উম্মে আয়মন রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহা তিনি বর্ণনা করেন। একদিন আমি দুপুর বেলা কোনো জরুরী কাজে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে গেলাম। দেখলাম পবিত্র হুজরা শরীফ উনার ভিতর দিক থেকে দরজা মুবারক বন্ধ কিন্তু ভিতরে যাঁতা ঘুরানোর শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি বাহির হতে দেখতে পেলাম সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ঘুমিয়ে আছেন। অথচ পার্শ্বে যাঁতা আপনা আপনি ঘুরতেছে।

শিশুপুত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক দোলনা আপনা আপনি দুলতেছে। আর উনার পাশে বসে জনৈকা মহিলা তাসবীহ পাঠে রত আছেন। সুবহানাল্লাহ! এই বিস্ময়কর ঘটনাটি আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পেশ করলাম। তিনি বললেন, হে হযরত উম্মে আয়মন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা দুপুরের তীব্র গরমের কারণে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিশ্রামের প্রয়োজন হয়েছে। তিনি যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে ঘুমিয়ে গেছেন।

কিন্তু আটা তৈরির প্রয়োজন ছিলো। নিজের ওযীফা আদায় করাও বাকি ছিলো। তাছাড়া শিশুপুত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ঘুম ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুবা উনার ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে চাননি। তাইতো তিনি তিনজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা উনার করণীয় কাজগুলো সমাধা করে দিলেন।

সুবহানাল্লাহ! মুয়াজজাজ হাজিরীন! সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার পারিবারিক জীবন মুবারক-এর সমস্ত কাজগুলিই নিজ হাত মুবারক দ্বারা সম্পন্ন করতেন। স্বামী খিদমত, সন্তান-সন্ততিগণের প্রতিপালনসহ সকলের হক্বসমূহ যথাযথভাবে সুসম্পন্ন করতেন। সাথে সাথে তা’লীম-তরবিয়ত পুরোপুরি হক্ব আদায় করতেন। এতো কঠিন ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করার পরেও নিজের ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাত থেকে কখনোই বিরত থাকতেন না। যার ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার খিদমত মুবারক করার জন্য হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিয়োগ করতেন।

জান্নাতী খাবার ও পোশাক-পরিচ্ছেদ পাঠায়ে দিতেন। খাতুনে জান্নাত হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার অনুসরণকারী, মুহব্বতকারী এবং খিদমতকারীদেরকে পরোক্ষভাবে এই শিক্ষাই দিয়েছেন, যে তোমরা তোমাদের কর্তব্য কাজে লিপ্ত থেকেও কখনো ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত মাশাক্কাত থেকে গাফিল থাকবে না। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তোমাদের সমস্ত কাজ কুদরতীভাবে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সুসম্পন্ন করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তার হাক্বীক্বতে পৌঁছতে পেরেছেন। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের খিদম করেন, জিন ইনসান, পশু-পাখি সবাই।

পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত: পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ছিলো উনার অতি প্রিয় আমল। যখনই সুযোগ পেতেন তখন পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে মশগুল হতেন। সে তিলাওয়াত সাধারণ তিলাওয়াত ছিলো না। তিনি প্রতিটি আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রকৃত মর্ম অনুধাবন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সহকারে তিলাওয়াত করতেন। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে মশগুল থেকেও পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন।

জনৈক বুজুগ ব্যক্তি বলেন, আমি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বপ্নে দেখতে পেলাম। তিনি খানা খাচ্ছেন। খানা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে অত্যন্ত মুহব্বত, আদর, ইহতিরামের সাথে মধুর কণ্ঠে পবিত্র কালাম পাক তিলাওয়াত করছেন। সেই তিলাওয়াত এতো ছহীহ শুদ্ধ যে, প্রতিটি হরফের ছীফত, মদ, মাখরাজসহকারে পাঠ করছেন, যা আমি ইতঃপূর্বে কখনো শুনিনি। তিনি তিলাওয়াত করছেন ও কাঁদছেন।

‘মাদারেজুন নুবুওয়াত’ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, তিনি রান্না-বান্না করার সময়েও পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন। একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট পাঠালেন। তিনি গিয়ে জানতে পেলেন, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি একহাত মুবারক দিয়ে দোলনা মুবারক দোলাচ্ছেন, অন্য হাত মুবারক দ্বারা যাঁতা মুবারক ঘুরাচ্ছেন আর মুখ মুবারককে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করছেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত, তিনি উনার অনুসারীদেরকে পরোক্ষভাবে এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে এমনভাবে ফানা হতে হবে; কোনো কাজেই যেনো তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতে না পারে। তবেই হাক্বীক্বতে পৌঁছতে পারবে।

রিয়াজত-মাশাক্কাত : ইবাদত-বন্দেগী, রিয়াজত-মাশাককাতের দু’টি ধারা। একটি দুনিয়াবী কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার না করে সংসার ত্যাগী হয়ে বনে জঙ্গলে গমন করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ধ্যানে নিমগ্ন হওয়া। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিবাহ শাদী করে ঘর সংসার করতঃ পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যার সাথে সম্পর্ক রেখে পরস্পরে ন্যায্য হক্ব বা অধিকার আদায় করে, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ভাব-সম্প্রীতি বজায় রেখে মানুষের উপকার সাধন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করা ও অন্যকেও তজ্জন্য উদ্বুদ্ধ করা। প্রথম প্রকারের সাধক থেকে দ্বিতীয় প্রকারের সূফী সাধকগণের মর্যাদা ও মর্তবা অনেক বেশি। সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাককাত সহজসাধ্য বা আত্মকেন্দ্রীক ছিলো না বরং তিনি সংসার জীবনের জটিল-কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও একগ্রচিত্তে মহান আল্লাহ পাক উনার ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। সংসার মায়াজালের প্রতিবন্ধকতা কখনো উনাকে এক পলকের তরেও এই ত্বরীক্বা (পথ) থেকে সামন্যতম বিচলিত বা বিচ্যুত করতে পারেনি। স্বামীর পারিবারিক দায়িত্বসমূহ সম্পন্ন করে একাধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখনো নফল নামাযে কাটিয়ে দিতেন। নামায আদায়কালীন একাগ্রতা, নিমগ্নতার মধ্যে উনার দুনিয়াবী কোনো কিছুর খেয়াল থাকতো না। (নবী-নদ্দিনী- ৮৭) রোযা ছিলো উনার চির অভ্যাস মুবারক: প্রায় সর্বদাই তিনি রোযা রাখতেন।

এছাড়া তা’লীম-তরবিয়ত ছিলো উনার বিশেষ আমল। মানুষদেরকে তা’লীম-তরবিয়ত, উপদেশ দান করতোঃ একেকজনকে শ্রেষ্ঠা আবিদারূপে পরিণত করে দিতেন। উনার পবিত্র ও বরকতময়পূর্ণ ছোহবত মুবারকে যারা আসতেন তারা সবাই অমূল্য রত্মে পরিণত হতেন। একদিন কিছু মেয়ে ও মহিলা উনার মুবারক ছোহবতে আসলেন উনার মূল্যবান নসীহত মুবারক শুনার জন্য। সেদিন তিনি উনাদেরকে স্বামীর খিদমত করার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে মুবারক নসীহত করলেন।

তিনি বললেন, ভগ্নীগণ! আমার আব্বা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, لو كنت آمر احدا ان يسجد لأحد لأمرت المرأة ان تسجد لزوجها অর্থ: “যদি আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে মহিলাদেরকে হুকুম দিতাম তারা যেনো তাদের আপন আপন স্বামীকে সিজদা করে। ” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিজী শরীফ) এবার ভেবে দেখুন, স্ত্রীদের উপর স্বামীর মর্যাদা কত অধিক এবং স্বামীদের সাথে তাদের কিরূপ ব্যবহার করা প্রয়োজন। (নবী-নন্দিনী-৮৮) সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি একটি ওয়াকিয়া বা ঘটনা বলতেন। তিনি বলেন, একদিন আমি আমার সম্মানিত পিতা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় জনৈকা ক্রীতদাসী উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার কাছে একটি বিষয় আরজ করতে এসেছি।

যদি আপনি দয়া করে অনুমতি দান করেন তাহলে বলতে পারি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি দিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার মনিব জনৈক সওদাগর। তিনি একটি দ্বিতল ভবনের অধিবাসী। উহার উপর তলায় নিজ স্ত্রীকে নিয়ে বাস করেন।

কিছুদিন হলে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বিদেশে চলে গেছেন। যাওয়ার প্রাক্কালে স্ত্রীকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, কোনো কারণেই যেন নিচে অবতরণ করা না হয়। এই ভবনের নিচ তলায় সেই সওদাগনের স্ত্রীর আব্বা আম্মা বাস করেন। হঠাৎ তারা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাদের সেবা-শশ্রুষা করার মতো কোনো লোক নেই।

আমার মনিবের স্ত্রীই তাদের একমাত্র সন্তান বটে। এখন তিনি কঠিন চিন্তা-পেরেশানির মধ্যে আছেন। কেননা একদিকে স্বামীর নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে অসুস্থ পিতা-মাতার সেবা-যতœ করা অতিপ্রয়োজন। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তাই আমাকে আপনার মুবারক খিদমতে পাঠিয়ে দিয়েছেন, যদি আপনি সওদাগরের স্ত্রীকে নিচে নামার অনুমতি দেন।

তাহলে তিনি নিচে নেমে পিতা-মাতার সেবা-যতœ করবেন। অন্যথায় তিনি কখনোই নিচে নামবেন না। অবশ্য রোগাক্রান্ত পিতা-মাতার জন্য উনার মনে নিদারুন ব্যাকুলতা। কেননা তিনি যদি নেমে না আসেন তাহলে উনার পীড়িত পিতা-মাতার খিদমত হবে না। ঘটনা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি তাকে নিচে নামার অনুমতি দিবা না।

যেহেতু তার পক্ষে স্বামীর আদেশ পালন করাই প্রধান কর্তব্য। একথা শুনে দাসীটি চলে গেলেন। দুই তিনদিন পরে ওই দাসী আবার আসলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আবার কি জন্য এসেছ? দাসী বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মনিবের স্ত্রীর পিতা-মাতার মৃত্যু আসন্ন। এ সময় উনারা জনমের তরে একবার উনাদের কন্যার মুখ দেখতে চান।

দয়া করতঃ আপনি অনুমতি দিলে মুমুর্ষ বৃদ্ধ পিতা-মাতার অন্তিম বাসনা পূর্ণ হতে পারে। দাসীর করুণ কণ্ঠে এই আকুল আবেদন শুনেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই জওয়াব দিলেন। বললেন, তার স্বামীর আদেশের উপর আমি আদেশ দিবো না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।