আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্পষ্টকথন: কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষনা করা মানবতা বিরোধী বিকৃত চিন্তা

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

এভাবেই শুরু করেছিল নাৎসীরা জার্মানীতে। যারা ইহুদী, বা যাদের শরীরে আর্য রক্ত বইছে না, তারা মনুষ্য সমাজের অন্তর্ভুক্ত নয়। যারা আর্য হয়েও অনার্যদের প্রতি সহানুভুতিসম্পন্ন, সেই সাথে যারা আর্য হয়েও শারিরীক ভাবে অক্ষম, প্রতিবন্দী, তাদের সবাইকে এক কাতারে ফেলাই ছিল হিটলারের উদ্দেশ্য। লাখো লাখো মানুষকে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সে উদ্দেশ্যে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এ নিশৃংসতার কোন সীমা নেই, পরিধি নেই।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভার্সাই চুক্তির কারনে সারা বিশ্বের কাছে অপমানিত, নিজের দেশে আর্থিক ভাবে পর্য্যদুস্ত জার্মান সমাজ হিটলারের এই রাজনৈতিক চালের মাঝেই খুজে পেয়েছিল তাদের মুক্তির চাবিকাঠি। তাই প্রায় সবাই জমা হয়েছিল হিটলারের পতাকাতলে। কিন্তু সেটা যে ভুল ছিল, তার প্রমান হাড়ে হাড়ে টের পেলো জার্মানরা আরো কয়েক বছর পর। এখনকার জার্মানীতে হিটলার তাই একটা ঘৃন্য নাম। আমাদের বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের নিয়ে যা শুরু করেছে কিছু কিছু ধর্মান্ধ মুসলিম, তা হিটলারের রাজনৈতিক চাল ও নাৎসীদের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

এরা চাইছে, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষনা করা হোক। এ ধরণের চাওয়া যে কোন মানবিক মূল্যবোধ, অধিকার ও সুস্থ চিন্তার পরিপন্থী। এ কথা বলার আগে আমার কাদিয়ানী হবার, তাদের ইতিহাস ঘাটার কোন দরকার আছে বলে মনে করি না। অসুস্থ চিন্তাকে প্রতিহত করার জন্যে অসুস্থ চিন্তার বিপক্ষে কোন যুক্তি দাঁড় করানোর দরকার পড়ে না। কোন পাগল, বিকৃতমস্তিষ্কের মানুষ কাউকে যদি আক্রমণ করে, তাহলে পাগলের কেসহিস্ট্রি জানা দরকার, যে লোককে আক্রমন করা হলো, তার কেসহিস্ট্রি জানার কোন দরকার পড়ে না।

এ পাগল বা পাগলগুলোর কেসহিস্টি হচ্ছে, এরা কোন না কোন ভাবে নিজেদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করে বা কোন না কোন ভাবে সমাজের কাছে পরাজিত। হয়তো এদের নিজেদের পায়ের নীচেই মাটি নেই কোন কারনে। আরেকটা উন্মাদনাও এদের ভেতরে থাকতে পারে। তা হচ্ছে সামাজিক শক্তির প্রতি এদের সীমাহীন লোভ। এ লোভ এদেরকে বিদ্বেসী চরিত্রকে নগ্ন করে দিয়েছে, এদের ভেতরের লুকোনো পশুত্বকে জাগিয়ে দিয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানদের পায়ের নীচেও মাটি ছিলনা। কাদিয়ানীরা কি করেছে বা না করেছে, তা জানার আমার সামান্যতম প্রয়োজনও নেই। সে প্রাক-ঐতিহাসিক কাহিনী ঘেটে জার্মানরা খুন করেছে ইহুদীদের। আর ইহুদী আর মুসলিমরা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। কাদিয়ানীদের পূর্বপুরুষরা যদি কোন পাপ করে থাকেন, তার ভার এখন তাদের সন্তানসন্ততিদের বইতে হবে, এ মধ্যযুগীয় চিন্তা কিছু বিকৃতমস্তিষ্কধারীর পক্ষেই সম্ভব।

কোন ব্যাক্তির কর্মের জন্যে সে ব্যাক্তি দায়ী, তার সমাজকে দায়ী করা অন্যায়। আমি প্রতিবাদে সবসময়েই সোচ্চার থাকবো আর থাকবে এসব বিকৃতমস্তিষ্কধারী উন্মাদদের প্রতি আমার প্রবল ঘৃনা। এরাই বাংলাদেশে হরকতুল জিহাদ বা মৌলবাদী সন্ত্রাসী, ভারতে শিবকেসনা, আমেরিকায় কুকুকস্ ক্ল্যান আর জার্মানীতে নাৎসী। এদের নিজেদের ধর্মবোধ নিতান্তই ঠুনকো বলেই এরা অতি সহজেই নিজেদের ধার্মিক অস্তিত্বকে বিপন্ন দেখে। এদের ভেতরে আত্মশক্তি আর আত্মবিশ্বাস থাকলে এরা এক ধর্মীয় গোষ্টিকে আঘাতের মাধ্যমে নিজেদের শক্তির প্রমান করতে চাইতো না।

এখানে কিছু কিছু আমার সমমনা ব্লগার কোরানের কথা তুলে এই সমাজবিরোধীদের চিন্তার প্রতিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে চাইছেন। আমার তারও প্রয়োজন নেই। আমি আমার ধর্মপুস্তক হিসেবে কোরানকে যথাযেগ্য মর্যাদা দিই। তারপরও কোরানে যদি অন্যধর্মলম্বীদের অধিকার হনণের নির্দেশ থাকতো, আমি তা পালন করতে যাব না। আমার মানবিকতা আর নিজস্ব বিবেকবোধ সবসময়েই তার আগে স্থান পাবে।

ধার্মিক হওয়া তাদেরই সাজে, যারা মানুষ, পশুদের নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।