আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের একটাই রাজু ছিলো

'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'

রাজশাহী থেকে কিছু একটা না করলেই নয়- এই ভাবনা তাড়িয়ে ফেরার কারণেই বের করেছিলাম দৈনিক উপচার। কিন্তু খুব বেশিদিন টেকা হলো না মালিকদের মারামারিতে। উপচার থেকে যখন ফিরেছি, যখন ঠিক করেছি, আর কোনো স্থানীয় কাগজে চাকরি নয়, তখন রাজুর সঙ্গে পরিচয়। স্পষ্ট মনে নেই, কার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছিলাম। খুব সম্ভবত কামরুজ্জামান শাহীনের মাধ্যমে।

আমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়েই রাজু জানালো, তার স্বপ্ন অনেক বড় সাংবাদিক হবার। কাজেই একটা কাজ চাই তার। প্রথম পরিচয়ে লম্বা একহারা গড়নের প্রায় কালো বর্ণের এই ছেলেটি আমার আশা জাগালো। সহযোগিতা করলাম সাধ্য মতো। উপচারে কাজ শুরু করলো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের এপক্ষ-সেপক্ষের কাহিনীতে রাজুও একটি পক্ষ নিলো। শিবিরের দখল করার কারণে যে প্রেসক্লাবটি ছেড়ে অধিকাংশ সাংবাদিক বাইরে থাকেন রাজু সেই প্রেসক্লাবেই ঘর বাধলো। আমার সঙ্গে তার সুতোটা ছিঁড়ে গেলো কখন যে, টেরও পাইনি। বিয়ের পর রাজুর সঙ্গে হুট করে দেখা রাস্তায়। রিকশা থামিয়ে রাজু, সামনে দাঁড়ালো, শিবলী ভাই, বিয়ের খাবার খাওয়াবেন না? একটি পেস্ট্রি কেক খেয়ে পরম তৃপ্তির ভান করে বলেছিলো, যাক বিয়ের খাওয়াটা হলো।

উজ্জল যখন আজকের কাগজ ছেড়ে দিয়ে আমার দেশে ঢুকলো, তখন রাজু এলো আজকের কাগজে কাজ করতে চায় বলে। আমি সাধ্যমতো করলাম। কিন্তু কী কারণে জানি, ও আজকের কাগজে শেষতক কাজ করলো না। আমার সন্তান রোদকে কোলে নিয়ে ওর মায়ের পরীক্ষার সময় গণযোগাযোগ বিভাগের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোত্থেকে রাজু এসে হাজির।

শিবলী ভাই, দেখি দেন চাচ্চুকে দেন। আমার ছেলে আবার কারো কোলে যায় না। রাজু হাত দিতেই চিৎকার। রাজু বলে গেলো, শিবলী ভাই, আপনি যেমন আপনার ছেলেও তেমন! আমাদের এই একটাই রাজু ছিলো। হাজার দূরত্ব থাক, যোগাযোগের সুতোটা ছেঁড়া থাক, তারপরেও বছরে দু'চারবার অন্ততঃ দেখা হতো, কথা হতো।

রাজু, আমাদের একটাই রাজু, আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক পরিবারের একটা অংশ ছিলো। বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের সেই একটাই রাজু মারা গেছে অকালে। মাত্র 23 বছর বয়সে জন্ডিসে ভুগে তাকে কাটাতে হয়েছে সব মায়া। ভাষা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রাজুর মৃতু্যর খবর দুপুরে প্রথম দিলো উজ্জল। আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই মৃতু্য সংবাদ গ্রহণ করি।

এটাও করেছি। মাঝে মধ্যে মনে হয়, কেনো যে এমন হয়। তারপরেও ঠিকঠাক মতো চলি। আমি স্বাভাবিক ভাবে মৃতু্যর খবরটা গ্রহণ করলেও কেনো জানি আমার দুর্বল স্মৃতিগুলো বারবার রাজুকে হাতড়ে বের করতে চাইছে। আমাদের যে একটাই রাজু ছিলো! রাজুর পুরো নাম- সাজেদুর রহমান, শেষ পর্যন্ত খবরপত্রে কাজ করতো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.