আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চারতাস 3 (ধারাবাহিক ওয়েস্টার্ন গল্প )

timursblog@yahoo.com

স্যাম হ্যাজলিট খোয়া যাওয়া গরুঘোড়া সব নিয়ে গেছিল এখান থেকে । আচ্ছা হুইট যদি চোর না হয় তাহলে চোর কে? আর চোরাই গরুই বা কোথায় বা কোথায় লুকিয়েছে ? আপনা থেকেই মগোলোনস পর্বতমালার দিকে চোখ চলে গেল ওর, আদর্শ জায়গা । ওর চোখ সরু হয়ে গেল পুরনো এক স্মৃতি মনে করে । একরাতে তাস খেলতে খেলতে একটা ঝড়্ণার কথা বলেছিল টেইলর । ফসিল স্প্রিংস, বিশাল এক ঝর্ণা যা প্রচন্ড গর্জনে হাজার হাজার গ্যালন পানি উগরে দেয় মাটির ওপরে ।

'ওখানে একটা লোক অনেক গরু চরাতে পারে,' চোখ টিপে বলেছিল টেইলর । 'কেউ জানতে পারবেনা, সেকথা । ' অনেক দিন আগে এবং অনেক দুরে শোনা কথা । রেড রক র‌্যাঞ্চ তখনও বাজি ধরা হয়নি, বেশ কয়েকমাস পরে হবে ব্যাপারটা । ভেবে দেখর চেষ্টা করল সে, ফসিল ক্রিক জায়গাটা এখান থেকে খানিকটা উত্তরে ।

হয়তো ফসিল ক্রিক, সিল স্প্রিংস থেকেই নেমে এসেছে? কে জানে । টেক্সাসে ওর পরিচয় টেইলরের সাথে আর এটা অ্যারিজোনা । বাংক হাউজের একটা সামান্য আলাপেরও অনেক তাৎপর্য থাকতে পারে । 'দেখা যাবে বেন! ' বিড় বিড় করল অ্যালান রিং । 'আমরা দেখবো ঘটনা কোথায় গড়ায় !' রস বিলটন, হ্যাজলিট র‌্যাঞ্চের কর্মচারী ছিল খুনের সময় এবং অকুস্থলে সবার আগে পৌঁছেছে সে ।

এখন সে টাউন মার্শাল এবং সে এই র‌্যাঞ্চটায় কেউ বাস করুক তা চায়না । কেন? কোনটাই কোন মানে হয়না । এবং আপাতদৃষ্টিতে এটা তার কোন মাথাব্যাথা নয় । কিন্তু অনেক ভেবে দেখল সে, এটা তার ব্যাপার । র‌্যাঞ্চটার মালিক এখন সে ।

যদি কোন পুরনো খুন তার এখানে বসবাসের ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে তো এটা খতিয়ে দেখা তার কর্তব্য । আসলে ব্যাপারটা কৌতুহল মেটানোর একটা অজুহাত, নিজেও মনে মনে জানে সে তা । সকাল হল ও তা ধীরে ধীরে দুপুর পর্যন্ত গড়াল । বিলটন বা ব্রুলের কোন পাত্তা দেখা যাচ্ছেনা । রাইফেলে গুলি ভরে হাতের কাছেই রেখেছে অ্যালেন, কোমরেও জোড়া পিস্তল ঝুলিয়েছে, যদিও একটার বেশি সে সাধারনতঃ পরেনা ।

কেবিনের দরজার কাছেই আছে তার দোনলা শটগান । ঝর্ণাটার দিকে তার মনোযোগ । ঠিক এই মুহুর্তে কেবিনের আশপাশ ছেড়ে যেতে চাইছেনা মন । ঝর্ণাটা তাহলে বেশ খুঁটিয়ে দেখা যায় । ঠিক এই মুহুর্তেই যে কাজটা করতে হবে তা নয় ।

কিন্তু বেশ কিছু পাথর আর শ্যাওলা জমেছে বেসিনের তলায় । ওগুলো সরালে আরো বেশি ও আরো পরিস্কার পানি পাবে সে । ক্যানিয়নের মুখের দিকে একটা সতর্ক চোখ রেখে কাজে নেমে পড়ল অ্যালেন । এগিয়ে আসা ঘোড়ার খুরের শব্দে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে । হাতের কাছেই একটা পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা আছে তার রাইফেলটা ।

পিস্তলও তৈরি, কিন্তু অচেনা অশ্বারোহী যখন চোখের সামনে আসল তখন দেখল লোকটা একাই এসেছে । চমৎকার একটা বে গেল্ডিং ঘোড়ায় চড়ে আসছে লোকটা । বয়স হয়েছে তার, ভারী দেহ । ঝুলে পড়া গোঁফ আর সদয় নীল চোখ । থামল লোকটা কাছে এসে ।

'হাউডি!'বন্ধুত্বপুর্ণভাবে বলে চারপাশে একবার দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিল লোকটা । 'আমি রলি ট্রুম্যান, গেইলের বাবা । ' 'পরিচিত হয়ে খুশি হলাম,' লাল একটা ব্যান্ডানায় ভেজা হাত মুছল রিং । ঝর্ণার দিকে মাথা নাড়ল সে । 'গর্তটা যা ভেবেছিলাম তারচেয়ে অনেক গভীর ।

' 'পানি বইছে তোড়ে,' একমত হল ট্রুম্যান । গোঁফ কামড়াল চিন্তিতভাবে । 'আমি আত্ববিশ্বাসী, করিৎকর্মা তরুনদের দেখতে পছন্দ করি । যারা নিজেদের জমির উন্নতি করতে পরিশ্রমে পিছপা নয় । ' অপেক্ষা করতে লাগল অ্যালেন রিং ।

লোকটা একটা কিছু বলতে চাইছে, তাকে তার মতো করে বলতে দেয়া উচিৎ । ধীরে সুস্থে প্যাঁচালো গল্পটা বেরিয়ে এল । 'বেশি জায়গা অবশ্য নেই এখানে,' যোগ করল ট্রুম্যান । 'তোমার আরো গরু চরানোর জায়গা লাগবে । সিডার বেসিনে গিয়েছৌ কখন? কিংবা ইস্ট ভার্ডের নীচে ? চমৎকার জায়গা, কিন্তু বেশির ভাগই বুনো ।

কিন্তু শাদামুখো কিছু গরুর পাল চরালে বেশ কিছু পয়সা আসবে তোমার পকেটে । ' ' না, আমি দেখিনি ওসব জায়গা,' জবাব দিল রিং । 'আমি আমার জায়গা নিয়ে সন্তুষ্ট । বেশি জমির ইচ্ছা নেই আমার । আমি চাই ছোট জায়গা ।

আর এ জায়গা আমার জন্য যথেষ্ট । ' অস্বস্তির সাথে জিনের ওপর ওজন বদল করে তাকাল ট্রুম্যান । 'ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি এখানে থেকে তুমি অনেক লোক কে অসুবিধায় ফেলছ । তুমি চলে গেলেই ভাল হয় সবার । ' 'আমি দুঃখিত,' সাফ জবাব দিল রিং ।

'আমি কারোর সাথে শত্রুতা চাইনা, কিন্তু আমি চারতাস টেনে এ জায়গাটা পেয়েছি । হয়তো আমি অদৃষ্টবাদী, কিন্তু আমি জানি আমি এখানেই থাকব । কোন মানুষের অধিকার নেই যে চারটে তাস টেনে সে ভাবতে পারে সে সবকিছু জিতে নেবে । কিন্তু আমি জিতেছি । আমার যথা সর্বস্ব বাজি ধরেছিলাম আমি ওটার পেছনে ।

' অস্বস্তিতে মাথা নাড়ল র্যাঞ্চার । 'শোন ছেলে, তোমাকে চলে যেতেই হবে ! এখন এখানে কোন সমস্যা নেই । কিন্তু তুমি যদি থাকবে বলে মনস্থির কর তো পুরনো ক্ষত সব খুলে যাবে । এত ঝামেলা দেখা দেবে যে আমরা কেউই আর সেটা সামলাতে পারবনা । তাছাড়া বেন টেইলর কী ভাবে জায়গাটার মালিক হল ? সবাই জানে বেইলির সাথে ওর কোন সদ্ভাব ছিলনা ।

আমার মনে হয়না কোর্টে তোমার দাবি ধোপে টিঁকবে । ' 'সেসব আমি জানিনা । ' একরোখা সুরে বলল অ্যালেন । 'আমার একটা দলিল আছে এবং সেটাই যথেষ্ট আইনের চোখে । আমার ব্র্যান্ড সহ দলিল রেজিস্ট্রি করেছি আমি ।

আমি দেখেছি বেইলির কোন উত্তরাধিকারী ছিল না । সুতরাং নতুন কেউ এসে জায়গাটা মামলা না করলে আমি শক্ত হয়ে, আমার জায়গায় বসে থাকব । ' ভুঁরুর ওপর হাত বোলাল ট্রুম্যান । 'আমি তোমাকে দোষ দেই না । আমার হয়তো এখানে আসা উচিৎ হয়নি ।

কিন্তু আমি রস বিলটন আর ওর সাঙ্গপাঙ্গদের চিনি । এবং আমি তোমার এবং আমার নিজের জন্যও কিছু ঝামেলা বাঁচাতে চেয়েছিলাম । গেইলের ধারনা তুমি খুব চমৎকার মানুষ । হুইট চলে যাবার পর তুমি হচ্ছো প্রথম তরুন, যার প্রতি গেইল কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে । দেখ, হুইট যখন এখানে ছিল তখন গেইলের বয়স খুব কম ছিল ।

সুতরাং একধরনের বীর পূজা ওর মধ্যে ছিল বলা যায় । ' কোদালে হেলান দিয়ে, বয়স্ক লোকটার দিকে তাকাল অ্যালেন রিং । 'ট্রুম্যান, আপনার কী ধারনা ঝামেলা এড়িয়ে গিয়ে ঝামেলা থেকে বাঁচতে পারবেন? এই ব্যাপারে আপনার আর স্বার্থ কী ?' স্থির হয়ে গেল র্যাঞ্চার, ফ্যাকাসে আর শুকনো দেখাচ্ছে তার মুখ । তারপর ঘোড়া থেকে নেমে একটা পাথরের ওপরের বসল সে । হ্যাট খুলে ভুঁরু জোড়া মুছল সে ।

'ব্যাপারটা হচ্ছে, তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে আমাকে । ' ধীরে ধীরে শুরু করল সে । 'তুমি হ্যাজলিটদের কথা শুনেছ । ওরা একটা শক্ত দল, পারস্পরিক মিল মোহাব্বত খুব বেশি । বন্দুকের ওপর ভরসা করে জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছে ।

স্যাম কে খুব করা হয়েছে । আমরা সবাই জানি যখন খুনীর আসল পরিচয় বের হবে, প্রচুর ঝামেলা হবে এ তল্লাটে, প্রচুর । ' 'আপনি খুন করেছেন ওকে ?' ঝাঁকি দিয়ে মাথাটা সোজা করল ট্রুম্যান । 'না! ওরকম কিছু ভেবো না । কিন্তু তুমি তো জানোই ছোট র্যাঞ্চাররা কেমন হয় ।

তখন গরুচুরির হিড়িক পড়ে গিয়েছিল । আর হ্যাজলিটদের আউটফিটটা ছিল বড়, ওদের অনেক গরু খোয়া গিয়েছিল । ' 'আর সেসব কিছু গরু, আপনার ব্র্যান্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াত?' ধুর্তভাবে জিগ্যেস করল রিং । মাথা নাড়ল ট্রুম্যান । 'সেরকমই ব্যাপারটা, খুব বেশি না যদিও, আর শুধু আমি এ কাজ করেছি তাও নয় ।

আমাকে ভুল বুঝোনা । আমি দোষ থেকে নিস্কৃতি চাইছি না । এর কিছুটা দায়ভার আমারও । কিন্তু আমি খুব বেশি নেই নি । আমার মত আরও আট-দশ জন তাদে ব্র্যান্ড হ্যাজলিটদের গরুতে বসিয়েছে ।

এদের মধ্যে পাঁচজন এখানকার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড এখন । ওদের অনেক এখন প্রায়, হ্যাজলিটদের মতই বড় আউটফিট । ' আকাশ পরখ করল অ্যালেন রিং । এটা অনেক পুরনো গল্প এবং অনেকবার পুণঃরাবৃত্তি হয়েছে পশ্চিমে । গৃহযুদ্ধ শেষে, টেক্সাস আর দক্ষিন পশ্চিমের লোক বাড়ি ফিরে দেখে, তাদের গরুর হাজার হাজার হয়ে গেছে ।

ব্র্যান্ড নেই, মালিকানাও নেই । গরুর গায়ে ব্র্যান্ড মারতে পারলেই মালিক হয়ে যাবে পয়লা লোকটা । অনেক লোক গরম লোহা দিয়ে ছাপ্পর মেরে বিরাট ধনী হয়ে গেছে । তারপর ব্র্যান্ড ছাড়া গরু সব বিদায় নিয়েছে, র‌্যাঞ্চগুলো তাদের প্রতিপত্তি আবার প্রতিষ্ঠিত করেছে । ওরকম দু'নম্বরী ব্র্যান্ডিং এর দিন শেষ ।

তবু এখনও কিছু রেঞ্জ আছে, যেখানে একজন মানুষ গরম লোহা খুব দ্রুত নিজের একটা গরুর পালের মালিক হতে পারে । অনেক বড় বড় র‌্যাঞ্চ এই ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এবং ওদের অনেক এখনও চরে বেড়ানো গরু পেলেই নিজের ব্র্যান্ড লাগিয়ে দেয় । কোন সন্দেহ নেই এখানেও ব্যাপারটা তাই ঘটেছে । রলি ট্রুম্যানের মত অনেক ভাল মানুষ, যারা প্রথমে ইন্ডিয়ানদের সাথে লড়ে নিজেদের ঘরবাড়ি বানিয়েছিল, এভাবেই তাদের জীবিকা শুরু করেছিল ।

স্যাম হ্যাজলিট গরুচোরদের পেছনে লেগেছিল । ওরা কারা এবং চুরি যাওয়া গরু ওরা কোথায় রাখে তাও রাখে তার হদিস বের করে ফেলেছিল সে । এমন সময় পেছন থেকে গুলি করে মারা হয় তাকে এবং টালি খাতাটা খোয়া যায় তার পকেট থেকে । এখনও পাওয়া যায় নি ওটা । হয়তো খাতাটার মধ্যে এমন আলামত আছে যে, আজ যারা সমাজের মাথা, তারাই গতকাল গরুচোর ছিল ।

তাহলে হ্যাজলিট আউটফিটের প্রতিহিংসার ধকল তাদের নিতে হবে । অনেক সময় পশ্চিমের লোক এসব ব্যাপার ঢালাও চোখে দেখে । যদি কোন গরুচোর স্যাম হ্যাজলিটকে মেরে থাকে, তবে তার সাথের সমস্ত গরুচোরই দায়ী । এ র্যাঞ্চে বাস করে এমন যে কোন লোক হঠাৎ একদিন টালি খাতাটা খুঁজে পেতে পারে । তাহলে সমস্ত রেঞ্জে দাউ দাউ করে বন্দুক যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠবে ।

তাহলে অনেক লোক যারা অতীতের ভুল পথ থেকে বেরিয়ে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছে, তারাও এই সংঘরষে জড়িয়ে পড়বে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।