আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লোজআপওয়ান প্রসঙ্গে

ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ

ক্লোজআপওয়ান -এর যাত্রা শুরু হয় 2005 সালে। আয়োজক- ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং এনটিভি। ইন্ডিয়ান আইডলের আদলে তৈরি ক্লোজআপওয়ান -এর মূল কাজ হলো সারা বাংলাদেশে সঙ্গীতের প্রতিভান্বেষণ; নামা না জানা প্রকৃত প্রতিভাবান শিল্পীদের খুঁজে বের করা ও যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের মেধা জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং সঙ্গীতাঙ্গনে তাদের স্থান করে দেয়া। অতীতে এ কাজটি শুরু করেছিলো স্টার সার্চ। প্রথম স্টার সার্চ বিজয়ী শিল্পী ছিলো প্রীতম।

গত বছর থেকে এ কাজটিতে আরও যোগ হয়েছে ক্লোজআপওয়ান , বেঙ্গল প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র, এটিএন তারকা- তারকাদের তারকা। গতবারের ক্লোজআপওয়ান -এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি নোলক, বিউটি, রাজীব, সোনিয়া, রিংকুদের মতো প্রতিভাবান শিল্পীদের। বর্তমানে সঙ্গীতাঙ্গনে তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সচেষ্ট আছে। গতবার শীর্ষ 40 থেকে ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের শিল্পীকে নির্বাচন করেছিলো, এবারও করেছে। গতবার বিচারকরা অভিযোগ করেছিলো দর্শকদের আবেগী ভোটের ব্যাপারে।

সেই সাথে দর্শকদের অভিযোগ ছিলো বিচারকদের বিচার প্রশ্নে। বিশেষ করে সামিনা চৌধুরীর ব্যাপারে বেশ জোরালো অভিযোগ ছিলো। তবে প্রচার মাধ্যম এবং আয়োজকদের ভুলও কম ছিলো না। বিশেষ করে প্রতিযোগীদের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ-কাহিনী প্রচার করে জনগণের আবেগকে তারা আরও বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা দেখেছিলাম চোখের পানি ফেলার মহড়া।

এক্ষেত্রে বিচাররক, গীতিকার, সুরকার ও উপস্থাপকরা প্রতিযোগীর গান শুনে কেঁদেছেন। দর্শকদের ভোট তখন প্রতিযোগীর পক্ষে চলে গেছে। হাজার হলেও নাটক-সিনেমা দেখে বাঙালি চোখের পানির মূল্য বোঝে বেশি, দামও দেয়! হঁ্যা, এইতো ভোটদানে আমাদের সোনার বাংলার জনগণ। সেই সাথে আমাদের গুণধর বিচারক, আয়োজকরাও যেন তাদেরই অংশ। তাঁদের কল্যাণে এবারের ক্লোজআপওয়ান 2006-এ মুহীনের গান শেষে চোখের পানির ড্রামা জমেছিলো বেশ।

মুহিন বিচারকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ এবং দর্শকদের আবেগতাড়িত ভোট পেয়ে গত রাউন্ডে হয়েছে প্রথম। কারণ বিচারক-আয়োজনদের প্রধান চেষ্টা চলছে একজন ছেলেকেই বানাতে হবে ক্লোজআপওয়ান । অনুষ্ঠানের প্রযোজকও মুহীনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন অনেকবার, অনেক পত্রিকায়। মনে পড়ে গতবার এরকম কান্নার এক ড্রামা করে রাশেদ এক রাউন্ডে ফার্স্ট হলেও পরে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কুমার বিশ্বজিত গতবার নোলককে কান্নার ড্রামায় সহযোগিতা করে ক্লোজআপওয়ান হতে সাহায্য করেছিলো।

সাথে পার্থ বড়ুয়ারও ছিলো আপ্রাণ প্রচেষ্টা। এবার মুহীনের বেলায় এ কাজাট করছে সেই একই কায়দায়। মুহীন নিজেই প্রতিভাবান শিল্পী। তার ক্লোজআপওয়ান হবার যোগ্যতাও আছে। কিন্তু পক্ষপাত যখন কোনো প্রতিযোগীর দিকে যায় তখন বিচারের উপর আর বিশ্বাস থাকে না।

তবে সবচেয়ে খারাপ লাগে রন্টির জন্য। একমাত্র নিশীতার জন্যই তাকে সরে যেতে হলো। কারণ আয়োজকরা জানে রন্টি দর্শকদের ভোট কম পায়। সেজন্য দেশাত্মবোধক রাউন্ডে রন্টির গানটা সবার পরে এবং দর্শকরা অনুষ্ঠান থেকে সরে যাবার পরে খবরের পর প্রচার করেছে। নাহলে রন্টি হয়তো বাদ পড়তো না ঐ রাউন্ড থেকে।

আগের রাউন্ডগুলোতে রন্টির পারফরমেন্স ছিলো অসাধারণ। বিচারক-আয়োজকদের টার্গেট ছিলো নিশীতাকে রাখা- সেটা সফল হয়েছে। কারণ, পার্থ বড়ুয়া নিশীতার আঙ্কেল যে! বেচারী রন্টি আগের সব রাউন্ডে নিশীতার চেয়ে অনেক অনেক ভালো গেয়েও বাদ পড়লো আয়োজকদের জন্যই, আত্মীয়তার যাঁতাকলে। নিশীতা ক্লোজআপওয়ান হয়ে গেলেও বোধ হয় আশ্চর্যের কিছু থাকবে না! গতবার কোজআপওয়ান নির্ধারণ হয়েছিলো তিন রাউন্ডের ফলাফলকে গড় করে। অবশ্য রাজীবকে দ্বিতীয় বানাতে ডিজ্যাবলড ম্যাথ প্রয়োগ করে গণনা করা হয়েছিলো- যা বিদগ্ধ দর্শকদের গণনায় এড়িয়ে যেতে পারেনি।

এবার ক্লোজআপওয়ান নির্ধারণের জন্য নেয়া হয়েছে ওয়াইল্ড কার্ড সিস্টেম। প্রতি প্রতিযোগীর জন্য জনগণ প্রতি মোবাইল থেকে ভোট দেবেন 20টি করে। তা চলবে 115 ঘন্টা ব্যাপী। নিঃসন্দেহে যে প্রতিযোগীদের আত্মীয়-স্বজন সংখ্যায় বেশি বা সার্কেল বেশি এবং বিত্তশালী বা মোবাইল ফোনের অধিকারী তারা এ সময়ের পরিপূর্ণ সদ্-ব্যবহার করবে। তাছাড়া আঞ্চলিকতাও এখন একটা বড়ো ফ্যাক্টর।

ভোটের ফলাফলে সেটা একটি বিরাট বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ক্লোজআপওয়ান -এর প্রতিযোগীতা থেকে আমরা হারিয়েছি অনেক ভালো ভালো প্রতিভাবানদের। ইরা, আরমান, পারুল, জ্যামী, মুহিত, পরান, খুশবুদের মতো অনেককে। চম্পা বণিক-কে তো নির্লজ্জের মতো বিচারকরাই দূরে ঠেলে দিয়েছেন শীর্ষ 10 থেকে। যদিও বেঙ্গল প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্রের বিচারে চম্পা শ্রেষ্ঠ, কোজআপওয়ান বিচাররক-কতর্ৃপক্ষের বিচারে নয়।

তাই বিচারকদের উচ্চাঙ্গ জানা নিয়েও মাঝে মাঝে প্রশ্নের উদ্রেক হয়! মনে রাখতে হবে ভোটদানে আমাদের জনগণ শুধু সোনার বাংলার জনগণ নয়। এই জনগণই মমতাজকে ফোক সম্রাজ্ঞীর আসনে বসিয়েছে। কোনো বিচারক বা প্রচার মাধ্যম তাঁকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে নাই। তাই জনগণের বিচারই প্রকৃত বিচার। তারা যদি সালমা-কে তাদের প্রতিনিধি হিসাবে দেখতে চায় তাতে দোষের কিছু নাই।

অন্তত সামিনা চৌধুরী হয়ে বিউটি, নোলক কিংবা ফাহমিদা নবী হয়ে সালমার মতো কোনো প্রতিভাকে তো খুন করতে চায় না কোনোদিন। ক্লোজআপওয়ান নিয়ে এবার পত্র-পত্রিকায় বেশ বিরূপ সমালোচনা দেখা গিয়েছে- প্রশ্ন উঠেছে কারচুপির। বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী ফোরামগুলোতে বিচারের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার শীর্ষ জনপ্রিয়তাও পায়নি অনুষ্ঠানটি। খোদ বিচারকদের মধ্য থেকেই প্রশ্ন উঠেছে শুধু একজন প্রতিযোগীর আবেগের বিষয় উপস্থাপনের বিরোধিতা।

এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোট পদ্ধতিতে জনগণের বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং মোবাইল কোম্পানিগুলো। গত পর্বগুলোতে 10 লাখের উপর ভোটই প্রমাণ করে কী পরিমাণ আয় হচ্ছে এর থেকে। সে তুলনায় ক্লোজআপওয়ান -এর প্রাইজমানি কিন্তু নিতান্তই কম। মেধাবিকাশের এরকম উদ্যোগী অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কাছে জনগণ ন্যায়বিচার চায়। নিরপে ফলাফলের আশায় বুক বেঁধে আছে সঙ্গীতপ্রিয় জনগণ।

সত্যিকারের প্রতিভাবানই হয়তো পাবেন ক্লোজআপওয়ান শিরোপা! তবুও প্রশ্ন জাগে মনে- কে হবে ক্লোজআপওয়ান ? কে জিতবে শেষে- ক্লোজআপওয়ান কতর্ৃপক্ষ নাকি জনগণ নাকি আত্মীয়তা নাকি আঞ্চলিকতা? অধীর অপেক্ষায় আছি আগামী 29 ডিসেম্বরের- যেদিন হবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা। 25.12.2006

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।