আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকানাইজড এশিয়ান

ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।



আমেরিকা আসার আগে এক ছোট্ট সফটওয়্যার ফার্মে চাকুরী করতাম। খোলাখুলি বলতে গেলে, ছোট্ট কোম্পানীতে ঢুকেছিলাম আমার জন্য সহজ হবে ভেবে। সে সময়টায় টোফেল, জিআরই, ভর্তির কাজকমর্্ম এসব নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম। তাই আমার অফিসিয়াল কাজ ব্যাহত হত। কিন্তু না, দেখা গেল কোম্পানী ছোট হলে কি হবে, ভুজুং ভাজুং ভালই।

কোম্পানীর মালিক ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী। বছরে, আধা বছরে একবার আসতেন। এসেই ধুড়ুম ধাড়ুম ঝাড়ি টাড়ি দিয়ে অবস্থা খারাপ করতেন সবার। অথচ পাশাপাশি নিজেকে খুব cool dude হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন। তার সমস্যাটা কি সেটা অনেক পরে বুঝেছি।

তবে তখন আমার মানিয়ে নিতে যথেষ্ঠ সমস্যা হচ্ছিল। আমেরিকায় যে সমস্ত এশিয়ান লোক আছেন তাদের মধ্যে দ্্বৈত একটা মনোভাব গড়ে ওঠে। বোধকরি, দেশের বাইরে যারা আছেন তাদের সকলেরই এইরকম মনোভাব গড়ে ওঠে। (এবং শতকরা সত্তর ভাগ সম্ভাবনা আমার মধ্যেও ব্যপারগুলো ঢুকে পড়ছে। ) বাস্তবিক অর্থে আমরা কাজের মূল্য দিতে জানি না।

আমাদের লোকসংখ্যা এত বেশী যে ছোটখাট থেকে মাঝারী কাজের কোন মূল্য দিতে শিখিনি। রিকসাওয়ালাকে 1 টাকা কম দিতে আমাদের বাঁধে না। এই মনোভাব কখনোই ছেড়ে উঠতে পারি না আমরা। নিজেরাও খুব বেশী যে পেয়েছি তাও নয়, তাই এখানে আমাদের কাজের এপ্রিশিয়েশন পেয়ে অস্বস্তি হয়। নিজেরা এমন একটা সমাজে বড় হয়েছি যেখানে সবাই একেকটা শ্রেনীতে বিভক্ত।

রিক্সাওয়ালার ছেলে, চাকুরিজীবির ছেলের বন্ধু হতে পারেনা। 'বস্তির পোলা' একটা গালি! এই মনোভাব এখানে এসে ধাক্কা খায়। ঝাড়ুদারকেও "হাউ আর ইউ ডুয়িন টুডে" বলে দিন শুরু করতে হয়। মনে মনে ঠিকই দুইটা গালি দিয়ে ফেলে। (আমিও? ) দেশে যাবার পর সমস্যাটা আরো প্রকট হয়।

রিক্সাওয়ালাকে আপনি বললে দুই-একটা বন্ধু বান্ধব খ্যা খ্যা করে হেসেও ফেলে। দেশের কেউ নিজের কাজ নিজে করেনা। ঘরে বুয়া বা কাজের লোক থাকে। বাইরে থেকে ঘরে এসে কাপড় খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলে কাপড়গুলো হেঁটে হেঁটে গিয়ে জাগয়ামত ঝুলে পড়ে। বাইরে আসার পর ঝক্কি।

নিজের কাজ নিজে কর: রাতের খাবার কি হবে, বাজার কখন করতে হবে, বাথরুমটায় ছাতা পড়ে গেছে পরিষ্কার করো, ময়লা ফেলে দিয়ে আসো, কাপড় ধুয়ে আনো - কত কি! দেশে গিয়ে আবার ধাক্কা - ভাব দেখিয়ে নিজের কাজ নিজে করতে গিয়ে ঝাড়ি খেয়ে ফিরে আসা। বাঙ্গালীদের সময়জ্ঞান কখনই ছিল না। বাইরে এসে এমন টনটনা জ্ঞান হয় যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগে ভাগে গিয়ে বিব্রত হতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন সমাজে বাস করার ঝক্কি যে কি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.