আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা



ঠাকুরগাঁওয়ের ধর্মগড় সীমান্তে এক বাংলাদেশী কৃষক ও বিডিআরের পাল্টা গুলিতে বিএসএফ-এর 2 সদস্য বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেখানে বিএসএফ-এর আকস্মিক গুলিবর্ষণে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ যাবৎ বিএসএফ-বিডিআরের মধ্যে 5 হাজার রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে 4টি গ্রামের লোক বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। এলাকাবাসী এবং বিডিআর সূত্রে জানা গেছে, ধর্মগড় সীমান্তে 373/1, পিলার-এর 1শ' গজ ভিতরে বাংলাদেশ সীমান্তে শাহানাবাদ গ্রামের এরশাদ আলী অন্য 4 গ্রামবাসীসহ সকাল 9টায় ধান কাটতে যায়।

ধান কাটার এক সময় সাড়ে 9টার দিকে ভারতীয় 47 ব্যাটালিয়নের শ্রীপুর ক্যাম্পের বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে ঢুকে তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে শাহানাবাদ গ্রামের গোলাম মতর্ুজার ছেলে এরশাদ আলী (30) মারা যায়। অন্য 4 জন দৌড়ে আত্মরক্ষা করে। শাহানাবাদ গ্রামবাসী ইউপি সদস্য জিলস্নুর রহমান জানান, বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত বাংলাদেশীর লাশ তার নিজের ধানক্ষেতে পড়েছিল। এ সময় বিডিআর দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পেঁৗছায়।

বিডিআর পরে বিএসএফ'র কাছে প্রতিবাদপত্র নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এদিকে ভারতীয় শ্রীপুর ক্যাম্পের 3 জন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে নিহত বাংলাদেশী কৃষকের লাশ নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে বিডিআরও তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। বিডিআরের গুলিতে বাংলাদেশ সীমান্তের 1শ' গজ ভিতরে ওই ঘটনাস্থলে 2 জন বিএসএফ সদস্য প্রাণ হারায় বলে সৈয়দ আবু তাহের হিরু, ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ, সওদাগর আলী ও আব্দুল মালেক জানিয়েছেন। এরপর বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে বিএসএফ গুলিবর্ষণ শুরু করে। বিডিআরও পাল্টা গুলি চালায়।

সন্ধ্যা 6টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবিরাম গুলি বিনিময় চলছিল। দিনভর উভয়পক্ষ কমপক্ষে 5 হাজার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। উভয়পক্ষের গোলাগুলির কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী 3 জন বিএসএফ-এর কেউ বেঁচে থাকলে সারাদিন সেখান থেকে নড়তে পারেনি। নিহত বাংলাদেশীর লাশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পড়েছিল। আতংকে আশপাশে 4টি গ্রামের কয়েক হাজার লোক গরু-ছাগল নিয়ে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে।

বিডিআর ভারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করেছে। দফায় দফায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিডিআর-এর সকল সদস্য সারাদিন অভুক্ত থেকেই যুদ্ধ করে। ঠাকুরগাঁও 20 রাইফেল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর কামরুজ্জামান বাংকারে থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, বিএসএফ মেশিনগান, এসএলআর, রাইফেলের গুলি চালিয়েছে। তিনি আরো জানান, সকাল বেলা বাংলাদেশী নিহত হবার পর প্রতিবাদপত্র নিয়ে বিএসএফ'র কাছে যবার সময় বিনা কারণে উস্কানিমূলক তারা বিডিআরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।

সাবেক এমপি দবিরুল ইসলাম সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশনারকে ফোন করেছেন বলে জানিয়েছেন। ভারতীয় হাই কমিশনার উত্তেজনা প্রশমনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এদিকে, সাতক্ষীরা ও ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা এবং নওগাঁ ও কলারোয়া থেকে সংবাদদাতা জানান, সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার অপরাহ্ন অবধি সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফ ও বিডিআর-এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। এ সময়ে বিএসএফ-এর এক তরফা গুলিবর্ষণে নওগাঁর পোরশা ও ঠাকুরগাঁওয়ের ধর্মগড় সীমান্তে বাংলাদেশী দুই কৃষক প্রাণ হারায়। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টির মতো গুলির শব্দে সাতক্ষীরা ও কলারোয়ার কাকডাঙ্গা, ভাদিয়ালি, কেড়াগাছি ও তলুইগাছা গ্রামে আতঙ্ককর অবস্থা সৃষ্টি হলে অনেকে রাতেই পাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়।

এদিকে বিএসএফ নো-ম্যান্স ল্যান্ডে মানুষ দেখা গেলেই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ রাইফেলস সীমান্ত বাসীদেরকে সন্ধ্যার পর সীমান্ত রেখার কাছাকাছি ঘোরাফেরা না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিডিআর ও সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, ভারতীয় বিএসএফ 191 ব্যাটালিয়নের আওতাধীন তারালী ক্যাম্পের বিএসএফ সোমবার রাত 2টা 08 মিনিটের সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা সীমান্তের কাছে বিনা উস্কানিতে বাংলাদেশ ভূখণ্ড লক্ষ্য করে গুলি চালায়। জবাবে বিডিআর কাকডাঙ্গা বিওপির জোয়ানরা পাল্টা গুলি চালায়। রাত 2টা 35 মিনিটের দিকে বিএসএফ আমুদিয়া ক্যাম্পের জোয়ানরা কলারোয়া উপজেলার তলুইগাছা সীমান্তে গুলিবর্ষণ করে।

বিডিআর তুলইগাছা ক্যাম্পের জোয়ানরা পাল্টা গুলি চালিয়ে বিএসএফের জবাব দেয়। এভাবে ভোর রাত 5টা 18 মিনিট পর্যনত্দ সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা ও তলুইগাছা সীমান্তের তিনটি পয়ন্টে থেমে থেমে বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সীমান্তে বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উভয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। এ ব্যাপারে বিডিআর 41 ব্যাটালিয়নের অপারেশন অফিসার মেজর কামরুল সীমান্তের 3টি পয়েন্টে বিএসএফের 40 রাউন্ড গুলির জবাবে বিডিআরের 250 রাউন্ড গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

বিএসএফ সীমান্ত এলাকায় কারফিউ জারি করেছে এবং নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কোন মানুষজন দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় কতর্ৃপক্ষ। বিডিআর ও সীমানত্দের একাধিক সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত 10টার সময় কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ও তলুইগাছা সীমান্তে ভারতের বশিরহাট মহাকুমার স্বরূপনগর থানার তারালী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিক বাংলাদেশী গ্রামাঞ্চল লক্ষ্য করে 10 রাউন্ড গুলিবর্ষণ করলে কাকডাঙ্গা সীমানত্দে বিডিআর পাল্টা 40 রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। পরে স্বরূপনগর থানার তারালী, আমুদিয়া ও হাকিমপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা একযোগে বাংলাদেশের দিকে লক্ষ্য করে রাতভর গত মঙ্গলবার ভোর 5টা পর্যনত্দ 4 শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। 41 রাইফেলস ব্যাটালিয়ন কাকডাঙ্গা ও তলুইগাছা ক্যাম্পের বিডিআর সদস্যরা পাল্টা 5 শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। বিএসএফের এই উস্কানিমূলক অপতৎপরতা অব্যাহত থাকায় কলারোয়া উপজেলা 18 কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা ও আতংক।

নওগাঁর পোরশা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী এক কৃষক নিহত হয়েছে। নিহত কৃষকের নাম মহিফুল ইসলাম (40)। সে পোরশা উপজেলার দয়েরপাড়া গ্রামের পাতানুর রহমানের পুত্র। স্থানীয় ও বিডিআর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোর 5টায় কাতাপুকুর নামক স্থানে মহিফুল কাটা আমন ধান পাহারা দিতে গেলে ভারতের কাদেরীপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃতু্য হলে বিএসএফ লাশ নিয়ে যায়।

ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ 29.11.2006 ঃঃ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.