আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপু (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'হৈমন্তী' ছোটগল্প অবলম্বনে)

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ । একটু অন্তর্মুখী, নিজের মনের নিভৃত কোণেই বড্ড বেশি বিচরণ আমার । ভালবাসি সাহিত্যের খোলা পাতা, ভালবাসি প্রযুক্তির আঙ্গিনা আর ভালবাসি প্রাণের স্পন্দন । ফেসবুকে আমিঃ http://facebook.com/rupkotharkabbik প্রথম পর্ব বরের বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু কন্যার বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, ছেলেটির মাথার অধিকাংশ চুলই পড়িয়া গিয়াছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে স্টেডিয়াম বলা হইতে রক্ষা করা যাইবে না।

মেয়ের বয়স খুব একটা বাড়ে নাই বটে, কিন্তু তাহার মোবাইল আলাপন আর ফেসবুক চ্যাটিংয়ের পরিমাণ যে রকম বাড়িয়া গিয়াছে তাহাতে অতি শীঘ্রই ঘটনা ঘটিয়া যাইতে পারে, সেইজন্যই তাড়া। আমি ছিলাম কনে, সুতরাং বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা ছিল অত্যাবশ্যকীয়। পূর্ববর্তী পাত্রদের বেলায় আমার পিতা তাহা করিয়াও ছিলেন। আমার কাজ আমি করিয়াছি, পাত্র দেখিতে গিয়া তাহাদের গাধা প্রমাণ করিয়াছি, আমার ফেসবুক একাউন্টে বন্ধুদের লুল মার্কা কমেন্ট দেখাইয়া দিয়াছি। তাই প্রজাপতির দুই পক্ষ, কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষ, ঘন ঘন বিচলিত হইয়া উঠিল।

আমাদের দেশে যে মানুষ একবার প্রেম করিয়াছে প্রেম সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো উদ্‌বেগ থাকে না। নরমাংসের স্বাদ পাইলে মানুষের সম্বন্ধে বাঘের যে দশা হয়, প্রেমিক/প্রেমিকা সম্বন্ধে তাহার ভাবটা সেইরূপ হইয়া উঠে । অবস্থা যেমনি ও বয়স যতই হউক, প্রেমিক/প্রেমিকার অভাব ঘটিবামাত্র তাহা পূরণ করিয়া লইতে তাহার কোনো দ্বিধা থাকে না তাহা সে ফেসবুক হইতেই হোক আর বন্ধুদের কাছ হইতে মোবাইল নম্বর জোগাড় করিয়াই হোক। যত দ্বিধা ও দুশ্চিন্তা সে দেখি আমাদের পিতামাতাদের। প্রেমের পৌনঃপুনিক প্রস্তাবে আমাদের সময় আনন্দে কাটিয়া যাইতে থাকে, আর টেনশনে পিতামাতার রাত্রের ঘুম হারাম হইতে থাকে।

সত্য বলিতেছি, আমার মনে কোন আনন্দ জন্মে নাই। বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বলিতে লাগিল। আমার হৃদয়ের চিরসবুজ বাগান একমূহুর্তেই পাতাঝরা বনে পরিণত হইল। যাহাকে রান্নাবান্না, ঘরসংসার, ছেলেমানুষ করিয়া আদর্শ গৃহিণী হইতে হইবে, তাহার পক্ষে এ ভাবটা দোষের। কিন্তু ফেসবুক একাউন্টের সাড়ে চারহাজার ফ্রেন্ড আর পনেরশ ফলোয়ারের ভবিষ্যত চিন্তা করিয়া আমার রাতের ঘুম নষ্ট হইতে লাগিল।

আমার সঙ্গে যাহার বিবাহ হইয়াছিল সেই স্টেডিয়ামের সত্য নামটা দিব না। তাছাড়া তাহার কোন ফেসবুক আইডি নাই। আচ্ছা, তাহার নাম দিলাম গুগলু। কেননা, গুগলের মত পৃথিবীর তাবত বিষয়ে জ্ঞান হইলেও প্রয়োজনের সময় কোন ভাবেই পাওয়া যাইত না। গুগলু আমার চেয়ে কেবল সতের বছরের বড় ছিল।

তবুও বড় বয়সের ছেলের সঙ্গে বাবা যে আমার বিবাহ দিলেন তাহার কারণ, ছেলের বয়স বড় বলিয়াই ডিগ্রির বহরটাও বড়। গুগলু যখন যৌবনে তখন তাহার মার মৃত্যু হয়। ছেলে বৎসর-অন্তে এক-এক বছর করিয়া বড় হইতেছে , তাহা আমার শ্বশুরের চোখেই পড়ে নাই। সেখানে তাঁহার সমাজের লোক এমন কেহই ছিল না যে তাঁহার এমন স্টেডিয়ামওয়ালা পুত্রের হাতে কন্যা দিবার লাগিয়া পাগল হইবে। গুগলুর বয়স যথাসময়ে পয়ত্রিশ হইল; কিন্তু সেটা স্বভাবের পয়ত্রিশ নহে, সার্টিফিকেটের পয়ত্রিশ।

তবে ততদিনে তাহার অর্ধডজন ডিগ্রির অভিজ্ঞতা হইয়াছিল। অনার্সে থার্ড ইয়ারে উঠিয়াছি, এমন সময় আমার বিবাহ হইল। বিবাহের অরুণোদয় হইল একখানি ফটোগ্রাফের আভাসে। গ্রুপ স্টাডির নামে ফেসবুকে চ্যাটিং করিতেছিলাম। এক কাজিন ঠাট্টা করিয়া আমার ল্যাপটপের কিবোর্ডের উপরে গুগলুর ছবিখানি রাখিয়া বলিলেন, “এইবার এর সাথে পার্সোনাল স্টাডি কর, সারা রাত ধরিয়া।

” কোনো একজন নিপুণ কারিগরের তোলা ছবি। তিনি ফটোশপ দিয়া চেষ্টার ত্রুটি করেন নাই, কিন্তু গুগলুর চেহারাকে সুন্দর করিবে সে কার সাধ্যি! ফেসবুকে ছবি আপলোড দেওয়া মাত্রই ৫৮৯ লাইক আর ৪২০ কমেন্ট পাইয়া গেলাম । সবাই শুধু বলিল, তোমার আংকেলের চেহারা তো জোশ । আমি কহিলাম, আংকেল নয়, ইনি আমার হবু বর । রিপ্লাই আসিল, অ্যা, এ হইল কী? কলি কি সত্যই উল্টাইতে বসিল! যথাসময়ে আমার বিবাহ হইল।

বিবাহ সভার চারিদিকে হট্টগোল; তাহারই মাঝখানে আমার কোমল হাতখানি তাহার ব্যাকাত্যাড়া হাতের উপর পড়িল। সে লজ্জার মাথা খাইয়া বারবার করিয়া বলিতে লাগিল, ‘পাইছি রে মামা , পাইছি, আর ছারুম না। ’ যাই হোক, বাসরঘরে ঢুকিয়াই স্ট্যাটাস দিলাম, আমি এখন বাসরঘরে। সাথে আছে আংকেল সরি হাসবেন্ড। প্লিজ, প্রে ফর আস।

সাথে সাথে লাইক আর কমেন্টের বন্যায় ভাসিয়া গেলাম। কমেন্টের রিপ্লাই দিতে দিতে রাত পার হইয়া গেল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।