আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীর্ষ মহলকে বাদ রেখেই তদন্ত প্রতিবেদন

বহুল আলোচিত সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত শীর্ষ মহলকে বাদ রেখেই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদনও চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবীরসহ অন্য একাধিক পরিচালকের বিরুদ্ধে এ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও দুদক তা এড়িয়ে গেছে। এদের সবাইকে নির্দোষ ঘোষণা দিয়ে হলমার্ক গ্রুপ ও সোনালী ব্যাংকের অপর ২৫ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ কমিশন চেয়ারম্যানের কাছে এটি জমা দিয়েছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে হলমার্ক গ্রুপ ও সোনালী ব্যাংকের ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। মামলায় নাম থাকা আট কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। নতুন করে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৬ জনকে। সোনালী ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, কারাগারে আটক হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য ঘুষ নিয়েছেন বললেও তা আমলে নেয়নি দুদকের তদন্ত দল। এর আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও পর্ষদকে বাদ দিয়ে ব্যাংটির ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে। অথচ এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ জালিয়াতির জন্য পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করে তা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেন।

অভিযুক্ত যারা : কমিশনের কাছে মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ চেয়েছে দুদকের তদন্ত দল। তাদের মধ্যে রয়েছেন_ হলমার্কের এমডি মো. তানভীর মাহমুদ (কারাগারে আছেন), তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম (জামিনে আছেন), তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ। এ ছাড়া হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাঙ্ স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. জিয়াউর রহমান, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার। এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংক হোটেল শেরাটনের (রূপসী বাংলা) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি অভিযুক্ত হয়েছেন। হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময় মেহেরুন্নেসা মেরি ওই শাখায় কর্মরত ছিলেন। তদন্তে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দুজন জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান (দুজনই ওএসডি), সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক ও আতিকুর রহমান (দুজনই ওএসডি), দুই উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ (সাময়িক বরখাস্ত), দুই এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) ও এজাজ আহম্মেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে যাদের : দীর্ঘ ১১ মাস তদন্ত শেষে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এজাহারভুক্ত আট আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। তারা হলেন সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বিভাগের সাবেক ডিজিএম ও বর্তমানে সিলেটের জিএম কার্যালয়ে কর্মরত জিএম ভগবতী মজুমদার, একই বিভাগের এজিএম মো. আবুল হাসান এবং রূপসী বাংলা হোটেল শাখার সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা (অব.) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে : মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হলেও বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পাঁচজনের বিরুদ্ধে। তারা হলেন সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজী ও সবিতা সিরাজ, ডিজিএম কানিজ ফাতেমা চৌধুরী, এজিএম মো. খুরশিদ আলম ও আশরাফ আলী পাটোয়ারী। দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মতামত দিয়েছে তদন্ত দল। তবে তারা কোনো দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন না। এজাহারে নাম নেই এমন আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তারা হলেন প্রধান কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (অর্থায়ন) বিভাগের এজিএম মো. শওকত আলী, ভিজিল্যান্স অ্যান্ড কন্ট্রোল বিভাগের ডিজিএম এম এইচ এস আবু জাফর, বেসিক ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, জিএম মো. মাহবুবুল হক ও নওশের আলী খন্দকার, অডিট অ্যান্ড ইনস্পেকশন ডিভিশন-২-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. একরামুল হক মণ্ডল। এ ছাড়া রয়েছেন ইতোমধ্যে অবসরে যাওয়া ইনস্পেকশন অ্যান্ড অডিট ডিভিশন-২-এর এসইও কে ডবি্লউ শাহিদা খানম, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগের এজিএম শামিম আখতার এবং রূপসী বাংলা শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম ও কর্মকর্তা উকিল উদ্দিন।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.