আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাতু দুয়া তিগা

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

কিংবদন্তীর গায়ক, গীতিকার জন লেননের একটা কথা খুব পছন্দের। Life is what happens to you while you're busy making other plans. । আসলেও কথাটা খুব সত্য। এই করেংগা, সেই করেংগা করতে করতে সময় যায় আর জীবন শেষ হতে থাকে। তাই বেশি প্ল্যানিং কোন কালেই ধাতে সয় না।

মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে। সেই অনুসারে হঠাৎ পরিকল্পনা পূর্ব মালয়শিয়া যাওয়া। ঐ দিকে আছে মালয়শিয়ার সাবাহ, সারওয়াক রাজ্য দুইটা এবং ব্রুনাই। সময় কম থাকায় কেবল সাবাহ আর ব্রুনাই যেতে পারলাম এবার। পকেটে পয়সার অবস্থা করুন, সময়টাও একেবারে যুতের না।

তারপরেও সিদ্ধান্ত হইলো চলো যাই। প্ল্যানিং আর প্রোজেক্ট ম্যানেজার আমার ইরানী বন্ধু সাঈদ। আমার অগোছালো স্বভাবে প্ল্যান ঠিক সহ্য হয় না। তাই ওর ঘাড়েই সব। ঘোরা বেশ ভালোই হইলো।

ম্যাপ হাতে নিয়ে অপরিচিত জায়গায় ঘোরাঘুরি স্টাইল। পূর্ব মালয়শিয়ার বড় গুন হইলো জায়গাটা পুরো বুনো। মানুষ জন একেবারে কম, শহরের চাইতে সবুজের পরিমান অনেক বেশি। পাহাড়ী নদী, ঝরনা, পাহাড়, চমৎকার টলটলে বীচের ছোট ছোট দ্বীপ কি নাই?! পুরা মুসাফির স্টাইলে ঘোরাঘুরি মধ্যে মফস্বল শহরের মসজিদের বারান্দাতেই ঘুমাইছি আবার সাবাহ-এর স্টেট মিনিস্টারের বাসাতেও থাকা হইছে। প্রথমটা পরিকল্পিত ছিলো যে সুযোগ পেলেই মসজিদে রাত কাটানো হবে (থ্যাংকস টু স্লিপিং ব্যাগ), কিন্তু স্টেট মিনিস্টার মুসা হাজি আমানের বাসায় থাকাটা সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ছিলো।

এক অসাধারন মানুষের সাথে কাকতালীয় পরিচয়, তার সুবাদে থাকার নিমন্ত্রন। অকল্পনীয় আতিথেয়তা হইছে। ডিটেইলস স্কিপ করলাম। পুরো ভ্রমনকাহিনী লেখার সময় এবং উদ্দেশ্য কোনটাই নাই। ভালো খাবারের বর্ণনা আর ভ্রমনের বর্ণনা আমার কাছে দুটোই পাঠকের জন্য বেশ কষ্টকর।

নিজে না খাইলে আর নিজে না ঘুরলে এতো ভ্রমন কাহিনী পইড়া কি হবে! শুধু যারা মালয়শিয়ার এই দিকে আসতে চান তাদের জন্য কিছু টিপস হয়তো দিতে পারি। খরচ বাচাঁনোর, ঝামেলা এড়ানো টিপস ইত্যাদি। গিয়েছিলাম কুয়ালালামপুর থেকে এয়ার এশিয়া বাজেট এয়ারলাইনসে করে পূর্ব মালয়শিয়ার রাজধানী ও বন্দর শহর কোটা কিনাবালুতে (সংক্ষেপে কেকে)। কেকে থেকে সেন্দাকান বাসে। এটা একটা ছোট শহর।

সেন্দাকান থেকে রানাও নামে একটা পাহাড়ী শহরে যেখানে হট সপ্রিং আছে। আছে ক্যানোপী ওয়াক (জঙ্গলের ইয়া উচু গাছের মাথা দিয়ে হেটে যাওয়ার ঝুলন্ত পথ)। জঙ্গলের ভিতরে দূর্দান্ত বুনো কিছু পাহাড়ী ঝরনা ছিলো। রানাউ থেকে আবার কেকে আসা। সেখানে থেকে দুটো দ্বীপে প্রবাল প্রাচীরে স্নোরকেলিং (সমুদ্রের পানির ভিতরে অল্প ডুবে প্রবালের ভিতরে মাছ দেখা)।

এইটা ছিলো দূর্দান্ত। পানি এতো স্বচ্ছ। কোটাকিনাবালুতে আছে এই এলাকার সবচেয়ে উচু পর্বত, মাউন্ড কিনাবালু। শিখরে উঠি নাই। বিশাল আয়োজন আর সময় লাগতো।

তবে পাহাড়ের নিচে যে বন সেখানে ট্রেকিং করলাম প্রায় 20 মাইল। পাহাড়ী নদীর সমান্তরাল পথ পুরো ঘন বনের ভিতরে। দারুন জায়গা। অনেক উচু পাহাড়ের ভিতরে জঙ্গলের সেই পথ কখনো উচুতে ওঠে, কখনো নিচে নামে। কেকে থেকে ফেরি নিয়ে ব্রুনাই।

পথে আরেকটা দ্বীপ, লাবুয়ান। ব্রুনাইতে মুসাফিরের ঝটিকা মোড। মাত্র দেড়দিনে চারটা শহর বা জেলা পাড়ি দিতে হবে (শেষ পর্যন্ত 3টা দেখতে পেরেছি)। ব্রুনাই বেশ ইন্টারেস্টিং জায়গা। কাম্পুং আয়ার নামে পানির উপরে একটা গ্রাম আছে বন্দর সেরি বেগওয়ানে (ওদের রাজধানীতে)।

সব কিছু পানির উপরে। পাহাড়ী নদী, অসাধারন কারুকাজ ওয়ালা মসজিদ, অতিথি পরায়ন মানুষজন, ফালতু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এসব নিয়েই ব্রুনেই। পূর্ব মালয়শিয়া আর ব্রুনাইতে যেটা খুব লক্ষ্যনীয় তা হলো একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত তারো নিজস্ব গাড়ি থাকার বিষয়টা (মুদীর দোকানদারেরও দুইটা গাড়ি। একটা নিজের, একটা বউয়ের)। নিজস্ব তেল থাকার কারনে ওখানে গাড়ির তেল খুব সস্তা।

ফলে দেখা যায় গ্রামের ভিতরে টিনের চালের বাড়ির সামনে চকচকে সব ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি। মফস্বলে বিএমডাবলিউয়ের ছড়াছড়ি। খুবই আশ্চর্য্য হতে হয়। আর সবার গাড়ি থাকায় বাস, ট্রেন সংকট। অনেক জায়গায় কোন গাড়ি যায় না।

ফলে ধরা খাইতে হইছে। (চলবে)। নোট: সাতু দুয়া তিগা হলো মালেয় ভাষায় যথাক্রমে এক দুই তিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।