আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুডি অ্যানিমেশনের স্বর্ণযুগ কি আমরা পেরিয়ে এলাম ?



অ্যানিমেশন আমরা সবাই দেখতে ভালোবাসি । ছোটবেলা পেরিয়ে আসার পরেও অ্যানিমেশনের প্রতি আমার আকর্ষন এতটুকু কমেনি । খুব ছোটবেলায় আমরা বাংলাদেশ টিভিতে নানা রকমের অ্যানিমেশন দেখতাম । ফ্ল্যাশ গর্ডন, হি ম্যান, থান্ডার ক্যাটস, ম্যানড্রেক, ইত্যাদির কথা এখনও মনে আছে । ভারতের টিভি চ্যানেলে তুলনামূলক ভাবে অ্যানিমেশন কম দেখাতো ।

তবে ডিজনির বেশ কিছু অ্যানিমেশন দেখেছিলাম । আরেকটু পরের দিকে টিভিতে দেখতাম ডিজনির নানা রকমের সিরিজ অ্যানিমেশন । লিটিল মারমেড, আলাদিন, ডাকটেলস, ইত্যাদি । কিন্তু ডিজনির বিভিন্ন অ্যানিমেশন সিনেমা গুলো দেখার অভিজ্ঞতা হয়নি । খালি আলাদিন একবার সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছিলাম, সেটা ছিল একটা দারুন অভিজ্ঞতা ।

তারও বহু পরে সিডি এবং ডিভিডির দৌলতে বেশ কিছু ডিজনি মুভি দেখার সৌভাগ্য হয় যেমন লায়ন কিং, মুলান, অ্যানাস্টেসিয়া, স্নো হোয়াইট এন্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফ । যদিও আজও ডিজনির বহু মুভি দেখা হয়নি । আমাদের ছোটবেলায় থ্রিডি অ্যানিমেশনের কোন অস্তিত্ব ছিল না । কারন তখন কম্পিউটারের এত ব্যবহার শুরু হয়নি । প্রথম থ্রিডি অ্যানিমেশন সিনেমা হল টয় স্টোরি ।

এটা তৈরি হয়েছিল ১৯৯৫ সালে । আজ থেকে প্রায় এগারো বছর আগে । ১৯৯৫ সালের কম্পিউটার শক্তিতে একটি প্রমান সাইজের থ্রিডি সিনেমা তৈরি মুখের কথা নয় । কারন থ্রিডি অ্যানিমেশন রেন্ডার করতে খুবই শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় । বর্তমানে টুডি অ্যানিমেশন বনাম থ্রিডি অ্যানিমেশনের দৌড়ে থ্রিডি অ্যানিমেশনই যে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

বলা যেতে পারে ১৯৯৪ সালে লায়ন কিং রিলিজের পরেই আস্তে আস্তে টুডি অ্যানিমেশনে ভাঁটার টান আরম্ভ হয়েছে । লায়ন কিং ছিল একটি অসাধারন সিনেমা । কারোর কারোর মতে এটি এখনও পর্যন্ত সেরা টুডি অ্যানিমেশন সিনেমা । অ্যানিমেশনকে যে কি উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায় তা জানতে গেলে এই সিনেমা দেখতেই হবে । কিন্তু দুঃখের বিষয় লায়ন কিং পরবর্তী টুডি অ্যানিমেশন সিনেমা গুলি এই সাফল্য ধরে রাখতে পারে নি ।

যেমন দ্য হাঞ্চবাক অফ নতরদাম (১৯৯৬), হারকিউলিস (১৯৯৭), মুলান (১৯৯৮), দ্য প্রিন্স অফ ইজিপ্ট (১৯৯৮), টারজান (১৯৯৯), দ্য রোড টু এল ডোরাডো (২০০০), আটলান্টিস দ্য লস্ট এম্পায়ার (২০০১), ট্রেজার প্ল্যানেট (২০০২), ব্রাদার বিয়ার (২০০৩), সিন্দবাদ লিজেন্ড অফ দ্য সেভেন সিজ (২০০৩), ইত্যাদি । এই সবকটি সিনেমা গুলিতেই খুব উঁচুদরের অ্যানিমেশন ব্যবহার করা হয়েছে । কিন্তু বিরাট হিট এগুলি একটিও নয় । কোন কোনটি হয়তো অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সাফল্য পেয়েছে । কিন্তু ট্রেজার প্ল্যানেট এবং সিন্দবাদ লিজেন্ড অফ দ্য সেভেন সিজ ছিল বিরাট ফ্লপ সিনেমা ।

ট্রেজার প্ল্যানেট ওয়াল্ট ডিজনি প্রোডাকসনকে প্রায় দেউলিয়া বানিয়ে দিয়েছিল । কিন্তু এই সময়ে অনেক থ্রিডি অ্যানিমেশন সিনেমা খুবই সাফল্য লাভ করেছে । যেমন টয় স্টোরি ১ (১৯৯৫), টয় স্টোরি ২ (১৯৯৯)এ বাগস লাইফ (১৯৯৮), ডাইনোসর (২০০০), শ্রেক (২০০১), মনস্টারস ইনক (২০০২), ফাইন্ডিং নেমো (২০০৩), দ্য ইনক্রেডিবলস (২০০৪), শ্রেক ২ (২০০৪), সেইভাবে বলার মতো ফ্লপ থ্রিডি সিনেমা বলতে একটিই ফাইনাল ফ্যান্টাসি দ্য স্পিরিটস উইদিন । তাই বলা যেতে পারে নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকেই টুডি অ্যানিমেশনের অবনমন এবং থ্রিডি অ্যানিমেশনের উত্তরন ঘটছে । এখন তো ডিজনি চ্যানেলে মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক, প্লুটোর থ্রিডি কার্টুনও দেখা যাচ্ছে ।

যদিও আমার তা খুব একটা পছন্দ হয়নি । কম্পিউটারের উন্নতির সাথে সাথে থ্রিডি অ্যানিমেশনের যে আরো উন্নতি ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । যদিও এখনই টুডি অ্যানিমেশনের নিশ্চিহ্ন হবার কোন ভয় নেই কারন এখনও সারা পৃথিবীতে প্রচুর পরিমানে টুডি অ্যানিমেশন তৈরি হয় । কিন্তু একথা আমাদের বোধহয় মেনে নিতেই হবে যে টুডি অ্যানিমেশনের স্বর্ণযুগ আমরা পেরিয়ে এসেছি ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।