আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরলতাই কাল হলো জেরিনের, টরন্টোতে শোকের ছায়া

দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম কানাডিয়ান জেরিনকে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত টিমের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জেরিনের কথিত বন্ধু কাজী মহিউদ্দীন ওরফে স্মরণ ধাক্কা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রিমান্ডের তৃতীয়দিনে তদন্তকারী টিমের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখে স্মরণ জানায়, আমার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়নি জেরিন। প্রেমের সম্পর্ক গড়লেও ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি করছিল।

কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। এক পর্যায়ে জেরিনের সঙ্গে চূড়ান্ত বোঝাপোড়া করতেই বাসা থেকে ডেকে নিয়েছিলাম। রেললাইনে হাঁটতেই হাঁটতেই বিয়ের প্রস্তাব দেই। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে অনুরোধ পর্যন্ত করেছিলাম।

কিন্তু কোন কথাই কানে তুলছিল না সে। উল্টো বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে বিয়ের কথা এড়িয়ে যেতে থাকে। শুরু করে তর্ক। এতেই মাথা গরম হয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে দুই হাতে তুলে ধরে ধাক্কা দেই।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাশেই চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে মাথায় আঘাত পেয়ে চিৎকার করে ওঠে। পরে নিস্তেজ হয়ে ঢোলে পড়ে রেল লাইনের ওপর। রেলওয়ে থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেরিনকে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ কথা স্বীকার করেছে স্মরণ। এছাড়া ঘটনাস্থলের দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

তাদের জবানিতেও ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জেরিনের একটি জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। এখন প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই ও ধাক্কা দেয়ার উদ্দেশ্য জানতে স্মরণকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কোন ট্রেনের ধাক্কায় জেরিনের মৃত্যু হয়েছে তা জানতে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে রেলের ট্রাফিক বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলে জানান ওসি।

তদন্ত সূত্র জানায়, জেরিনের হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। কারণ অনেক আগেই জেরিনের ফেসবুক হ্যাক করে বিয়ের মিথ্যা খবর প্রচার করেছিল স্মরণ। এমনকি গোপন করেছিল ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়ার খবর। ট্রেনের ধাক্কায় জেরিন ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়ার প্রায় দু’ঘণ্টা পর সে জেরিনের খালুর মোবাইল ফোনে জানায়, জেরিন ট্রেনের ধাক্কায় জখম হয়েছে। তার আগেই সে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেখানকার জরুরি বিভাগে নিজেকে জেরিনের স্বামী পরিচয় দেয়। চিকিৎসকরা জেরিনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। জেরিনের স্বজনরা জানান, স্মরণের ফোন করার কয়েক ঘণ্টা আগেই জেরিনকে হত্যা করা হয়। এদিকে মঙ্গলবার বাদ জোহর জেরিনের লাশ টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার গয়হাটি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জেরিনের খালু শামীম পারভেজ বলেন, জেরিনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এ খুনের পেছনে স্মরণের একাধিক আত্মীয়-স্বজনও জড়িত। জেরিন-স্মরণের পরিচয় হয়েছিল উত্তরার একটি কফি হাউসে। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সূত্র জানায়, স্মরণের এক চাচাতো বোন জেরিনের সহপাঠী। তারা উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতেন।

৫-৬ মাস আগে ওই চাচাতো বোনের আমন্ত্রণে জেরিন উত্তরার একটি কফি হাউসে যায়। একই সময় সেখানে হাজির হয় স্মরণ ও তার বন্ধুমহল। জেরিনের মন ভোলাতে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে থাকেন। বিবিএ পাস করে সদ্য বিলাত থেকে ফিরে আসার গল্প শোনাতে থাকেন। ওই সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের পর্ব শুরু হয়।

জেরিনের এক স্বজন জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর স্মরণের ড্রাগ নেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে জেরিনের চোখে। এরপর থেকেই তার সঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে এড়িয়ে চলতে থাকেন জেরিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্মরণ তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে তাতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করতে থাকে। সেখানে জেরিনের বরাত দিয়ে উল্লেখ করে তারা দু’জনে বিয়ে করেছে। এদিকে, কানাডার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অধিদপ্তর সেদেশের সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশে এক কানাডীয় নাগরিক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কানাডার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অ্যামান্ডা রেইড জানান, তারা কানাডায় বসবাসকারী মেয়েটির পরিবারকে সবরকম সহায়তা দিতে প্রস্তুত। নিহতের সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য ও তার পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। জেরিনের বাবা মীর কায়কোবাদ বাবলু কানাডার মিডিয়াকে বলেন, জেরিন আমাদের সন্তান। কিন্তু আমার একার নয়, কানাডারও। তারা যখন শিক্ষা-দীক্ষা বা অন্য কোনো কারণে বিদেশ যায়, তখন তাদের রক্ষা করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

...আমি কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। একজন বাবা হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। তিনি বলেন, টরন্টোতেই তার মেয়ের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই সে খুব পড়ুয়া। লেস্টার বি. পিয়ার্সন কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট থেকে সে স্কুলের পাঠ শেষ করেছে।

জেরিন খুবই শান্তশিষ্ট ও মেধাবী মেয়ে। কখনও কোনো সমস্যা করেনি। উল্লেখ্য,গত শনিবার রাতে উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী জেরিনকে তার বন্ধু মহিউদ্দিন স্মরণ (২৭) বেড়ানোর কথা বলে হোটেল রেডিসনের পেছনে রেললাইনে নিয়ে ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে তিনি নিজেই আহত অবস্থায় জেরিনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা জেরিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পঠিয়ে দেন।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জেরিন। জেরিনের মৃত্যুসংবাদে টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা জেরিন হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। কানাডার মূলধারার সিপি টুয়েন্টি ফোর, সিবিসি, টরন্টো স্টার, অমনিসহ প্রায় সবগুলো মিডিয়াতে জেরিনের মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা হয়। জেরিনের মৃত্যুর পরপরই ঘনিষ্ঠ বন্ধুমহল ফেসবুকে তার নামে আলাদা পেজ খুলে শোক প্রকাশ করেছেন।

ওই পেজের নাম দিয়েছেন- ‘রেস্ট ইন পিস, জেরিন মীর’। এতে অসংখ্য শুভাকাঙক্ষী শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। পাশাপাশি হত্যাকারির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তথ্যসূত্র- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.