আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমন 06

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সন্ধ্যায় দেখা অনিন্দ্য সুন্দরীর মুখ যখন তখন ফুচকি দিচ্ছে স্মৃতিতে, হালকা ঠান্ডা পড়েছে স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কোলকাতার দৃশ্যযাপন করছি মনে মনে, সমস্ত শহরের ভেতরে একটা স্থাপত্যভিত্তিক সাযুজ্য বিদ্যমান, নতুন তৈরি করা ভবনগুলোও আগের ভবনের সাথে মানানসই করেই গড়া হয়েছে, একটু মলিন রংয়ের, দেখে মনে হয় সবগুলোই একই সাথে বানানো, আমাদের ঢাকার কোনো আর্কিটেকচারাল ইউনিফর্মিনিটি নেই, এমন কি দেয়ালগুলোর নক্সাও হাজর রকম, দেয়াল লিখনে পরিবর্তন এসেছে, উঁচু বিলবোর্ডে দৈনিক পত্রিকার লড়াইের বিজ্ঞাপন,আসার পথে দেখা হার্ডিং ব্রিজ, বিদ্যাসগর সেতু, গঙ্গার ধারে বসে মাটির পেয়ালায় চা খাওয়া, কালাচাঁদের জলসেনাবিষয়ক ঘটনা, এসব দৃশ্য গেঁথে যাচ্ছে স্মৃতিতে, গেঁথে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের রাতের লাইটিং, মিউজিক্যাল ফাউন্টেন, গড়ের মাঠের বেলুন গেঁথে যাচ্ছে, গল্প-উপন্যাসের পাতা থেকে জীবন্ত হয়ে উঠে একটা শহর হৃদয়ে ঢুকে যাচ্ছে, এটাকেই বোধ হয় টান বলে, কোলকাতা পিছু টানে, আশ্চর্য রকম একটা জীবনের স্পন্দন আছে, ঢাকার ভেতরেও একই ঘটনা, যদিও অহেতুক জ্যাম, ডাস্টবীনের দুর্গন্ধ, উঁচু উঁচু খাপছাড়া স্থাপত্য দেখে ক্ষনিক চাপ পড়ে মাথায়, সেই ভোর বেলা 1000 আজানের আওয়াজে ফিকে হয়ে যাওয়া ঘুম, বাসের ককর্শ শব্দে ঘুম ছিড়ে যাওয়া প্রহর, এর পরও সেই রিকশার টুংটাং, গভীর রাতের সওয়ারী, রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকা অন্ত্যজজনের বৃষ্টির সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে ঘুমের আয়োজন, এর পরও রাতের শহরের ভেতরে ঢাকার রোমান্টিক চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে, রাতের নগরি নাগর খুঁজে উদোম গায়ে, আমাকে ডাক দেয়, আমাকে প্রবেশের আহবান জানায়, আমি ধীরে ধীরে শহরের গরম যোনীর ভেতরে ঢুকে যাই, মৃদু উষ্ণতায় মাখনের মতো গলে যাই, গলে যেতে যেতে ঢাকার আত্মার সাথে মিলেমিশে যাই। সঙ্গমের পর সঙ্গম, উথাল পাতাল মিলনেও সেই মিলনবাসন কনামাত্র তিরোহিত হয় না। ছেনাল নগরী উরু ফাঁক করে আমাকে বারংবার ডেকে যায়। কতক্ষন লাগবে জানি না, ট্রেন ছাড়ার সময় দৌড়ে উঠবো ভাবছিলাম, এটেন্ডেন্ট এসে বললো আগামি 5 মিনিটের মধ্যে ট্রেন ছাড়বে সুতরাং উঠে পড়ুন, ট্রেনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সিগারেট পিষি উঠে পড়লাম, 38 জনের কামরায় গিয়ে লোকজনের সাথে কথা বিনিময় করে নিজেদের কম্পার্টমেন্টে গমন, লিটু ভাই, আশফাক, তানভীর, আমি, লুকু, শমিক, বাবু, মুর্তজা, বলদ তানভীর,জসিম, জামাল,তমাল, রুবেল সবাই বসে আছে, রাতের খাওয়ার নিয়ে আসলো একজন, খাওয়ার বিল দেবে ট্রাভেল এজেন্সি, নিয়ে নেওয়া হলো, এলুমুনিয়ামের ফয়েলে মোড়ানো ভাত, তরকারী, ট্রেন চলছে ঝাঁকুনি দিতে দিতে, সবাই রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষা করছে, নিজেদের মতো কথা চলছে, স্লিপিং বার্থ বলে কথা, বিশাল সীট, আমরা সবাই সুজন তাই তেতুল পাতায় 9 জন এটে যায় ঠিকঠাক মতোই, একটা কিউবিকলের মতো জায়গায় থাক থাক করে 6 জনের শোবার ব্যাবস্থা, আর ঠিক তার সামনে জানালার উপরে 2 জনের শোবার ব্যাবস্থা, আমরা এমন একটা 8 জনের জায়গা পেয়েছি, অন্য এক জায়গায় নীচের 3টা উপরের একটা বার্থ আমাদের, আর তার থেকে একটু দুরে বাকি 2টা, অবশ্য সেখানে জমিয়ে বসে আড্ডা চলছে, সিগারেট চলছে, চা চলছে, এতক্ষন পর একটা আনন্দময় ভাব এসেছে ভেতরে, গতির কাছে পরাজিত হচ্ছিলাম বার বার, এই একটা ট্রেনের বগিতে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে সবাই মুগ্ধ, ট্রেন থামবে বিহারে, ভয়ংকর জায়গা, কেনো কে জানে, বার বার সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, ব্যাগ সাবধান, এখানের লোকজন গোয়ারগোবিন্দ, ওদের বেশী লাই দিবে না।

এত সব সাবধানবানী সত্ত্বেও আসলে ঠিক না করা সম্ভব হয় না। একজন আড্ডার মাঝে উঠে বসলো আমাদের সীটে, সেই 2টা সিট আমরা ব্যাবহার করছি না, আমরা 6 জনের সীটে 10 জন বসে আড্ডা দিচ্ছি, অন্যটাতে উপরের বার্থে তানভীর ঘুম দিয়েছে মাফলারে মুখ ঢেকে, তার মৃদয় নাক ডাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে এসে বসলেন তিনি, তাতে আপত্তি করার কিছু নেই, তার স্ট্যান্ডিং টিকেট, কোনো স্লিপিং বার্থ নেই, তাকে আমাদের ঘুমের সময়টাতে কাটাতে হবে খাওয়ার বগির টেবিলে বসে। রাত যত গভীর হচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে ঠান্ডা বাড়ছে, অবশেষে হাড়ে কাঁপুনি দেওয়া ঠান্ডা, এর মধ্যে একজনকে দেখা গেলো দিব্যি আয়েশ করে কম্বল বের করে ঢেকে ঢুকে শুয়েছে, আমার জুতা নেই সাথে, স্যান্ডেল ভরসা, আর স্যান্ডেল বলেই কোনো মোজা আনা হয় নি সাথে, ভয়ংকর ঠান্ডা পায়ের ভেতর দিয়ে ঢুকে মাথায় গিয়ে আঘাত করছে, বার্থের সংকীর্ন পরিসরে নড়াচড়ার সুযোগ নেই, তবে যেটুকু অংশ শরীরসংলগ্ন সেটুকুই গরম, বাকী অংশ বরফের মতো ঠান্ডা, বাইরের তাপমাত্রা সেদিন ছিলো 2 সেলসিয়াস, ট্রেনের জানালা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু বগিগুলোর ভেতরের সংযোগ অংশ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে যাচ্ছিল, যতবার কেউ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ততবার বুঝতে পারি। অন্য একটা এলাকায় মদের বোতল খুলে বসেছে, লেমন জিন, কয়েক বোতল বীয়ারও আছে, তবে প্রকাশ্য মদপান নিষিদ্ধ বলেই সামান্য সংশয় ছিলো, অন্য পাশের লোকজন চোখ ছোটো করে দেখছে, এর মধ্যেই সাটাচ্ছে ছোটো ছোটো পেগ, বেশ কয়েক প্যাকেট ব্রিটানিকা কেনা হয়েছিলো, মাঝ রাতে ঠান্ডায় ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর ওগুলোই কুটকুট করে কামরাচ্ছি, ভালোই লাগছে, ঘুমের আরাধনা বাদ দিতে হলো ঠান্ডায়, এক মেয়ের কাছে শাল ধার নিয়ে সেটা জড়িয়ে শোয়ার চেষ্টা করলাম অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না, শেষবেশ পায়ে চাদর জড়িয়ে বসে থাকলাম, অবশেষে সূর্য উঠলো, যদিও শীতের পরিমান কমে নি, সেই একই রকম ঠান্ডা চারপাশে, সকালে উঠেই ট্রেনের টয়লেটের সামনে লাইন পড়েছে, এর মাঝেই এক কোলকাতার বাঙালি গজগজ করতে করতে ফিরতো, সালাদের আককেল নেই মাইরি, পোঁদ খুলে বসে আছে, সালা দরজা লাগাবি না।

সেখান থেকে এক বন্ধুকে বের হতে দেখার পর আমাদের হাসি আকর্ণবিস্তৃত হলো। তাহলে মহান এই অভদ্্রজনই কোলকতার দাদাকে পোঁদ দেখিয়ে উত্তেজিত করেছে। ভয়ংকর অবস্থা, এক কামড়ায় 72 জন মানুষ অথচ টয়লেট 2টা, এবং সবাই ঘুম থেকে উঠেই সেখানে যাওয়ার লড়াই করছে, আমি করুন মুখে পাশে বগিতে গেলাম সেখানেও একই অবস্থা, অবশেষে 5 বগি ঘুরে একটা ফাঁকা টয়লেট জলবিয়োগ করলাম, কেবল চেনটা টানবো এর মাঝেই দরজায় ধাককাধাককি, হারি আপ, জলদি কিজিয়ে ভাইসাহাব, শালার জীবন শান্তিতে দুফোঁটা মুতার উপায় নেই। সকালের নাস্তা ব্রিটানিকা, কফি, ভয়ংকর এক্সপেন্সিভ, অন্তত জাহাঙ্গির ভাইয়ের চায়ের সাথে তুলনা করলে, মসলাদার চা, যদি এই চা দিয়ে সিদ্ধ করা যায় গরু তাহলে সেটাও সঠিক রান্না হবে, গরম মসলার হেন কিছু নেই যার অস্তিত্ব এখানে নেই, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, আর 3 চামচ চিনি, একবার খেলে ঠোঁট আঠা হয়ে যায়। এমন চা খেয়ে কেউ যদি চুমু দেয় তাহলে অধরসুধা পানের বিষয়টার শাব্দিকতা পাওয়া যেতো।

আমি হাঁটতে হাঁৎে কামড়ার পর কামড়া পার হচ্ছি, অবশেষে একটা জায়গায় এসে থামতে হলো, ঠিক তার ওপাশেই এসি কামরা, উচ্চ বিত্তের জন্য, সেখানে একটা পকেটের মতো, পাটাতন আছে, ওখান থেকে 2 পাশই দেখা যায়। ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখার মধ্যে একটা সংকীর্নতা আছে, একটা ফ্রেমের মধ্যে দেখতে হয় সব কিছু, এখানের জায়গাটা সেই ঝামেলা মুক্তু , ফ্রি ভিউ পাওয়া যাবে, উল্লসিত আমি আবার আমাদের কামড়ায় ফিরছি, গিয়ে শমিককে বললাম চল তোকে একটা জিনিষ দেখাই, একবার দেখলে 2 দিন আমার পা ধইরা চুমা দিবি। ক্যামেরা ঘাড়ে ঝুলিয়ে আমরা দুই বান্দা যাচ্ছি, পথে দেখা হইলো লুকুর সাথে, কিরে কই যাইতাছস তোরা? চল দেখবি, বলে ওকেও সাথে নেওয়া হলো। অবশেষে সিসেম ফাঁক বলে যখন সেই গোপন দরজা খুললাম শমিকের অবস্থা বাক্যহারা। তোর মায়েরে বাপ, এইটা কি জিনিষ, দাড়া সবাইরে ডাইকা দেখাইতে হইবো।

মামা তোর কাছে সিগারেট থাকলে দে। তুমুল হাওয়ার ভেতরে কষ্টে সিগারেট জ্বালিয়ে আমরা 3 কলম্বাস দেখছি আশেপাশের দৃশ্য। সুর্য উঠেছে, দুপাশে বিশাল দিগন্ত, মাঝে কিছু মাটির বাড়ী, হলদে দেয়াল, মেটে দেয়াল, ওর মাঝে ঘুরছে ময়ুর, আমরা যেমন ঘরের দাওয়ায় মুরগি দেখি তেমনভাবেই চষাক্ষেত, না চতষা ক্ষেত বাড়ীর অলিন্দ, ছাতের ুপরে ময়ুরের দৃপ্ত চলাফেরা। শমিকের অবস্থা আরও করুন, শালার কোথায় আয়া পড়লাম ক দেখি, এইহানে হালায় মুরগির মতো ময়ুর ঘুরতাছে। দাঁড়া ছবি তুইলা লই।

হিসাব করতে বসলো, শাটার স্পিড কতো হবে, এপারেচার কত দিতে হবে, ফিলটার লাগাবে কি লাগাবে না, অনেক রকম জটিল হিসাব কষে অবশেষে ছবিও তোলা হলো। মাঝে একটা দুইটা হরিণ দেখা গেছে, এ এক আশ্চর্য জায়গা। এরপর নতুন আবিস্কারের খবর সবাইকে দেওয়া হলো, সবাই একবার করে এসে দেখে যাচ্ছে এই জিনিষ। লিটু ভাইকে বগলদাবা করে নিয়ে আসা হলো, একটা পর্যায়ে সেই সীমিত পাটাতনে আমরা 8জন দাড়িয়ে আছি। টিকিট চেকারের পছন্দ হলো না বিষয়টা।

তিনি এসে দরজা লাগিয়ে দিলেন খটাস করে। আমরা বিষন্ন মনে ফিরে আসলাম আবার অন্ধকূপে। এে দেখি সীট দখল হয়ে গেছে, বোচকা সহ জাকিয়ে বসেছে একজন। মাঝে এক স্টেশনে নেমেছিলাম, সেখানে নেমে চা খেতে গিয়ে ট্রেন মিস করার একটা সমূহ সম্ভবনাও তৈরি করেছিলাম। তবে সে প্রচেষ্টা সফল হয় নি, দৌড়ে অন্য একটা বগিতে উঠে পড়েছি।

লিটু ভাই এর পর নির্দেশ জারি করলো আগে দেখবা রাসেল উঠছে কি না, সবার আগে রাসেলরে উঠতে বলবা এর পর সবাই উঠবা। সেখান থেকে নিজের সীটে ফিরে দেখি, আমার সীটে 2টা বাচ্চা বসে আছে। ফুটফুটে বাচ্চা। কিছুক্ষনের ভেতরে আঙ্কেল আঙ্কের বলে পকেট থেকে কয়েকটা চকলেটের টাকা খসিয়ে নিলো। জমে গিয়েছিলো বলা যায় ওদের সাথে।

আমার সাথে বাচ্চাদের হিসাবকিতাব ভালোই জমে। সময় কাটছিলো ভালোই। মাঝে মাঝে আড্ডায় যাই, বিড়ি টানি, আবার পিচ্চিদের কাছে ফিরে আসি, এর মধ্যে কোথা থেকে এক দল হিজরের আগমন, পিচ্চি 2টার বাবা মা আমার জিম্মায় রেখে কোথাও গিয়েছে, তারা নাচছে সমনে, একজন এক পিচ্চিকে কোলে তুলে বলছে টাকা দে নাইলে বাচ্চা নিয়ে যাবো। আমি কিছুক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করলাম বাচ্চা আমার না, কিন্তু আমার কথা শুনে ওদের ভালো লাগলো না। বলে টাকা দে নাইলে বাচ্চা নিয়ে যাবো।

আমি বললাম ঠিক আছে যাও বাচ্চা নিয়া যাও। মর্তুজার মেজাজ খারাপ, ওরে জড়াইয়া ধরছিলো, আমার হ্যান্ডসাম হিরো, তুমি কই ছিলা, আসো আমাকে আদর করো, এই সব ফিচকেমির হাত থেকে রক্ষা পেতে ওর 40 রুপি খসছে, এই 40 রুপিতে 4 প্যাকেট সিগারেট পাওয়া যায়। লিটু ভাই এক প্যাকেট চারমিনার কিনেছে, ফেলুদা ব্রান্ড। অতিশয় অখাদ্য জিনিষ, তিতকুটে, বাংলাদেশের চরম বাজে সিগারেটও ওর চেয়ে ভালো হওয়ার কথা। আমি 25 পয়সায় ফিলটার সিগারেট কিনেছি, তবে ওসব চেষ্টা করা উচিত না, এক টান দেওয়ার পর থুতু অবধি হলুদ হয়ে যায় িকোটিনে, চারমিনারের বিষয়েও এমন কথা বলা যায়, সস্তা, ফেলুদা উরফে প্রদোষ মিত্তির গোয়েন্দাগিরিতে বেশী কামাতে পারেন নাই, যা কামিয়েছে জটায়ু, বই লিখে লিখে,তার পকেটের রেস্ত অনুযায়ি এমন সিগারেটই তার জোটার কথা।

ফিলটার ছাড়া এই সিগারেট কেউ কিনতে চাইলে স্বাগতম তবে যারা নিদেনপক্ষে গোলডলীফ খেয়েছে তাদের জন্য উপদেশ হলো উইলস কিং , ভারতের সিগারেটের মান খুব খারাপ। অক্ষয় কুমার যতই লাফাঝাপা করুক বিড়ি টেনে ওদের দেশের বালের সিগারেট খাওয়া ঠিক না। আমার কেনা প্যাকেট শেষ, লিটু ভাইয়ের কাছে আরও গোটা 3 আছে, লুকুর কাছে আছে 2 প্যাকেট, ভারতের সিগারেট দেখে এসব হিসাবও চলছে সমানে। বিলাসিতা করে লন্ডন ফাইভ কেনা যাবে না। ঐ এক প্যাকেটর দামে 5 প্যাকেট উইলস পাওয়া যায়।

কোলকাতায় পৌছানোর সময়ই মনে খুঁত খুঁত করছিলো কিছু একটা ভুল করেছি ব্যাগ গোছানোর সময়, কোলকাতায় নেমে আবিস্কার করেছি সেটা। আসার পথে ভুলে কোনো তোয়ালে আনা হয় নি। শেষে কোলকাতার রাস্তা থেকে বড়সর একটা রুমাল কেনা হয়েছে, ওটা দিয়েই গা মোছার কাজ সারতে হবে, তবে আমার মাথার চুলের যে অবস্থা তাতে ওটা দিয়ে মাথা মুছার চেষ্টা করা উচিত হবে না। তাহলে ঘটি দিয়ে জাহাজ সেঁচার কাজ হবে ওটা। চুক্তি করেছিলাম একজনের সাথে ওর তোয়ালে ব্যাবহার করবো, যদিও তোয়ালে খুবই পার্সোনাল জিনিষ তবে কিছু কিছু বন্ধু তাদের এইটুকু পার্সোনাল বিষয় শেয়ার করতে রাজী।

মাথা চিটচিট করছে ধুলায়, চলতি ট্রেনের বাইরে মাথা বের করে দেখা উচিত হয় নি, উচিত হয় নি সেই স্বপ্নের পাটাতনে দাঁড়িয়ে সময় কাটানো, মাথা চুলকাচ্ছে, একটা গোসল দাবি করছে শরীর, ওমা, ভারতীয়রা জটিল মানুষ, ওরা সবাই স্লান করেছে, ঘটি নিয়ে এসেছে বাসা থেকে, একের পর এক সদ্যস্নাত মেয়দের কোমলতা দেখে বিশেষ রকম আবেশিত হচ্ছি, বার কয়েক মুখ ধুয়েছি, অবশেষে দেখলাম সবাই চমৎকার সেজে ট্রেনে বসছে, আমার মুখের কোনা থেকে শুরু করে কপাল পর্যন্ত আড়াআড়ি ময়লা একটা রেখা জমে আছে, আসলে মাথায় এই পরিমান ধুলা জমেছে, মুখধোয়ার সময় যেটুকু পানিতে চুল ভেজে ওটা সেই ধুলা নামিয়ে নিয়ে আসে। আমাদের সবার অবস্থা মোটামুটি একই রকম, কয়েকজন অন্য রকম মেয়ে অবশ্য পরিপাটি হয়েছে, দুপুরের খাওয়ার পর সময় আর কাটে না, মানসিক চাপ শুরু হয়ে গেলো। দেশে সর্বোচ্চ 15 ঘন্টা ট্রেনে কাটানো হয়েছে, এখানে পুরো একটা দিন কেটে গেলো। প্রায় 18 ঘন্টা পার হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।