ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
পারিবারিক পরিমন্ডল লেখার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণা না থাকলে লেখালেখি প্রায় অসম্ভব। যদি সাহস দেন পরিবারের সবাই তবে লেখায় ঘটে স্ফুরণ। আর পরিবারেরই কোনো সদস্য যদি লেখেন তা হয় আরও সোনায় সোহাগা। আমাদের পরিবারের তেমন একজন সদস্য নিয়ে এবারকার বিরানপুরের সহযাত্রী পর্ব।
শেখ জয়েন উদ্দিন। জন্ম 1 জানুয়ারি 1962। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি (গণিত)। স্থায়ী নিবাস টাঙ্গাইল। তিনি আমার সহোদর।
পেশায় ব্যাংকার। আগে স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তবে প্রথম জীবন থেকেই তাঁর সাংবাদিকতা নেশা ছাড়েন নি। মফস্বলে থেকেও করে যাচ্ছেন তাঁর নেশার কাজ। কয়েক ধরণের লেখালেখিতেই সিদ্ধহস্ত তিনি।
ছড়া, কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, পত্রিকায় কলাম লেখেন। তবে গল্পেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন বেশি। একটি গল্পের বইও বেরিয়েছে তাঁর। 2001 সালের ফেব্রুয়ারিতে।
তাঁর গল্পের বই 'প্রেম বিরহ জ্বালা'-এর কৈফিয়তে তিনি বলেছেন- আমার হৃদয় নিংড়ানো প্রেমটুকু নিঃশেষ করে দিতে চেয়ে গিয়েছি সবার দুয়ারে।
ফিরে এসেছি বারবার ব্যর্থ হয়ে। বিরহের পাহাড় বুকে চেপে কেঁদেছি নিরালায়। জ্বলছে চিতা অন্তর জুড়ে। এ জ্বালার কিছুটা ভাগি হলে আমি সবার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
প্রেম বিরহ জ্বালা একটি গল্প গ্রন্থ।
সাদামাটা প্রচ্ছদ। আটচলি্লশ পৃষ্ঠার বইটিতে মোট নয়টি গল্প আছে। চলমান, গ্লাস, মা, অপু, বাঁধ ভাঙ্গা নদী, ওরা চাকর, স্বাধীনতা, উপহার এবং প্রেম বিরহ জ্বালা। অধিকাংশ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর আশির দশকের ছন্নছাড়া জীবনের বিচ্ছিন্ন ঘটনাসমূহ। ঘটরাবহুল মানব জীবনের বাস্তব প্রতিকৃতি আঁকার আপ্রাণ চেষ্টার বহিঃপ্রকাশই 'প্রেম বিরহ জ্বালা'।
শুরুতে বলেছিলাম লেখালেখিতে পারিবারিক পরিমন্ডলে অবদানের কথা। আমার লেখালেখিতে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদানকারী আমার সবচেয়ে কাছের সহোদর শেখ জয়েন উদ্দিন। ঢাকা কলেজে এইচএসসি পড়াকালীন সময়ে তাঁর ছন্নছাড়া জীবনের ছায়ায় ছিলাম আমি। তিনি একটি পত্রিকার সাব-এডিটর ছিলেন তখন। আমিও লিখতাম তাঁর পত্রিকায়।
মূলত তাঁর অনুপ্রেরণাতেই আমার লেখালেখি আরও ত্বরান্বিত ও বিকশিত হয়। সে সময়কার ছাপানো তাঁর একটি কবিতা আমার সংগ্রহে আছে। কবিতাটি আমার খুব ভালো লাগে এবং প্রিয় কবিতা। শেখ জয়েন উদ্দিন-এর সেই কবিতাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
[গাঢ়]যাবো না আমি যাবো না/ শেখ জয়েন উদ্দিন[/গাঢ়]
[রং=0অ00অ0]শ'তলা ইট-সুড়কীর ইমারত
রঙিন চকচকে আসবাব
ডেফোডিলের বাগান, রোটরেন্ডিয়ামের সারি
বৈদ্যুতিক অত্যাধুনিক সরঞ্জাম
কাঁচের চৌবচ্চায় রঙিন মাছের সাঁতার
সাম্রাজ্যবাদী বারুদাস্ত্র ইত্যাদি
আমার না জানা নামে আরো অনেক বিচিত্র সম্পদ আছে
দূরদর্শনে দেখতে পাও পৃথিবী
তবুও যাবো না
আমি যাবো না তোমার কৃত্রিম মাটিতে।
বিচালীর দোচালা- ফাঁকে ফাঁকে চাঁদের লুকোচুরি
মাটির ঠুনকো সানকি
আমের মুকুলে কোকিলের কুহু
বাঁশের ডোলে সোনালি ধান
নকশী কাঁথার স্বপ্নভরা বিছানা
মাঝির ভাটিয়ালী গান
পাপিয়ার 'পিয়া পিয়া'- প্রিয়াকে কাছে টানার অদম্য স্পৃহা
প্রাণে প্রাণে বিনিসূতোর কোমল বাঁধন
প্রত্যুষে কাকের কা-কা
তারও আগে শেয়ালের শেষ প্রহর ঘোষণা
দুপুরে ঘুঘুর ডাক
অশ্বত্থের শীতল ছায়ে কান্তের ঝিমুনী
সাঁঝের কালে নীড়ে ফেরার আনন্দ কোলাহল
এর একটিও কি আছে তোমার মাটিতে?
এছাড়া আমার অস্তিত্ব কল্পনায় শিউরে উঠি আমি
আমার প্রাণের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা
প্রকৃতির অঢেল অমূল্য রত্নভান্ডারে পরিপূর্ণ
কী অপরূপ আমার দুঃখিনী বাঙলা!
এখানেই মুদিত হোক আমার আঁখি
পঞ্চমাত্মার বলাকারা উড়ুক এ আকাশেই
আমার মাটি ছেড়ে যাবো না আমি
আমি যাবো না মরণের পরেও
তোমার সাম্রাজ্য দিলেও না
যাবো না যাবো না না-না-না![/রং]
প্রকাশ: সাপ্তাহিক মানচিত্র- ঢাকা, 11 সেপ্টেম্বর 1983
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।