আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা সংগীতের সেকাল ও একাল

জীবনকে উপভোগ করতে চাই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সঙ্গীত মানুষের মনের ভাব প্রকাশের একটি গুরুতপূর্ণ মাধ্যম। মানুষের জীবনের দু:খ,বেদনা,হাসি ,কান্নার নানা দিক গুলো সংগীতের মাধ্যমে নানা ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সংগীত বিষয়টির গতি প্রকৃতি বিচিত্র ও বহুমুখী । যাকে একমাত্র বিশাল সমুদ্রের জলরাশির সাথেই তুলনা করা চলে। সংগীত ভালোবাসে না পৃথিবীতে এমন লোক দুর্লভ।

শেক্সপীয়ারের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘যে গান ও ফুল ভালোবাসে না সে মানুষ ও খুন করতে পারে’। আজও আমাদের আলোড়িত করে। সংগীতের বিভিন্ন মুখী আবেদন রয়েছে। যাকে সৃষ্টির অপার লীলাভূ’মি বলা চলে। সেই সৃষ্টির রহস্যের নানা জন নানাভাবে নিমগ্ন থাকার চেষ্টা করেন।

মানব সৃষ্টির ইতিহাসের মত সংগীত সৃষ্টির ইতিহাসও সুপ্রাচীন। মানব সৃষ্টির ইতিহাসের সাথে সংগীত সৃষ্টির ইতিহাসও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কালের বিবর্তনে ,সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের চিন্তাধারা ও ধ্যান ধারণায় যেমনি পরিবর্তন এসেছে-সংগীতও তার আপন গতিতে উৎকর্ষতা অর্জন করেছে, একথা নি:সন্দেহে বলা যায়। তবুও আমরা সংগীতের আবেদন নিয়ে যদি ভাবি –তাহলে সংগীতের সেকাল ও একাল নিয়ে কথা বলতেই হবে। সংগীত যেন আজ অতীতের মত মানুষকে কাছে টানতে পারছে না –সংগীতের মর্মস্পর্শী ও হৃদয়গ্রাহী আবেদন যেন ক্রমশ: হারিয়ে যাচ্ছে।

সবখানে যেন কৃত্রিমতার ছোঁয়া-সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা। তবে নানা প্রতিকুলতা ও সীমাবদ্ধতার মাঝে ও কিছু কিছু গান সংগীতানুরাগী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে- একেবারে যে করছে না একথা বোধ হয় ঠিক নয়। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সংগীতেও নানা ধরণের যন্ত্রপাতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিন্তু কথা, সুর, গায়কী আবেদন যেন আগেকার মত মানুষকে কাছে টানতে পারছে না। সংগীতের একটা সময় কেটেছে আমরা বলতে পারি –জগম্ময় মিত্র, সলিল চৌধুরী, শ্যামল মিত্র,হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, ডি.এল রায়, মান্না দে,কমল দাশগুপ্ত, ভূপেন হাজারিকা ,লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোশঁলে, আর. ডি বর্মণ, এস. ডি বর্মণ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়দের যুগ।

যাঁদের অনেকেই আজ প্রয়াত-আবার অনেকেই আজ জীবনের শেষ প্রান্তে। কিন্তু তাদেঁর সৃষ্টিশীল অপূর্ব সংগীত গুলো আজও আমাদের সমান ভাবে নাড়া দেয়। আর আমাদের আছে নিজস্ব সংগীতের ঐতিহ্য। হাসন রাজা,লালন শাহ,শাহ আবদুল করিম সহ অনেকেই সে ঐতিহ্যের ধারক। আমরা সে ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছি যুগ যুগ ধরে।

আর ভাটিয়ালী,মুর্শীদি,মারফতি,ভাওয়াইয়া গান আমাদের শেখড়ের গান। কথায় ,সুরের বৈচিত্রে, গায়কী কন্ঠের অপূর্ব সমন্বয়ে গড়া গানগুলো আমাদের নিরন্তর দোলা দিয়ে যায়। অনেকগুলো গানই প্রতিনিয়ত মনের কোনে আপনার হয়ে কন্ঠে ধরা দেয়। তার মধ্যে কোনটিকে রেখে কোনটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হবে-সে সিদ্ধান্তে আসা বড় কঠিন। আমাদের বাংলাদেশের বশীর আহমেদ,মাহমুদুন্নবী, ফেরদৌসী রহমান, শাহনাজ রহমতউল্লাহ,সুবীর নন্দী,আবদুল জব্বার প্রমুখ শিল্পীদের গাওয়া অনেকগুলো গান আজও সমান জনপ্রিয়।

গানগুলোতে সুরের ব্যঞ্জনা ,কথার গভীরতা,গায়কী ঢং ছিলো তুলনাহীন। সে গান গুলোতে ছিলো পারস্পরিক আন্তরিকতায় সৃষ্টিশীল কিছু উপহার দেয়ার নিরলস প্রয়াস। আর বর্তমানে সংগীত হয়ে পড়ছে ক্রমশ: বাণিজ্যমুখী। এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই সংগীতের আবেদন মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে আগেকার মত অবস্থান নিতে পারছে না । পুলক বন্দোপাধ্যায়, গৌরি প্রসন্ন মজুমদার আমাদের দেশের আবু হেনা মোস্তফা কামাল,নজরুল ইসলাম বাবু,মাসুদ করিম, গাজী মাজহারুল আনোয়ার , রফিকউজ্জামান প্রমুখ গীতিকারদের লেখা অনেকগুলো গান এখনও সমান জনপ্রিয় ও স্বমহিমায় সমুজ্জল।

সংগীত সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া ও গবেষণার বিষয়। একে নিযে নিরন্তর গবেষণা ও ভাবনা এর উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সংগীত নিয়ে গবেষণার প্রক্রিয়াটি যেন ক্রমশ: হ্রাস পাচ্ছে। সুন্দর সৃষ্টির মনোবৃত্তি যেন লুপ্ত হতে বসেছে। অতীতের তুলনায় এটা আরও বেশী হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করি।

আধুনিকতার সাথে চলতে হবে এটা ঠিক;কিন্তু তথাকথিত আধুনিকতার ধুম্রজালে আমরা যেন দিনে দিনে বাধাঁ পড়ে যাচ্ছি। সংগীতের গভীরতা থেকে সরে গিয়ে বাইরের চাকচিক্যে আমরা যেন হাবুডুবু খাচ্ছি। সে কালের গানগুলোকে ‘হারানো দিনের গান’ দিনের গান বলে প্রচার করা হয়। অর্থাৎ আমাদের সেই দিন হারিয়ে যেতে পারে ,কিন্তু গান হারিয়ে যেতে পারে না। হারিয়ে না যাওয়ার গান সৃষ্টি করাই হচ্ছে সৃষ্টির সত্যিকার সার্থকতা।

আমরা চাই এমন ধরণের সংগীত যা শুনে আমাদের পরবর্র্তী প্রজম্মরা আমাদের স্মরণ করবে-বলবে এখনকার গানগুলো ‘হারানো দিনের গান,। আমরা কি সে কালের তুলনায় একালে আরও বেশী সৃষ্টিশীল কিছু করতে পারছি ? যা শুনে আমাদের পরবর্তী প্রজম্মরা গর্বের সাথে বলবে ‘এ আমাদের অতীত প্রজম্মের সৃষ্টি’- যা সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায় নি। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু সৃষ্টিশীল মানুষের প্রচেষ্টা লক্ষনীয়। এটা যদি আমরা করতে না পারি –তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের কাছে আমরা কি দিয়ে গেলাম? বর্তমান বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির যুগেও আমাদের এ নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা যেন সস্তা জনপ্রিয়তার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিই।

যে কাজ অতীতে আমাদের গুণীজনেরা করেছেন –যা আমরা আজও ধারণ কিংবা লালন করে চলেছি। আমাদেরও সৃষ্টি করতে হবে ঐরকম কিছু সৃষ্টিশীল কাজ-যে কারণে পরবর্তী প্রজম্ম আমাদেরও স্মরন করতে পারে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.