আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ফেরেন্ডরা

অতীতকে নিয়ে নস্টালজিক হতে ভালোবাসি, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেও।

অস্ট্রেলিয়ায় আসার কারণে ছোট বেলার সব খেলার সাথিদের পেছনে ফেলে আসতে হয়েছে। প্রথম দু'বছর প্রাইমারী স্কুলে ছিলাম, (একজন ছাড়া) সবাই ছিল মোটামোটি-টাইপ বন্ধু। সেই মোটামোটি-টাইপের মধ্যে অবশ্য দু'জন খুব ভাল বন্ধু ছিল, এখনও আছে : লিখিতা ও আশপ্রিত। হাই স্কুলে ওঠার পরে লিখিতা চলে গেল অন্য স্কুলে।

কিছুদিন পর আমি আর আশপ্রিতও আলাদা হয়ে গেলাম, হলো নতুন বন্ধু। এক বছর 'পপুলার' মেয়েদের সাথে থেকে বুঝতে পারলাম, আমার ওদের সাথে ক্লিক করছেনা, আমার জীবনে মেকআপ-ক্লোথস-বয়েজ-মুভিজ-মিউজিক ছাড়া আরও অনেক কিছু আছে। আশপ্রিতেরও একই অবস্থা। তাই ক্লাস সেভেনের শেষে আমরা আবার একসাথে হলাম। ধীরে ধীরে আমাদের গ্রুপের মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলো, হয়ে গেলো সাতজন।

দের বছর ধরে আমার ছয়টা পাগল টাইপের বেস্ট ফ্রেন্ড আমার লাইফটা তেজপাতা থেকে স্বপ্ন টাইপ করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে যখন নিজেকে মাটিতে পুতে ফেলতে ইচ্ছা করে, তখন ওরা মূহুর্তেই আমার মত পাল্টায় ফেলতে পারে। কয়েকদিন আগে নীরোর আইডিয়ায় আমরা ঠিক করলাম আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলটাকে একটা সুখী পরিবারে পরিণত করা যেতে পারে। এই পরিবারে বাবা, মা, ভাই, বোন সবই থাকবে। ভাগ্যটাতো আমারই খারাপ, তাই আমি হলাম ওদের পোষা হ্যামস্টার।

ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, ঘোড়া (ও পঁ্যাচা) টপকায় একেবারে হ্যামস্টার! আমাদের অত্যন্ত সুখী পরিবারের বাকিরা: ডিভিয়া: ফ্যামিলির 6 বছরের পিচ্চি মেয়ে (খুব কিউটতো, তাই)। এ হচ্ছে আমার বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড। স্কুলে আমাদের বেশিরভাগ ক্লাসই একসাথে, তাই আমরা বেশিরভাগ সময়েই একসাথে থাকি। ব্রেক, লাঞ্চ আর স্কুলের পরে ও না থাকলে আমার ভাল লাগেনা, আর আমি না থাকলে ওর ভাল লাগেনা। ও হিন্দি স্পিকিং ইন্ডিয়ান, নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি ভীষণ মুগ্ধতা তার।

কোনও নতুন হিন্দি মুভি বের হলে ও বাবা মার সাথে হলে গিয়ে দেখতে যায়। ফানা বের হওয়ার পর পাক্কা সাতদিন আমার কান ঝালাপালা করে ফেলছে। গত বছর ধুম আর দাস্ এর গানগুলো আইপডে রিপিট দিয়ে বসে থাকতো। বাবা মার একমাত্র মেয়ে, তাই যা চায় তা পায়। ও বলে ওর জিনিষের বদলে ভাইবোন থাকলে অনেক ভালো হত।

বড় ভাইবোন থাকার সমস্যাগুলো কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা তাকে। স্ম্রুদি: বাবা। মেয়েটাকে দেখে কেও বলবে না তার মধ্যে ছেলে-ছেলে ভাব আছে, কিন্তু দশ মিনিট কথা বললেই বুঝতে পারবে চেহারা দিয়ে মানুষ চেনা যায় না! একবার ও আমাকে ফোন করার পর ভাইয়া মনে সত্যি সত্যি মনে করেছিল আমি কোন ছেলের সাথে কথা বলছিলাম। গানের গলা খুবই সুন্দর, কিন্তু কিছুতেই সে গাইতে চায় না। সারাক্ষন কথা বলতে বলতে জীবন অতীষ্ঠ করে ফেলে।

ওর ওয়্যাঙ্/ ভ্রু প্লাক করতে কোন সমস্যা হয় না, কিন্তু ক্রিম আর লোশন মাখতে হাজার সমস্যা। ক্লাসে কিছু একটা লিখতে ভূল হলেই আমাদের লিকুইড পেপার নিয়ে টানাটানি করে। তাই এবার ওর বার্থডেতে আমরা লিকুইড পেপার আর কয়েক ধরনের লোশন দিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, ও আমাদের লিকুইড পেপার নিয়ে এখনও টানাটানি করে। তার পিচ্চি ভাইটার সাথে কথা বলতে খুব মজা, বেচারা আমাদের কাউকে দেখলেই লজ্জা পায়।

মারিসা: বেশ সুইট এবং দায়িত্ববান মেয়ে - তাই ওকে বানানো হলো মা। ও হচ্ছে 'পুরোপুরি' মেয়ের কাছাকাছি। আমরা চিন্তা করে বের করেছি, আমাদের কারোও বয়ফ্রেন্ড হলে ওর জুটবে সবার আগে। পকেটে সবসময় টাকা নিয়ে ঘুরে, কোথাও কোন কাপড় পছন্দ হলেই কিনে ফেলে। কিছুদিন আগে ওরা নতুন বাসায় উঠেছে।

ওর একটা ছোট বোন আছে, তিন বছরের। এই পিচ্চিটাও খুব কিউট। মারিসা আমাদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নরমাল, তাই ওকে নিয়ে বলার বেশি একটা কিছু নাই। নীরো ও দানুশা: এ দু'জন হচ্ছে আরেক জোড়া বেস্টেস্ট ফ্রেন্ডস। এক সাথে উঠে, বসে, হাটে, খায় ও পড়ে।

ফ্যামিলিতে দু্ইজনই বোন, কে বড় ভুলে গেছি। স্কুলের বাইরেও ওরা সবকিছু একসাথে করে, সব জায়গায় একসাথে যায় - মিউজিক ক্লাস, দাওয়াত ও অন্যান্য। নীরোর বেশিরভাগ গল্পই হয় ওর অসংখ্য কাজিনদের নিয়ে, যে গুলো আমাদের এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য সাইড দিয়ে বের হয়ে যায়। এ বছর ও আমাদের সবাইকে আমাদের নাম সহ একটা করে ব্রেসলেট দিয়েছে। ব্রেসলেটটা বেগুনী, ওপরে রুপালি অক্ষরে নাম।

দানুশা খুব ছোট থাকতেই ওর মা মারা যায়। ওর বাবা ওকে আর দু'বছরের বড় ভাইকে ওদের আন্টির সাথে রেখে যায়। ওর কিছু মনে নেই, ঘটনা শুধু শোনা। কয়েক দিন পর পর ও ডায়েট করে, কিন্তু সমস্যা হলো, এই মেয়ের বিরাট চকলেট অবসেশন আছে। একদিন চকলেট না খেলে জীবণ-মরন অবস্থা হয়।

ও হচ্ছে একই সাথে কেশবতী প্লাস মায়া-মায়া-টাইপ-আঁখিবতী। অ্যাশপ্রিত: আরেক কেশবতী। কিন্তু ও কিছুতেই ওর চুল ধরতে দেয় না। একদিন জোড় করে সাজিয়ে দেওয়ার পর বোঝা গেলো ও আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী। বাস্কেটবলের পাগল, চান্স আসলেই ওর হাত নিশপিশ করে খেলার জন্য।

বেশির ভাগ সময়েই থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট আর ক্যাপ পরে ঘুরে। এইসব গুনাবলীর জন্য ওকে বানানো হলো পরিবারের টিনেজ পোলা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.