আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিল্কী হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দেড় ঘণ্টার ফোনালাপ

কাশিমপুর কারাগারে বন্দী ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। গত ৩১ আগস্ট রাত ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত থাইল্যান্ড থেকে মিল্কী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত ফোনালাপ করেন এ দুজন। এই ফোনালাপে ফাঁস হয়েছে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডটির অজানা অনেক কাহিনী। সোয়া একঘণ্টার ওই ফোনালাপের পুরো অংশ রেকর্ড করেছে সরকারের গোয়েন্দাদের একটি দল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চঞ্চলের সঙ্গে কিলার আব্বাসের সখ্য দীর্ঘদিনের।

এই সূত্র ধরে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর চঞ্চল +৬৬৮২৫৮৩৯৭৪৭ নম্বরের মোবাইল ফোন থেকে কিলার আব্বাসের ব্যবহার করা ০১৭৮৬০৩৫৬১৭ নম্বরে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। এ সময় তারা মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও হত্যাকাণ্ডের পরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তাদের এই কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্টটি ১৭ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করেছে গোয়েন্দারা। দুই সন্ত্রাসী সালাম বিনিময়ের পর তাদের কথোপকথন শুরু হয়। গোয়েন্দারা এই দুই সন্ত্রাসীর কথোপকথন শোনার পর মন্তব্য করেছেন, এই +৬৬ কোড নম্বরটি থাইল্যান্ডের।

চঞ্চল ও কিলার আব্বাসের কথোপকথনের মূল বিষয়ই ছিল মিল্কী হত্যাকাণ্ড। চঞ্চল তার সহযোগী তারেক ক্রসফায়ারে নিহত হলে বিষয়টি নিয়ে কিলার আব্বাসের কাছে গভীর হতাশা প্রকাশ করে। কারণ তারেক কিলার আব্বাসেরও ঘনিষ্ঠ ছিল। আব্বাসও বারবার তারেককে তারু ভাই বলে সম্বোধন করেন ফোনালাপে। চঞ্চল সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসকে জানান যে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে যুবলীগ নেতা রফিকের সম্পৃক্ততা আছে।

চঞ্চলের ভাষ্যমতে, রফিকের পরামর্শে গুলিবিদ্ধ তারেককে উত্তরার একটি ছোট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর রফিকের কাছে দুটি অস্ত্র জমা রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে রফিক পলাতক সন্ত্রাসী চঞ্চলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চঞ্চলের সঙ্গে রফিক কোনো যোগাযোগই করছে না। চঞ্চল ও তারেকের ঘনিষ্ঠ ছোটভাই হচ্ছেন হীরক।

চঞ্চল কিলার আব্বাসকে বলেন যে, হীরক তার বিশ্বস্ত লোক। সর্বশেষ চঞ্চল আব্বাসকে অনুরোধ করেন আব্বাস যেন জনৈক নিখিলকে অনুরোধ করে চঞ্চলের যুবলীগ হতে বহিষ্কারাদেশটি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন। ক্রসফায়ারে নিহত এস এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ছিলেন কারাবন্দী সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ও পলাতক সন্ত্রাসী শাহাদতেরও ঘনিষ্ঠ। তাদের হয়ে তারেক আন্ডারওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। চঞ্চল কিলার আব্বাসকে বলেন, আমিনুলের গুলি তারেকের গায়ে লাগে।

মিল্কীকে হত্যার পরিকল্পনা আগেও বেশ কয়েকবার তারা করেছিল। কিন্তু সফল হতে পারেনি। চঞ্চলের অস্ত্র দিয়েই তারা মিল্কীকে গুলি করেন। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি দলীয় উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই জানতেন। চঞ্চলের ফোনালাপের ভাষ্য অনুযায়ী, মতিঝিল এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার পদে কে নির্বাচন করবে, মিল্কী ও তারেকের মধ্যে দলীয় পদ এবং মতিঝিল এলাকার ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ২২ কাঠা জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

চঞ্চল কিলার আব্বাসকে জানান, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের সময় অনেকের সঙ্গে হীরক, আমিনুল ও সোহেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় তারেক গুলিবিদ্ধ হলেও চঞ্চল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চাননি। তার পরিকল্পনা ছিল সীমান্ত পার হয়ে ভারতের কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানো। পরে রফিকের পরামর্শে তারেককে উত্তরার ফরচুন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রসঙ্গত, ২৯ জুলাই গভীর রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড শপিং সেন্টারের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী।

এ ঘটনায় মার্কেটের সিসি ক্যামেরার চিত্র দেখে ওইদিন গভীর রাতে উত্তরার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিক তারেককে গ্রেফতার করা হয়। ভিডিও চিত্রে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিই ছিলেন তারেক, গোয়েন্দাদের ভাষ্য। ঘটনার সময় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সঙ্গীদের এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন। একই সঙ্গে ওই ক্লিনিকের পার্কিং এলাকা থেকে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলের ব্যবহার করা প্রাডো গাড়িসহ গ্রেফতার করা হয় চালক জাহাঙ্গীরকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাড়িচালক জাহাঙ্গীরসহ সবাই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ও মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলের নাম প্রকাশ করে।

৩১ জুলাই রাতে খিলক্ষেত এলাকায় র্যাবের ক্রসফায়ারে তারেক মারা যায়। মিল্কী হত্যা মামলাটি এখন র্যাব তদন্ত করছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।