আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"খৈয়াছড়ায় রুপালী জোছনা,আমি এবং আমরা"

এই সময়
টানা তিন ঘন্টার হাটার রাস্তায় কোথাও আঁকা-বাঁকা ঝিরিপথ,কোথাও মেঠোপথ আবার কোথাওবা পিচ্ছিল খাড়া পাহাড় বেয়ে যখন আমরা আমাদের ক্যাম্পিং বুথের (ঝরনা) সামনাটায় এসে দাঁড়ালাম তখন হঠাৎ মনের ক্লান্তি সব কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। তবে শরীরের ক্লান্তি কিছুটা জানান দিচ্ছে বারবার। তাতে কোন লাভ নেই। কারণ আমাদেরএখনো অনেক কাজ বাকী। সূর্য্য মিলিয়ে যাচ্ছে ।

কারণ পাহাড়ে রাত নামে খুব তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা নেমে আসছে। তাই বাকী কাজ রাত নামার আগেই শেষ করতে হবে। বিশ্রাম নেয়ার অবকাশ কোথায়? আমরা আমাদের ট্যান্ট (তাবু) গুলো ঝরনার পাশে ফেললাম। একসাথে পাঁচটা তাবু ফেলার বিশাল জায়গা এখানে নেই।

তাই টেন্টগুলো ঝরনার দু'পাশে ফেললাম। দু'পাশে রঙ্গিন তাবু আর দুই পাশের তাবুগুলোর ঠিক মাঝখানটায় শান্ত ঝরনা। দেখতেই বেশ লাগছে। যাক তাবু ফেলার ঝামেলা শেষ। এখন রাতের রান্না-বান্নার আয়োজন করতে হবে।

সময় নেই হাতে তেমন একটা। তাই আমরা কয়েকজন বেরিয়ে পড়লাম শুকনো কাঠ-খড়ির খোঁজে। আর এদিকে আরোঁও কয়েকজন রান্না-বান্নার অন্যান্য কাজ গোচাচ্ছে। কাঠ-খড়ি যোগার করাটা এখানে ততটা সোজা মনে হচ্ছে না। গতবছরের আমাদের ঝুরঝুরি ক্যাম্পিং-এ কাঠ-খড়ি যোগার করতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

ঝরনার পাশেই চাহিদা অতিরিক্ত কাঠ-খড়ি ছিলো। তখন অবশ্য শীত কাল ছিল। আর এখন বর্ষা কাল। তাই কাঠ-খড়ি যোগার করতে একটু ঝামেলাতো হবেই। আমরা কাঠের সন্ধানে ঝিরিপথ ধরে ক্যাম্পিং স্পট থেকে অনেকটা দূরে চলে আসলাম।

তেমন কোন কাঠ-খড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাচ্ছি প্রায়গুলোই ভিজে স্যাতস্যাতে হয়ে আছে। তবুও অনেকক্ষণ খাটুনির পর মোটামুটি কিছু শুকনো গাছের ঢাল-পালা পাওয়া গেল। আমরা সেগুলো নিয়ে ক্যাম্পিং স্পটে চলে আসলাম। ক্যাম্পিং স্পটে এসে দেখি সবাই ব্যস্ত।

কেউ পাথর দিয়ে চুলা তৈরী করছে। কেউ তরকারী কাটাকুটি করছে। একজন "ফিউরিয়াস ট্রাভেলার্স" (আমাদের গ্রুপ) সদস্য আবার হ্যামক (দোলনা) টানাচ্ছে। ঝরনার উপর থেকে দৃশগুলো দেখতে সত্যিই অপূর্ব লাগছে। এই জন-মানবহীন গহীন বনে কেমন যেন একটা উৎসব-উৎসব ভাব বিরাজ করছে।

কাজের ফাঁকে সুযোগ পাওয়া মাত্র কেউ-কেউ গোসল সেরে নিচ্ছে। ঝরনার পানি গায়ে লাগতেই সব ক্লান্তি কোথায় যে উদাও হয়ে গেল টেরই পেলাম না। গোসল শেষে শুকনো জামা-কাপড় পড়ে আবার চুলার কাছে চলে গেলাম। সেখানে আমরা আগুন ধরানোর চেষ্টা করলাম। আগুন ধরানোর জন্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক এখানে আছে।

তাই কিছুক্ষণ পরেই দাউ-দাউ করে আগুন ধরেও গেল। আমরা আমাদের রাতের রান্না-বান্না শুরু করে দিলাম। প্রথমে ঝরনার পানিতে চাল ধুয়ে চুলোয় চড়ালাম(আমরা আমাদের খাওয়া থেকে শুরু করে সকল কাজে ঝরনার পরিস্কার পানি ব্যবহার করেছি) পুরোদমে রান্না-বান্না শুরু হয়ে গেল। আমরা কয়েকজন চুলা দেখছি। কয়েকজন মুরগী আর লাউ কুটাকুটি করছে।

কয়েকজন তাবুর সামনে বসে হেরে গলায় গান গাচ্ছে। একজন আবার হ্যামক (দোলনায়) শুয়ে-শুয়ে দোল খাচ্ছে। আর পাশ থেকে ঝরনার ঝিরঝির পানির শব্দ আসছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা মুহূর্ত। এক সময় ভাত রান্না হয়ে গেল।

তারপর মুরগীও রান্না হয়ে গেল। এবার খাওয়ার পালা। সবাই মোটামুটি ভালোই ক্ষুদার্ত। আজ সারাদিন কেউই তেমন কিছুই খায়নি। তার উপর সারাদিনের পরিশ্রম।

তাই সবাই খাওয়ার জন্য এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো বলা চলে। ঝরনার বহমান পানিতে দাঁড়িয়ে বেশ তৃপ্তি নিয়ে আমরা আমাদের রাতের খাবার শেষ করলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই প্রথম বারের মত একটু অবসর পেল। তাই সবাই যার যার মত আড্ডা দিচ্ছে। ততক্ষনে আমাদের ক্যাম্পিং স্পটে চাঁদ তার দাপুটে আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।

জায়গাটা মুহূর্তে কোন এক রূপকথার রাজ্যে পরিণত হলো। জায়গাটার সুন্দর্য্যে লেখে বা বলে কোন ভাবেই বুঝানো সম্ভব না। কেউ না দেখলে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করাটা হবে একধরনের বোকামী। জোছনার আলোয় চারিদিকে সোনালী এক আভা সৃষ্টি হয়েছে। ঝরনার পরিস্কার পানি রুপালী বর্ণ ধারণ করেছে।

ঝরনার পাশের উঁচু পাহাড়ের বুকে জোছনার আলো নিংড়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে এক কাপ চা হলে কেমন হয়? কোন সমস্যা নেই চা তৈরীর সকল সরঞ্জামতো আমাদের কাছেই আছে। চুলার তাপ এখনো পর্যাপ্ত আছে। আমরা মুহূর্তের মধ্যে চা বানিয়ে ফেললাম। তাবুর পাশে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা আর জোছনা দেখা সে যে কি রোমাঞ্চকর এক মুহূর্ত বুঝানো সম্ভব না।

রাত বাড়ছে। বাড়ছে জোছনার আলো। রঙ পাল্টাচ্ছে ঝরনার চারপাশের। অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর এক সময় কয়েকজন ক্লান্ত হয়ে ঘুমোতে চলে গেল। আমরা কিছু জেগে রইলাম।

সবাই চলে গেলে চলবে না। এখানে ফ্লাশ ফ্লাড (হরকা বান-বৃষ্টির পানিতে তৈরী প্রবল স্রোত) এর সম্ভাবনা সব সময়ই থাকে। এখানে ক্যাম্পিং করাটা আমাদের এক ধরনের বোকামীই বলতে হবে। এর আগে এখানে কেউ থাকাতো দূরের কথা, এমন কথা মাথায়ই আনেনি। যদি রাতে এখানে বা আশে-পাশে কোথাও বৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের হাতে সরে যাওয়ার জন্য মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় থাকবে।

এক দুই ফোঁটা বৃষ্টির সাথে সাথে আমাদেরকে নিরাপদ জায়গায় সরে পড়তে হবে। না হয় মৃর্ত্যু অনির্বায। তাই কাউকে না কাউকে একটু সজাগ থাকতেই হবে। সবাই যখন গভীর ঘুমে অচেতন, আমরা ৬ জন তখনো জেগে আছি। আর চাঁদ মামাতো জেগে আছেই।

আমরা ঝরনার আর একটু দূরে পানিতে টর্চ এর আলো ফেলে কিছু চিংড়ি আর কাঁকড়া ধরলাম। সেগুলোকে মেরিনেট করে ক্যাম্প ফায়ারের আগুনে রান্না করলাম। ( অহ! বলতে ভুলে গেছি আমরা সেখানে ক্যাম্প ফায়ার করেছি) খেতে অসাধারণ লেগেছে। স্বাদটা এখনো মুখে লেগে আছে। তারপর একে একে আমরা আলু পুড়ালাম, মুরগীর ঝলসানো গ্রীল, ঝাল-মুড়ী ইত্যাদি খেলাম।

দেখতে দেখতে রাত তিনটা বেঁজে গেল। এই চাঁদ আর জোছনা ফেলে তাবুতে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না একটুও। কিন্তু কালকে খুব ভোরে উঠতে হবে আমাদের। ভোরে আমাদের ট্রেইল হবে আরো চ্যালেঞ্জিং। প্রায় ঝিরিপথে পাঁয়ে হেঁটে ৫ ঘন্টার রাস্তা।

তাই একটু পীঠ লাগানো প্রয়োজন। আমরা ঘুমানোর জন্য রওনা হলাম। তখন ঘুমার্ত কয়েকজন জেগে উঠলো ফ্লাশ ফ্লাড লক্ষ্য রাখার জন্য। তাবুতে গিয়ে ঢুকে পড়লাম। পীঠ ঠেকানোর সাথে সাথে পৃথিবীর সমস্ত আলস্য আমাকে ভর করলো।

ঘুম চলে আসলো এক সময়। ঘুম ভালোই হলো। কখন যে সকাল হলো বুঝতেই পারলাম না। ঘুম থেকে উঠে দেখি এস.এল.আর এ ছবি তুলছে কয়েকজন। সকালের নাস্তা হিসেবে সু-স্বাদু খিঁচুড়ী রান্না করা হয়েছে।

তাড়াতাড়ি মুখ ধূয়ে খিচুড়ী খেলাম ঝরনার পানিতে বসে বসে। খিচুড়ি খেয়ে আমরা আমাদের সব গোছাতে লাগলাম। আর দেরী করা চলবে না। আমাদেরকে ফিরতে হবে। তাছাড়া আজকের ট্রেইল হবে ৫ ঘন্টার।

এবং আজকের ট্রেইল অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ন। আজকে আমরা যেই ঝিড়িপথ ধরে হাটবো সেই পথ দিয়ে তেমন কেউই আগে যায়নি। তাই চ্যালেঞ্জের একটা বিষয় থেকেই যায়। আমরা সব কিছু নিয়ে আমাদের ক্যাম্পিং স্পটটাকে বিদায় জানালাম। জায়গাটা ছেড়ে আসতে কেমন জানি মায়া হচ্ছিলো।

কিন্তু কি আর করা আমাদেরকে যেতেই হবে। আমরা ঝিরিপথ ধরে হাটা শুরু করলাম। একটু হাটতেই বুঝা যাচ্ছে যায়গাটা কতটা ঝুঁকিপূর্ন। ঝিরিপথে বেশ পানি আছে। সাথে ছোট বড় অসংখ্য পাথর।

একটু অসাবধান হয়ে পা ফেললে পা ঢুকে যেতে পারে পাথরের খাঁদে। অসাবধানতার কারণে পদে-পদেই বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই আমরা সাবধানে পিচ্ছিল আর তীক্ষ্ন পাথর মাড়িয়ে হাঁটতে লাগলাম। কোথাও কোথাও ছোট ছোট ঝরনা নজড়ে পড়ছে। ঝরনা গুলো বেশ পিচ্ছিল।

পা পিছলে হাত পা ভাঙ্গা ছাড়া উপায় নেই। আর এখানে হাত পা ভাঙ্গা মানে বুঝতেই পারছেন। ফার্স্ট এ্যাইড ট্রিটমেন্ট দেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এখান থেকে বেরুতে প্রায় ৫ ঘন্টা লেগে যাবে। তাছাড়া এখানে মালপত্র বুঝাই করাই ঝামেলা হয়ে যায় আর মানুষ বুঝাই করতে কেমন হবে? যাই হোক আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রায় ২ ঘন্টা হাঁটার পর একটা জায়গায় এসে আমরা দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এখানে দুটি ঝরনা। একটা ডানে-আর একটা বামে। কোনদিকে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। তাছাড়া ডান দিকের ঝরনাটাতে উঠার কোন উপায়ই নেই।

পানি পড়ে প্রায় দুই পুরুষ সমান গভীর খাঁদ সৃষ্টি হয়েছে। বাকী থাকলো বাম দিকের ঝরনাটা। তাই আমরা প্রথমে আমি আর মামুন ভাই বেশ ঝুঁকি নিয়ে উঠে গেলাম বাম দিকের ঝরনাটাতে। উঠাটা ছিলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু রাস্তা বের করতে হলে কাউকে না কাউকেত উঠতে হবেই।

এই সব জায়গায় দড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। কিন্তু দড়ি বাঁধার কোন উপায় ছিলো না। আমরা উপরে উঠে বাকীদের বললাম অপেক্ষা করার জন্য। কারণ সামনে কোন রাস্তা নেই বললেই চলে। আর রাস্তা না থাকলে অযথা সবাইকে দড়ি টেনে এখানে তোলার কোন মানেই হয় না।

সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আর প্রতিটা সেকেন্ড ব্যয় এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আগে একটু সামনের দিকে হাটা ধরলাম। কিছুক্ষণ হাটার পর একটা দৈত্যাকৃতির ঝরনা দেখতে পেলাম। এটাই সেই আমতলীর ঝরনা।

লম্বায় প্রায় ১০০ফুট হবে। তার সামনে বিশাল বড় পুকুড়ের মত একটা লেক। ঝরনার পানি পড়তে পড়তে এই লেক তৈরী হয়েছে। লেকটা অনেক গভীর। এই ঝরনায় কোন ভাবেই উঠা সম্ভব নয়।

উঠার কোন ব্যবস্থাই নেই। তবুও বিকল্প রাস্তা খুঁজার জন্য আমি আর মামুন ভাই পানিতে নেমে সাঁতার কাটতে লাগলাম। পানিতে তেমন কোন ঠাই নেই। আমরা কিছুক্ষন সাঁতার কাটার পর পাড়ে উঠলাম। না ঐখানেও কোন রাস্তা দেখতে পেলাম না।

খাড়া পাহাড়ে ঝোঁপ-ঝাঁড় ছাড়া আর কিছুই নেই। আমরা আবার ফিরে আসলাম। ফিরে এসে ডানদিকে একটা পাহাড়ী ঢল নামা খাড়া রাস্তা দেখতে পেলাম। সেখানে ক্লাইম্ভিং করাটা সবার জন্য সম্ভব হবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। তবুও ঝরনা থেকে দড়ি ফেললাম সবাইকে উঠানোর জন্য।

একে একে সবাই দড়ি বেয়ে উঠে আসলো। মালা-মালও তোলা হলো দড়ি দিয়ে। সেটা ছিলো উত্তেজনাপূর্ন একটা মুহূর্ত। আমরা ডানদিকের পাহাড়ী ঢল নামা রাস্তা ধরে হাটা ধরলাম। জায়গাটা দিয়ে পানি নামার কারণে একেবারে পিচ্ছিল হয়ে আছে।

কিছুদূর যাওয়ার পরে মনে হলো আমরা যতই আগাচ্ছি পাহাড় তত খাড়া হয়ে যাচ্ছে। আমাদের হাতে সময় কম। আর সামনে কোন রাস্তা আদৌ আছে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। যদি এখানে অযথা দেরী করে ফেলি, তাহলে সমস্যা হতে পারে। রাত নামলে কোথাও মুভ করা যাবে না।

আর এখানে ক্যাম্পিং করার কোন জায়গা পর্যন্ত নেই। তাই আমরা মুহুর্তে ফিরে যাবার পরিকল্পনা করলাম। তবে এই জায়গায় আমাদের আগে আর কেউ আসেনি এটা আমরা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি। আমরা একে একে আবার দড়ি বেয়ে ঝরনাটা দিয়ে নামতে লাগলাম। আমরা আবার হাটতে লাগলাম।

অবশেষে প্রায় ৩ ঘন্টা হাটার পর সবার প্রথম ঝরনাটাতে এসে পৌঁছালাম। আমরা এখানে একটু বসলাম। সবাই সবার শরীর চেক করতে লাগলো। কারণ মোটামুটি সবাইকেই জোঁকে আক্রমণ করেছে। আমরা এখানে কিছু শুকনো খাবার খেয়ে আবার রওনা দিলাম।

প্রায় আরো ঘন্টা দুয়েক হাটার পর আমরা মূল রাস্তায় উঠে আসলাম। সেখানে এসে রেল লাইনের পাশে একটা দোকানের সামনে আমরা আমাদের বন্য বেশ পাল্টে শুকনো জামা কাপড় পড়ে নিলাম। সেখানে বিস্কিট আর নারিকেল খেয়ে মিরেরসরাই এসে পৌঁছালাম। কিছুক্ষণ পর আমাদের বাস আসলো। আমরা বাসে করে প্রায় ২:৩০ মিনিট পর কুমিল্লা এসে পৌঁছালাম।

সত্যিই অসাধারণ একটা ভ্রমণ ছিলো। **কিছু সতর্কতা: ১। শখের বশে ঐ ধরনের জায়গায় না যাওয়াই ভালো। যদি আপনার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে। ২।

যদি ভুলে চলে যান ঝরনার উপরে হাটার সময় অবশ্যই খুব সাবধান থাকবেন। একটু পা পিছলে ঝরনার ৭০-৮০ ফুট নিচে পড়ে প্রাণ হানী ঘটতে পারে। কারণ চারিদিকে জমাট বাঁধা পাথর। ৩। এই ধরনের ক্যাম্পিং এ যাওয়ার আগে নিজের স্ট্যামিনা যাচাই করে নিন।

ভেবে দেখবেন পারবেন কিনা। কারণ সর্বনিম্ন ৫ ঘন্টা হাটার মানষিকতা থাকতে হবে। ৪। সঠিক পূর্ব ধারণা না নিয়ে ঐ ধরনের জায়গায় যাবেন না। কমপক্ষে একজন অভিজ্ঞ লোক সঙ্গে নিয়ে যাবেন।

প্রয়োজনে কোন গাইড নিতে পারেন। ৫। বিশেষ করে "ফ্লাশ ফ্লাড"এর ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। ফ্ল্যাশ ফ্লাডে পড়লে বাঁচার কোন আশা নেই। আমাদের যাওয়ার তিন-চারদিন আগে ৮নং ঝরনাতে একজন মারা গেছে।

আর আমরাতে গেছি তার অনেক উপরে মানে ১ নং ঝরনাতে। ঝরনার উৎসতে। তাই যাবার আগে একটু ভেবে নিবেন। ৬। জোঁক প্রতিনিয়তই আক্রমণ করে।

তাই সাথে লবণ নিয়ে যেতে ভুলবেন না। ৭। ভালো বহন যোগ্য "ছুরি" নিয়ে যাবেন। সব সময়ই কাজে লাগবে। ৮।

"দড়ি" নিতে কোনভাবেই ভুলবেন না। ৯। ফার্স্ট এ্যাইডের জন্য ঔষধ পত্র নিয়ে যাবেন। ১০। কার্বোলিক এসিড নিয়ে যেতে পারেন।

সাপ থেকে রক্ষা করবে। ১১। রান্নার জন্য আগুন ধরাতে একটু সাবধানতা অবলম্ভন করুন। দাবানল ছড়িয়ে যেতে পারে। (কেরোসিন নিয়ে যাবেন বেশী করে আগুন ধরাতে কাজে লাগবে)।

একটা পোর্টেবল স্টভ নিয়ে যেতে পারেন। কারণ সব সময় বনে আগুন ধরানো সম্ভব হয় না। ১২। আসার সময় ক্যাম্পিং স্পট পরিস্কার করে আসবেন। যেন কোন ময়লা আবর্জনা না থাকে।

বিশেষ করে পলিথিন ফেলবেন না। কারণ পলিথিন নষ্ট হয় না। মোট কথা প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করবেন না। *** জিবনকে উপভোগ করুণ। ভ্রমণ করুর নানা জায়গায়।

তবে হ্যাঁ জিবনকে উপভোগ করা মানে জিবনের ঝুঁকি নেয়া না। **আমরা প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতির সাথে থাকুন। প্রকৃতিকে ভালোবাসুন। আপনার প্রতিটি ভ্রমণ হোক সুন্দর এবং আনন্দঘন।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.