আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুলেভরা মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের সাম্প্রতিক ইতিহাসগ্রন্থগুলো

সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা

মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ইতিহাস নিয়ে গত বিশ বছরে বৃহদাকারের ৪টি ইতিহাসগ্রন্থ রচিত হয়েছে। এগুলো হল- ১) ঐতিহ্যবাহী মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের ইতিহাস, লেখক- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম লেলিন, প্রকাশক: মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর গবেষণা পরিষদ, ডিসেম্বর ১৯৯৪, পৃষ্ঠা ৫৯২; ২) আমার বিক্রমপুর, লেখক- হরিআনন্দ বাড়রী, প্রকাশক আনন্দ কলিকাতা ভারত, জুন ২০০৬ (এটি ২০০৪ সালে প্রকাশিত ইনসান এন্ড সাওয়ার গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ), পৃষ্ঠা ৪৭৩; ৩) বিক্রমপুর ইতিহাস ও ব্যক্তিত্ব প্রথম ও দ্বিতীয় খ-, লেখক মোঃ আজহারুল ইসলাম, প্রকাশক জুলেখা লাইব্রেরি, ঢাকা, প্রকাশকাল জুলাই ২০১১ (প্রথম খ- পৃষ্ঠা ৭০২), দ্বিতীয় খ- প্রকাশিত হয় আগের বছর। প্রথম খ- মৌর্য সা¤্রাজ্য থেকে শুরু করে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় খ-ে কৃতী ব্যক্তিদের কথা লেখা রয়েছে; ৪) মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর শেকড়ের সন্ধানে ইতিহাস এতিহ্য ব্যক্তিত্ব, লেখক মো: সাইদুল ইসলাম খান, প্রকাশক অন্বেষা প্রকাশন, প্রকাশকাল জুলাই ফেব্রুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা ৮০০। লেখকদের মধ্যে মোঃ আজহারুল ইসলামের জন্ম মুন্সীগঞ্জের বাইরে, মানিকগঞ্জে। তিনি মানিকগঞ্জেরই মানুষ।

অন্যরা বিক্রমপুরের সন্তান। হরিআনন্দ বাড়রীর জন্ম ১৯২৯ সালে শ্রীনগরের শ্যামসিদ্ধি গ্রামে। তারা সপরিবারে ভারতে চলে যান। তিনি ইনটেলিজেন্স ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ার সর্বাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত হরিয়ানার রাজ্যপাল পদে বৃত হন।

কিছু সময় তিনি হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপালও ছিলেন। তার গ্রন্থটি ঠিক গবেষণা গ্রন্থ নয়। অনেকটা স্মৃতিচারণমূলক আত্মকথা, স্মৃতিকথা এবং সংশ্লিষ্ট সমসাময়িক ও প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে রচিত। এখানে তিনি বিক্রমপুরের কথাই বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় আলোকপাত করেছেন।

তিনি বাংলার সাবেক প্রধান বিচারপতি ষোলঘরের চন্দ্রমাধব ঘোষকে নিয়ে একটি অধ্যায় লিখেছেন তথ্যভিত্তিক। পশ্চিমবঙ্গর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হাসাড়ার সিদ্ধার্থ শংকর রায়, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রাজনৈতিক নেতা তেলিরবাগ গ্রামের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী রাঢ়ীখালের জগদীশচন্দ্র বসু এবং ভারতের নাইটিংগেল কবি-রাজনৈতিক কনকসারের সরোজিনী নাইডুকে নিয়ে ভিন্নভাবে বিস্তারিত লিখেছেন। ঢাকেশ্বরী কটন মিলের প্রতিষ্ঠাতা সর্য কুমার বোসসহ অনেক বিশিষ্ট উদ্যোক্তার কথা লিখেছেন। জীবনলাল ঘোষাল ওরফে মাখন, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেছিলেন সর্যসেনের সাথে। তিনি ১৯৩২সালে চন্দননগরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

এরকম অনেক অজানা তথ্য তিনি সন্নিবেশিত করেন। দক্ষিণ বিক্রমপুরের বুদ্ধুদেব ভট্টাচার্য এবং সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথা বলেছেন। এজন্য বিভিন্ন গ্রন্থ ও সূত্রের তথ্য দিয়েছেন। আবার বাড়ৈখালীতে তার মায়ের মামা বাড়ির ঘটনা সঠিক দাবী করে বর্ণনা করেছেন: সেই বাড়ির এক মহিলাকে সাপে কামড়ালে মহিলা ক্রুদ্ধু হয়ে ভরের মধ্যে চলে গেলেন। মহাদেবের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করলেন, কেন শিব ঠাকুর তাঁর সাপের গুষ্ঠিকে সামলে রাখতে পারেন না? তাঁর ভক্তের সন্তানকে কামড়ায় এত স্পর্ধা সাপেদের? মহাদেব তৎক্ষণাৎ আর একটি সাপ দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন টাটকা শিকড়বাকড়, সেগুলি প্রয়োগ করতেই বেঁচে উঠল ছেলেটি।

হরিআনন্দ বাড়রীর বইটিতে বহুসংখ্যক ভৌতিক ব্যাপার রয়েছে। এসব অবৈজ্ঞানিক বিষয়ে তার বিশ্বাস ব্যক্তিগত কিন্তু তিনি অবলীলায় সেই বিশ্বাস আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। উপস্থাপনা এবং ভাষা বিষয়ে তার বইটি খুবই আকর্ষণীয় এবং সুখপাঠ্য। একজন বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষের কাছে খটকা লাগলেও বাকীরা বইটি পড়ে নির্ভেজাল আনন্দ ও তথ্য পেয়েছেন। অসাধারণ এই বইটির এই সীমাবদ্ধতা সত্তেও এটি লেখার জন্য তার ধন্যবাদ প্রাপ্য।

এটিই চারটির মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। এসব নিয়েই বইটি বাংলাদেশ-ভারত জুড়ে বিপুলভাবে আলোচিত ও সমাদ্রিত হয়েছে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম লেলিন মূলত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। আলোচ্য ৪টি গ্রন্থের মধ্যে এটি দুর্বলতম। অঙ্গসজ্জা, পৃষ্ঠা এবং ছাপা অত্যন্ত নি¤œমানের।

তবে দীর্ঘদিন পরে অর্থাৎ বৃটিশ শাসনামলের পরে প্রথম ইতিহাসগ্রন্থ হওয়ায় এটিও আলোচিত হয়। বাংলা ১৪/১৫ ফন্টে কোন ইতিহাস গ্রন্থ হতে পারে এটি না দেখলে বুঝা সম্ভব নয়। এটিতে প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস নেয়া হয়েছে যোগেন্দ্রে নাথ গুপ্তের বিক্রমপুরের ইতিহাস গ্রন্থ হতে। প্রকৃতপ্রস্তাবে যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তের রচনাই মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ইতিহাসের আকরগ্রন্থ। এরপরে রয়েছে হিমাংশু মোহন চট্টোপাধ্যায়ের বিক্রমপুরের ইতিহাস ৫খন্ড।

এটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসগ্রন্থ। অম্বিকাচরণ ঘোষও লিখেছেন বিক্রমপুরের ইতিহাস। বতর্মানের চারজন লেখকই বিপুলভাবে পূর্ববর্তী ইতিহাসগ্রন্থ হতে ধার নিয়েছেন কিন্তু তারা যথাযথভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকারও করেন নি। সহায়ক গ্রন্থপঞ্জীতে মো: সাইদুল ইসলাম খান এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খান হিমাংশু বাবুর নাম দেননি। বাকী দুজন সহায়ক গ্রন্থপঞ্জীই দেন নি।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম লেলিন বিক্রমপুরের ইতিহাস লিখতে গিয়ে লিখেছেন, আদিম মানুষের ইতিহাস, আগুনের ব্যবহার, তুষার যুগ, মানুষের শিকার করা, বাসগৃহ, নতুন গোষ্ঠীর উদ্ভব, ধর্মবিশ্বাসের উদ্ভব, প্রস্তর যুগ সম্পর্কে। দাবী করেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতাগুলির একটির উৎপত্তি ঘটে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরে। .. মানব সমাজের একেবারে আদিম কাল থেকেই মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরে জনবসতি বর্তমান ছিল’। গাজার নৌকা পাহাড়ের উপর দিয়ে চলে, ইতিহাসের নৌকা চলে না। এসব ইতিহাসের কোন সুত্র দেন নি, গালগল্প সীমা মেনে চলে তিনি তাও চলেননি।

প্রস্তরযুগে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর নামে একটি অধ্যায়-এ লিখেছেন, ‘প্রতœতত্ত্ববিদরা মনে করেন যে উচ্চতর প্রতœপ্রস্তর যুগে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরেতে প্রাধান্য ছিল নিগ্রো গোত্রীয় জনগোষ্ঠীর পরে মধ্য প্রস্তর যুগে পশ্চিম বিক্রমপুরেতে আবির্ভত হয় ককেশীল পূর্বে মঙ্গোলীয় গোত্রের নৃগোষ্ঠী’। এটি বাক্যই হয়নি। তিনি হয়তো বলতে চাচ্ছেন, প্রস্তরযুগে এখানে নিগ্রো গোত্রীয় জনগোষ্ঠী ছিল। তিনি কিছুটা ভারতীয় ইতিহাস বিক্রমপুরের উপর চাপিয়েছেন, কিন্তু আগেতো প্রমাণ করতে হবে এভূখ- কতটা প্রাচীন। তার বইতে যাকে তাকে কৃতীসন্তান বানানো হয়েছে।

তার কল্যাণে ছোট দোকানদান, তৎকালীন কলেজ পড়–য়া সাধারণ ছাত্র, ছোট চাকুরীজীবী কৃতীসন্তান হয়ে গেছে। মানিকগঞ্জের মানুষের পক্ষে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের ইতিহাস রচনা বিস্ময়করই। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের অনুরোধেই এটি লিখেন। তিনি বিপুলভাবেই যোগেন্দ্রবাবু এবং হিমাংশুবাবুর বই থেকে তথ্য গ্রহণ করেছেন। তার কতিপয় ঐতিহ্যবাহী পরিবার অংশটুকু হিমাংশুবাবুর দ্বিতীয় খন্ডরই আধুনিক রূপ।

তার প্রথম খ-ের প্রথম অংশটুকু যোগেন্দ্র বাবুর বই থেকেই তথ্য নিয়ে লেখা। তিনি লেখার ভাষা ও স্টাইল বদলে দিয়েছেন। তিনি এ অঞ্চলের মানুষ না হওয়াতে বহু ভুল তথ্য তার বইতে ঢুকে পড়েছে। অনেক স্থানের নাম ভুলভাবে দেয়া হয়েছে। যেমন- শ্রীনগরের সেলামতিকে লিখেছেন শীলমতি, উমপাড়াকে লিখেছেন উমাপাড়া, কাঠিয়াপাড়াকে লিখেছেন কাইট্যাপাড়া ইত্যাদি।

আবার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম পরে দিয়েছেন। এ ধরনের বহু সমস্যা রয়েছে তিনি এখানকার মানুষ না হওয়াতে। এক থানার গ্রামের নাম চলে গেছে অন্য থানায়। আড়িয়ল বিলের নাম লিখেছেন আরল বিল। বিলের সীমা লিখতে গিয়ে শ্রীধরপুরকে লিখেছেন শ্রীধরখোলা, বাড়ইখালীকে বারইখালী, শেখরনগরকে শেকেরনগর।

তিনি লিখেছেন ব্রিটিশ আমলে সৃষ্ট সমসপুর বর্তমানে একটি উন্নত ব্যবসায় কেন্দ্র। অথচ সমষপুর কোনভাবেই ব্যবসাকেন্দ্র নয়, এখানে ছোট বাজারও নেই। নদনদী ও খালবিল নিয়েও তিনি অপ্রতুল ও ভুল তথ্য দিয়েছেন। এরপরেও ইতিহাসগ্রন্থ বিবেচনায় এই চারটি গ্রন্থের মধ্যে এটিকেই কিছু নাম্বার দেয়া যায়। সাইদুল ইসলামও এধরনের ভুল তথ্য দিয়েছেন।

যেমন তিনি আমার ইউনিয়ন ভাগ্যকুলের নাম লিখেছেন ভাগ্যকূল। এই ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম লিখেছেন বালাশুর, অথচ এটি রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের গ্রাম। তিনি নাগরনন্দি গ্রামের নামই লিখেননি। তিনি অকাতরে ভুল তথ্য দিয়েছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, বিচারপতি চন্দ্রমাধব ঘোষ ১৯০৭ সালে বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

বস্তুত তিনি প্রধান বিচারপতি হিসাবে অবসরগ্রহণ করেন। ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তিনি অসম্মান করেছেন। যেমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন এর নাম নূহ-উল আলম লেনিনের আগে আলোচনা করেছেন। সুকুমার রঞ্জন ঘোষের নাম সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলির আগে আলোচনা করেছেন। এমিলিতো বর্তমান সংসদের হুইপ।

কোরবান আলী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের আগে এছাহাক চাকলাদারের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ শোভন নয়। মো: সাইদুল ইসলাম খান যে গ্রন্থটি লিখেছেন তা নিতান্তই দুর্বল। তিনি পূর্ববর্তী বিভিন্ন লেখকদের লেখা তার বইতে আত্মীকরণ করেছেন। যেমন- বিক্রমপুর বৌদ্ধ ধর্মাচার্য: শীলভদ্র, শান্তরক্ষিত এবং দীপঙ্কর অংশটুকু একই শিরোনামে হুবুহু হরিআনন্দ বাড়রীর বই থেকে নিয়েছেন। তিনি আরো বহু লেখকের লেখা তার বইতে হুবহু তুলে দিয়েছেন।

হরিআনন্দ বাড়রীর বইতে এই চৌর্যবৃত্তি বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তার বইয়ের অধ্যায় এভাবে প্রকাশে অনুমোদন নেয়ার কথা কোথাও বলা হয়নি। আমার কাছে অবাক লেগেছে মো: আজহারুল ইসলাম সাহেবের বইটি প্রকাশের পরে মো: সাইদুল ইসলাম খান সাহেবের বইটি প্রকাশিত হওয়ায়। এই বইটিতে তিনি ব্যাপকভাবে ঘাট অঘাট করেছেন। যেমন অনেক অখ্যাত এবং অসাংবাদিকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিয়েছেন সাংবাদিক হিসাবে অথচ মাহবুবুল আলম ও নুরুল কবিরের পরিচিতি দেন নি।

ডা. বি চৌধুরী, ফখরুদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. হুমায়ুন আজাদসহ অসংখ্য ব্যক্তিত্বকে যথাযথ মূল্যায়ন করেন নি। আবার অনেক তুচ্ছ ব্যক্তিকে ব্যাপক মূল্যায়ন করেছেন। এ অভিযোগটি আরো ব্যাপক রয়েছে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খানের বইটিতে। অর্থাৎ দুই খান সাহেবই ইতিহাস রচনায় অসাধুতা এবং বিশৃঙ্খলা করেছেন। ইতিহাস রচনা ব্যক্তিগত কবিতা বা গল্প লেখার মতো নয়।

এখানে ভুল তথ্যের দায় অনেক, ভুল তথ্য ভুল মূল্যায়ন অনেক সমস্যার তৈরি করে। চারটি গ্রন্থের মূল সমস্যা হল, এখানে গবেষণা হয়েছে সামান্যই। মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ইতিহাসের প্রধান দুজন লেখক যোগেন্দ্র বাবু ও হিমাংশু বাবু ব্যাপক গবেষণা করে অজানা তথ্যকে আলোয় এনেছেন। বর্তমান চারটি বইতে নতুন গবেষণার ছিটেফোটাও নেই। চারজন লেখকের কেউ-ই গবেষক, লেখক, সাংবাদিক বা ইতিহাসবিদ নন।

হরিআনন্দ বাড়রীর লক্ষ্য ইতিহাস গ্রন্থ রচনা ছিল না, তার লক্ষ্যে তিনি সফল হয়েছেন। বাকী তিনজন মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ইতিহাস লেখার যোগ্যতা রাখেন না। তারা দ্রুততম সময়ে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে বইগুলো প্রকাশ করেছেন বলা যায়। আমরা মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ইতিহাসে যা চাই তা হল- নিবিড় গবেষণার ফলাফল। নামকরণের সঠিক ব্যাখ্যা চাই।

আমরা মুন্সীগঞ্জের নামকরণের অন্তত দুটি এবং বিক্রমপুরের ৬/৭টি কারণ জানি কিন্তু নামকরণ হয়েছে একটি কারণেই। সাম্প্রতিক সময়ে রঘুনাথপুরে কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। দেশ-বিদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত চাই। সেটা শিলালিপি হউক, তা¤্র শাসন হউক কিংবা পুরাকৃত্তি হউক এসবের নির্যাসটা আমরা আধুনিক গবেষণায় দেখতে চাই। পুরাতন ডকুমেন্টস প্রধানত সরকারী নথি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের তথ্য বের করে আনা।

আমরা পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনের আগের ও পরের অবস্থাই বুঝতে পারি না। শুধু যোগেন্দ্র নাথ ও হিমাংশু মোহনের গ্রন্থের উপর আর রেনেলের মানচিত্রের উপর নির্ভর করে ইতিহাস না লিখে এরা যেভাবে পরিশ্রম ও মেধা ব্যয় করেছে সেভাবে করলেই আমরা আরো ভাল কিছু পেতাম। একটি ইতিহাস গ্রন্থ পড়লেই মনে হবে এখানে গবেষণা হয়েছে, নতুন ও সঠিক তথ্য রয়েছে। এখানে চৌর্যবৃত্তি হয়নি, ব্যক্তিত্বও ক্ষেত্রে অখ্যাতকে বিখ্যাত করা হয়নি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটা চাই।

এখানকার মিসিং লিংকগুলো দরকার। আমরা বলি মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ইতিহাস হাজার বছরের বা পাঁচ হাজার বছরের; সিরাজুল ইসলাম খান বলেছেন আদিম মানুষ ছিল এখানে। আমরা কি দেখে এটা বলি। এটাতো সাহিত্য নয়। এগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে পড়লেই মনে হয় মিথ্যাচার ধান্ধাবাজী।

প্রাচীন ইতিহাসে এ আঞ্চলের ভৌগলিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের বিষদ বর্ণনা চাই। ঐ সময়ের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনুসন্ধানী তথ্য চাই। মধ্যযুগের এবং আধুনিক যুগের রাজনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণও দরকার। ভূপ্রকৃতি কতটা বদলে গেল, নদনদী কতটা বদলে গেছে, রাজনৈতিক গুরুত্ব পরিবর্তনের বিশ্লেষন চাই। এসব পারবে গবেষক ও ইতিহাসবিদগণ।

যারতার হাতে ইতিহাস লেখাটা বন্ধ করা দরকার। লেখাটি: জমিন-এ প্রকাশিত হয়েছে সেপ্টেম্বর ১৩ সংখ্যায়

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।