১৯৮২ সালে লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করার পর আওয়ামী লীগ ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। সাতদলীয় ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল আমার ওপর। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রায় প্রতি মাসে উভয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। ফলে অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে রাজনীতিবিদদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
একে অপরের প্রতি তারা ছিলেন শ্রদ্ধাশীল।
১৯৯১ সালের নির্বাচন ছিল তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে তাদের পরাজয়কে মেনে নিতে পারেনি। সুতরাং ১৯৯২ সাল থেকে ক্রমশ তারা বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে এ আন্দোলনে তাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে জামায়াতে ইসলামী।
এক পর্যায়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য অনড় অবস্থান গ্রহণ করে। তখন আমি ছিলাম যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। সংকট নিরসনে জাতিসংঘ থেকে স্যার নিনিয়ানকে পাঠানো হয় এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী উভয় জোটের মতামতের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংঘাত এড়ানোর জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৪০ দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য রাজি হন। শেষ মুহূর্তে উভয় দলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার দিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট এ প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে তারাই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির একটি রূপরেখা সংসদে পেশ করে।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার একজন নিকটাত্দীয় জনাব হাফিজ এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী আ. খ. ম জাহাঙ্গীর আমাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে ছিল আওয়ামী লীগের ১৪৩ জন এবং বিএনপির ৪০ জন সংসদ সদস্য। আমাকে বলা হয়েছিল, উভয় জোটের পক্ষ থেকে ১০ জনকে মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দিতে হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। একনাগাড়ে দুই রাত মন্ত্রিপাড়ার 'কলতান' সরকারি বাসভবনে এ বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন রাত আনুমানিক প্রায় ২টার সময় আমি তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিই।
তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী এ ব্যাপারে সব কিছু অবগত ছিলেন। আমি কখনো বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে পেছন থেকে আঘাত করতে চাইনি। সব সময় সঠিক পথে চলার চেষ্টা করেছি। হয়তো চলার পথে কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। এর কিছু দিন পর বিএনপির মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়, বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দলের অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করতে চাচ্ছেন।
বেগম খালেদা জিয়া এর কিছু দিন পর সিনিয়র সাতজন মন্ত্রীকে তার অফিসে মিটিংয়ের জন্য ডেকে পাঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মির্জা গোলাম হাফিজ, ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মেজর জেনারেল মাজেদুল হক (অব.), জনাব সাইফুর রহমান, লে. কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান (অব.), ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার এবং আমি নিজে। ওই মিটিংয়ে তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেন, আপনাদের মধ্যে যদি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে চান, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমাকে বেইজ্জতি করবেন না। তার তীক্ষ্ন দৃষ্টি ছিল মির্জা গোলাম হাফিজ ও ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দিকে।
দীর্ঘক্ষণ এ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে আমি তাকে নিশ্চয়তা দিলাম, আপনাকে বাদ দিয়ে কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন না। আপনার নেতৃত্বেই আমরা কাজ করব। উপস্থিত সবাই আমার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ওই মিটিং থেকে বেরিয়ে আসেন।
১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির জন্য ১৫ দলীয় ঐক্যজোট এবং জামায়াতে ইসলামী ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে হরতাল, ধর্মঘট, ভাঙচুর, গাড়ি জ্বালানোসহ পর্যায়ক্রমে অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে ঢাকাকে অচল করে দেয়।
সে সময় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় দুই জোটের মধ্যে আলোচনার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল আমার ওপর। উভয় জোটের মধ্যে কয়েক দিন আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা ঠিক করা হয়। ওই রূপরেখা স্বাক্ষরের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অফিসে ১৭ জন মন্ত্রীকে নিয়ে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা গুলিস্তান চত্বরে ওই দিন জনসভা আয়োজন করেন। কথা ছিল ওই রূপরেখা স্বাক্ষরের পর জনসভায় সেটা প্রকাশ করা হবে এবং বিরোধী দল আন্দোলন থেকে বিরত থাকবে।
আমাদের পক্ষ থেকে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত না দেওয়ার ফলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের সংসদ সদস্যরা সংসদ সদস্য পদ থেকে একযোগে পদত্যাগের জন্য সংসদ ভবনে উপস্থিত হন। ওই দিন সার্বক্ষণিক আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। আমি তাদের অনুরোধ করি, কিছুক্ষণের মধ্যে আমি সংসদ ভবনে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হব।
তারা যেন পদত্যাগ না করেন।
প্রস্তাব নিয়ে সংসদ ভবনে যাওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে এক সিনিয়র নেতা প্রস্তাব করলেন, আওয়ামী লীগ আগামীতে কখনো হরতাল করবে না, এ বিষয়টিও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উপস্থিত কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী তার সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করলেন। আমি এ প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করি এবং হরতালের বিষয়টি উল্লেখ না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করি। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের চাপের মুখে আমাকে নতিস্বীকার করতে হয়।
নাম প্রকাশ করে আমি কাউকেই খাটো করতে চাই না। ওই দিন সন্ধ্যার পর প্রস্তাবগুলো নিয়ে আমি, ডা. এ কিউ এম বি. চৌধুরী ও বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদার সংসদে অপেক্ষমাণ তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যাই। প্রস্তাবগুলো পড়ে শোনানোর দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। তাৎক্ষণিকভাবে শেখ হাসিনা এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা চিৎকার করে সমস্বরে বলে উঠলেন, দাসখত দিয়ে রাজনীতি ও হরতাল বন্ধ করতে আমরা রাজি নই। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ সামান্য শব্দটিকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অনীহা প্রকাশ করে।
অথচ এই সামান্য সংশোধনীটি যদি সেদিন তারা মেনে নিতেন তাহলে চিরদিনের জন্য ধর্মঘট, হরতাল, অবরোধ বন্ধ হয়ে যেত। রাজনীতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ফিরে আসত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসত।
আমরা সংসদ ভবন ত্যাগ করার পরপর আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের সংসদ সদস্যরা তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। অনেকে মনে করেছিলেন, আমার কারণে সেদিন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
অথচ বাস্তবে এতে আমার কোনো ধরনের ভূমিকা ছিল না।
অতঃপর তারা বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্দক সংগ্রামে লিপ্ত হন। ঢাকাকে অচল করে দেন। সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা এবং কল-কারখানায় উৎপাদন হয় ব্যাহত। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেয়।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শক্তি ও সামর্থ্য বিএনপি সরকারের ছিল। কিন্তু বেগম জিয়া চাননি দেশে অশান্তি বিরাজ করুক, রক্তপাত ঘটুক এবং উৎপাদন ব্যাহত হোক। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আইনে পরিণত করাও সম্ভব ছিল না। সুতরাং তাদের দাবি অনুযায়ী সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, নতুনভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম অধিবেশনেই নতুন আইন প্রণয়ন করে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির সরকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অতঃপর তিন-চার দিন পর বেগম খালেদা জিয়া সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পত্র লিখেন এবং আমি নিজে ওই পত্র নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করি। ওই দিন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নয়াপল্টন বিএনপি অফিসের সম্মুখে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই সমাবেশে তিনি জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ এবং সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন। সমগ্র ঢাকা শহরে অলি-গলিতে ছিল ১৫ দলীয় ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির জঙ্গি মিছিল। তখনকার সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও জনগণের মধ্যে অস্থিরতা আরও বহু গুণ বেশি।
আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি না, কেউ কারও ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। জনগণও এখন আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সরকার হাড়ে হাড়ে এই সত্যটি উপলব্ধি করেছেন। যার কারণে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং নেতারা যত্রতত্র অসংলগ্ন এবং অসত্য বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা এবং অর্বাচীন মন্ত্রীর বক্তব্য শুনলে মনে হয়, বাংলাদেশ তাদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে।
ক্রমাগতভাবে তারা বিরোধীদলীয় নেতাদের সম্পর্কে অশালীন, উসকানিমূলক এবং অহেতুক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সহনশীলতার ধারে-কাছেও নেই তারা। যারা সরকার পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে ধৈর্য ও সহনশীলতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অথচ ক্ষমতার লোভে আজ তারা বিভোর। গণতন্ত্র হলো আলোচনার মাধ্যমে সরকার পরিচালনা।
কিন্তু সে পরিবেশ এখন অনুপস্থিত। বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে দুই জোটের নেতা-কর্মীদের আদৌ সুসম্পর্ক নেই।
বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে জনতার মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তারা বিচার বিভাগসহ সব সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণ এবং আওয়ামী সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন করেছেন। দলীয়করণ করার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না।
তবে শেষ রক্ষা হবে কিনা এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল করার পরও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে কিনা বলা বড় কঠিন। বর্তমান পরিস্থিতিতেও এ ধরনের মঞ্চ তৈরি হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
কয়েক দিন আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তার বক্তব্যের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করলেন। তার হাবভাব দেখলে মনে হয়, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের প্রজা এবং তিনি এখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত।
১৯৯৬ সালের পর জনাব নাসিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকা অবস্থায় মহামান্য হাইকোর্টের বিচারকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে লাঠিসোঁটা দিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। অনেকে বেমালুম আওয়ামী চরিত্রের কথাগুলো ভুলে গেছেন। এখন কিন্তু সরকার নিজেই সংকট থেকে বের হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগই। ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছিলেন।
ফলে হিতে বিপরীত হয়েছিল। ওই বক্তব্যের পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বর্তমানে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের প্রায় ৭০ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে জেলে আটক আছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতা-কর্মীদের খুন, অস্ত্রবাজি ও দুর্নীতিসহ প্রায় আট হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এবং বিজিবিতে হাজার হাজার ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রায় ৫৭ জন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসনের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দলীয় ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের দিয়ে তিন ধাপে সেট করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালবাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর অবসান ঘটলেও পুলিশ এবং র্যাবের অনেক সদস্য রক্ষীবাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানো হয়েছে ও হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গণগ্রেফতার, ঘুষ ও দুর্নীতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ টেন্ডারবাজ লীগে পরিণত হয়েছে।
এ সরকারের আমলে নারী নির্যাতন বেড়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন চলছে বাকশালী কায়দায়। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে কারও বুঝতে কষ্ট হবে না, আগামী দিনে ক্ষমতায় আসার জন্য তারা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও একটি জিনিস দিবালোকের মতো পরিষ্কার, তাদের মধ্যে অনেককে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, খুন, গুম, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য সারা জীবন জেলে থাকতে হবে। গত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর সরকার বুঝতে পেরেছে, তাদের পায়ের নিচে আর মাটি নেই।
তাদের প্রতি জনগণের আর কোনো আস্থাও নেই। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারও চায় না, দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল হোক। তারা নিশ্চিত জানে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল হলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। সুতরাং জেনেশুনে আওয়ামী লীগ নিজের গলায় নিজে ফাঁসি দিতে চায় না। উভয় সংকটে রয়েছে আজ আওয়ামী লীগ।
বর্তমান অবস্থায় সংকট নিরসনের পথ প্রায় রুদ্ধ। দেশে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদায় বেলাটা কি ধরনের হবে, তা দেখার জন্য সমগ্র জাতি উদগ্রীব। অপরদিকে এ অবস্থায় ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের পক্ষেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল করা ব্যতিরেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে আত্দহত্যার শামিল। এমতাবস্থায় ১৮ দলের পক্ষেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের জন্য সংগ্রাম ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে।
আশা করি, সময় থাকতে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পথ সুগম করবে।
লেখক : সংসদ সদস্য ও প্রেসিডেন্ট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।