হত্যা, গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
রায়ের আধ ঘণ্টার মাথায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপির আইনজীবী নেতারা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনটি ডাকা হয়।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া শুরুতেই বলেন, দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতেই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেন, “এই বিচারটি একটি প্রহসনের বিচার, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার।
ইনশাল্লাহ জাতীয়তাবাদী শক্তি যদি ক্ষমতায় আসে, সত্যিকার অর্থে যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার হবে এবং নির্দোষ ব্যক্তিরা প্রতিহিংসার জন্য যাদের বিচার করা হয়েছে, কাল্পনিক গল্প দিয়ে যে মামলা তৈরি করা হয়েছে, অবশ্যই সেটা চলে যাবে। যারা এই প্রহসনের বিচারে সম্পৃক্ত ছিল, ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হবে। ”
বক্তব্যের শুরুতে এই আইনজীবী নেতা বলেন, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান, কিন্তু তা যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য না হয়।
“আমরা দেখতে পাচ্ছি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ন্যায় ব্যক্তি, যার পিতা ৭২ সালে সেন্ট্রাল জেলে দালাল আইনে আটক ছিলে। তখন তার নাম ছিলে না।
দীর্ঘ ৪০ বছর পর তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়। ”
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহাবুব দাবি করেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। তার পক্ষে একজন বিচারপতি সাফাই সাক্ষী দিতে আগ্রহী হলেও তাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়ায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। ”
মওদুদও দাবি করেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সব সময় চেয়েছে তার দল।
তবে ট্রাইব্যুনালে যেভাবে বিচার হয়েছে তা প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হয়নি।
“এই রায় কোনো চূড়ান্ত রায় নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের উচ্চতম আদালত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেবে। ”
মওদুদ অভিযোগ করেন, রায় ঘোষণার আগেই সোমবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা ‘সবাই পেয়ে গেছে’।
“যারা ইন্টারনেট ওপেন করেছেন তারাই পেয়েছেন। পৃথিবীতে এরকম কোনোদিন শুনি নাই। সেখানে বলা আছে, গত মে মাসে এই রায় লেখা হয়েছে, যখন এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ হয়নি।
সরকার ও ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
“তা না হলে মানুষের মনে সন্দেহ থেকে যাবে এবং তা দৃঢ় হবে।
এটা বাংলাদেশে একটা নজিরবিহীন ঘটনা। ”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, “আমরা আশা করি, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে। পদ্ধতিগত যেসব ভুল ছিল- সেগুলো উচ্চ আদালত দেখবে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালাস পাবে। ”
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাচ্ছি, বিএনপির গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করে।
আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে সাফাই সাক্ষীকে সাক্ষ্য প্রদানের সুযোগ না দিয়ে এই বিচারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ”
অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী, সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বিএনপি নেতা আবেদ রাজা, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তা সারিতে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সমর্থক আইনজীবীরা ছাড়াও সালাউদ্দিন কাদেরের ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।