আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইব্যুনাল ॥ ষড়যন্ত্র ০ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু ০ এ জন্য ব্যয় করা হচ্ছে প্রচুর অর্থ ০ তুরস্কের ব্রাদারহুড কর্মীরাও ঢুকে পড়েছিল ট্রাইব্যুনালে



একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবেই গভীর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। এর অংশ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের বিতর্কিত করা, মানবাধিকারকর্মী পরিচয়ে ব্রাদারহুড সদস্যদের ট্রাইব্যুনালে আসা, ট্রাইব্যুনালের এক বিচারপতির বিদেশী বন্ধুর সঙ্গে স্কাইপেতে ব্যক্তিগত কথোপকথনের অডিও ক্লিপ হ্যাকিং করে তা দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশ করা অন্যতম। সর্বশেষ, গত মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ঘোষণার আগের দিন আকস্মিকভাবে ওয়েবসাইটে রায়ের কথিত কপি পাওয়ার ঘটনায় এ ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। কথিত ওই রায়কে কেন্দ্র করে গোটা ট্রাইব্যুনালকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি। এদিকে, যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের খসড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক, রেজিস্ট্রার, কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

কারা, কিভাবে রায়ের কপি ফাঁসের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তা বের করার জন্য ডিবি অনুসন্ধান শুরু করেছে। রায়ের কপি ফাঁসের সঙ্গে দেশী-বিদেশী একটি চক্রের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের টাকার ডিল হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ডিবির ইন্সপেক্টর ফজলুল হককে। রায়ের মূলকপি ও ফাঁস হওয়া খসড়া কপি সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে ডিবি পুলিশ। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে দুটি পেনড্রাইভ জব্দ করেছে ডিবি।

অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তিবর্গ বলছেন, যাঁদের হাতে কথিত ওই রায়ের কপি প্রথমে দেখা গেছে তাঁরাই এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা নিজেরাই ট্রাইব্যুনালে থাকা তাঁদের লোক দিয়ে রায়ের খসড়াটি পাচার করেছেন এবং ট্রাইব্যুনালের প্রকাশিত অন্যান্য রায়ের সঙ্গে সংযোজন-বিয়োজন করে কথিক একটি রায় তাঁদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। আবার তাঁরাই রায়ের কপি হাতে করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এসে গণমাধ্যমের কাছে বিলি করেছেন এবং এ কথিত রায়টিতে পুঁজি করে গোটা ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার পাঁয়তারা করছেন। তাঁরা আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন পদে স্বাধীনতাবিরোধী ওই চক্রের লোক আছে। এরা হয়ত এই চক্রের নিজস্ব লোক বা তাঁদের অর্থপুষ্ট।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও এদের লোক বসে আছে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা। অপপ্রচারে ওয়েবসাইট ॥ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তা সর্বপ্রথম স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের তিনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে ওই সব ওয়েবসাইটকে সূত্র উল্লেখ করে এই চক্রের আরও কিছু ওয়েবসাইট এসব মিথ্যাচার প্রচার করছে। ওই ওয়েবসাইট তিনটি হলো- , , এসব ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, এখনও ওইসব ওয়েবসাইটে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার হোম পেজেই রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল লিকস্্ নামে ওয়েবসাইটটিতে এখনও সাকা চৌধুরীর ওই কথিত রায়টি ‘গরহরংঃৎু চৎবঢ়ধৎরহম ঔঁফমবসবহঃং ভড়ৎ ঃযব ঞৎরনঁহধষ’ ওই ওয়েবসাইটের প্রধান খবর হিসেবে রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, এসব ওয়েবসাইট সম্পর্কে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ধারণাই নেই। তবে মঙ্গলবার সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা এসব ওয়েবসাইটের এক প্রকার বিজ্ঞাপনই দিয়েছেন। জামায়াতের আইনজীবীরা এসব ওয়েবসাইটের ঠিকানা বিভিন্ন সাংবাদিককে ই-মেইলও করেছেন। এতে ধরে নেয়া যায় এসব সাইট সম্পর্কে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর ধারণা খুব বেশি। অনেকে মন্তব্য করেছেন এসব ওয়েবসাইট পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী ওই চক্রের সদস্যরা।

ট্রাইব্যুনালে ব্রাদারহুড ॥ ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর হঠাৎ ট্রাইব্যুনালে হাজির ১৪ বিদেশী। সরাসরি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে নিজেদের পরিচয় দিলেন মানবাধিকারকর্মী। তাঁরা নিজেদের মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দিলেও তাঁরা আসলে আইনজীবী। ১৪ বিদেশীর মধ্যে একজন বেলজিয়ামের এবং বাকি ১৩ জন তুরস্কের। ওই সময় রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা সরাসরি ট্রাইব্যুনালে এসে পাস চেয়েছেন।

যেহেতু এটি পাবলিক ট্রায়াল সে কারণেই তাঁদের শর্তসাপেক্ষে পাস দেয়াও হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কড়া নিরাপত্তা থাকলেও তাদের সরাসরি ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ নিয়ে ওই সময় ট্রাইব্যুনাল এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সে সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অংশ হিসেবেই তুরস্কের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি দলের ট্রাইব্যুনালে আগমনকালে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে। স্কাইপে কথোপকথন হ্যাকিং ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের বিদেশী বন্ধুর সঙ্গে স্কাইপেতে কথোপকথন হ্যাকিং করে তার অডিও ক্লিপ প্রচার করা হয় দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে।

এর পর তাঁকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সরে যেতে আবেদন জানান জামায়াতের আইনজীবীরা। স্কাইপে কথোপকথনের ওই অডিও ক্লিপটি প্রচার করে স্বাধীনতাবিরোধীদের কয়েকটি ওয়েবসাইট। এই কথোপকথনকে কেন্দ্র করে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে বিতর্কিত করতে চলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। এর আগে ট্রাইব্যুনাল-১-এর এই সাবেক চেয়ারম্যানকে বিচার কার্যক্রম থেকে সরে যেতে একাধিক আবেদন করেন জামায়াতের আইনজীবীরা। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী বিচারপতি নিজামুল হককে সরে যেতে একটি আবেদন করেন।

১৯৯২ সালে গঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ১৯৯৩ সালে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে একটি গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন- এসব কারণ দেখিয়ে আপত্তি তোলা হয় আবেদনটিতে। যদিও তখন তিনি বিচারপতি ছিলেন না, তারপরও নিজামুল হকের স্বেচ্ছায় অপসারণ দাবি করে আবেদনটি করেন সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। পরে ওই বছরের ১১ ও ১৩ নবেম্বর আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি হয়। যেহেতু চেয়ারম্যানকে নিয়েই আবেদন, সেহেতু তিনি শুনানি ও আদেশের দিনগুলোতে এজলাসে বসেননি। ১৪ নবেম্বর এ আবেদনের নিষ্পত্তি করে দেন ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারপতি।

বিষয়টি তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত এবং এ বিষয়ে তাঁরা কোন রায় দিতে পারেন না বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ও একেএম জহির আহমেদ। অন্যদিকে গত বছরের ৩০ মে ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে গোলাম আযমের আইনজীবীরা মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আবেদন করেন। ৬ জুন এ আবেদনের শুনানি শেষে ১৮ জুন খারিজ করে দেয় ট্রাইব্যুনাল। এছাড়াও জামায়াতের তিন বিদেশী আইনজীবী স্টিভেন কে, টোবি ক্যাডম্যান ও জন ক্যামেগ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের অপসারণ চেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছে ই-মেইলও করেছেন। রায়ের খসড়া ফাঁসের তদন্তে ডিবি ॥ সাকা চৌধুরীর রায়ের খসড়া ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁস হতে পারে বলে বুধবার সংবাদ সম্মেলন জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ।

বুধবারই এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। জিডিতে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজের পর যে কোনভাবে রায়ের খসড়া কপির কিছু অংশ ফাঁস হয়েছে। তার জিডির পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তের অংশ হিসেবে গতরাতেই ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে বলে ডিবি পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

এদিকে, বৃহস্পতিবার এ ঘটনার তদন্তে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক, রেজিস্ট্রার, কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কারা, কিভাবে রায়ের কপি ফাঁসের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তা বের করার জন্য ডিবি অনুসন্ধান শুরু করেছে। রায়ের কপি ফাঁসের সঙ্গে দেশী-বিদেশী একটি চক্রের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের টাকার ডিল হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ডিবির ইন্সপেক্টর ফজলুল হককে। রায়ের মূলকপি ও ফাঁস হওয়া খসড়া কপি সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে ডিবি পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি যে তিন বিচারকের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা হচ্ছেন, ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এছাড়া রেজিস্ট্রার একেএম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তাঁরা। ডিবি পুলিশের সঙ্গে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববধায়ক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় জনকণ্ঠকে বলেন, তদন্তভার তাঁরা গ্রহণ করার পর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

রায়ের কপি ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর পর রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়। জিডির নম্বর-৮৫। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সরবরাহ জিডির কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২ অক্টেবর শাহবাগ থানায় ৮৫ নম্বর জিডি হিসেবে তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রেকর্ডকারী হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে এসআই জাফর আলীর। জিডিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রচারিত সমস্ত রায় ট্রাইব্যুনালেই প্রস্তুত করা হয়।

রায় ঘোষণার আগে রায়ের কোন অংশের কপি অন্য কোন ভাবে প্রকাশের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও কথিত খসড়া রায়ের অংশ কিভাবে ইন্টারনেটে প্রচারিত হলো বা কিভাবে ট্রাইব্যুনাল থেকে খসড়া রায়ের অংশবিশেষ ফাঁস হলো তা উদ্বেগের বিষয়। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছেন রেজিস্ট্রার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করার পর তদন্ত শুরু করেছে ডিবি পুলিশ। অন্যদিকে, রায় প্রকাশের আগে কথিত একটি রায় প্রচারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

বিশিষ্টজনদের বক্তব্য ॥ সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক এ বিষয়ে বলেন, বিচারপতিদের কথোপকথন, রায়, আদালতের এ রকম অন্যান্য বিষয় যদি লোকে আগেই জেনে ফেলে, তাহলে সেটা তো খুবই দুঃখজনক। এর সঙ্গে যারা যুক্ত আমি তাদের নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে আমি মনে করি, আদালতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিচারপতিদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। তাঁদের আওতার মধ্যে কোন না-কোন লোকই, একজন বা একাধিক এ ধরনের হীন কাজের সঙ্গে যুক্ত। এটা খুঁজে বের করতে না পারলে সমস্যা হবে।

তিনি বলেন, রায়ের খসড়া ফাঁস হওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। থানায় তাদের করা জিডির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ কাজও শুরু করেছে রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য। আমি আশা করি, সত্য বের হয়ে আসবে। খসড়া রায় ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা যাবে। এই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ যে বা যারাই হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করার সাহস না করে।

এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা অনেকবার বলেছি, এখনও বলেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতের লোক আছে। শুধু ট্রাইব্যুনালে নয়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গায়ও তাদের নিজেদের অথবা তাদের অর্থপুষ্ট লোক বসে আছে। এসব লোক একদিকে যেমন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সাহায্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি সরকারকে বেকায়দায়ও ফেলতে চাইছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের খসড়াও তারাই ফাঁস করেছে। এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার।

এ ঘটনায় অপরাধী কে বা কারা তা চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরী। অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা আবারও তারা ঘটাবে। এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন ব্যক্তির কম্পিউটার হ্যাক করে তারা নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। হ্যাকিং যদি চিহ্নিত করা সম্ভব নাও হয়, হ্যাকিংসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের তো চিহ্নিত করা সম্ভব। তাদের কম্পিউটার, ই-মেইল, ওয়েবসাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করলেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করা সম্ভব।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ট্রাইব্যুনালে শুরু থেকেই বিপক্ষ শক্তি কাজ করে চলেছে কিন্তু কেন যেন আমরা সেগুলোকে বার বার উপেক্ষা করে এসেছি। যাদের এখানে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি চেক করা হয়েছে, হয়নি। নিয়োগের পরও সেটা করা হয়নি। তারা যদি এতটা সুযোগ পায় তাহলে তারা যে কাজ করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। তাদের বিষয়ে কোন পলিসিই গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের সবাই শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু এখানে তথ্যের নিরাপত্তাটাই সবচেয়ে বড়। কিন্তু সে বিষয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই। এর ফলে শুধু ট্রাইব্যুনাল নয়, পুরো বাংলাদেশ ইমেজ ক্রাইসিসে পড়েছে। প্রসিকিউশনের একটি কম্পিউটারেও এ্যান্টিভাইরাস দেয়া হয়নি, এখানে বিচারপতিদের রায় লিখতে হয়, কিন্তু কি উপযুক্ত লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়নি, আমরা দিতে পারিনি।

আর এভাবে কি এই বিচার হতে পারে, নাকি হয়?

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.