আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

==কতটুকুই বা জানি ফটোকপি মেশিনের!==

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আমরা সবাই আধুনিক বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক সব আবিষ্কার সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জানি।
কিন্তু প্রতিনিয়ত যে জিনিসটি আমাদের হাজারো কাজে লাগছে, অনেক কঠিন কঠিন কাজ সহজ করে দিয়েছে সেই মেশিনটি সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানিনা।
বুঝতে পারছেন আমি কোন মেশিনের কথা বলছি?

ফটোকপি মেশিন প্রধানত দুই ধরনের। এতদিন আমরা যে অতি পরিচিত পুরনো মডেলের মেশিনগুলো দেখে এসেছি সেগুলো এবং বর্তমান আধুনিক যুগে যেগুলো আসছে অর্থাৎ ডিজিটাল মেশিন। চলুন ফটোকপি মেশিনের কয়েকটি অংশ দেখা যাক।

প্রথমত : স্ক্যানার অংশ দ্বিতীয়ত : প্রিন্টার অংশ তৃতীয়ত : কন্ট্রোল প্যানেল
স্ক্যানার অংশে উজ্জল আলো ব্যবহার করে আপনার ডকুমেন্টটিকে গ্রহন করা হয়। নিম্নে কয়েকটি দেখানো হলো। শুধুমাত্র ডকুমেন্ট স্ক্যান করে মাদারবোর্ডে প্রেরন করেই এটার কাজ শেষ। বর্তমান ডিজিটাল মেশিনগুলো দিয়ে অতিরিক্ত একটি কাজ করা যায় সেটা হলো আপনি সাধারন স্ক্যানারের মতোই ফটোকপি মেশিন দিয়ে কম্পিউটারে স্ক্যান করতে পারবেন।
এবার প্রিন্টার অংশ।

এটার কয়েকটি ভাগ আছে। ট্রে বা ক্যাসেট : পুরাতন অধিকাংশ মেশিনে এবং বর্তমানে সবগুলো মেশিনে এক বা একাধিক ড্রয়ার দেয়া আছে যেটাতে আপনি কাগজ রাখতে পারবেন এবং মেশিনে সেগুলো পরিমান মতো ব্যবহার করবে। আর বাইপাস ক্যাসেট বাইরে যে ট্রেতে কাগজ দেয়া হয়।
ড্রাম : প্রিন্টারের কার্টিজ অনেকেই দেখেছেন। ড্রাম এর কাজ সে ধরনেরই ।

কাগজে প্রিন্ট করার বা কালি লাগানোর কাজ করে এটা। বিস্তারিত পরে লিখছি।
হিট ইউনিট : এই অংশের কাজ হচ্ছে কাগজে যে প্রিন্টগুলো হয়েছে সেটাকে প্রচন্ড তাপ দিয়ে স্থায়ী করা।
আউটপুট : এখানে আপনি ফটোকপি সম্পন্ন করার পর আউটপুট পাবেন।
কিভাবে ফটোকপি করে : ব্যাপারটি হাতে কলমে দেখানোর চেষ্টা করা যাক।



প্রথমে আমি নির্দিষ্ট সুইচটি টিপে মেশিন অন করলাম। ফটোকপি মেশিন চালু হতে ১৫-৩০ সেকেন্ড বা তারোও কমবেশি সময় নেয়। পুরোপুরি চালু হবার পর আপনি যে ডকুমেন্টটি কপি করতে চান তা স্ক্যানার অংশে স্থাপন করুন। এবার কত কপি করতে চান তা দেখিয়ে দিন এইভাবে। মেশিনে ড্রয়ার থেকে না বাইপাস ট্রে থেকে কাগজ টানবে তা দেখিয়ে দিন।

ইচ্ছা করলে জুমইন/আউট করে ডকুমেন্টকে ছোট/বড় সাইজ করতে পারবেন। যদি আপনার ডকুমেন্টের উজ্জলতা কম থাকে বা ঝাপসা থাকে তাহলে এইভাবে কালি কমবেশি করে নিন।
এবার সবশেষে স্টার্ট বাটন চাপ দিন।
এবার দেখবেন মেশিন আপনার নির্দেশ মতো ডকুমেন্টটির একটি কপি তৈরি করেছে।
ফটোকপি মেশিন কিভাবে কাজ করে : ফটোকপি মেশিন যে পদ্ধতিতে কাজ করে সেটাকে বলা হয় পোলারয়েড পদ্ধতি।

আমি নেট ঘাঁটাঘাটি করে আপনাদের জন্য কিছু ছবি আপলোড দিলাম। যারা বোঝার তারা এথেকেই যথেষ্ট বুঝতে পারবেন। আর যারা বুঝতে পারবেন না তাদের এবিষয়ে টেনশন না করাই উত্তম।










ডকুমেন্টকে স্ক্যান করার জন্য আমি দুই ধরনের লেন্স দেখেছি। কিছু মেশিনে লেন্স স্থির আছে আর এমনভাবে গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে যাতে ল্যাম্প যেখানেই মুভ করুক তা লেন্সের আওতার বাইরে যাবেনা।


আর অন্যগুলোতে সাধারন স্ক্যানারের মতোই সিষ্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। জানিয়ে রাখা ভালো আগের মেশিনগুলোতে স্ক্যান করতে হাই ভোল্টেজ লাইট ব্যবহার করা হতো এবং এগুলোর বিদ্যুৎ খরচ বেশি ছিল। বর্তমানে ডিজিটাল মেশিন গুলোয় সাধারন স্ক্যানারের মতোই লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। আগের মেশিনগুলোতে একাধিক কপি করার সময় বারবার স্ক্যান করে অর্থাৎ আপনি যদি একটি ডকুমেন্ট ২০কপি করতে চান তবে ২০বারই স্ক্যান করবে। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল মেশিনগুলো আপনি যত কপিই করেন না কেন, মাত্র একবার স্ক্যান করবে।


স্ক্যান করা শেষ এবার প্রিন্ট করার পালা। নিচের ছবিটি দেখুন এটাকে বলা হয় ডেভেলপার ইউনিট।

কালির মতো একধরনের অতি সুক্ষ্ণ চৌম্বকীয় গুড়ো ব্যবহার করা হয় এখানে। এগুলো হচ্ছে টোনার বা কালির ডিপো। এখান থেকে টোনার/কালি যায় ডেভেলপার ইউনিট এর ভিতরে ।

সেখান থেকে একটি ম্যাগনেটে কালিগুলো গ্রহন করে এবং সেখান থেকে ড্রামের উপরে কালি লাগে।
এবার এই অংশটি খেয়াল করুন। অতি চিকন যে তারগুলো দেখতে পাচ্ছেন এটাকে চার্জার বলা হয়। ধনাত্নক এবং ঋনাত্নক চার্জ ব্যবহার করে ড্রামে লেগে থাকা টোনার/ কালিগুলোকে হুবহু আপনার ডকুমেন্ট এর মতো করে রিসাইজ করে এটা। এরপর সাথে সাথেই কাগজ এসে হাজির।

ড্রামের গা ঘেষে মুভ করার সময় স্বাভাবিকভাবেই কাগজে ছাপ তৈরি হয়। এবার হিট ইউনিট কাগজ প্রবেশ করে। এখানে দুইটি রোলার আছে। একটিকে বলা হয় হিট রোলার (Upper Fuser Roller) এবং অপরটি প্রেসার রোলার (presser roller) ।
কাগজের যে সাইডে প্রিন্ট হয় সেদিকটায় থাকে হিট রোলার।

এটাতে এক ধরনের আবরন থাকে যা কাগজের কালিগুলোকে মুছে নেয় না। বরং এর ভিতরে ইলেকট্রিক হিটার থাকে যা প্রচন্ড তাপ সৃষ্টি করে এবং কাগজের গায়ে লেগে থাকা কালিগুলোকে স্থায়ীভাবে কাগজের সাথে আটকে দেয়। অপরদিকে বিপরীত দিকে থাকা প্রেসার রোলারের কাজ কাগজটিকে হিট রোলারের সাথে চেপে রাখা। এর পরেই আউটপুট অর্থাৎ সব কাজ শেষে কাগজটি বেরিয়ে আসে।
প্রথমত পেপার জ্যাম ।

যে কোন কারনেই দেখা গেল মেশিনে জলজ্যান্ত একটি পাতা প্রবেশ করলো অথচ বেরিয়ে আসার নামগন্ধ নাই। মেশিন চুপচাপ। সেই সাথে দেখবেন কন্ট্রোল বোর্ডে এক ধরনের সিগন্যাল দিচ্ছে। বুঝবেন কাগজটি যে কোন একটি পর্যায়ে মেশিনে আটকে গেছে। প্রথমে সাইড কভার খুলুন।

একেকটা মেশিনে এটা একেক রকম। আমার হাতের কাছে যেটা আছে আমি ধারনা দেয়ার চেষ্টা করছি।

এখানে জেনে রাখুন পাতা যদি হিট ইউনিট বা হিট রোলার টাচ না করে তবে আপনি কালিগুলো অনয়াসেই মুছে ফেলে আবার ব্যবহার করতে পারবেন। আর কোনভাবে হিট রোলার ছুয়ে ফেললে আপনার দাদারও সাধ্য নাই সেটা মুছার। তো জ্যামকৃত কাগজটি বের করে আরেকটি ফ্রেশ পাতা দিন দেখবেন কপি হয়ে যাবে।

মেশিনে সাধারনত নরমাল পেপার ব্যবহার করলে বা ভাজ হয়ে থাকা কাগজ দিলে বেশি পেপার জ্যাম হয়। এজন্য সাধ্যমতো ভালো পেপার ব্যবহার করাই ভালো। অনেক সময় একটু খরচ বাঁচাতে গিয়ে পেপার জ্যাম হয়ে মেশিনের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে যা আপনার অর্থ ও মুল্যবান সময় উভয়ই নষ্ট করবে।
কালি বা টোনার : প্রিন্ট করলে কালি লাগবেই। ফটোকপি মেশিন প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলোর পরামর্শ টোনার শেষ হবার পর আবার নতুন টোনার কেনা।

অনেকটা প্রিন্টারের কালি শেষ হবার পর নতুন কার্টিজ কেনার মতো। তবে এটাতে কপি বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। আমি নিজে মেশিনের সাথে পাওয়া টোনারটিই রিফিল করে ব্যবহার করছি। ৫০০গ্রাম কালির একটি প্যাকেটের দাম ৫৫০-৬০০টাকা। একটি প্যাকেটের কালি দিয়ে আপনি প্রায় ১০-১২ হাজার পাতা কপি করতে পারবেন।

আর অপরদিকে একটি টোনারের মুল্য সাধারনত ২৫০০টাকার আশেপাশে যা দিয়ে ম্যাক্সিমাম ৮-১০হাজার পাতা প্রিন্ট হবে। এদিক দিয়ে রিফিল করাই লাভজনক।
ডেভেলপার : ডেভেলপার এর কাজ হচ্ছে কালিকে চৌম্বকিয় সিষ্টেমে ম্যাগনেটে লাগানো যাতে সেটা পরিমানমতো ড্রাম বরাবর পৌছে। সাধারনত লাখদেড়েক কপি করার পর ডেভেলপার আস্তে আস্তে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন আপনার প্রিন্ট কোয়ালিটি ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকবে।

এটা হলে আপনাকে ডেভেলপার পাল্টাতে হবে। বাজারে এর একটি প্যাকেটের/বোতলের দাম আড়াই-তিন হাজার টাকার আশেপাশে।
আয় : এটা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছিনা। তারপরেও বলি। আমরা কাগজের যে প্যাকেটগুলো কিনি ডিমাই সাইজের ৫০০ শিটের একেকটা প্যাকেট ১৮৫টাকা।

আর লিগ্যাল সাইজের গুলো ২২৫টাকা। সেই হিসাবে গড়ে একটি পাতার ক্রয়মুল্য ৪০পয়সা। কালি খরচ আমার হিসাবে ৬থেকে দশ পয়সা। সেই সাথে বিদ্যুৎ খরচ। একটি পাতা ফটোকপি করতে আমাদের ৬০পয়সার উপরে খরচ হয়না।

এখন আপনার এলাকার রেট অনুযায়ী লাভের অংক বের করুন।
নেগেটিভ সাইড : অনেকে আমাদের লাভ দেখে ইতিমধ্যেই টেনশানে পড়ে গেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি ফটোকপি ব্যবসারও উল্টোপিঠ আছে। একবার যদি আপনার মুল্যবান মেশিনটির কোন সমস্যা দেখা দেয় এবং ইঞ্জিনিয়ার ডাকা লাগে আপনার পুরো মাসের ইনকাম শেষ!! বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারনে যেমন লো ভোল্টেজ, ভুল কমান্ড, অসতর্কতার সাথে খোলখুলি ইত্যাদি কারনে মেশিনের বিভিন্ন সমস্যা আপনার মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়াবে। তবে সব মিলিয়ে আপনি যদি ভালোভাবে অপারেট করতে পারেন তবে এটা আপনার আয়ের একটা ভালো উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমি যত কোম্পানীর মেশির ব্যবহার করেছি তার মধ্যে তোশিবাই আমার কাছে বেটার মনে হয়েছে।

কারন এই মেশিনগুলোর অপারেটিংবেশ সহজ এবং একটু ধারনা থাকলেই আপনি এটা ট্রাবলশুটিং করতে পারবেন। তাই বলে মনে করবেন না আমি কারোও পক্ষ নিয়ে কথা বলছি। ইদানিং Ricoh, Canon ইত্যাদি ব্রান্ডগুলোও বেশ ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। তবে কেনার আগে আপনাকে এলাকার অভিজ্ঞ কারোও সহায়তা নেয়া প্রয়োজন।
কোথায় কিনবেন : ফটোকপি মেশিন কেনার জন্য ঢাকার মতিঝিলে অনেকগুলো দোকান রয়েছে তারা ওয়ারেন্টি সহ বা বাদে নতুন /পুরাতন/ রিকন্ডিশন্ড মেশিন বিক্রয় করে।

অভিজ্ঞ কাউকে সাথে করে ফটোকপি মেশিন কিনতে হবে। মুল্য নতুন ৭০হাজার টাকা থেকে শুরু যত উপরে যেতে পারেন। আর সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরাতনগুলোর দামের কোন লিমিট নাই। ১০০০০টাকাতেও ‘নুহুনবী’র আমলের কোন মেশিন আপনি পেয়ে যেতে পারেন।
সবাইকে ধন্যবাদ মুল্যবান সময় অপচয় করে আমার টিউনটি পড়ার জন্য।

আশা করছি আমার চাইতে অভিজ্ঞ অনেকেই আছেন যারা আরোও সুন্দর করে টেকনিক্যাল দিকগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে টিউন করবেন যাতে আমরা আরোও কিছু জানতে পারে।
আমার এই টিউন দেখে অনেকে আমাকে একেবারে বিশেষজ্ঞ ভেবে বসলে ভুল করবেন। আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে ফটোকপি মেশিন ব্যাবহার করি। ফটোকপি মেশিন চালাতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছি এবং কিছুটা নিজের টেকনিক্যাল মস্তিস্ক ব্যবহার করে বা নেট ঘাটাঘাটি করে সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এর আগে আমি সর্বপ্রথম মোবাইল সার্ভিসিং বিষয়ে বাংলায় টিউন করেছিলাম।

আমার জানামতে বাংলা ভাষার ইতিহাসে সেগুলোই সর্বপ্রথম মোবাইল সার্ভিসিং ব্লগ। এখন প্রায় দেখতে পাই অনেকেই মোবাইল নিয়ে লিখছেন। এবার ফটোকপি বিষয়ে লিখলাম। আশা করছি যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তারা এখন থেকে ফটোকপি মেশিন নিয়ে লিখা শুরু করবেন এবং আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।



 (এটাও নেট থেকে পাওয়া)

সোর্স: http://www.techtunes.com.bd/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.