আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই দলের সাড়া নেই, তবু হাল ছাড়েননি বিদেশিরা

রাজনৈতিক সংকট কাটাতে বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের প্রধান দুই দলকে সংলাপে উৎসাহিত করে আসছে জাতিসংঘ, উন্নয়ন-সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো। তবে এ উদ্যোগে কোনো সাড়া নেই প্রধান দুই দলের।

এ অবস্থায় রাজনীতিতে আরও সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করছে উন্নয়ন-সহযোগীরা। তবে দুই দলকে সংলাপে বসানোর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ও ঢাকায় কর্মরত একাধিক পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই নেত্রীকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোন এবং নিউইয়র্কে বান কি মুনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

মুনের ফোনের পর সংলাপে বসার অনুরোধ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুই নেত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। অথচ সব দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন-সহযোগী বন্ধুদেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে।

জানতে চাইলে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ যে গভীর সংকটের দিকে এগোচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পশ্চিমা দেশসহ উন্নয়ন-সহযোগীরা সংলাপের ব্যাপারে উৎসাহ জোগালেও এতে কান দিচ্ছে না সরকার। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দিতে আগ্রহী নন। তার পরও চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশের বন্ধুদেশগুলো।

এদিকে আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ না নিলে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ঢাকার সাবেক একাধিক কূটনীতিক। পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে নিজেদের আলোচনার ভিত্তিতে সাবেক বাংলাদেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকেরা এমন অভিমত দিয়েছেন।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই দলকে সংলাপে উৎসাহ জোগালেও ২০০৬-০৭ সালের অভিজ্ঞতা মাথায় রাখছেন জাতিসংঘ ও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা। কারণ, ওই সময়কার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপের গুরুতর ‘অভিযোগ’ ছিল। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থানে থেকেই প্রধান দুই দলকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এর চেয়ে বেশি কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা তাঁরা দেখছেন না।

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান দুই দলের বিরোধ না মিটলে গভীর সংকট তৈরি হবে বলে মনে করছেন একাধিক বিদেশি রাষ্ট্রদূত।

এমন পরিস্থিতিতে এবার জাতিসংঘ সদর দপ্তর বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর গভীর মনোযোগ রাখবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশে একটি অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সব দলের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ব সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য বলে জাতিসংঘ মনে করে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে জাতিসংঘ এসব ব্যাপারে তাদের মনোভাব জানতে চেয়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের সত্যানুসন্ধানী মিশন বাংলাদেশ ঘুরে গেছে।

এসব মিশনে প্রতিনিধিত্বকারীরা রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতির খোঁজখবর নিয়েছেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। এ সফরে সেনাপ্রধানসহ দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল ইইউ প্রতিনিধিদলটি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না দেওয়ায় প্রতিনিধিদলটি এসব বৈঠক করতে পারেনি। ফলে কিছুটা হতাশ ও মনঃক্ষুণ্ন হয়েই সফর কাটছাঁট করে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে গেছে।

পাশ্চাত্যের বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানী মিশনে আসা প্রতিনিধিরা মনে করেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ জরুরি। সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ ছাড়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে পর্যবেক্ষক পাঠানো ঠিক হবে কি না, সেটি নিয়েও তাঁরা ভাবছেন।

ওয়াশিংটনের একটি কূটনীতিক সূত্রের মতে, চলমান সংকটের সুরাহা না হলে ১৯৯৬ বা ২০০৬-০৭ সালের চেয়েও ভয়াবহ কিছু ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকার কূটনীতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।