আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পের বাকিটুকু এমনও হতে পারে

বিশ্বাস চিরঞ্জীব । মুক্তমন । :█▓▓▓▒▒▒░░░░

দীর্ঘ দশ বছর পর। ইভানা এখন অনেকটাই ভুলে গেছে রাসেলকে। যে তার জীবন থেকে সরে গিয়েছিল।

রাসেল অষ্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর টাউন্স ভিলে'র এলিজা নাম্নী একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। দেখতে ব্ল্যাক স্কিনের হলেও মেয়েটা দেখতে নাকি খুব চমৎকার। বিষয়টা জানার পর বেশ মর্মাহত ও মনক্ষুন্ন হলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নেয় ইভানা। রাসেলের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে না। থাকনা।

রাসেল যদি নিজের জীবনকে আপন করে সাজিয়ে নিতে চায়, সুখী হতে চায়, তাহলে ওর বাধা দেবার কী-ই-বা আছে। রাসেল থাকুক তার নিজের মতো করেই। নিজের ভুবনে। এতো-দিনে সে রাসেলকে প্রায় অপিরিচিতের অবস্থানেই রাখতে শুরু করেছে। যেন আদৌ তাদের দেখা হয়নি! তাছাড়া এখন সে নিজের ক্যারিয়ার গোছাতে ভীষণ ব্যস্ত আছে।

আপাতত একটা থিয়েটার পার্টিতে যোগ দিয়েছে সে। ওই সব রাসেল টাসেলের খাওয়া নেই তার কাছে। আপাতত বিয়ে-শাদির ব্যাপারেও তার কোনও মত নেই। পরিবারকে না করে দিয়েছে। যদিও কিছুটা বুড়িয়ে যাচ্ছে।

তাতে তার মাথা ব্যথা নেই। রাসেলকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে তার আগে থেকেই ছিলনা। কিন্তু সেই রাসেলই যখন তাকে আঘাত দিল। রাসেলকেও সে ক্ষমা করতে পারছে না। মাঝে মাঝে রাসেল তার ফেবু-তে মেসেজ পাঠায়।

ই-কার্ড গিফট দেয়। কিন্তু সেগুলো ইভানা ওপেন করে দেখারও দরকার মনে করে না। মেসেজ গুলো না পড়েই মুছে ফেলে। তবুও কেনো জানি রাসেলকে ব্লক করার কথা তার মাথায় ঢুকে না। কিছুদিন যাবৎ ইভানা লক্ষ্য করছে, তার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই সে রাসেলের মেসেজগুলো এখন দেখে।

পড়ে। কয়েকদিন রেখে তার পর ডিলিট করে। এমন তো ছিল না ও। তবে কি সে রাসেলকে এখনও ভুলতে পারেনি? এটা ভেবে ও নিজের উপরেই ক্ষিপ্ত হয়। নাহ. ও রাসেলকে ক্ষমা করতে পারবে না কখনও।

ভালোবাসবে না আর তাকে। সে তো অনেক আগেই মরে গেছে। দিন দিন ইভানা অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। প্রায় এক যুগ পূর্বে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া সেই পুরানো ডায়েরিটা আবারও সে স্বপ্নে দেখে। স্বপ্ন নয়।

বলা যায় দুঃস্বপ্ন। ডায়েরির হলদে রঙ ধারণ করা লেখার পোষাক বিহীন অভুক্ত পাতাগুলোর দিকে তাকালে তার ভয় লাগে। আতঙ্কিত চোখ দুটো নিয়ে ঘুম ভেঙ্গে লাফিয়ে ওঠে প্রায়ই। তার মনে পড়ে ডায়েরিটা তাকে রাসেল-ই দিয়েছিল। কোনও এক বোশেখি মেলার বিকেলে।

অথবা কোনও ভালোবাসা দিবসের সন্ধ্যায়। ক্রমশঃ সে নিদ্রাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। যা তার প্রাত্যহিক জীবনে অনেকটাই প্রভাব ফেলে। তার চোখ দুটোর নিচে কালি জমে যায়। দিনদি তার মেজাজ খিটমিটে হতে থাকে।

কারও সাথেই তেমন একটা ভালো ব্যবহার করে না। মানসিক অবসাদ তাকে ঘিরে ধরে। প্রতি রাতেই ডায়েরির পাতাগুলো তাকে নিদ্রায় হানা দেয়। প্রবল মেন্টাল প্রেসারে সে কিছুটা অপ্রকৃতিস্থের মতো আচরণ করে। আশপাশের অতি চেনা জানা মানুষগুলোকেও তার সহ্য হয় না অনেক সময়ে।

অনেকের হালকা রস বাক্যেও সে এখন মন্দ খুঁড়ে পায়। তাকে কেউ ভালো পরামর্শ দিলে সে ক্ষেপে যায়। অল্পতেই অনেক রেগে যায়। পাশাপাশি ইদানিং তার স্বভাবেও পরিবর্তন এসেছে। কোনও সহকর্মী বা জুনিয়র কেউ যখন সুন্দর পারফর্মেন্স করে পঞ্চমুখী প্রশংসায় মুগ্ধ, তখন ইভানা তীব্র হিংসার বশে বাহ্বাপ্রাপ্ত ওই ছেলে/মেয়েটিকে গালাগাল দিতে থাকে।

এই সব অস্বাভাবিক আচরণে বিরক্ত ও চিন্তিত হয়ে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে যখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নেয়ার কথা তোলে, তখন সে তাদের মন্দ কথা শুনিয়ে দিতেও দ্বিধা করে না। ইভানা ভেবেছিল- এই ডায়েরিতে কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে। যা অপার্থিব। তাই সে ওটা স্বপ্নে দেখে। মূলতঃ তার ধারণা ছিল ভুল।

সে সারাদিন রাসেলের কথা ভাবতো, ডায়েরির কথা ভাবতো। তাই তার সঙ্গে এমন হতো। ঘুমের মাঝেও ডায়েরি দেখতে পেতো। কিন্তু তখন ভয় পেতো সে। হাহাহা.. ২০০৯ সালের একুশে বই মেলায়।

কাকতালীয়ভাবে তারিখটা ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি। রাসেল দেশে এসেছে গত কয়েকদিন হলো। ইভানা কে জানানো হয়নি। ভাবছিল সারপ্রাইজ দেবে তাকে। রাসেল কয়েকটা বই কিনে সান্ধ্য নাটক প্রদর্শনীর গ্যালারির দিকে এগিয়ে গেল।

আজকের নাটক "মেঘ বালিকা" প্রদর্শিত হচ্ছে। মঞ্চে খুব পরিচিত একটি মুখ দেখে তার মনে একটা ঢেউ খেলে গেল। ইভানার মুখোমুখি হবার এটা একটা সুযোগ বলা যেতে পারে। আজই সে ইভানার সাথে দেখা করবে। প্রদর্শনীর প্রতি তার কোনও খেয়াল নেই।

সে সময় গুণছে। কখন নাট্যসভা শেষ হবে। মনে মনে প্ল্যানগুলো বার বার রিহার্সেল করে নিচ্ছে। কীভাবে ইভানার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে সে। কেমন করে কথা শুরু করবে।

তার অপেক্ষার সাথে সাথে সময়ও যেনো গড়িয়ে চলছে। সময়ের দূরত্ব ধীরে ধীরে কমছে। কিছুক্ষণ পরেই নাকট শেষ হবে... ∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟∟ এরপর কী হতে পারে.. পাঠক নিজের মতো করে ভেবে নিতে পারবেন.. যার যার মতো করে.. নিজের পছন্দসই একটা দৃশ্য.. তা হতে পারে মহা মিলন.. হতে পারে চির বিদায়.. অথবা অন্য কিছু.... উপরের গল্পের সাথে কারও বাস্তব জীবনের সাথে আশা করি মিলবে না। তবে ইভানা ও রাসেল জুটির সাথে অল্প কিছুদিন আগেই আমার পরিচয় হয়েছে। স্টোরিটা পুরোপুরি-ই ভিন্ন ধাঁচের।

শেয়ার করতে চাইনা। অনুমতি নেই। শুধু এতটুকু বলি- বয়ফ্রেন্ড এস আই রাসেলের অকথ্য অত্যাচার আর নির্যাতন সইতে না পেরে ইভানা (এই গল্পের নয়, জলজ্যান্ত বাস্তবের ইভানা) এখন প্রতিবাদি ও কার্যকরি পদক্ষেপ নেবার দ্বারপ্রান্তে.. তার জন্য আমাদের শুভ কামনা করা উচিত.. লেখাটি যাকে উৎসর্গ করতে যাচ্ছি তার সাথে আমার গত একদিন ধরে কথা হচ্ছে না এই লেখাটির উৎস পোস্টঃ সাইটে প্রকাশঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।