আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পূজার বাদ্য

ঢাক-গুড়গুড়, ঢাক-গুড়গুড—শারদীয় দুর্গা পূজার বাদ্য বাজে। পূজা মানে অনেক রঙের ছড়াছড়ি। সেই রঙের বর্ণিলতা উৎসবের রঙে কেমন ঝলমলে হয়ে ওঠে—শোনা যাক দুই তারকার মুখে

পূজা আসে ছেলেবেলার পূজা ফিরে আসে না

বাপ্পা মজুমদার
দুর্গাপূজাটা আসলে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসব, যা সবাই মিলে উপভোগ করতে হয়। এমনটাই হয়ে এসেছে আমাদের সময় থেকে, এমনটাই আসলে হওয়া উচিত। পূজা তো সব সময়ই মজার, উপভোগের—কি ছেলেবেলা, কি বড়বেলা।

আমরা যত বড় হই, শৈশব স্মৃতি ততটাই প্রকট হয়ে ধরা দেয় মনে।

মনে পড়ছে সেই ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত সংগীতসাধক বাবার (বারীন মজুমদার) মুখ, আর লালপেড়ে সাদা শাড়িতে মায়ের (ইলা মজুমদার) মমতামাখা হাসি। যদিও বাড়িতে ঠিক সেভাবে বড় করে পূজার আয়োজন হতে আমি দেখিনি, তবু বাড়িতে তখন একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করত। মায়ের হাতের নাড়ু আর লুচি-তরকারি-মুগের ডাল ছিল এককথায় অসাধারণ। সেই নাড়ু আর লুচির লোভে আমার বন্ধুরা সব আমাদের বাড়িতে আসত।

মা পরম মমতায় সবাইকে কাছে বসিয়ে আদর-আপ্যায়ন করতেন, নিজ হাতে বেড়ে খাওয়াতেন। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে পূজা দেখতে বের হতাম।

একটু যখন বড় হলাম, তখন বন্ধুরা সব দল বেঁধে পায়ে হেঁটে মালিবাগ থেকে রমনা কালীমন্দির, জগন্নাথ হল, ঢাকেশ্বরী মন্দির, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে চলে যেতাম। ভিড় ঠেলে ঘেমে-নেয়ে উঠেও বন্ধুরা মিলে পূজা দেখার অন্য রকম এক মজা ছিল তখন। মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজত।

আহ্, সেই ধূপের গন্ধ আজও যেন নাকে লেগে আছে! এভাবে সারা রাত হেঁটে হেঁটে পূজা দেখা শেষে, শেষ রাতের ঘুমন্ত ঢাকার সোডিয়াম বাতিকে সাথি করে আবার সেই আগের মতোই পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরতাম। কণ্ঠে থাকত গান। তবে এই যে এতটা হাঁটতাম, সত্যি বলতে কি, একটুও ক্লান্তিবোধ হতো না, বরং খুব আনন্দই লাগত। আপনি যখন কোনো কিছু মন থেকে ভালোবেসে মজা নিয়ে করেন, তখন সে কাজ যতই কষ্টের হোক না কেন, আপনি ক্লান্ত হবেন না—এটা আমার বিশ্বাস।

পূজার এক মাস আগে থেকেই দিন গুনতে শুরু করতাম, আর পূজার দিনগুলোতে কী কী করব তা নিয়ে ভাবতাম।

কোন পোশাক পরব, কোন কোন জায়গায় ঘুরতে যাব—এগুলো আগেই ঠিক করা থাকত। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত মায়ের হাতের সেই নাড়ু।

এখন তো মা নেই। পূজাটাও এখন অনেক বেশি ম্লান হয়ে গেছে আমার কাছে। সত্যি বলতে কি, সেই আনন্দটাও এখন আর লাগে না।

মায়ের সঙ্গে সঙ্গে সব আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, রেখে গেছে শুধু স্মৃতি।

আজও বছর ঘুরে পূজা আসে। কিন্তু, সেই ছেলেবেলার পূজা ফিরে আসে না, আসবার নয়। বড় বেশি মিস করি সেই সব পূজার দিন।

সবাইকে জানাই শারদীয় দুর্গোৎসব আর ঈদের শুভেচ্ছা।

 

পূজায় নতুন শাড়ি পরি

বিদ্যা সিনহা মীম
ঢাকের বাদ্যে আর উলুধ্বনির সুরে দুর্গাপূজার সময়টা যখন আসে, আমার তখন ইচ্ছে হয় ফিরে যাই সেই চিরচেনা রাজশাহীর পদ্মা নদীর পারে, যেখানে আজও প্রতিমা নিয়ে নৌকাবাইচ হয়, ঠিক আমার শৈশবের মতো। সেই দিনগুলো খুব মিস করি। কত্ত মজা হতো তখন! স্মৃতি হাতড়ালেই মনে পড়ে একটার পর একটা ঘটনা। তখনকার আমি ছিলাম সাধারণ আমি। স্বাধীন ছিলাম, ইচ্ছেমতো পূজায় আনন্দ করতে পারতাম।

কিন্তু সেলিব্রিটি হওয়ার পর মজাটা হয়ে গেল অন্য রকম। আমার মামাবাড়ি আর নানাবাড়ি দুটোই রাজশাহীতে। মাত্র পনেরো-বিশ মিনিট হাঁটলেই প্রমত্তা পদ্মার দেখা মেলে। সেই নদীতে বিজয়া দশমীতে নৌকাবাইচ হতো, এখনো হয়। বিশাল বিশাল নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে প্রতিটি এলাকার আলাদা নৌকা নদীটাকে সাতবার করে চক্কর দিত! তাতে দুর্গা প্রতিমার সঙ্গী হতাম আমরা।

প্রতি নৌকায় থাকত চার থেকে পাঁচটি পরিবার। অবিরাম বাজত ঢাকের বাদ্য।

তো একবার হয়েছে কি, পূজায় নৌকাবাইচ হচ্ছে, আমরা একটি বিশাল নৌকায় করে তখন মাঝনদীতে। সেলিব্রিটি হওয়ার পরের ঘটনা এটি। আমাকে দেখতে আমাদের নৌকার আশপাশে অনেকগুলো নৌকায় মানুষের ঢল।

একপর্যায়ে হঠাৎ পাশ থেকে একটি বড় নৌকা এসে আমাদের নৌকাটিকে সজোরে ধাক্কা দিল। ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার মামাতো ভাইটা গলায় বেশ আঘাত পায় সেদিন। সে-যাত্রায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাই। কেননা আমি যে সাঁতার জানি না! তবু বছরে অন্তত এই একটা সময় আমি পদ্মায় না গিয়ে পারতাম না। কারণ, নৌকাবাইচের মজাটা আমি কখনোই মিস করতে চাইতাম না।

কিন্তু বাস্তবতা দেখুন, সেই ঘটনার পর থেকে গত দুই বছর আর ওমুখো হইনি। আসলে হতে দেয়নি পরিবারের কেউ।

আবার আমরা যখন কুমিল্লায় ছিলাম, তখন একটা পুকুরের ঠিক মাঝখানে মণ্ডপ তৈরি করে পূজা হতো। পুকুরের চারপাশ ঘিরে ছিল বাড়িঘর। সে সময় পূজার সাতটা দিনকে আসলেই পূজা বলে মনে হতো।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি সারাক্ষণ পূজা দেখতাম, মণ্ডপে আসা মানুষদের দেখতাম, ঢাকের বাজনা শুনতাম। অনেক মজা হতো, অনেক।

পূজায় নতুন শাড়ি পরা আমার খুব পছন্দের। প্রতিবছর একটা দিন আমি উপোস থেকে একদম মন থেকে শাড়ি পরি—সেটি হলো অষ্টমী বা নবমীর দিন।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।