আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা প্রথমপত্রে ভালো ফলাফলের পরামর্শ

প্রথমেই তোমাদের জন্য আন্তরিক আশীর্বাদ। তোমাদের জেএসসি পরীক্ষা আগামী ৪ নভেম্বর শুরু হচ্ছে। প্রথম দিনই বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা। তাই তোমাদের জন্য এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ তুলে ধরছি।

বেশি টেনশন না করে সিলেবাস অনুযায়ী বোর্ড বইয়ের অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়বে।

লেখক পরিচিতি থেকে শুরু করে অধ্যায়ের ভেতরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বাক্য রয়েছে, সেগুলোর অর্থসহ ব্যাখ্যা জানতে হবে এবং প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে যে সব শব্দার্থ, টীকা ও পাঠ পরিচিতি রয়েছে সেগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। কেননা জ্ঞানস্তর ও অনুধাবন স্তরের প্রশ্নগুলো সরাসরি বই থেকে আসবে। আর প্রয়োগ স্তর ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নগুলো উদ্দীপক ও বইয়ের অধ্যায় মিলে হবে। তাই এ ক্ষেত্রে ভালো করে প্রস্তুতি নিতে চাইলে বইয়ের একটি অধ্যায় পড়ার পর ওই অধ্যায়ের কয়টি দিক রয়েছে, যে সব চরিত্র রয়েছে সেগুলোর কার কি ভূমিকা তা ভালোভাবে বুঝে না দেখে লেখার চর্চা করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে 'বাঙালির বাংলা' প্রবন্ধ তুলে ধরছি।

এ অধ্যায়ে বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন ভালো দিকের মধ্যে রয়েছে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, দিব্যশক্তির দান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্বদেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, অতিথিপরায়ণতা, কর্মঠ, সাহসিকতা (ক্ষাত্রশক্তি); আর মন্দ দিকের মধ্যে রয়েছে বাঙালির অলসতা, কর্মবিমুখতা, দাসত্ব মনোভাব, ব্রিটিশদের শাসন-শোষণ ইত্যাদি।

বইয়ের একটি অধ্যায়ের সঙ্গে অন্য আর একটি অধ্যায়ের মূলভাব মিলে গেলে যৌথভাবে উদ্দীপকসহ প্রশ্ন হতে পারে। তাই তোমাদের এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। তোমাদের সুবিধার জন্য আমি উদাহরণ হিসেবে দুটি অধ্যায়ের নাম তুলে ধরছি_ 'বাঙালির বাংলা' প্রবন্ধের সঙ্গে 'মানব ধর্ম' কবিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিষয়ে মিল রয়েছে।

আবার অন্য ক্লাসের যেমন : ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৯ম শ্রেণীর বাংলা প্রথমপত্রের গদ্য ও কবিতার কোনো এক অংশ থেকেও জেএসসির বাংলা প্রথমপত্রের উদ্দীপক হতে পারে। পাশাপাশি বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ভাবসম্প্রসারণ ও সারমর্মের মূলভাব ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। কেননা এগুলোর সঙ্গে বাংলা প্রথমপত্রের বিভিন্ন অধ্যায়ের ভাবের মিল রয়েছে। এছাড়াও কোনো ছবি, পত্রিকার রিপোর্ট, সমাজের কোনো ঘটনার আঙ্গিকেও উদ্দীপক হতে পারে। উদ্দীপক যেখান থেকেই আসুক না কেন তোমাদের বোর্ড বই খুব ভালোভাবে জানতে হবে।

উদ্দীপকে তোমাদের চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তর যাচাই করার জন্য চারটি প্রশ্ন থাকবে। সেগুলো সঠিকভাবে স্তরভিত্তিক লিখতে পারলে ১০-এর মধ্যে ১০ নম্বরই পাওয়া যাবে। সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার সঠিক নিয়মও তুলে ধরা হলো :

ক. জ্ঞানমূলক : কোনো ঘটনার তথ্য, তত্ত্ব, নীতিমালা, প্রকারভেদ প্রভৃতি মুখস্থ করে লিখতে পারার ক্ষমতাকে বুঝায়। এ স্তরের প্রশ্নে কে, কী, কখন, কোথায়, সংজ্ঞা দাও, উল্লেখ কর প্রভৃতি দ্বারা হয়। উল্লেখ্য, এ স্তরের প্রশ্নটি সম্পূর্ণ পুস্তকনির্ভর এক বাক্যের বা এক শব্দের।

অধ্যায়ের ভেতর থেকে এবং লেখক পরিচিতি থেকে এ স্তরের প্রশ্ন হবে। কোনোক্রমে উদ্দীপক থেকে প্রশ্ন হবে না। পাঠ্যবইয়ের বাইরের কোনো প্রশ্ন এ স্তরে হবে না। আর এ স্তরের মানবণ্টন হবে ১। তোমরা শুধু একটি শব্দ দিয়ে জ্ঞানস্তরের আক্ষরিক অর্থটি উত্তর করতে পারবে; তবে একটি বাক্যে উত্তর লেখাই উত্তম।

খ. অনুধাবনমূলক : কোনো অনুচ্ছেদ, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ে বোঝতে পারা এবং তার মধ্যকার একটি বক্তব্য নিজের ভাষায় অনুবাদ করে সংক্ষেপে বুঝিয়ে লেখার ক্ষমতাকে বুঝায়। এ ধরনের স্তরে কেন, লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন, অর্থ ব্যাখ্যা কর ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন হতে পারে। এ স্তরের প্রশ্নও বই থেকে হবে। তবে যে পাঠ্যবইয়ের আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে, সেই পাঠ্য থেকে প্রশ্ন হবে। প্রশ্নপত্রে এ স্তরের মান ২ লেখা থাকলেও তোমরা দুটি অংশে উত্তর লিখবে।

অর্থাৎ প্রথম অংশে জ্ঞানস্তরের ১ নম্বরের জন্য একটি বাক্যে ভাবার্থে এবং দ্বিতীয় অংশে অনুধাবন স্তরের ১ নম্বরের জন্য বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে দুটি থেকে চারটি বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখবে। এ ক্ষেত্রে কেউ ইচ্ছা করলে অনুধাবন অংশটি আগেও লিখতে পার এবং জ্ঞানস্তরের অংশটি পরে লিখতে পার। তবে জ্ঞানস্তরের কথাটি আগে লেখাই উত্তম।

গ. প্রয়োগমূলক : এটি হলো পাঠ্যবই থেকে ও অনুধাবন নতুন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার দক্ষতা। এ স্তরে সাধারণত প্রয়োগ দেখাও, মিল/সাদৃশ্য, অমিল/বৈসাদৃশ্য কী, চিহ্নিত কর, ব্যাখ্যা কর, কীভাবে ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন করা হয়।

উল্লেখ্য, এ স্তরের প্রশ্ন পাঠ্যবই থেকে হুবহু হবে না। উদ্দীপক ও পাঠ্যবই একত্রে করে প্রশ্ন হবে। এ স্তরের মানবণ্টন ৩ (জ্ঞানস্তর=১, অনুধাবন স্তর=১ ও প্রয়োগস্তর=১)। উত্তরে জ্ঞানস্তরটি লিখবে ভাবানুবাদে, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে এবং প্রয়োগস্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে। এভাবে তিনটি স্তর তিনটি প্যারায় লেখা উত্তম।

কারণ স্তরভিত্তিক প্যারা করে লিখলে খাতা মূল্যায়নের সময় পরীক্ষকদের সুবিধা হয়। তবে কেউ এক প্যারার মধ্যে এ তিনটি স্তরের উত্তর লিখতে পারলেও নম্বর পাবে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক : কোনো বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করার দক্ষতা হলো উচ্চতর দক্ষতা। এ স্তরের প্রশ্নটি উদ্দীপক ও বই মিলে হবে। এ স্তরের মানবণ্টন হচ্ছে ৪ (জ্ঞান স্তর=১, অনুধাবন স্তর=১, প্রয়োগস্তর=১ ও উচ্চতর দক্ষতা=১)।

উত্তরে জ্ঞানস্তরটি লিখবে সিদ্ধান্তের ভাব অনুযায়ী, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে, প্রয়োগস্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ এবং উদ্দীপকের অংশের সমন্বয় সাধন করে জ্ঞান স্তরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা পুনরাবৃত্তি করে। এখানে চারটি প্যারা করলে ভালো হয়। তবে কেউ যদি এক প্যারায় বা দুই প্যারায় বা তিন প্যারায় সব স্তরের উত্তর সঠিক লিখতে পারে, সেও পূর্ণ নম্বর পাওয়ার দাবি রাখে। উল্লেখ্য, ঘ. নং প্রশ্নোত্তরের জ্ঞানস্তরের উত্তরটি খুবই সাবধানে দিতে হবে। কেননা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে ওই প্রশ্নের অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতার দক্ষতা স্তরের ভুল উত্তরের প্রভাব পড়বে।

তখন হয়তো পরীক্ষকরা ওই প্রশ্নোত্তরে শূন্য নম্বর দিতে পারেন। ঘ. নং প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরে যদি উদ্দীপকের কোনো চরিত্রের সঙ্গে অধ্যায়ের কোনো চরিত্রের বিমূর্ত রূপ/প্রতিচ্ছবি/প্রতিরূপ/অনুরূপ/একই রূপ- এ ধরনের কথা থাকে, তাহলে উদ্দীপকে বর্ণিত চরিত্রের এবং অধ্যায়ের ওই চরিত্রের সবকিছু বৈশিষ্ট্য/দিক/ভাব/গুণ এক হলে যথার্থ; আর এক না হলে যথার্থ নয় হবে। কিন্তু প্রশ্নে 'প্রতিনিধিত্ব করে'- এ কথা থাকলে চরিত্রের সবকিছু বৈশিষ্ট্য না থাকলেও চলবে। অবশ্য প্রায় ৫০% বৈশিষ্ট্য মিলে গেলে যথার্থ লিখতে হবে; আর মাত্র দুই-একটি বৈশিষ্ট্য মিলে গেলে 'যথার্থ নয়' লিখতে হবে। আবার উদ্দীপকের মূলভাব এবং অধ্যায়ের মূলভাব/মূলকথা/মূল উপজীব্য একই ধারায় উৎসারিত- এ ধরনের কথা থাকলে সবদিক মিলানোর প্রয়োজন নেই, মূল কথা থাকলেই চলবে।

এক্ষেত্রে যথার্থ লিখতে হবে। তবে প্রশ্নে যদি সামগ্রিকভাব/দিক প্রকাশ পায়- এ ধরনের ক্ষেত্রে অধ্যায়ের এবং উদ্দীপকের সব দিক/ভাব মিলাতে হবে। একটি দিক/ভাব/বৈশিষ্ট্য কম হলেই 'যথার্থ নয়' লিখতে হবে।

এভাবে সৃজনশীল প্রশ্নের স্তরভিত্তিক সঠিক উত্তর করলে তোমরা ৬০-এর মধ্যে প্রায় ৫৫-৫৯ নম্বর পেতে পার। আর বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরের জন্য তোমাদের বোর্ড বই খুব ভালোভাবে পড়তে হবে।

কেননা বোর্ড বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বোর্ড বই খুব ভালোভাবে জানা থাকলে বহুনির্বাচনী সব প্রশ্নের উত্তরও সঠিক দিতে পারবে।

পরীক্ষা শুরু হতে যেহেতু আর মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে, সেহেতু তোমাদের প্রস্তুতি এর মধ্যেই গুছিয়ে ফেলতে হবে। বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষার নতুন সিলেবাস এবং নম্বর বণ্টন একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বাংলা প্রথম পত্রে সৃজনশীল প্রশ্নে গদ্য থেকে ৩টি, কবিতা থেকে ৩টি এবং আনন্দ পাঠ থেকে ৩টি অর্থাৎ মোট ৯টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে।

তোমাদের গদ্য থেকে ২টি, কবিতা থেকে ২টি এবং আনন্দ পাঠ থেকে ২টি অর্থাৎ মোট ৬টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। মোট নম্বর হচ্ছে ১০দ্ধ৬=৬০ এবং সময় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। তাই তোমাদের ৬০ নম্বরের পূর্ণ উত্তরের জন্য একটি উদ্দীপকের চারটি প্রশ্নোত্তরে (ক, খ, গ এবং ঘ) গড়ে ২০ মিনিট সময় ভাগ করে নিতে হবে। আর বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রে জ্ঞান স্তরের প্রশ্ন হবে ১৬টি, অনুধাবন স্তরে ১২টি, প্রয়োগ স্তরে ৮টি ও উচ্চতর দক্ষতায় ৪টি। অর্থাৎ গদ্যাংশ (১৫টি) কবিতাংশ (১৫) ও আনন্দ পাঠ (১০) মিলে মোট ৪০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন হবে।

মোট সময় ৪০ মিনিট। সবশেষে তোমাদের জন্য আশীর্বাদ রইল।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।