আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্যাঁচা বাবুর আধুনিক ইশপের গল্পকথা ( উপদেশ সহ )



প্যাঁচা বাবুর সাথে আমার পরিচয় অল্পদিনের, সেই স্বল্প পরিচয় হৃদ্যতায় রূপান্তরিত হতে সময় লাগেনি, কারণ আমাদের সরলতা ( নিন্দুকের ভাষায় নির্বুদ্ধিতা )। প্যাঁচা বাবু তার জীবনের কিছু উপলব্ধি আমাকে জানিয়েছেন যা আমাকে মুগ্ধ করেছে, এই প্রচার বিমুখ সরল হৃদয় দার্শনিক এর নিজের ভাষায় তার উপলব্ধি তুলে ধরলাম আপনাদের কাছে আশা করি আপনারাও আমার মত মুগ্ধ হবেন। প্রথম উপলব্ধি পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছোটবেলা থেকে নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর মুরুব্বীদের জোরদার প্রচেষ্টা দেখে এসেছি। এই প্রচেষ্টার সফল বাস্তবায়ন কখনো শারিরীক ধস্তাধস্তির ( মারধর ) মাধ্যমে হতো, কখনোবা প্রবল মানসিক ধস্তাধস্তির ( যেমন তুই ইহা না করিলে আমার মড়া মুখ দেখিবি ) মাধ্যমে হতো। তখন প্রতিবাদ করার দরুণ বেয়াদপ উপাধি এমন ভাবে আমার সম্পূরক নাম হয়ে যায় যে বৃহৎ পরিবারের কেউ চট করে আমার নাম শুনে চিনতে না পারলেও " আরে ওই বেয়াদপটা " বলে উঠলেই সবাই বলে উঠতো ও হ্যা হ্যা এখন চিনেছি।

কিছু বেয়াদপির নমুনা দেই যেমন গ্রাম থেকে আত্মীয় এসেছেন মা এবং বাবা বললেন চাচা কে সালাম কর ( সাথে চোখ দিয়ে ইশারা বা হুমকি দিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করার স্পষ্ট ইঙ্গিত )। আমি সেই কর্দমাক্ত পা দেখে সেই পায়ের ধারে কাছে না গিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে সালাম দিলাম। অতঃপর মা পেছনে এসে প্রথমে হালকা ঠেলাঠেলি তাতে কাজ না হলে ঘাড় ধরে ধক্কাধাক্কি তে ঘটনার শেষ হল। এবং আত্মীয়র সামনে থেকে সরিয়ে এনে মৃদু প্রহারের মাধ্যমে শিক্ষা সম্পন্ন হল। আমি সেইদিন আমার স্বল্প বুদ্ধিতে ধরে নিয়েছিলাম ধুলি এবং কাদা ঘাঁটাঘাঁটি একটি পবিত্র কর্ম, এই ভুল ভাংতেও সময় লাগেনি কারণ দুদিন পর মাঠে খেলতে গিয়ে সারা গায়ে ধুলি কাদা মাখামাখি হয়ে বাসায় ফিরে ড্রয়িং রুম এ গিয়ে গ্রামের সেই চাচাকে দেখে বুকের ভিতর চাপা গর্ব নিয়ে মায়ের দিকে হাসিমুখে তাকালাম, ভাবখানা এই, কি কেমন ওনার পায়ের থেকে আমার গায়ে কাদা বেশী।

এরপর যা হয়েছিলো তা কহতব্য নয়। বাবা মা যা দেবার দিয়েছিলেন সুযোগ সন্ধানী বড় ভাইজানও হাতের সুখ মিটিয়েছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল একে তো কাদায় গড়াগড়ি খেয়েছিস তার উপর আত্মীয়র সামনে ঢং দেখিয়েছিস। তখন বুঝলাম কাদা ধুলা মুরুব্বীর পায়ে পবিত্র জিনিষ, ৭ বছরের বাচ্চার গায়ে বিছুটি বিশেষ। কিন্তু যা আমার আজো বোধগম্য হল না তা হল কেন কাদা পায়ে মেখে আসলে তা হাত দিয়ে হাতাতে হবে আর গায়ে মাখলে পিটাতে হবে।

দ্বিতীয় উপলব্ধি দ্বিতীয় বেয়াদপির ঘটনা বলি, বর্ষাকাল, বাসায় মশার ব্যাপক উপদ্রপ। কয়েল, এরাসল, ধূপ কিছুতেই কিছু হয়না। একদিন বাঁদরামি করায় ব্যস্ত, এমন সময় মা এসে কান মলে দিয়ে বললেন বাসার কাজ তো কিছু করিস না মশার জ্বালায় রিপোর্ট লেখতে পারি না পাশে বসে মশা মার। প্রতি মশা ১ টাকা দেব, যেখানে পাবি মেরে ফেলবি। আমিও সেদিন থেকে মশা মারায় ব্যস্ত, মায়ের গায়ে বসলেই সপাং করে মশা মারি।

এরপরের ঘটনা একটু গুরুতর, আমার একজন শিক্ষক বাসায় পড়াতে আসতেন, তিনি আমাকে সকল বিষয় পড়াতেন এবং অংকে ভালো ছিলেন বলে পাশের ফ্ল্যাট এর রুমকি আপুকে তার অনার্সের অংকও দেখিয়ে দিতেন। যাইহোক ততদিনে পাঁচ শতাধিক মশা মেরে আমার বুকের এবং পকেটের বল তখন আকাশচুম্বী। শিক্ষক মহাশয়ের কাছে একদিন পড়ছি একটা মশা বহুক্ষণ যাবত ভোঁ ভোঁ করে তার গালে বসেছে, আমার হাত সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের বেগে মশার দফারফা করে দিলো একি সাথে আমার ভবিষ্যৎও বটে। প্রথমে বেদম প্রহার তারপর শুরু হোল ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক উপদেশ, একটি কথা বার বার বলা হোল “শিক্ষক পিতার মত” সেই পিতার গায়ে আমি হাত তুলেছি আমি কত বড় কূপমণ্ডূক ইত্যাদি ইত্যাদি। পিতার গালে থাপ্পর মারার তীব্র অনুতাপে আমি যখন পুড়ছি তখনি ঘটনা নাটকীয় মোড় নিলো পিতার মত শিক্ষক ( সদ্য বুয়েট পাশ করা তরুণ ) আর কন্যা সম রুমকি আপুর বিবাহ ঠিক হল।

আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করলাম কিছুদিন আগে আমাকে দেয়া ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক উপদেশ কে সামনে এনে এবার গণধোলাই এর মুখোমুখি হলাম। আমার নতুন বোধোদয় হল সকল পিতাই পিতা নহে। ( প্যাঁচা বাবুর উপলব্ধি এবং আধুনিক ইশপের গল্পকথা চলবে যদি আপনারা ব্লগ এ লাইকান না লাইকালেও চলবে কারণ লেখক তার নিজ আনন্দে লেখে হে হে )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।