আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবাইকে ছাড়িয়ে সোহাগ

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সোনার হরফে লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সোহাগ গাজীর নাম। এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকসহ ৮ উইকেট (দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট) শিকার, বিশ্বরেকর্ড তো বটেই, টেস্টের ১৩৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। গতকাল সাগরিকায় সোহাগ গাজী এমন উচ্চতায় পেঁৗছে গেছেন যে, ক্রিকেটের রথী-মহারথীরাও এখন তার ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছেন। বাংলাদেশের ১৩ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করলেন সোহাগ। এর আগে ২০০৩ সালের আগস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পেশোয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেছিলেন অলক কাপালি।

সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের তালিকার প্রথম দিকে থাকবে ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্স, পাকিস্তানের ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, মুস্তাক মুহাম্মদ ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসের নাম। এক টেস্টে তাদের সবারই সেঞ্চুরি এবং পাঁচের অধিক উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। বোথাম একাই পাঁচ পাঁচবার এই দুঃসাধ্য কাজটি সাধন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা স্যার গ্যারি সোবার্স অবশ্য দুবার এই অনন্য মাইলফলকে নিজের নাম লিখেছেন। পাকিস্তানের মুস্তাক মুহাম্মদ এবং প্রোটিয়া অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসও দুবার ম্যাচে সেঞ্চুরির সঙ্গে পাঁচের অধিক উইকেট শিকার করেছেন।

কিংবদন্তি তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের সময় এক একটি নক্ষত্র ছিলেন তারা। নিজেদের সময়ে কাঁপিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট দুনিয়া। গতকাল সাগরিকায় এই কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদেরও ছাড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের নবীন অলরাউন্ডার সোহাগ গাজী। শুধু মাইলফলকই নয়, সোহাগের হাত ধরে গতকাল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন একটি রেকর্ডের যাত্রাও শুরু হলো। মজার ব্যাপার হলো, এর আগেও একবার সেঞ্চুরির পাশাপাশি হ্যাটট্রিক করেছিলেন সোহাগ গাজী।

তবে সেটা ছিল প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে, গত বছর খুলনার বিরুদ্ধে।

সোহাগ গাজী আগের দিন ব্যাট হাতে জ্বালিয়েছেন কিউই বোলারদের। আট নম্বরে নেমে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে টাইগারদের এনে দিয়েছিলেন লিড। কাল তার ঘূর্ণিতে দিশাহারা হয়ে গেল কিউই ব্যাটসম্যানরা। শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডের পতন ঘটা ছয় উইকেটই নিয়েছেন সোহাগ গাজী।

এ জন্য দিয়েছেন মাত্র ৭৭ রান। দুই ইনিংস মিলে সোহাগের উইকেট সংখ্যা আট। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ড্র হলেও ম্যাচসেরার পুরস্কারও পেয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

প্রথম দুই ইনিংসের ব্যাটিং দেখেই উইকেট সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন ছিল না। দুই দলের প্রথম দুই ইনিংসে ৯৭০ হওয়ায় 'উইকেট তো নয়, যেন তক্তা' এমন মন্তব্য করছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের উইকেটে সুইং করবে এমন চিন্তা করাও অন্যায়! জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট তো স্পিনারদের জন্যও মৃত্যুফাঁদ। পঞ্চম দিনেও বল টার্ন করে না। এমন উইকেটে হ্যাটট্রিক করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! এখানে এক একটি উইকেট শিকার করা যেন দুর্গম গিরি পাড়ি দেওয়া। অথচ কাল ছয় ছয়টি উইকেট তো নিয়েছেনই টানা তিন বলে তিন কিউই ব্যাটসম্যান অ্যান্ডারসন, ওয়াটলিং এবং ব্রেসওয়েলকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্টে ভাগ্য অনেকটা আগের দিনই নির্ধারণ হয়ে যায়! তারপরও কাল দিনের শুরু থেকেই প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে নিউজিল্যান্ড।

এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করেন সোহাগ গাজী। ৮৫তম ওভারে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত হ্যাটট্রিক। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলটি আড়াআড়িভাবে খেলার চেষ্টা করেন কিউই ব্যাটসম্যান কোরে অ্যান্ডারসন। ব্যাটে না লেগে বল লাগে প্যাডে। মিডল স্ট্যাম্পে থাকায় আম্পায়ার আউট দিতে একটুও কার্পণ্য করেননি।

তৃতীয় বলটি কিছুটা গতির সঙ্গে করেন সোহাগ। নতুন ব্যাটসম্যান ব্র্যাডলি ওয়াটলিং বুঝে ওঠার আগেই তার ব্যাটে লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের কাছে। তিন ধাপে দুর্দান্ত এক প্রচেষ্টায় বল গ্লাভসবন্দী করেন মুশফিক। পরের বলে ব্রেসওয়েল মুশফিকের কাছে ক্যাচ তুলে দেন। কিন্তু গতি বেশি থাকায় বল উইকেটকিপারের গায়ে লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপে।

অনেকটা লম্বা এক ড্রাইভ দিয়ে চিলের মতো ছোঁ মেরে বলটি তালুবন্দী করেন সাকিব আল হাসান। হ্যাটট্রিক পূরণ হয়ে যায় সোহাগ গাজীর।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.