আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখা হয়েছিল তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে

দেখা হয়েছিল তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে। কথাও হয়। দিলি্ল গিয়েছিলাম ইন্টারগেশনাল কমিটি অব রেডক্রস এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের যৌথ আয়োজনে সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের এক সেমিনারে। বাংলাদেশ থেকে আরও ছিলেন বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী। ৮ ও ৯ অক্টোবর জামিয়া মিলিয়াতে 'ভায়োলেন্স অ্যান্ড কনফ্লিক্ট রিপোর্টিং মিডিয়া ডিবেটস ইটস রোল' শীর্ষক টানা দুই দিনব্যাপী এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ছাড়াও আরও অংশ নেন বিভিন্ন দেশের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা। সেমিনারে, আলাপে, আলোচনায়, আড্ডায় সবাই জমিয়ে রাখেন দুটি দিন।

পাকিস্তান থেকে আসেন বিবিসির পশতুন অঞ্চলের ডাকসাইটে প্রবীণ সাংবাদিক বিশ্বখ্যাত রহমউল্লাহ ইউসুফজাই। তিনি ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। যুদ্ধের ময়দান থেকেও তার অনেক প্রতিবেদন ছিল আলোচিত।

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলাপের সময় আমাকে বলেই ফেলেন, মিডিয়ার উচিত সন্ত্রাসীদের সংবাদ বর্জন করা। তা হলে ওরা আর কোনো কিছুতে গুরুত্ব পাবে না। সাদা দাড়ি, আর সব সময় স্যুটেড অসাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রবীণ এই মানুষটিকে দেখতে ইউরোপিয়ানদের মতোই লাগে। দিলি্ল জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে বিপদেই পড়লেন। সবাই তাকে মনে করেছিল ইউরোপিয়ান পর্যটক।

এ কারণে ভেতরে প্রবেশের সময় একজন বললেন, নামাজ শুরু হবে। নামাজ শেষে আপনি ভেতরে যেতে পারেন। তিনি জবাব দিলেন, আমি নামাজ পড়তেই এসেছি। কারণ আমি মুসলমান।

রহমউল্লাহ ছাড়াও পাকিস্তান থেকে আসেন একটি অনলাইন কাগজের সম্পাদক কামাল সিদ্দিকীও।

মিডিয়া সম্পর্কে তার পড়াশোনা, বক্তব্য, অভিজ্ঞতা প্রশংসা করার মতো। এ ছাড়াও সেমিনারে যোগ দেন শ্রীলঙ্কার দুটি পত্রিকার সম্পাদক, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, ইরান ও ভারতের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিকরা। দুই দিনের টানা এ আলোচনায় সবার বক্তব্যের বিষয়বস্তু ছিল আলাদা আলাদা। কিন্তু মিডিয়ার সমস্যা সব দেশে কম-বেশি একই ধরনের। ইরান কিংবা পাকিস্তানের সমস্যা হয়তো আমাদের দেশে নেই।

কিন্তু কিছু বিষয়ে আমরা একই ধরনের জটিলতা মোকাবিলা করছি। সেমিনারের সবচেয়ে বড় দিক ছিল জামিয়া মিলিয়ার সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।

সেমিনারের বাইরে জম্পেশ আড্ডায় আলোচনায় তৈরি হয় এক ধরনের হৃদ্যতা। গড়ে ওঠে সম্পর্কের সেতুবন্ধ। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এর আগেও বিভিন্ন কর্মশালায় যোগ দিয়েছি।

এ কারণে দেশে দেশে অনেক সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ-পরিচয় গড়ে উঠেছে। আফগানিস্তান থেকে আসা এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম অনেক দিনের পুরনো বন্ধু ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধি একরাম সেনওয়ারির কথা। ২০০৬ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মসূচিতে ওয়াশিংটনে তার সঙ্গে পরিচয়। বাংলাদেশ থেকে ছিলাম আমি আর হাসনাইন খুরশীদ। একই কর্মসূচিতে ভারত, নেপাল, পাকিস্তানের সাংবাদিকরাও অংশ নেন।

সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এখনো আছে। এবার আবার তাদের খবর পেলাম। গেল বছর দিলি্লতে আরেকটি সেমিনারে অংশ নিয়েছিলাম। এতেও অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ৩৩ জন সাংবাদিক। পুরনো বন্ধুদের খোঁজখবর জানা গেল নতুন করে।

দুই দিনের টানা ব্যস্ততার মাঝে দিলি্লর সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে এবার কম দেখা হয়েছে। তারপরও এক সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম টেলিগ্রাফের আবাসিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় চৌধুরীর বাসায়। সেখানে দেখা হয় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার দিলি্লতে দায়িত্বরত সুভাস চন্দ্র বাদলের সঙ্গে। দেশ নিয়ে তার উদ্বেগের শেষ নেই। আমার সঙ্গে দেখা করেন আনন্দবাজারের অগি্ন রয়।

রেডক্রস আয়োজিত আমাদের এক ডিনারে কথা হয় সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ওবায়েদ সিদ্দিকী, সিনিয়র সাংবাদিক ভরত ভূষণসহ অনেকের সঙ্গে। এই ডিনারে দিলি্লর সুশীল সমাজের অনেকে ছিলেন। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বুঝলাম, ভারতে এবার আস্থা হারিয়েছে কংগ্রেস। আগামী নির্বাচনে বিজেপির ক্রেজ চলছে। নরেন্দ্র মোদিকে ঘিরে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস অনেকটাই বিস্ময়কর।

অনেক তরুণী মোদিকে নিয়ে নিজের শরীরে উল্কি অাঁকছেন। দিলি্লর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বললেন, মৌলবাদ উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে, তবে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। সমর্থনকারী তারুণ্যই আবার বদলে যাবে মোদি ক্ষমতা নেওয়ার পর। কথায় কথায় বুঝলাম ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মৌলবাদের উত্থান নিয়ে উৎকণ্ঠা সুশীল সমাজে। এর মাঝে একজন বলে বসলেন এবার কোনো কারণ ছাড়াই সব কিছু কংগ্রেসের বিপক্ষে যাবে।

আমি জানতে চাই মুসলমানদের অবস্থান নিয়ে। উত্তর পেলাম মোদি ক্ষমতায় এলে মুসলমানদের উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই। কারণ ভারতের রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটা নিয়মের মধ্যে চলে। আর অতীতে খারাপ ইমেজের কারণে বিজেপি ও মোদি থাকবে আরও সতর্ক। মনে হলো বাংলাদেশের মতোই এক কঠিন রাজনৈতিক অবস্থা অতিক্রম করছে ভারত।

বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে যেমন উৎকণ্ঠা আছে তেমনি ভারতেও।

দিলি্লর ব্যস্ত দুই দিনের শেষ দিনে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে। তিনি এখন দিলি্লতে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে। বাদ যায়নি ভারত প্রসঙ্গও।

তার জীবনযাত্রা, পুরনো বন্ধুদের স্মৃতিচারণ, ছিল সব কিছু। আমাদের সহকর্মী মারুফ চিনু এবং আহমেদ ফারুক হাসানের মৃত্যু সংবাদ তসলিমা নাসরিন জানতেন না। দুটি মৃত্যু সংবাদেই তিনি মন খারাপ করলেন। মিনার মাহমুদের আত্দহত্যা প্রসঙ্গও বাদ যায়নি। আমাদের সময় কয় দফা বিক্রি, নাঈমুল ইসলাম খান প্রসঙ্গ নিয়েও আলাপ হয়।

তসলিমা নাসরিন জানতেন আবেদ খান এখনো কালের কণ্ঠের সম্পাদক। আমি তাকে জানালাম, ইমদাদুল হক মিলন এখন কালের কণ্ঠের সম্পাদক। আমাদের পত্রিকাও একই গ্রুপের। দেশের উন্নয়ন, ফ্লাইওভার, ঢাকার বদলে যাওয়া নিয়ে অনেকটা আবেগঘন দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, দেশ কি জিনিস ভুলে যাচ্ছি। তারপরও দেশকে ভালোবাসি বলেই খবর নিতে চাই।

জানেন, এখন কলকাতাও যেতে পারি না। সেখানকার সরকার বাধা দেয়। আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট চেয়ে বিভিন্ন হাইকমিশন ও দূতাবাসে অনেক আবেদন করেছি। কিন্তু পাসপোর্ট পাইনি। আমাকে পাসপোর্ট না দিলে কীভাবে যাব? তসলিমা নাসরিনের চোখে এখনো জ্বলজ্বলে বাংলাদেশের স্মৃতি।

তাই তার লেখায় উঠে আসে বাংলাদেশ। তাকে দিলি্লতে থাকতে হয় এক ধরনের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। তিনজন মানুষকে শ্রদ্ধা নিয়ে তিনি স্মরণ করলেন। তারা হলেন কবি শামসুর রাহমান, অধ্যাপক কবির চৌধুরী ও রশিদ করিম। ড. কামাল হোসেনেরও প্রশংসা করলেন।

বললেন, তাদের কাছ থেকে অনেক স্নেহ পেয়েছি। কিন্তু সেই সময় অন্য অনেক লেখক সহকর্মীর কাছে পেয়েছি ঈর্ষা। সেই ঈর্ষার আগুনে তারা আমার বিরোধিতা করেছেন। আমার পাশে দাঁড়াননি কেউ। দাঁড়ালে হয়তো আমাকে দেশ ছাড়তে হতো না।

কথায় কথায় জানালেন বাংলাদেশের অনেক প্রকাশনী তার বই প্রকাশ করে। কিন্তু রয়েলিটি কেউই দেন না। এমনকি সৌজন্যবোধও নেই তাদের মধ্যে। চিরচেনা বাঙালি নারীর মতো শাড়ি পরা তসলিমা ডিনারে আপ্যায়ন করালেন। তার সৌজন্যতা বোধ আমাকে বিস্মিত করে।

কঠিন ব্যস্ততার মধ্যে শেষ হলো দুই দিনের দিলি্ল সফর। ১০ অক্টোবর সকালেই হোটেল থেকে চেক আউট করলাম। দিলি্ল বিমানবন্দরে দেখলাম আমাদের মতো মধ্যপ্রাচ্যগামীও অনেক যাত্রী তাদের। কিন্তু হয়রানি আমাদের মতো নয়। বোর্ডিং কার্ড নেওয়ার পর ইমিগ্রেশন ফরম তাদের পূরণ করে দিচ্ছেন এয়ারলাইন্সের লোকজন।

হাত খুলে সহায়তা করছেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারাও। ইমিগ্রেশনে তাদের জন্য আলাদা একটি লাইনও আছে। সেখানে লেখা আছে- 'ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সহযোগিতা লাগলে এই লাইনে আসুন'। ভালো লাগল দেখে। দিলি্লর মতো বড় বিমানবন্দরে তাদের অশিক্ষিত শ্রমিকদের সহায়তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে।

এর বিপরীতে শাহজালাল বিমানবন্দরে সব সময় দেখি চরম হয়রানি। আমাদের বিদেশগামী শ্রমিকদের পদে পদে হয়রানি করেই সবাই আনন্দ পান। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয় ধমকে ধমকে। পাসপোর্ট, ভিসা সব ঠিক থাকলেও চাওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অন্য কাগজ। বিদেশ যেতে তারা একদফা হেনস্তার শিকার হন, ফেরার পর আরেকবার।

শুধু ইমিগ্রেশন নয়, কাস্টমসের লোকজনও তাদের ছাড় দেন না। কষ্টার্জিত টাকায় কেনা রেডিও-টেলিভিশন নিয়েও হেনস্তা করা হয়। এমনকি বিমানবন্দর ত্যাগের সময় তাদের গাড়ি থামিয়ে আর্মড পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও তল্লাশির নামে আরেক দফা হেনস্তা করে। বারবার এগুলো নিয়ে লেখালেখি হয়, কথা হয় কিন্তু দেখার কেউ নেই। বছরের পর বছর নিয়মই এখানে অনিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ একটু চেষ্টা করলেই আমাদের ইমিগ্রেশন সিস্টেমটা বদলানো যায়। আধুনিক করা যায়। শ্রমিকদের জন্য আলাদা সহায়তা কেন্দ্রের কথা কেবল প্রচারই হয়। বাস্তবে তেমন কিছু চোখে পড়ে না শাহজালালে।

এবার দিলি্ল এবং ঢাকার রাজনীতিতে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি।

দুটি দেশেই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি এক ধরনের হুমকির সম্মুখীন। সাধারণ ভোটার কারণে-অকারণে ক্ষমতাসীনদের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত। রাহুল গান্ধীর ওপর ভর করে কংগ্রেস আরেক দফা বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ঝড়ে সব কিছু কাচের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। একজন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, কংগ্রেসের এমন অবস্থা হলো কেন? জবাব দিলেন, তারা বাস্তবতার বাইরে অবস্থান করছে।

কাজ অনেক করেছে। কিন্তু জনগণকে আস্থায় রাখতে পারেনি। দূরত্ব তৈরি হয়েছে খাতে খাতে। অনিয়মের অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে অনেককে সরিয়েও দিয়েছিল। সততার ইমেজে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও মনমোহন সিং প্রশংসিত থাকলেও রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণে কংগ্রেস এখন পিছিয়ে।

আমার কাছে মনে হলো এই জটিলতার আবর্তে বাংলাদেশও। আওয়ামী লীগ কাজ করেছে। পরিবর্তন এনেছে যোগাযোগ খাতে। ফ্লাইওভার, ফোরলেন সড়ক প্রশংসার দাবি রাখে। বিদ্যুৎ খাতেও চমক ছিল।

দ্বিগুণ উৎপাদন নজিরবিহীন দৃষ্টান্তও বলা যেতে পারে। শিক্ষা ও কৃষি খাতে প্রশংসা সবাই কম-বেশি করে। তারপরও হোঁচট খাচ্ছে পদে পদে। পদ্মা সেতু ও রেল কেলেঙ্কারি যোগাযোগ খাতের সব উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির কারণে ধামাচাপা পড়ে গেছে হাতিরঝিল আর একটির পর একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের সাফল্য।

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির কাছে হার মেনেছে ২৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ।

আরেকটি বিষয়ও ছিল। উন্নয়ন প্রচারের দায়িত্ববানরা ব্যস্ত ছিলেন নিজের উন্নয়ন নিয়ে। শেখ হাসিনা কিংবা তার সরকারের উন্নয়ন প্রচারে সময় দিতে পারেননি। কোনো কারণ ছিল না ড. ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর।

যিনি বা যারাই কাজটি করেছেন তারা সরকারকে ডুবিয়েছেন দেশে-বিদেশে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের বাড়াবাড়ি, কিছু মন্ত্রী-এমপির লাগামহীন কাজকর্মও সরকারের বারোটা বাজিয়েছে। দলবাজ আর দলকানা ব্যক্তিরা সরকারকে অন্ধকারে রেখেছিল। অতিতোষামোদ করে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করতে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দক্ষ কর্মকর্তার অভাব ছিল।

সরকারে দক্ষ মন্ত্রী এবং দলে অভাব ছিল দক্ষ নেতার। এ কারণে ২৬২টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসে এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আওয়ামী লীগ। গত পাঁচ বছর এ দলটি সব করেছে। কিন্তু নিজের দলের রাজনীতিটি করেনি ঠিকমতো। এক ধরনের অহমিকা আর দাম্ভিকতার কারণে যা সর্বনাশ হওয়ার তা-ই হয়েছে।

তারপরও আওয়ামী লীগের একটা পজিটিভ দিক আছে, তা হলো সব কিছু জেনেশুনেও কিছু মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে।

মনে আছে মরহুম রাজনীতিবিদ মিজানুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগে ফিরে আসার পর ২০০১ সালে আমার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, '৯৬ সালে যখন সরকার গঠন হয় তখন আপনার সঙ্গে ধানমন্ডিতে শের এ খাজার বাড়িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অনেক কথা হয়েছিল। আপনাকে একটা যোগ্য অবস্থানে বসানোর কথাও ছিল। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত করা হয়নি।

তারপরও আওয়ামী লীগে ফিরলেন। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, জীবনের মূল সময়গুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিলাম। স্বাধীনতার আগে-পরে আওয়ামী লীগের দুটি দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছিলাম। ইতিহাস তার আপন গতিতেই চলে। আমিও চলছি।

জীবন সন্ধিক্ষণে কি পেলাম, কি পেলাম না তার হিসাব-নিকাশ করে লাভ নেই। শেষ সময়গুলো এই দলটির সঙ্গেই কাটিয়ে দিতে চাই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী অনেক কিছু পাননি। তাদের হিসাব-নিকাশও মেলেনি গত পাঁচ বছর। তারপরও তারা বাকি জীবনটা কাটাতে চান এই আওয়ামী লীগের সঙ্গে।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.