আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুকূল পরিস্থিতির আশায় জাতীয় পার্টি

২৪ অক্টোবরের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছে জাতীয় পার্টি। তবে মহাজোটের শরিক হলেও এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি ১৪ বা ১৮ দলের কোনোটির সঙ্গেই কোনো কর্মসূচিতে জড়াবে না। তারা অনুকূল পরিস্থিতির আশায় থাকবে। জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির সূত্রগুলো বলছে, ২৪ অক্টোবরের আগেই অন্তত মহাজোট ছাড়ার একটা ঘোষণা দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে চাপ দিচ্ছেন দলের একটি অংশের নেতারা।

ওই নেতারা দাবি করছেন, রওশন এরশাদ ও কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ওই জোটটির পক্ষে রয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সিংহভাগ নেতা। তাঁরা বলছেন, এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দুই নেত্রীর আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন বিএনপির তরফ থেকে ১৮-দলীয় জোটে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ২৪ অক্টোবরের আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া উচিত।

তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির যে সম্পর্ক, তা নির্বাচনী সম্পর্ক। নির্বাচন যেহেতু ২৪ অক্টোবর থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে, তাই এখনই জাতীয় পার্টির উচিত হবে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসা।
তবে অপর অংশের নেতৃত্ব দেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, বিএনপি জাতীয় পার্টিকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। এ নিয়ে তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন হলে সুবিধাজনক সময়ে তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বলে জানান ওই নেতা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ গতকাল সোমবার প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টি উদ্বিগ্ন। জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ২৪ অক্টোবরের পর। দলীয় ফোরামে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হবে জাতীয় পার্টি কী করবে।
মহাজোট ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে মতদ্বৈধতা থাকলেও ২৪ অক্টোবরকে ঘিরে শঙ্কা, অনিশ্চয়তা রয়েছে, এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রায় সব নেতা।

তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে বলেছেন, ২৪ অক্টোবর থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও দেশের দুটি প্রধান দল ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকেছে। আওয়ামী লীগ তার নেতা-কর্মীদের ‘অ্যালার্ট’ থাকতে বলেছে। অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ‘দা-কুড়াল’ নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন দেশ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে।

তবে কোনো কোনো নেতা ২৪ অক্টোবর এবং এর পরপরই উত্তাপ ছড়ানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সাংবিধানিকভাবে ২৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে। এ সময়ের মধ্যে সব নিয়ম-কানুন মেনে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করল কি না, সেটাই বিষয়। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে। একই মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

তিনি বলেন, দেশ একটা অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এখন পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধান দুই দল কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এ নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। জাতীয় পার্টিও আর সবার মতো উদ্বিগ্ন। কিন্তু আলাদা করে ২৪ অক্টোবরের কোনো গুরুত্ব নেই।

সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কথা। সেটি হলো কি না, তা-ই দেখার বিষয়।
অনেকে আবার বলছেন, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সংসদ না ভাঙার সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনার জন্য আরও কিছুদিন সময় পাওয়া যাবে।
এদিকে বিএনপিপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ২৪ অক্টোবর খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

তাঁর মতে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এ দিনটির ওপর। ২৪ অক্টোবর যদি ২৮ অক্টোবরের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে গণতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়তে বাধ্য। তিনি বলেন, ‘চাইলে তো নানা উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ৯০-এর পর এত বছর কেটে গেলেও কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দুটি বড় দল। ক্ষমতাসীন সরকার বলছে, তারা সংবিধানের বাইরে যাবে না।

বিএনপি বলছে, সংবিধানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্পষ্টতই দুদলের মধ্যে চরম বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। ’

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।