আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাজারিবাগও প্রস্তুত

বুধবার বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। আর সারা বছর দেশে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তার অর্ধেকই সংগ্রহ করা হয় এই সময়টাতে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতবছর আমরা প্রায় ৫৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছি। এবার গরু ও ছাগল মিলিয়ে অন্তত ৬৫ থেকে ৭০ লাখ চামড়া পাব বলে আশা করছি। ”
শাহিন আহমেদ জানান, এবার সীমান্ত দিয়ে বৈধ পথেই ১৯ লাখ গরু এসেছে।

এর বাইরেও অবৈধপথে ভারতে থেকে গরু এসেছে। দেশি পশুতো আছেই।
“দেশের চামড়া ব্যবসার মৌসুম মূলত কোরবানির ঈদকে ঘিরেই। প্রায় তিন মাসের এই মৌসুম শুরুর সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। ”
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টিও মাথায় আছে জানিয়ে এই ট্যানারি ব্যবসায়ী বলেন, “রাজনৈতিক গোলযোগের শঙ্কা অবশ্য রয়েছে।

চামড়া সময়মতো আমাদের হাতে না এলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তো করার কিছু নেই। আমাদের প্রস্তুতিটা আমরা নিয়ে রেখেছি। ”
ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ইতোমধ্যে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম বেঁধে দিয়েছেন।
নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৮৫-৯০ টাকায় কিনবেন ব্যবসায়ীরা, আর ঢাকার বাইরে কিনবেন ৭৫-৮০ টাকায়।


সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ৫০-৫৫ টাকা, বকরির চামড়া ৪০-৪৫ টাকা এবং মহিষের চামড়ার দাম ৪০-৪৫ টাকা ঠিক করা হয়েছে।
গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ঠিক না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
শাহিন আহমেদ বলেন, দেশে ট্যানারি শিল্পে ২৫ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছে। ঈদের সময় ৬ হাজারের মতো অস্থায়ী শ্রমিক নিতে হয়।
“আমরা সরাসরি চামড়া কিনি না।

মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চামড়া কিনে নেয়। তাদের কাছ থেকে ট্যানারিগুলো চামড়া সংগ্রহ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো দুই-এক হাত ঘুরে চামড়া আমাদের হাতে আসে। ”
ঢাকার কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া ঈদের দিনই ট্যানারিতে পৌঁছানো শুরু করে। তবে সারা দেশ থেকে চামড়া পৌঁছাতে প্রায় এক মাস লেগে যায়।


ট্যানারি মালিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের  সচিব মো. জয়নুল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোরবানির সময় মানুষ মাংসটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। চামড়াটা অনেকটা অযত্নে ফেলে রাখে। জবাইয়ের ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ না দিলে এর গুণগত মান ঠিক থাকে না। ”
আগে থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় এবার চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে বলে মনে করেন জয়নুল।
হাজারিবাগের ট্যানারিতে লবণ সরবরাহকারী মোতালেব মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা বছরই আমি এখানে লবণ সরবরাহ করি।

তবে সারা বছর যে পরিমাণ লবণ লাগে, তার ৭০-৮০ শতাংশই প্রয়োজন হয় এই সময়টায়। ”
হাজারিবাগের বিভিন্ন ট্যানারি ঘুরে দেখা যায়, সব ট্যানারিতেই লবণ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সারি সারি ড্রামে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিক। মেশিনপত্রও ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছে।
ঈদের চামড়া মৌসুম এলে হাজারিবাগের ঠেলাগাড়ি চালকদেরও ব্যস্ততা বেড়ে যায়।


হাজারিবাগ ঠেলাগাড়ি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা সাতশ’র কিছু বেশি। তারা দুইশ’র মতো ঠেলাগাড়ি চালান। কোরবানির ঈদের সময় আশপাশের এলাকা থেকে আরো দেড়শর মতো গাড়ি ভাড়া করে আনা হয়।
“নতুন গাড়ির সঙ্গে শ্রমিকও আনতে হয়। নিয়মিত শ্রমিকরা নতুন শ্রমিকাদের সঙ্গে ভাগ করে গাড়ি চালায়।

মৌসুমে ঘুম নাওয়া খাওয়ার সময় পাওয়া যায় না। এমনিতে আমরা ৮ ঘণ্টা কাজ করি। কিন্তু ঈদের পর মাস দেড়েক ডবল কাজ করতে হয়। কোনো কোনো দিন ১৮ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। ”
সমিতির ঘরভরা সদস্যদের দেখিয়ে মঙ্গলবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ দেখেন অনেকেই আড্ডা দিচ্ছে।

কাল থেকে এখানে আড্ডা দেয়ার লোক পাবেন না। ”
ট্যানারি শ্রমিক নিরেন দাস হাজারিবাগে কাজ করছেন গত ২২ বছর ধরে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেডি হওনের আর কিচ্ছু নাই। সব যেমনে আছে, সেমনে চলব। কে কার দিকে দেহে?”
দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খাত চামড়া শিল্পের দূষণের কথাও উঠে এলো কেরানিগঞ্জের জাজিরায় বড় হওয়া এই শ্রমিকের কথায়।


“ছোডকালে নদীত গোছল করতে পারতাম। ওই সময় ট্যানারি আছিল, মনে করেন ৫০ ডা। অহন ওইছে ৫০০। ট্যানারির লগে বাড়ল চুয়াইন্না পানি। ওই চুয়াইন্না পানি বন্ধ কইরাতো কেউ রেডি অয় না।


“হুনছি ইন্ডিয়ায় কতো কিছু হাত-পাওয়ে দিয়া কাম করে। আমরা কাম করি প্লাস্টিকের মুজা পিন্দা। অহনও আগের মতো। আর কী রেডি হমু। ”
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহিন আহমেদ জানান, সরকারের সঙ্গে গত ১৩ অক্টোবর তাদের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এর মাধ্যমে সাভারের চামড়া শিল্প নগরের প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
“প্লটের দাম বাড়িয়ে ইটিপির জন্য আমাদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে। এছাড়া আমাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়েও একমত হয়েছে সরকার।
শাহিন আশা করছেন, আগামী বছর থেকে হাজারিবাগের ট্যানারি স্থান্তারের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.