আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিত্বে যত বিড়ম্বনা- সাদেক খান

পৃথিবীটা খুবই অদ্ভুত গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গদিনশিন হয়ে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দেশের জন্য বিভীষিকা আর দলের জন্য বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সরকার বিরোধিতার মাজা ভেঙে দেওয়ার জন্য তিনি আইনি পুলিশরাজের পাশাপাশি বেআইনি দলীয় সন্ত্রাসের সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার এক নীলনকশা তৈরি করেছেন। আর যেভাবে দাপট দেখিয়ে তিনি সবাইকে লেকচার দিয়ে চলেছেন, তাতে প্রশাসনেও গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। সচিবালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের মুখেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে চলছে সরব আলোচনা। সদ্য অবসরে যাওয়া একজন সচিবকে তুলে নিয়ে আসতে ওই কর্মকর্তার বাসায় পুলিশ পাঠানোর ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করেছে গোটা প্রশাসনে।

বেআইনি ও সন্ত্রাসী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বেআইনি হুকুম দিয়ে নিজ দলেই তুলোধুনো হয়েছেন। (বিরোধী দলের তরফে ১৯ নভেম্বর) ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরের বক্তব্যে মনে হয় তিনি আওয়ামী লীগের একজন তৃতীয় শ্রেণীর মাস্তান। জামায়াত-শিবিরের লোক রাস্তায় দেখলেই পুলিশকে দিয়ে লাঠিপেটা আর ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের 'ধর ধর' বলে তাড়া করতে যে প্রকাশ্য নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন, তাতে অস্বস্তি প্রকাশ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেছেন, জামায়াত-শিবিরকে দমন করার দায়িত্ব যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সংগঠনের কর্মসূচির পক্ষে জনমত গঠন করা। জামায়াত-শিবিরকে দমন করতে যুবলীগ মাঠে নামলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনার দায়িত্ব কী? জামায়াত-শিবিরকে গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া কিংবা দেশ থেকে বিতাড়িত করার যে ডাক নিয়মিত দিয়ে চলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলমগীর, তাকে অগণতান্ত্রিক ও উসকানিমূলক বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এমপি বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ আহ্বান দেশকে অনিশ্চয়তা ও সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর।

তবে সরকারি মহলে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে কোনো মামলা কিংবা ওয়ারেন্ট ছাড়াই সাবেক খাদ্য সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক সচিব মো. দেলোয়ার হোসেনকে ধরে আনতে তার বাসায় পুলিশ পাঠানোর ঘটনা। এ নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে তাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর যুদ্ধের নয় মাসই পাকিস্তান সরকারের অনুগত কর্মচারী হিসেবে পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার পলাতক অন্যতম প্রধান আসামিকে পিজি হাসপাতালে দেখতে গিয়ে আবারও বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তারপর দিলি্লতে অপরাধী বিনিময় ও সীমান্ত সহযোগিতার এজেন্ডা নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যাওয়ার আগে তিনি জামায়াত আহূত ৩ ডিসেম্বরের পূর্ব নির্ধারিত সড়ক সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

সংবাদ ভাষ্যকাররা স্বাগত জানিয়েছিলেন যে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভার আগাম নোটিস দিয়েছেন জামায়াত নেতারা, প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে ফিরছে। চোরাগোপ্তা মিছিল এবং পুলিশের ওপর আক্রমণের পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতোমধ্যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। কিন্তু দোসররা ডিসেম্বরে জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানালেন, 'ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুমতি না নেওয়ায় সোমবার (৩ ডিসেম্বর) জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। প্রচলিত আইনে রাজধানী ঢাকায় সভা-সমাবেশ করতে হলে যে কোনো দলকেই ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।

আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত জামায়াত পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নেয়নি বা অনুমতির জন্য কোনো আবেদন করেনি। তাই বিনা অনুমতিতে ঢাকা বা দেশের কোনো ৬অঞ্চলে আমরা কোনো বেআইনি সমাবেশ করতে দেব না। ' অনুমতি ছাড়া ঢাকায় সভা করতে না দিলেও অন্যত্র যেখানে অনুমতির প্রয়োজন হয় না সেখানে কেন দেওয়া হবে না, তা বলেননি তিনি। এর আগে এক বিবৃতিতে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির আমির রফিকুল ইসলাম খান জানিয়েছিলেন, সমাবেশ ও তাতে মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ২৯ নভেম্বর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সৃষ্ট বিভ্রম দূর করতে সাংবাদিকরা ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চান।

ডিএমপি উপকমিশনার বলেন, 'জামায়াত সমাবেশ করার জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ' ওই সভার অনুমতি চেয়ে জামায়াতের আবেদনপত্রে ডিএমপির প্রাপ্ত সিলমোহরসহ পত্রটির সম্প্রচার হয় জামায়াতের ওয়েবসাইটে, ছাপানো হয় দু-একটি দৈনিকেও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অপ্রয়োজনে অকাতরে ডাহা মিথ্যা কথা বললেন। সম্পাদকীয় মন্তব্যে বা টকশোতে সমালোচনা হলো, জনসভা বন্ধ করে জামায়াতকে হরতালে বাধ্য করা হয়েছে।

৪ নভেম্বর হরতাল ডেকে সারা দেশে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে জামায়াত-শিবির। এই সরকারের সময় এর আগে বিএনপিও এত কড়া হরতাল করতে পারেনি। জামায়াতের 'সফল হরতাল' আলবৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরই অবদান। এসব সমালোচনায় কান না দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলি্ল থেকে ফিরে আবারও 'ফাউল' করলেন। এমন একটা অপমৃত্যুর ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে তিনি অসত্য ভাষণে লিপ্ত হলেন, যে ঘটনা দলমত নির্বিশেষে জাতির বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

২৮ নভেম্বর ১৮-দলীয় বিরোধী জোটের সমাবেশে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত 'কঠোর কর্মসূচি' মোতাবেক সারা দেশে ৯ ডিসেম্বর আট ঘণ্টার রাজপথ অবরোধ করে জোটের নেতা-কর্মীরা। কর্মসপ্তাহের প্রথম দিনেই এই অবরোধের ফলে রাজধানীতে ছুটির আমেজেই ট্রাফিক বা লোক চলাচল ছিল যৎসামান্য, অবরোধ বিরোধিতাকারী ক্ষমতাসীন দল অঙ্গ দলেরই প্রাধান্য ছিল ঢাকা মহানগরে। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশ বা অবরোধবিরোধীদের সংঘর্ষ ও সহিংস পিকেটিং ঘটেছিল প্রধানত : আন্তঃজেলা মহাসড়কগুলোতে এবং নগর প্রান্তিক কিছু মোড়ে মোড়ে, সকাল ৬টায় অবরোধ শুরুর আগেভাগে কিংবা শুরুতেই। সকাল ৯টার দিকে মোটামুটি শান্ত ঢাকা জজকোর্ট এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা একটি মিছিল বের করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। একই সময় ঋষিকেশ দাস লেনের বাসা থেকে বিশ্বজিৎ দাস নামে এক তরুণ দর্জি শাঁখারীবাজারে নিজের টেইলারিংয়ের দোকানে যাচ্ছিলেন।

ককটেল বিস্ফোরণের সময় পথচারী অনেকের সঙ্গে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পেট্রল পাম্প-সংলগ্ন একটি ভবনের দোতলায় ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ার নামের বেসরকারি ক্লিনিকে আশ্রয় নেন। পিছু পিছু ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীসহ সেখানে গিয়ে উপরে উঠেই বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে শাকিল। সঙ্গে ওবাইদুল কাদের। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে নিচে চলে এলে সেখানে বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগের কর্মী নূরে আলম, মাহফুজুর রহমান, ইমদাদুল হকসহ ১০-১২ জন রড-লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। পথচারীদের কেউ কেউ বিশ্বজিৎকে পাশের ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাতেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এর পর প্রাণ বাঁচাতে আবার দৌড়ে বিশ্বজিৎ শাঁখারীবাজারের একটি গলিতে গিয়েই ঢলে পড়ে। সেখান থেকে বিশ্বজিৎকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মারা যায় বিশ্বজিৎ। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্বজিতের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসকরা সময়মতো রক্তক্ষরণ কমিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেননি। বিশ্বজিতের ওপর হামলার পর ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বরের সামনে কেক কেটে ছাত্রলীগের সভাপতির জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

সেই অনুষ্ঠানের পেছনের সারিতে ছিলেন মাহফুজুর। এসব ছবি তুলে টেলিভিশনে সম্প্রচার করেছে, পর দিনের কাগজে ছাপিয়েছে টেলিসাংবাদিক ও ফটো-সাংবাদিকরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এবং স্থানীয় দোকানদার-ব্যবসায়ীরা পত্রিকায় ছবি দেখে আরও কিছু ছাত্র নামধারী মাস্তানের পরিচিত মুখ শনাক্ত করেছেন। বিশ্বজিতের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের এসব কর্মী দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছিনতাই, মাদক সেবন, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত এবং পুলিশের খাতায় দাগি। এদের দুজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলেও তারা নিয়মিত ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়ে থাকে।

কিন্তু ৯ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ১ মিনিট (ফটোসাংবাদিকের ঘড়ি) থেকে ৯টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে (চিকিৎসকের ডেথ সার্টিফিকেট) সংঘটিত এই অপমৃত্যুর সাক্ষী ছিল কর্তব্যরত পুলিশ। মাত্র ১০-১৫ গজ দূর থেকে এ দৃশ্য দেখছিলেন লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনারসহ (ডিসি) অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্য। হামলাকারীদের প্রতিহত করতে এবং বিশ্বজিৎকে রক্ষায় এগিয়ে আসেননি কেউ। ডিসি বলেন, 'বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় আহত হওয়া বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে হাসপাতালে নিতে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। ' নিহতের পরিবারের আরও অভিযোগ, ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নাম ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ।

ঘটনার ৩৫ ঘণ্টা পরে ১০ ডিসেম্বর সোমবার রাত ৮টার দিকে বিশ্বজিৎ হত্যায় সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, আদালতপাড়া থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতি মিছিল বের করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা একটি অবরোধবিরোধী মিছিল বের করেন। এ সময় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়। তখন বিশ্বজিৎ দাস দৌড়ে যেতে থাকলে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনা এবং গণমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ আসার পরও কেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাদী বলেন, 'ছাত্রলীগ নয়, অবরোধবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে মিছিল বের হয়েছিল। ' ব্যানারে 'ছাত্রলীগ' লেখা ছিল সেটা দেখালে বলেন, 'এটা মামলার পরে জানতে পারছি। ' ঢাকা সফরকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও'ব্লেক ১১ ডিসেম্বর ভুটানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বিশ্বজিৎ হত্যার কথা তুলেছেন। বলেছেন, 'অবরোধের সময় তরুণকে হত্যার বীভৎস ছবি দেখে আমি বিচলিত হয়েছি। এ ব্যাপারে আমি আমার উদ্বেগ তুলে ধরেছি।

সহিংস ওই ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ' অন্যদিকে ওইদিন বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বললেন, 'বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য আজ সকালে আমি নির্দেশ দিয়েছি। আমি এখানে আসার আগ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও আজকের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে। ' ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সাফাই গাইতে গলা চড়িয়ে আরও বললেন, 'খুনিরা ছাত্রলীগের কেউ নয়, এদের অনেক আগেই ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। ' মুশকিল হয়ে দাঁড়াল, ওইদিনই সন্ধ্যায় সূত্রাপুর থানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার হয়েছে কী হয়নি সে সম্পর্কে কোনো কথা বলতে পারব না। তার আগে মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ও ডিবির উপকমিশনার বেলা পৌনে ১টায় সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ ছয়জনকে শনাক্ত করেছে। পরে রাত সাড়ে ১০টায় মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেফাঁস উক্তিকে জায়েজ করে বলেন, বাস্তবিক আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে গ্রেফতারকৃতদের নাম জানাতে পারেননি তিনি। গ্রেফতারকৃত আটজন মূল হত্যকারী কিনা সে বিষয়টিও পুলিশ নিশ্চিত করেনি। ইতোমধ্যে বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে যাদের নাম-ছবি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে গণমাধ্যমে শনাক্তকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার না করতে পারলে তার জবাবদিহি আদালতে দাখিল করতে বলা হয় এবং এসব ব্যক্তি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সহসভাপতি ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, 'বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে যে দিন জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে মাঠে নামান, আমরা সে দিনই বলেছিলাম, আপনি যে আগুন নিয়ে খেলছেন, এর পরিণাম ভালো হবে না।

বলেছিলাম, জামায়াত-শিবির কারও গায়ে লেখা থাকে না। ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডারা যেভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন বিশ্বজিৎকে হত্যা করল, তাতে আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের সময়-সুযোগ এলে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে এক নম্বর (হুকুমের) আসামি করে হত্যা মামলা করা হবে। আর যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদেরও হত্যা মামলায় যুক্ত করা হবে।

' নতুন বছরে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভীমরতি ভাব যেন আরও বেড়ে গেল। বিদ্যুৎ আর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি পাঁয়তারার বিরুদ্ধে দুই বাম দল গত ডিসেম্বর মাসেই আন্দোলন শুরু করেছিল। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার মূল দাবির সঙ্গে জ্বালানি তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবিকে যুক্ত করে ১৮ ডিসেম্বর একটা সরকার অনুমোদিত হরতালও ঘটিয়েছিল। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে তাদের হরতালের মিছিলকে নিরাপত্তা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুলিশ স্কোয়াড। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেই ওই দুই বাম দলকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষতার শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের জন্য।

কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে পথসভা করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে এখন ওইসব বাম দল নেতারাও বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অশান্তি সৃষ্টি করছেন। যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের রাস্তায় নামিয়ে যে কোনো মূল্যে জামায়াত শিবির-বিএনপি পিকেটিংকে ঠেকানোর পরামর্শ দিয়ে ড. আলমগীর দেশকে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ২৬ ডিসেম্বর গণসংযোগ সমাবেশে খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেই হরতাল হবে। ৩ জানুয়ারি সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াল। প্রতিক্রিয়ায় ৬ জানুয়ারি বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলের হরতালের ডাক এলো।

সেই হরতালকেও প্রতিহত করার জন্য একই নির্দেশ বহাল রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে আরেকটি অশান্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন, সে সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের ডেকে বলেছেন, 'জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনকালে র্যাব-পুলিশ ও ছাত্র-যুবলীগ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস করেছে। ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিক মজুমদারকে তার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে র্যাব গ্রেফতার করার পর স্থানীয় একটি পুলিশ ফাঁড়ির কাছে তার হ্যান্ডকাফ পরিহিত গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। 'ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার বিগত চার বছরে পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, রেলওয়ে, কুইক রেন্টাল খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকাশচুম্বী দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। সরকারের দলীয় লোকেরা নদী-ভূমি-সমুদ্র দখল, বিনা টেন্ডারে তাদের লোকদের ৮৫টি কুইক রেন্টাল প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। খালে-বিলে নামে-বেনামে লাশ পড়ে থেকেছে।

এভাবে দেশকে তারা মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত করেছে। ' কর্মফল : দুই বাম দলও ১৬ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতাল করতে চলেছে। বিরোধী জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচি তো রয়েছেই। সারা মাসই হয়তো থেকে থেকে হরতাল চলবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উসকানিমূলক পদক্ষেপের বদৌলতে। লেখক : বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট View this link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.